তোকে_চাই
পার্ট_১১
#লেখনীতে_সুহাসিনী_চৌধুরী(ছদ্মনামের লেখিকা)
মিস জুলি সবার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন,
“সময়টা ছিল ফেব্রুয়ারী মাস।ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমাকে আমাদের হোমের একটি শাখা চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চে যেতে হয়।হয়তো তখন রাত ১১টা বাজে।আমি ঢাকার গাজীপুর বাস স্ট্যান্ডে যায় চট্টগ্রামের বাস ধরার জন্য।তখনি আমার চোখ যায় বাস কাউন্টারের পাশে একটা টুলে বসে থাকা ছোট্ট পরির উপরে।হ্যা পরি,লাল পরি।আমার চোখ ধাঁধিয়ে যায় এমন একটা ছোট্ট মেয়েকে দেখে।গায়ে একটা লাল রংয়ের ফ্রক।মাথার চুলগুলো বেশ বড়।কিছু ছোট ছোট চুল কপালের উপর পড়েছিল।আর মাথায় বেশ দামী একটা ক্রাউন।দেখে মনে হচ্ছিল জন্মদিন ছিল মেয়েটার।সে গোলগোল চোখে চারিদিকে বারবার তাকাচ্ছিল।আর ঠোঁট উল্টিয়ে ফুপাচ্ছিল।আমি অবাক হয়েছিলাম।কারণ এই রকম একটা পুতুলের ন্যায় মেয়েকে এতো রাতে বাস কাউন্টারের সামনে একা দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম।আমি তখনি বুঝে গিয়েছিলাম মেয়েটা হয়তো হারিয়ে গিয়েছে।আমি চারিদিকে লক্ষ্য করে দেখলাম,মেয়েটার দিকে কেউ তাকাইনি।তাকালেও সেভাবে পাত্তা দেয়নি।আমি দ্রুত সেই মেয়েটার কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলাম।তারপর জিজ্ঞেস করলাম,
” বাবু,নাম কি তোমার?”
মেয়েটা কোনো জবাব না দিয়ে আমার দিকে গোলগোল চোখে তাকিয়ে ছিলো।আমি আবারো তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু সে কোনো উত্তর দিলো না।ততক্ষণে আমার বাস এসে গেছে।আমি কি করবো ভাবতে ভাবতেই মেয়েটাকে নিয়ে বাসে উঠে পরলাম।আর রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
সেখানে গিয়ে মেয়েটার ব্যাপারে সকলের সাথে আলোচনা করলাম।তখন সবাই বললো,
“এই মেয়েটাকে দেখে বেশ বড়লোক পরিবারের মনে হচ্ছে।কিন্তু তাহলে সে এতো রাতে বাস কাউন্টারের সামনে কি করছিলো?নিশ্চয় এখানে কোনো ঘাপলা আছে।তাই মেয়েটাকে এখানেই রেখে দাও।আমরাই বড় করবো ওকে বাকি বাচ্চাদের মতো।”
আমিও সেদিন সবার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।তারপর সিদ্ধান্ত নেই মেয়েটাকে চট্টগ্রামেই রাখবো।কেন জানিনা ওকে দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছিল।ওকে নিজের কাছে রাখতে ইচ্ছে করছিলো।অন্যসব বাচ্চাদের থেকে ওর প্রতি আলাদা টান অনুভব করতাম আমি।সেই থেকেই ওও বড় হয় হোমে।একদিন ওর গলায় বেশ দামী একটা স্বর্নের লকেট দেখি আমি।কৌতূহল বসত লকেটটা হাতে নিতেই আমি লকেটের উপরে একটা নাম খুব ইউনিক ডিজাইন করে লেখা দেখতে পাই।ভালো করে দেখার পর বুঝতে পারি সেখানে লিখা “রোজ”। তখনই বুঝে যায় এই ছোট্ট পরিটার নাম রোজ।সেই অনুসারে ওর নাম দেই “জান্নাতুল রোজ রিনজা”।রিনজা অর্থ সুন্দরী।আর রোজ ছিল পুতুলের ন্যায় সুন্দর।এরপর থেকেই আস্তে আস্তে হোমের বাকি বাচ্চাদের সাথে বেড়ে উঠতে থাকে রোজ।চট্টগ্রামেই স্কুল,কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে চলে আসে ঢাকাতে।সাথে রোজের দুই বেস্ট ফ্রেন্ড লিয়া আর সাফরিনও শিফ্ট হয় আমাদের ঢাকার হোমে।এভাবেই চলতে লাগে দিন।হঠাৎ একদিন রোজ অত্যন্ত খুশির সুরে এসে আমাকে বলে,
“মাদার,আমি সিআইডি টিমের মেম্বার হতে পেরেছি।আমি আজ খুব খুব খুশি।”
সেদিন ওর মুখে আমি সত্যিকারের হাসি দেখেছিলাম।ওর খুশিতে নিজেও অনেক খুশি হয়েছিলাম।তারপর…..
