তোমাতে আমি ১

0
5344

এই মুটকি তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস আর আমি তোকে? তোর মত ব্রয়লার মুরগীকে আমি ভালোবাসব, যে কিনা ব্যাঙের মত থপথপ করে হাটে, ভাবলি কি করে, আরে তোকে নিয়ে তো বাসর ঘরের বিছানায় বসলে বিছানা টাও ভেংগে যাবে, নিজের শরীর নিয়ে চলতে পারিস না আবার আসছিস ভালোবাসতে ছ্যাহহ, (রিদ)
সাথে তাল মিলিয়ে রিদের বন্ধু রনো বলল।
আরে দোস্ত বাদ দে না এতোদিন তো গাছের খেয়েছিস এবার না হয় তলার কুড়োবি,
কিযে বলিস না রনো একে? এর দিকে তাকাতেও তো আমার ঘৃনা হয়, আরোতো রাবিশ (রিদ)
তাহলে আমাদের কে দিয়ে দে না, আমরাও একটু ট্রাই করি (রনো)
রিদ কিরনের দিকে তাকালো একবার আর তারপর বলল, হু মন্দ বলিশনি দেখ পারলে চান্স নে।
কলেজ ভর্তি মানুষের সামনে রিদ যাচ্ছেতাই অপমান করে গেলো কিরন কে আর কিরন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো এতোক্ষণ চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝড়ছে, সামনে থাকা মানুষ গুলোও কেমন তাচ্ছিল্য ভাবে তাকাচ্ছে। এর মধ্যেই কিরনের ক্লাস মেট ঈশান এসে কিরনের হাত ধরল।
এখানে দাড়িয়ে অপমান সহ্য না করে বাসায় যাও, কি প্রয়োজন আছে তাকে ভালোবাসার যে তোমার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানেনা? (ঈশান)
কিরন অবাক হয়ে তাকালো যে ছেলেটা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেনা সে আজ কিরনের মত মুটকির সাথে কথা বলছে? সত্যিই ভাববার বিষয়।
এভাবে তাকিয়ে ভাবতে হবে না, চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি ঈশান বলল।
না আমি একাই যেতে পারব (কিরন)
হয়েছে আর একা যেতে হবে না। ঈশান কিরন কে বাইকে করে ওর বাসায় পৌছে দিলো।
ক্লাসের সব চেয়ে সুন্দর আর হ্যান্ডস্যাম ছেলে রিদ, যে কেউ দেখলে প্রেমে পরবে এটা নিশ্চিত, কিরন ও ঠিক একই ভাবে প্রেমে পড়েছে, আর ঘটনাক্রমে কথাটা রিদের কানে পৌছায়। এর পরই শুরু হলো নানা রকম অপমান করা, কিরন কে যেখানেই দেখে সেখানেই মুটকি বলে ক্ষ্যাপানো বন্ধুদের সামনে যাচ্ছেতাই বলা আর সপ্তাহে সপ্তাহে নতুন নতুন সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড এনে দেখানো এটা যেন ডাল ভাত।
এগুলো দেখেও কিরন এড়িয়ে চলতো কিন্তু আজকের অপমান টা বাকিদিনের তুলনায় অনেক বেশি।
রুমে ঢুকেই দরজা দিয়ে হাউমাউ করে কেদে উঠলো কিরন।
কেনো এগুলো শুনতে হচ্ছে সে তো নিজের ইচ্ছেয় মোটা হয়নি আর না তো পৃথিবীতে একাই মোটা, তাহলে এতো অপমান কেনো ?
কিরনের মা বারবার দরজা ধাকাচ্ছে কিন্তু কিরন খুলে দিচ্ছে না।
রাতে যখন দরজা খুলে বাহিরে এলো তখন দু চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে।
মা ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে কিরনের কাছে এলো, কি হয়েছে কিরন? দরজা খুলছিলি না ক্যানো আর চোখ দুটো এমন লাল হয়ে আছে ক্যানো?
তেমন কিছুনা, সরি মা আমি, আসলে আমি ঘামাচ্ছিলাম তাই শুনতে পাইনি, আর মাথা ব্যাথা করছে তো তাই হয়ত চোখটা লাল হয়েছে (কিরন)
যখন মিথ্যা বলতে পারিস না তখন কেনো ব্যার্থ চেষ্টা করছিস?
কিরন মাথা নিচু করলো,
এবার বল তো কাদছিলি ক্যানো? কি হয়েছে?
কিছু হয়নি মা, ক ক কই কাদিনি তো ধুর কাদব ক্যানো।
