তোকে_চাই
পার্ট_৯
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)
সারারাত কারো চোখে ঘুম নেই সাইফদের।সবাই চিন্তায় পড়ে গেছে।কারণ সকাল ৮টা বেজে গেলো।কিন্তু এখনো রোজ আর রিক্ত রিসোর্টে ফেরেনি।ফোন দিচ্ছে,কিন্তু ফোনও বন্ধ ওদের দুজনের।সবাই রিসোর্টের সামনে বাগানে মুখ কালো করে বসে আছে।তখনি রুমকির চোখ গেলো গেটের দিকে।রোজ আর রিক্ত আসছে।ওরা সবাই অবাক হয়ে গেলো।বিস্ময়ে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।কারণ একটদয় রোজ আর রিক্তর ড্রেসআপ।জেরিন দৌড়ে গিয়ে রোজের সামনে দাড়ালো।রোজের চোখ,মুখ,নাক সব লাল হয়ে আছে।চোখগুলো ফুলে গেছে।গালে চোখের পানি শুকিয়ে দাগ হয়ে আছে।রিক্তর চোখ দুটো এখনো রক্ত লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অসম্ভব রকম রেগে আছে।সাইফ ওদের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো,
“একি অবস্থা তোমাদের?কি হয়েছে?”
সাইফের কথা শুনে রোজ ডুকরে কেঁদে উঠলো।তা দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো।মিরা এসে রোজকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
“আরে আরে কাঁদছো কেন?কি হয়েছে?সবকিছু খুলে বলো আমাদের।”
পাশ থেকে শান্ত এসে বললো,
“আর তোমাদের ফোন বন্ধ কেন?রাতে কোথায় ছিলে?”
রোজ কান্নার ফলে কথা বলতে পারছে না।তবুও অনেক কষ্টে বললো,
“আ,আমরা ক,কাল রাতে এক,একটা জায়গায় আটকে যায়।ত,তখন একটা বাড়িতে গিয়ে আ,আশ্রয় চাই।তারপর…..”
আর কিছু বলতে পারলো না রোজ।তার আগেই সেন্সলেস হয়ে গেলো।রিক্ত তারাতাড়ি করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে গেলো।সেখানে শুয়িয়ে দিয়ে জেরিনকে বললো,
“ওর চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দাও একটু।আর এখনি খাবার অর্ডার করো।যাও”
জেরিন রিক্তর মতো তাই করলো।একটু পরেই রোজের জ্ঞান ফিরলো।কিন্তু একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে।এতোকিছু রোজ এখনো মেনে নিতে পারছে না।মেন্টালি সিক হয়ে পরেছে ও।তাই চুপচাপ শুয়ে রইলো।অন্যদিকে সবাই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে লাগলো ওদের।রিক্ত আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না।হাতের কাছে যে কাঁচের গ্লাসটা ছিলো তা ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে।মুহূর্তেই গ্লাসটা খন্ড খন্ড হয়ে গেলো।সবাই ভয় পেলো।কারণ এতোক্ষণে সবাই বুঝে গেছে অনেক বড় কিছু হয়েছে রোজ আর রিক্তর সাথে।একটুপর রোজ নিজেই কাল রাতের প্রত্যেকটা ঘটনা এক এক করে সবাইকে বলতে লাগলো।সবটা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো।মেরিন এক প্রকার চিল্লিয়েই বললো,
“তোমাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে?লাইক সিরিয়াসলি?”
রোজ নিচু কন্ঠে জবাব দিলো,
“হুম”
সাইফ হতভম্ব হয়ে গেছে এসব শুনে।শান্ত এসব শুনে বললো,
“তোমরা কি পাগল,তোমরা দুজন সিআইডি অফিসার।যাদের নাম শুনলেই সবাই ভয়ে কাঁপে।তোমরা বলতে পারোনি যে তোমরা সিআইডি অফিসার?”
রিক্ত এবার মুখ খুললো,
“কি করে বলতাম?সেই সুযোগটায় তো আমাদের দেওয়া হয়নি।আর নেটওয়ার্ক না থাকায় তোমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।অন্যদিকে আমাদের সিআইডি টিমের ব্যাচটা গাড়িতে ছিলো।তারাহুরোতে সেটা নিতেও ভুলে গিয়েছিলাম।আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ চিলো না যে আমরা সিআইডি অফিসার।আর সেই মুহূর্তে এতো কিছু মাথাতেও আসেনি আমাদের।”
সাইফ রাগী সুরে বললো,
“কিন্তু এখন কি হবে?এই বিয়েটার কি হবে?”