বাকিটুকু আমি বলছি মিস জুলি।এই বলেই রিক্তর মাম মিস শিরিন রায়হান খান বলতে আরম্ভ করেন,
“আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে আমি একটা জরুরি কাজে গাজীপুরে যায়।সেখানে একটা মেয়েকে দেখে কেন জানিনা আমার খুব আপন মনে হচ্ছিল।আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছিল এই মেয়েটা আমার খুব কাছের কেউ।তখনও আমার নজর যায় মেয়েটার গলায় থাকা সেই লকেটের উপর।সেই লকেটটা দেখে আমি চমকে যায়।কারণ লকেটটা আমি স্পেশালভাবে বানিয়েছিলাম আমাদের ওয়ানিয়ার জন্য।এই লকেটটা কোনো সাধারণ লকেট নয়।এমন লকেট যার তার পক্ষে বানানোও সম্ভব নয়।তাই আমি সেদিন পিছু নেই সেই মেয়ের পিছনে।এবং গিয়ে হাজির হই একটা হোমে।সেদিন আমি ফিরে আসি।এবং পরদিন আবার যায় সেখানে।তারপর মিস জুলির সাথে আলাপ হয় আমার।তখন আমি তাকে খোলামেলা ভাবেই সবকিছু জিজ্ঞাসা করি।এবং উত্তর ও পাই।সাথেই রোজের ছোটবেলার একট ছবি দেখে আমি নিশ্চিত হই এটায় আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট ওয়ানিয়া।কিন্তু এই ব্যাপারটা আমি বাসায় জানায়নি।কারণ আমি বুঝে গিয়েছিলাম এই ষড়যন্ত্রের পেছনে মূল হোতা কে!
রিক্ত কঠিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কে সে?”
“আমি”
কারো আওয়াজ পেয়ে সবাই গেটের দিকে তাকালো।এবং যাকে দেখলো তাকে দেখার জন্য মোটেও কেউ প্রস্তুত ছিলো না।রিক্তর চাচ্চু সেই ব্যক্তিটিকে দেখে চমকে উঠেন।চমকিত গলাতেই বলেন,
“তুই?”
“কিরে খুব অবাক হচ্ছিস আমাকে দেখে তাইনা?
বলেই ব্যক্তিটি সবার সামনে এসে দাড়ালো।
রিক্তর দাদিমা এমনিতে খুব ভালো মানুষ হলেও সে বেশ রাগী একজন ব্যক্তি।সে খুব কম রাগেন।আর যেদিন রেগে যান সেদিন তিনি অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন।তিনি কঠোর গলায় বলেন,
” তুমি এখানে কি করছো ইব্রাহিম?”
“আরে শাশুড়ি মা,রেগে যাচ্ছেন কেন?আমাকে দেখে খুশি হননি বুঝি?”
মিস্টার ইব্রাহিম হোসেনের এমন রসিকতাময় কথাতে সবাই ক্ষেপে গেলো।রিক্তর চাচ্চু তেরে এসে ওনার কলার চেপে ধরে বলেন,
“কেন এসেছিস এখানে?এতোগুলো বছর পর কি চাস তুই আমাদের কাছে?”
মিস্টার ইব্রাহিম হোসেন এতোক্ষণ রসিকতার সুরে কথা বললেও এখন নেশাময় চোখে মিস শিরিনের দিকে তাকিয়ে আকুতিভরা কন্ঠে বললেন,
“আমি সারাজীবন এক এবং একমাত্র শিরিনকেই চেয়েছি।আজো তাই চাই।”
এই কথা শুনে হঠাৎ করেই মিস শিরিন ইব্রাহিম হোসেনের কাছে এসে কষে থাপ্পর লাগালেন তার গালে।ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।
“কি বললে তুমি?তুমি আমাকে চাও তাইনা?তাহলে কেন সেদিন আমাকে বিয়ের আসরে কলঙ্কিনীর তকমা লাগিয়ে চলে গেছিলে?বলো?উত্তর দাও!”
