আমি ও সে পর্ব তিন এবং শেষ

0
4431

আমি ও সে
পর্ব তিন এবং শেষ
,
অরিত্রা দরজা খোল প্লিজ আমার কথা একবার শোন , আমি চাইনি জয় এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাক।
তোমাকে আমি সব খুলে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সাহস হয়নি। তুমি যদি আমাকে ভুল বোঝ তখন !
,
এই নিয়ে কয়েকবার আমাকে আরিন ডাকাডাকি করেছে কিন্তু দরজা খুলিনি। কেন করলো আমার সাথে এমন । সব কিছু জেনে ও কেন অভিনয় করে গেছে দিনের পর দিন ।
সেদিন শ্বাশুরির কথা শুনে এতোটাই শক খেলাম যে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম এতো কিছু ঘটে গেছে কিন্তু আরিন আমাকে একবার ও বললো না। কথা শেষ হতেই সামনে তাকিয়ে দেখি আরিন দাঁড়িয়ে আছে । আমার চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো। কখন চোখের পানি গড়িয়েছে জানি না। আরিনের দিকে আমি জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। শ্বাশুরি আমার এমন আচারনে অবাক হয়ে গেল । তিনি জয়ন্তী কে নিয়ে সরে গেল । আমি শোবার ঘরে এসে বসে পড়লাম । আরিন আমার সাথে সাথেই এসেছিল । ও আসতেই বললাম ,
– কেন করলে আমার সাথে এমন ? তুমি জয়ের বন্ধু এটা দিনের পর দিন কেন গোপন করেছো ?
– অরিত্রা বোঝার চেষ্টা করো আমার আর জয়ের বন্ধুত্ব এটা আমরা ছাড়া আর কেউ জানতো না আমি যদি মৃত্যুর পর হঠাৎ করে বলি আমি ওর বন্ধু আর বন্ধুর বউকে বিয়ে করতে চাই তাহলে কি সেটা সবাই ভাল চোখে নিতো বলো ?
– ও বন্ধুর বউ বলেই করুণা করেছো তাই তো ?
– করুণা করিনি বন্ধুর ভালোবাসা বাঁচিয়ে রেখেছি।
– বাহ আরিন তুমি তো মহান মানুষ । তোমার তুলনা হয়না। আমার সাথে দিনের পর দিন তুমি চিট করেছো তোমার সাথে একটা মুহূর্ত আমি থাকতে চাইনা। তুমি আমাকে কখনও ভালোবাসোনি। তোমার দায় মনে করেছো।
– তোমাকে আমি কিভাবে বুঝাবো অরিত্রা কতোটা ভালোবাসি প্লিজ তুমি এ ধরনের কথা বলো না। আমি তোমাদের নিয়ে বাঁচতে চাই।
– কিন্তু আমি চাইনা। তুমি অভিনয় করেছো সব কিছু জেনে ও আমার ইমোশনাল নিয়ে খেলেছো। জয় কে চিনতে এটা আগেই বলা উচিত ছিল । আর এই মিথ্যা লুকানোই আমাদের আলাদা করে দিলো।
,
এই বলেই জোর করে আরিনকে ঘর থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলাম । আমার মনে হচ্ছে আরিন আমাদের করুণা করেছে এতোদিন ,আমি কারো করুণা নিয়ে বাঁচতে চাইনা।
,
শ্বাশুরি সব জেনে গেছে । তিনি ও কয়েকবার ডাকাডাকি করলেন আমি বলেছি খিদে নেই। জয়ন্তীকে আমার কাছে এনেছি ও ছাড়া আমার কেউ নেই এটা ভাবতেই সমস্ত চোখের জল এক সাথে বেরিয়ে আসতে চাইলো। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম । আরিন কেন করলো আমার সাথে এমন । আমি তো একা একা জয়ের ভালোবাসা নিয়ে ভাল ছিলাম । কেন এসে করুণা করে আমার ইমোশনাল নিয়ে দিনের পর দিন খেলা করলো।
,
সকালে আমি রুম থেকে বের হলাম । সামনে শ্বাশুরি আর আরিন বসে আছে । তাদের কাছে গিয়ে বললাম,
– আমি চলে যাচ্ছি ।আমাকে ক্ষমা করবেন মা।
– বউমা তুমি কি পাগল হলে । আমি সব কিছুর জন্য দায়ি আরিন আমাদের ও কোনও দিন বলেনি এতো কিছু । বিশ্বাস করো বউ মা, আরিন তোমাদের ছাড়া বাঁচতে পারবে না। ওকে এভাবে শাস্তি দিও না।
– মা আমি কারো করুণা নিয়ে বাঁচতে চাই না। ও আমাকে সব কিছু খুলে বলতো তাহলে বুঝতাম আসলেই ওর কোনও দোষ ছিল না। কিন্তু ওর ভুল ছিল আমার কাছে লুকানো ।
,
সেদিন আরিনের উপরে আমার এতোটাই রাগ অভিমান হয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল ওর জন্য জয় আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । ও কেন সেদিন জয়কে আটকে ছিল, না হলে জয় আগেই চলে আসতো।
,
আরিন চুপচাপ বসে ছিল । আমার পথ আটকাইনি।শ্বাশুরি জয়ন্তী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। এক রকম জোর করে চলে এলাম বাবার মায়ের কাছে ।
,
আজ এক সপ্তাহ আমি এখানে । আরিন অজস্র বার আমাকে ফোন করেছে আমি বাধ্য হয়ে ফোন অফ করে রাখলাম । সবাই কে বলে দিলাম কেউ যদি এই নিয়ে আমার সাথে কিছু বলো আমি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো। বাবা মা চুপ হয়ে আছে । এই নিয়ে কেউ কোনও কথা বললো না। কিন্তু সবার নিরব কান্না বুঝতে পারছিলাম কিছু করার নেই।
,
অনেক ভেবে ঠিক করলাম আমি জয়ন্তী কে নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাবো। একটা জব ঠিক করতে লাগলাম । আমার একটা বান্ধবীকে সব জানালাম ও বললো ,
– তুই আরেকবার ভেবে দেখ অরিত্রা ?
