তোকে_চাই
পার্ট_৭
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)
~বাগান বিলাশ~
রাতে সবাই খাওয়ার পর যে যার রুমে চলে যায়।রিক্ত ওর রুমে না গিয়ে ওর বাবার কাছে যায়।রুমের সামনে এসে বললো,
“আসবো ড্যাড?”
মিস্টার খান কোনো একটা ফাইল দেখছিলেন।রিক্তকে দেখে বললেন,
“এসো”
“ড্যাড আমি আজ কিছু জানতে চাই তোমার কাছে!”
“কি জানতে চাও?”
“রোজকে নিয়ে জানতে চাই!”
রিক্তর কথা শুনে হালকা হাসলেন তিনি।
“আমি জানতাম তুমি এই ব্যাপারে আমার কাছে জানতে চাইবে।তুমি এটায় জানতে চাও তো যে রোজ কি করে সিআইডি টিমের মেম্বার হলো?”
“হ্যা ড্যাড,আমি সত্যিই অবাক হয়েছি রেজকে দেখে।মাত্র ২১ বছর বয়সে কেউ কি করে সিআইডি টিমের মেম্বার হতে পারে?আমি নিজেই গত বছর আমেরিকা থেকে ফিরে সিআইডিতে জয়েন করি।তখন আমার বয়স ছিলো ২৬।তাহলে রোজ কি করে?”
“রোজকে আমি প্রথম দেখি একটা হসপিটালে।সেদিন রোজ একজনকে রক্ত দিয়ে তার জীবন বাঁচিয়ে ছিলো।তার কিছুক্ষণ পরেই আমি বাইরে আসি হসপিটাল থেকে।আর তখনি একটা চোর আমার অফিস ব্যাগ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে।ঠিক সেই সময় রোজ এসে খুব বিচক্ষণতার সাথে সেই চোরটির থেকে আমার ব্যাগটা উদ্ধার করে আনে।সেদিন যদি ব্যাগটা না পেতাম তাহলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যেত।এরপর থেকেই আমি রোজকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে মানুষকে সাহায্য করতে দেখি।কৌতুহলের বশে আমি রোজের একজন টিচারের কাছে থেকে ওর সম্পর্কে জানতে চাই।আর তখনি আমি জানতে পারি রোজ হোমে থাকে।আর ওও এই ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই বিভিন্নভাবে পুলিশদের সাথে থেকে হেল্প করেছে।ওর প্রত্যেকটা ফাইট,এ্যাকশন,কথা বলার ধরণ,চলা-ফেরা আমাকে মুগ্ধ করেছে।পরবর্তীতে জানতে পারি ওও একজন সিআইডি অফিসার হতে চাই।আমি এই সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইনি।আমি চেয়েছিলার এমন একজন আমাদের টিমেও থাকুক।রোজ বয়সে ছোট হলেও বুদ্ধি,বিচক্ষণতা,ফাইটিং এ খুবই দক্ষ।সে দেখতে গোলাপের মতো হলেও ওর চারপাশ কাটা দিয়ে আবৃত যাকে ছোঁয়া এতো সহজ নয়।কথায় আছে না” ছোট মরিচের ঝাল বেশি”।ব্যাপারটা ঠিক সেই রকম।”
মিস্টার খানের কথায় রিক্ত আরেক দফা অবাক হলো।মেয়েটাকে দেখে বোঝায় যায়না সে এতটা দক্ষ সব কাজে।তবে রিক্ত জানে তার বাবা কখনো না জেনে,বুঝে কোনো কাজ করেনা।তাই রোজের মধ্যেও নিশ্চয় বিশেষ কিছু অবশ্যই আছে।আর সত্যি বলতে রিক্ত নিজেই এই মেয়েটাকে দেখলে বড্ড অস্থির হয়ে পরে।কোনো এক অদ্ভুত কারণে রোজকে দেখলেই রিক্তর হার্টবিট বেড়ে যায়।এসব ভেবেই হাসলো সে।এরপর বাবার থেকে বিদায় নিয়ে রিক্ত চলে গেলো ওর রুমে।সেখানে গিয়ে তার সবচেয়ে প্রিয় গিটারটা নিয়ে রুমের সাথে লাগোয়া বেলকনিতে এসে একটা কাউচের উপর বসলো।ধীরেধীরে গিটারে টুংটাং শব্দ তুলতে তুলতেই গান ধরলো সে,
Maine jab dekha tha tujhko
Raat bhi woh yaad hai mujhko
Tare ginte ginte so gaya
Dil mera dhadhka tha kass ke
Kuch kaha thaa tune hass ke