এদিকে আয় বস আমার কাছে, কিরন মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শোফার শুয়ে পড়লো।
দ্যাখ মা, আমি তোর মা, তোর নাড়ি নক্ষত্র সব কিছুর খবর জানি আমি, আরে তুই তো আমার অংশ আর আমার অংশের কিছু হয়ে আমি জানব না তা কি হয়? কি হয়েছে আমাকে বল?
মায়ের কথায়,মাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করল কিরন।
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আচ্ছা মা আমি কি খুব মোটা? ব্রয়লার মুরগীর মত থপথপ করে চলি? (কিরন)
কিহ?. এসব কি বলছিস তুই, তুই ক্যানো থপথপ করে চলবি কে বলেছে এগুলো?
জানো মা আমি বিছানায় বসলে বিছানা নাকি ভেংগে যাবে আচ্ছা মা আমার বিছানা কি লোহা দিয়ে বানিয়েছো? আমি তো সব সময় আমার বিছানায় লাফালাফি করি আমার বিছানাটা ভাংগে না কেনো? (কিরন)
কিরনের মা বুঝতে পারলো কেউ একজন কিরন কে অপমান করেছে, কথা ঘুরানোর জান্য মা বলল।
জানিস কিরন এই পুরো দুনিয়ার মধ্যে সব চেয়ে সুন্দরী আমার মেয়ে। (মা)
সে ত সব মায়ের কাছেই তার মেয়ে বিশ্ব সেরা সুন্দরী, আমাকে ক্যানো মিথ্যা সান্ত্বনা দাও মা, আমি এখন যথেষ্ট বুঝি প্লিজ আমাকে আর কিছু বলোনা আমি জানি আমি মুটকি।
কথাটা বলেই চলে গেলো কিরন।
রাতে ব্যালকনিতে বসে আছে, চারিদিকে নিস্তব্ধ নিরবতা, সবাই মায়া ঘুমে ঘুমিয়ে আছে শুধু কিরনের চোখে ঘুম নেই, রাতেই চাদটার দিকে তাকিয়ে আছে। চারিদিকে কত তারা অথচ সব তারা থাকা সত্ত্বেও চাঁদ টা একা ঠিক কিরনের মত।
হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠলো।
ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে আননোড নাম্বার, নাম্বার টা দেখতে দেখতেই কল টা কেটে গেলো, অনেকক্ষণ দেখেও নাম্বার টা চিনতে পারলো না, স্কিনে তাকিয়ে দেখে ১ টা বাজে, এতো রাতে কল তাও অপরিচিত নাম্বার থেকে? আশ্চর্য মা ছাড়া তো কেউ নাম্বার জানে না তাহলে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো কিভাবে?
ধুর কারো হয়তো দু একটা ডিজিট ভুলের কারনে কিরনের কাছে এসেছে।
ফোনটা রেখে কিরন আবারো চাদের দিকে দৃষ্টি রাখলো।
আবারো মোবাইল টা বেজে উঠলো তবে কল নয় মেসেজে।
কিরন মোবাইল টা অজানা এক কৌতুহলে হাতে নিলো।
সেই নাম্বার থেকে মেসেজ টা এসেছে,,
এভাবে আর কতক্ষণ ব্যালকনিতে থাকবে বলোতো, সেই সন্ধ্যা থেকে দাড়িয়ে আছি, এভাবে আর কতক্ষণ? যাও ঘুমিয়ে পড় নাহলে আজ রাতটা এভাবেই থাকবে হবে আমাকে,
মেসেজ টা দেখে কিরন এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। আবারো মেসেজ আসলো।
উফ এভাবে না তাকিয়ে যাও তো, খুজলেও পাবেনা, ভিষণ ঘুম পেয়েছে আমার, তুমি এভাবে থাকলে আমি রাস্তার মাঝখনেই ঘুমাবো কিন্তু, আর যদি কোন গাড়ি আমার ওপর দিয়ে যায় তবে,,,,,?
কিরন মেসেজ টা দেখেই রুমে ঢুকে গেলো, নাজানি কে না কে এসব তাচ্ছিল্য করতেছে, হয়তো রিদ, দেখতে এসেছে আমি কি করছি আর কালকে আবার অপমান করবে ,,
সাতপাঁচ ভেবেই কিরন লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে ঘুম ভাংলো মোবাইলের কান্নায়,
ফোনটা হাতে নিয়েই চক্ষু চড়ক গাছ,,,
চলবে,,
তোমাতে_আমি
#Radhika_Rai_Bormon

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here