– আমি অনেক ভেবেছি শীলা ,আরিনকে ডিভোর্স দিতে চাই।
– তোর বাবা মা মেনে নিবে?
– এটা আমার লাইফ আমার ভাল আমি বুঝবো তুই বল জব ঠিক করতে পারবি কিনা?
– ঠিক আছে তুই এক কাজ কর আমার কাছে সিলেট চলে আয় এখানে আমার স্যারের সাথে কথা বললে উনি ঠিক করে দিবে।
– ঠিক আছে আমি দুইদিন পর আসছি।
,
শীলার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো। আরিনের কাছ থেকে দুরে সরে যাওয়াই ভাল ।
রাতে বাবা মাকে জানালাম সব কিছু শুনে বাবা বললো ,
– তোমাকে সুখী দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো এতে যদি সুখী থাকো আমার কিছু বলার নেই।
মা কিছুই বললো না। শুধু চোখের পানি ফেলছে ।
আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম ।তৈরি হতে হবে হাতে মাত্র দুইদিন সময় ।
,
আমাদের বাস চলছে সিলেটের দিকে । আমি জানালার পাশে বসা। বাইরের মৃদু বাতাস এসে লাগছে নাকে মুখে । হঠাৎ করে বাসটা থেমে গেল । একজন চিৎকার করে বললো আমাদের গাড়িতে একটা লোক এক্সসিডেন্ট করেছে । সবাই হুড়মুড় করে দেখতে চলে গেল। আমি বসেই রইলাম একজন বলতে লাগলো ইসসস কি বিধস্তা লাশ দেখলে ভয় করছে । আহা কার সন্তান হবে স্বামী হবে আল্লাহ জানে। আমি লোকটার কথা শুনে নিচে নেমে গেলাম ।কাছে এগিয়ে যেতে যা দেখলাম চমকে উঠলাম । এ যে আরিন । ও এখানে কিভাবে এলো। আমাকে দেখেই চোখ টিপটিপ করে বললো আমাকে ছেড়ে যেও না। এতো টুকু বলেই মরে গেল । সবাই হায় হায় করে উঠলো। আমি আরিনের লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম ।
,
ঠিক এমন সময় ঘুম ভেঙে গেল । আমার দু চোখ বেয়ে এখনও পানি পড়ছে । ঘেমে ভিজে গেছি পুরোপুরি । বুকটা ডিপডিপ করছে । পানি খেলাম দু গ্লাস । কেন এমন স্বপন দেখলাম । আরিনকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি খুব বেশি ভালো । না না জয়কে হারিয়েছি ওকে হারাতে চাইনা। তাড়াতাড়ি করে ফোন টা হাতে নিলাম আগের সিম খুলে রেখেছিলাম ওটা ভরতেই আরিনের ম্যাসেজ আসছে একটার পর একটা ।
,
আমি তাড়াতাড়ি করে আরিনকে ফোন করলাম ও সাথে সাথে রিসিভ করলো আমি বললাম,
– আরিন তুমি কোথায় তোমার কিছু হয়নি তো ?
– অরিত্রা আমি সত্যি ভাল নেই। তোমাকে ভিষন মিস করছি ।
এবার জোরে জোরে কেঁদে দিলাম । ওকে বললাম,
– আমি ও মিস করছি আরিন অনেক বেশি মিস করছি ।
– অরিত্রা আমি এখনই আসছি তোমাকে আমি নিতে আসছি। একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।
এই বলেই ফোন কেটে দিলো আরিন।একটু পর দরজায় কারো শব্দ । খুলতেই দেখি আরিন দাঁড়িয়ে আমি কোনও কিছু না ভেবেই ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম । আর বললাম,
– আরো আগে কেন নিতে আসোনি।
– তাহলে তো বুঝতে পারতাম না তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো ।
– কখনও হারিয়ে যাবে নাতো ?
– মৃত্যু ছাড়া কখনও না।
,
আরিন ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে । এমন সময় জয়ন্তী হাটি হাটি পা করে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো । আমরা দুজনেই অবাক । আরিন হেসে দিয়ে ওকে কোলে তুলে আদর করে বললো
,
– এই দেখো অরিত্রা আমাদের মেয়ে হাঁটতে শিখে গেছে ।
আমি ওর কথা শুনে হেসে দিলাম । একটু পর বাবা মা ঘর থেকে বের হতেই আরিন সালাম করতে এগিয়ে গেল । আমার ভিষন ভালো লাগছে আরিনের ভালোবাসা আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। আমি এখন সুখী বড্ড সুখী ।
,
,
(সমাপ্ত )
লেখা অধরা জেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here