রোজ খুব স্বাভাবিক গলায় বললো,
“এই বিয়েটা একটা মিস্টেক।আপনারা কেউ চিন্তা করবেন না।আগামী ছয়মাস পর ডিভোর্স পেপার পৌঁছে যাবে রিক্ত স্যারের কাছে।”
রোজের কথাটা বলতে দেরি হলেও রিক্তর রোজের গালে থাপ্পর দিতে এক মুহূর্ত ও দেরি হয়নি।সবাই অবাক নয়নে রিক্তর দিকে তাকালো।রোজ ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রিক্তর দিকে।রিক্ত চিল্লিয়ে বললো,
“মিস উপ্স স্যরি মিসেস জান্নাতুল রোজ রিনজা ভুলে যেও নাহ আমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন,হয়েছে কিন্তু তাও ইসলামি শরিয়ত মতে।আর বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে তুমি বললে আর ডিভোর্স হয়ে গেলো।আন্ডারস্ট্যান্ড!!
রিক্তর কথা শুনে রোজ আরেক দফা কাঁদতে লাগলো।সবাই কোন রকমে ওকে শান্ত করে শুভ রিক্তকে বললো,
“তাহলে এখন কি করবে?”
“রোজ আমার সাথে যাবে!”
সাইফ অবাক হয়ে বললো,
“কোথায়?”
“আমাদের বাসায়!”
“ভাইয়া কি বলছো এসব তুমি?মানসম্মান অলরেডি শেষ হওয়ার পথে।এখন এই কথা জানাজানি হলে কি হবে ভাবতে পারছো?”
জেরিন কিছুটা উঁচু গলায় বললো,
“তোমার কি কমনসেন্স নেই সাইফ ভাইয়া?এই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে তুমি এখন মানসম্মান,প্রেস,মিডিয়ার কথা ভাবছো?একবারো রোজের কথাটা ভাবছো না?এতে তো রোজ বা রিক্ত স্যারের কোনো দোষ নেই তাহলে ওরা কেন নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখবে?”
জেরিনের কথা শুনে সাইফ চুপ করে রইলো।কারণ ওর কথাগুলো সত্যি।অবশেষে নিরবতা ভেঙে রিক্ত বললো,
“সবাই রেডি হয়ে নাও।আমরা এক্ষুনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।”
এই বলেই রিক্ত একবার রোজের দিকে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো।রোজ এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।সবাই কোনো মতে ওকে শান্ত করে রেডি হয়ে নিলো।তারপর সবাই বেরিয়ে পরলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।এইবার কেউ বাসে নয় বরং সবাই মাইক্রো ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে।কারণ এই অবস্থায় রোজ বাস জার্নি সহ্য করতে পারবেনা।
অন্যদিকে রিক্তর মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো ওর জীবনে।আজ থেকে ও আর একা নয়।আজ থেকে ও বিবাহিত।কিন্তু ও তো ওর মনের প্রতিটা জায়গায় ওয়ানিয়ার নাম লিখে রেখেছে।ওর প্রতিটা শিরায় শিরায় শুধুই ওয়ানিয়ার বাস।সেই ১০ বছর বয়স থেকেই রিক্ত উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে ওয়ানিয়াকে ছাড়া ওও অসম্পূর্ণ।অথচ আজ ওর জীবনসঙ্গী ওয়ানিয়া নামক সেই মিস কুইন নয়।আজ থেকে ওর জীবনসঙ্গী রোজ নামক সেই ড্রামা এঞ্জেল।কি করবে ওও?যে গেছে তার জন্য অপেক্ষা করবে নাকি যে ওর বর্তমান স্ত্রী তাকে নিয়ে নতুন করে নিজের জীবন শুরু করবে?আর কিছু ভাবতে পারছেনা রিক্ত।ওর নিজেকে পাগল প্রায় লাগছে।এমন দোটানায় ওও এর আগে কখনো পরেনি।কিন্তু আজ নিয়তি ওকে এক চরম দোটানায় ফেলে দিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতেই রিক্ত অনুভব করলো ওর কাঁধে কারো গরম নিশ্বাস পরছে।ওও কাঁধের দিকে তাকিয়ে দেখলো রোজ ঘুমিয়ে আছে।মেয়েটাকে বড্ড নিষ্পাপ লাগছে।ঘুমন্ত অবস্থায় যেন রোজের নামের মতোই রোজকে আসল গোলাপের ন্যায় লাগছে।গাল,চোখ,মুখ সব ফুলে আছে।চোখের কার্ণিশ বেয়ে এখনো পানি পরছে।রিক্ত আলতো হাতে সেই পানি মুছে দিয়ে রোজের মাথাটা নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইলো।
দীর্ঘক্ষণ জার্নি করে সবাই এসে নামলো খান প্যালেসের সামনে।কেউ নিজের বাসায় যায়নি।সবাই ডিরেক্ট রিক্তদের বাসাতেই এসেছে।কারণ সবাই চিন্তিত এসব নিয়ে।তার উপর রোজের উপর সবার খুব মায়া পরে গেছে।একেই তো মেয়েটা এতিম।তার উপর এই বিনা হাওয়ার ঝড়ে ওর জীবনটা আবারো এলোমেলো হয়ে গেলো!