“শিরিন মানছি সেদিন আমি ভুল করেছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি আজো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।আর তুমি শুধু আমার ভুলটাই দেখলে?তোমার ছোট ভাই শাহেদের করা সেই অপমানগুলোর কথা ভুলে গেছো তুমি?যেদিন আমাকে সবার সামনে ভিকারির বাচ্চা বলে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল সেই রাস্তায় যেখানে আমি ছটফট করছিলাম মৃত্যু যন্ত্রণায়।তখন কোথায় ছিলে তুমি?”
“হাসালে তুমি আমাকে।আরে যে বাবা তার অনাগত সন্তানকে অস্বীকার করে।শুধু তাই নয় নিজের বাচ্চাকে নিজ হাতে খুন করে সেই খুনির মৃত্যুটায় শ্রেয়।তুমি তো আমার সন্তানের খুনি।খুনি তুমি।”
এই বলেই এলোপাতাড়ি থাপ্পড় মারতে লাগেন শিরিন ইব্রাহিমকে।সবাই তাকে ছুটাতে ব্যস্ত।
“শিরিন,কি করছো এসব।প্লিজ পাগলামো করোনা।”
রিক্তর মায়ের বুকে মাথা রেখে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,
“বড় ভাবি আমি পারছিনা এই খুনিকে নিজের সামনে দেখতে।আজ ওকে আমি খুন করে ফেলবো।ছারো আমাকে।”
এই বলেই যখন রিক্তর মাম মিস্টার ইব্রাহিম হোসেনের গলা চেপে ধরতে যান সেই সময় ইব্রাহিম হোসেন শিরিনের হাত চেপে ধরেন।আর চিল্লিয়ে বলেন,
“অনেক বলেছো তুমি,আর নাহ।কিসব পাগলের মতো কথা বলছো তুমি?আমি?আমি আমার বাচ্চাকে খুন করেছি?এটা কি করে সম্ভব?কেউ কি করে তার নিজের সন্তানকে মারতে পারে?বলো?আরে আমি তো আমার সন্তানকে কোনোদিন চোখেই দেখিনি।আমি তো এটাও জানতাম না যে কবে আর কোথায় তোমার ডেলিভারি হয়েছে?আদৌ আমার কি সন্তান হয়েছে?ছেলে নাকি মেয়ে?কিচ্ছু জানতাম না আমি।আর সেই আমাকে তুমি নিজের সন্তান হত্যার দায়ে খুনি বলছো?”
মিস্টার ইব্রাহিম হোসেনের কথায় শিরিন অবাক হয়ে বললো,
“মানে?”
এই কথা শুনে রিক্তর চাচ্চু বেশ ঘাবরে যায়।এসি চলা সত্বেও ঘামতে লাগেন তিনি।
তখনি মিস্টার ইব্রাহিম হোসেন বলেন,
“তোমাকে আমার নামে এই কথাগুলো কে বলেছে?”
শিরিন কান্নারত অবস্থাতেই বলে,
“ছোট ভাই!”
এই কথা শুনেই চমকে যায় মিস্টার শাহেদ রায়হান খান।তার গলা যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।ভয়ে তার বুক ধুকপুক করছে।
চলবে???
বিঃদ্রঃ রহস্য উদ্ঘাটন এখনো অনেক বাকি।আর হ্যা,এই গল্পের এখনো অবধি যতগুলো ধামাকা পর্ব আমি দিয়েছি আগামী পর্বে তার থেকেও বড় ধামাকা অর্থাৎ সবচেয়ে বড় ধামাকা অপেক্ষা করছে সবার জন্য।কি হতে চলেছে আগামী পর্বে?সবাই গেস করুন।আজকের মতো টাটা!!
আর আমি অনেক অসুস্থ।আজকে অনেক রকম টেস্টের পাশাপাশি ব্লাড টেস্ট দুইবার করে আমি হাত নারাতে পারছিনা।তাই আজকে ইচ্ছা থাকা সত্বেও বড় করে পার্ট দিতে পারলাম না।তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।আর সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ❤️