Main usi pal tera ho gaya
Aasmano pe jo khuda hai
Usse meri yehi dua hai
Chand yeh her roz main dekhu tere sath main
Aankh utthi mohabbat ne aangdayi li
Dil ka sauda hua chandanu raat mein
Oh teri nazron ne kuch aisa jadoo kiya
Lut gaye hum toh pehli mulaqaat mein
Ho aankh utthi
Pau rakhna na zameen par jan rukhja
Tu ghadi bhar
Thode taare toh biccha doon mein tere vaaste
Aajmale mujhko yaara
Tu zara sa kar ishaara
Dil jala ke jagmaga doon
Main tere vaaste
Mere jaisa ishq mein pagal
Phir mile ye na mile kal
Sochna kya haath ye dede
Mere hath mein
Aankh utthi mohabbat ne aangdayi li
Dil ka sauda hua chandanu raat mein
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।আমি লিরিক্স জানিনা।যদি ভুল হয় তো স্যরি।আর এই গানটা আমার খুব পছন্দের একটা গান।)
রিক্ত এই গানটা গায়তে গায়তে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো।এটা নতুন কিছু না।আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে যখন ওয়ানিয়া ওকে ছেড়ে নিষ্ঠুরের মতো একা ফেলে চলে গেছে তখন থেকেই রাতের বেলা রিক্তর একাকী জীবনের নিঃসঙ্গতার একমাত্র সাক্ষী এই নিরব অশ্রু আর গিটার।
পরেরদিন সকালে,
সবাই তৈরি হয়ে নিয়েছে বান্দরবনে যাওয়ার জন্য।আজকে সবাই সাধারণ মানুষের মতোই বাসে করে যাবে বান্দরবন।সবাই খুব এক্সাইটেড এই কেসটা নিয়ে।মনে মনে সাহস জুগিয়ে সবাই আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পরলো আরেকটা নতুন মিশনে।
রিক্তর পাশে রোজ বসেছে।রিক্তর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।সে তো ফোন নিয়ে বিজি।এদিকে রোজের বিরক্ত লাগছে খুব।কারণ রোজ জানালার কাছে বসতে না পারায় ওর খুব রাগ হচ্ছে।তাই ওও বিনয়ের সাথে রিক্তকে বললো,
“এই যে স্যার শুনছেন?”
রিক্ত কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শোনায় রোজের কথা শুনতে পায়নি।তাই রোজ একটানে রিক্তর কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেললো।রিক্ত বিরক্ত নিয়ে রোজকে বললো,
“হোয়াট?”
“সেই কখন থেকে ডাকছি আপনাকে।আপনি তো শুনতেই পাচ্ছেন না।”
“কি হয়েছে?ডাকছো কেন?”
রোজ এইবার মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বললো,
“আমাকে একটু জানালর পাশে বসতে দিবেন প্লিজ?”
“নো”
“প্লিজ প্লিজ দিন না একটু বসতে।আমার এই সাইটে বসতে একদম ভালো লাগছে না।”
“হবে না।”
এই বলেই রিক্ত আবার কানে ইয়ারফোন গুজে নিলো।রোজ রাগ করে মুখ ফুলিয়ে মনে মনে রিক্তকে বকতে লাগলো।
“শালা ধলা বান্দর,নীল টিকটিকি,পঁচা লোক,শেয়ালের নানা,শয়তানের মাস্তুতো ভাই,লাল কুমির,গাধার ভাই,কাকের বন্ধু,লেজ কাটা ইঁদুর,ভাল্লুক,পেত্নির জামাই,শাকচুন্নির ৩৪৭ নাম্বার বিএফ তোর কোনোদিনও ভালো হবেনা দেখে নিস।তোর কপালে বিয়ে নাই।থাকলেও একটা হিটলার মাইয়া হবে তোর বউ।তোকে দিয়ে সারাদিন কাজ করাবে দেখে নিস।”
“মনে মনে আমার চৌদ্দ গুষ্ঠী উদ্ধার করা শেষ?”