রিক্ত দেখলো রোজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এই মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রিক্তর খুব মায়া হলো।রোজকে ডাকতে গিয়েও ডাকলোনা।গাড়ি থেকে সবাই একে একে নামার পর রিক্ত রোজকে কোলে তুলে নিলো।আর হাঁটা দিলো বাসার দিকে।গেটের সামনে আসতেই সাইফ নিজে কলিং বেল টিপ দিলো।কিছুক্ষণ পর লামিয়া রায়হান খান এসে দরজা খুলে রিক্তর কোলে কালো স্কার্ট আর আকাশী রংয়ের টি-শার্ট পরিহিতা একটা মেয়েকে দেখে বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে ফেললেন।তার মনে একটায় প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে,
“কে এই মেয়ে?”
রিক্ত কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা দোতলায় ওর রুমে নিয়ে গিয়ে রোজকে বেডে শুইয়ে দিয়ে আবার নিচে নেমে এলো।সবাই বসার ঘরে দাড়িয়ে আছে।সোফায় বসে আছেন মিস্টার শরীফ রায়হান খান আর মিসেস রামিমা রায়হান খান।বাকি সবাই যেন নিরবতা পালন করছে।রিক্তকে নিচে নামতে দেখেই মিস্টার শরীফ রায়হান খান গম্ভীর কন্ঠে রিক্তকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কে এই মেয়ে?”
ইতোমধ্যেই বাসার প্রত্যেকে হাজির হয়ে গেছে বসার রুমে।কিছুক্ষণ পর সেখানে এসে উপস্থিত হলেন মিস্টার রাশেদ রায়হান খান।
“কি হয়েছে?আর মিরা তোমরা সবাই এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?”
মিস্টার খানের কথা শুনে রাইতা বললো,
“ড্যাড দাভাই একটা মেয়েকে নিয়ে এসছে বাসায়।”
রাইতার কথা শুনে মিস্টার খানের চক্ষু চড়ক গাছ।সে অবাক হয়ে বললো,
“মেয়ে?কোন মেয়ে?আর রিক্ত কেনই বা কোনো মেয়েকে নিয়ে আসবে?”
সাইফ ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,
“বড় আব্বু,এই মেয়ে আর কেউ নয় রোজ!”
“কিহ?রোজ?রোজকে কেন ও এখানে নিয়ে আসবে?কি হয়েছে কেউ খুলে বলো আমাকে প্লিজ।”
এতোক্ষণ পর রিক্ত নিজের মুখ খুললো,
“রোজকে এই বাসায় নিয়ে এসেছি।কারণ রোজ আমার বিবাহিতা স্ত্রী!”
রিক্তর মুখে এমন কথা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না।সবাই উঠে দাড়িয়ে বিস্ময়কর চাহুনি নিয়ে তাকালো রিক্তর দিকে।
চলবে???
বিঃদ্রঃ গতকালকের পর্বটা পড়ে অনেকেই অনেক কিছু মন্তব্য করেছেন।তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,প্লিজ ধৈর্য সহকারে সবাই শেষ পর্যন্ত পরুন।আর একটা কথা বলে দেয়,এই বিয়েটা পূর্বপরিকল্পিত।কিন্তু এই ব্যাপারে রিক্ত বা রোজ কিছুই জানতো না।গল্পে খুব শীঘ্রই নতুন চমক আসতে চলেছে।
ধন্যবাদ❤️