রিক্তর কথায় রোজ চমকে তাকালো রিক্তর দিকে।রিক্ত ওর দিকে ডেভিল স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে আছে।
“একি! মনের কথাও বুঝে যায় নাকি?”
“কি হলো?আরো বকা দেওয়া বাকি আছে নাকি?”
রোজ কোনো রকমে মুখে একটা মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,
“ছিঃ ছিঃ স্যার এ,এসব কি ব,বলেন।আপনাকে কেন বকবো নাউজুবিল্লাহ।”
বলেই মুখে হাত দিলো।রিক্ত রেজের এমন করা দেখে বিরবির করে বললো,
“ড্রামা এঞ্জেল”
রোজ রিক্তর কথা বুঝতে না পেরে বললো,
“আমাকে কি কিছু বললেন?”
“হ্যা,বল্লাম এখানে এসে বসো।”
রোজ খুশি হয়ে বললো,
“সত্যিইইইই?”
“হুম”
এই বলেই রিক্ত উঠে দারালো আর রোজকে ওর জায়গায় বসতে বললো।দুজন দাড়িয়ে যখন সিট এক্সচেঞ্জ করবে ঠিক তখনি বাস কষে ব্রেক করলো।রোজ তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নেয়।আর তখনি রিক্ত রোজের হাতে টান দেয় আর রোজ রিক্তর বুকে এসে পরে।রোজ এখনো মনে হয় একটা ঘোরের মাঝে আছে।এমন কিছু ঘটবে সেটা রোজ কল্পনাও করেনি।অন্যদিকে রোজকে নিজের এতো কাছে পেয়ে রিক্তর কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ে ওর এতো কাছে এসেছে।এছাড়া তো কখনো কোনো মেয়েকে নিজের ত্রিসীমানায় ও আসতে দেয়নি রিক্ত।দুজনের মনেই অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করছে।রোজ এখন রিক্তর বুকে আছে কথাটা বোধগম্য হতেই চট করে সরে দাড়ালো রিক্তর থেকে।লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা কারো দিকে।সবাই রিক্ত আর রোজের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।রাকিব কেবলই তাকিয়েছে সামনের দিকে।তখনই এমন একটা ঘটনা দেখে বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।সাইফ পানি খাচ্ছিলো।রিক্ত আর রোজকে এমনভাবে দেখে বেচারার নাকে-মুখে পানি উঠে গেছে।মিরার হাত খেকে ঠাস করে ফোনটা পড়ে গেলো বাসের মধ্যে।জেরিন,মেরিন আর রাইসা এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।শান্ত আর সাহাফ একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।আর শুভ চুপ করে তাকিয়ে আছে রিক্ত আর রোজের দিকে।
“ইশশশশ,কি একটা অবস্থা।মান-সম্মান আজ সব শেষ আমার।রোজরে তুই এখন সবার সামনে কিভাবে কথা বলবি!”
রিক্ত সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি সমস্যা?”
কেউ কিছু না বলে মনে মনে ভাবতে লাগলো,
“বাহ বাহ!রিক্ত রায়হান খান আজ কোনো মেয়েকে ধরেছে।ভাবা যায় এগ্লা?”
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর সবাই এসে নামলো বান্দরবন বাস টার্মিনালে।সেখান থেকে গাড়ি করে থানচির পথ ধরে এগিয়ে এসে একটা রিসোর্টে উঠলো সবাই।এতোক্ষণ জার্নি করার ফলে সবাই খুব ক্লান্ত।রোজ রিসোর্টের একটা রুমে এসে ঠাস করে শুয়ে পরলো।
রিসোর্টের পাচঁটা রুম বুক করা হয়েছে।একটাতে মিরা,জেরিন আর রোজ।অন্যটাতে রুমকি,রাইসা আর মেরিন।আরেকটাতে শান্ত,সাহাফা আর শুভ।একটাতে রাকিব আর সাইফ উঠেছে।বাকি একটা রুমে রিকৃত একাি থাকবে কারণ ওও কারো সাথে রুম শেয়ার করতে রাজি নাহ।তো সবাই ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরলো।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে পারি জমালো সবাই।
বিঃদ্রঃ আর দুই/এক পর্বের পরই আমার রিডার্সদের জন্য বিশাল একটা ধামাকা অপেক্ষা করছে।সবাই প্রস্তুত তো ধামাকা দেখার জন্য?