স্বামী
পর্ব-১৬
#Nirzana(Tanima_Anam)
(Flash-Back)
নার্সিং হোমে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে সায়ন।হালকা ক্রীম কালার শেরওয়ানীতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।শেরওয়ানীটা অনু নিজে পছন্দ করে কিনেছিলো আকাদে সায়ন পরবে বলে অথচ এই এই শেরওয়ানীতে অনুর রক্ত লেগে আছে।
সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথাটা ফেটে গেছে অনুর পুরাপুরি হুস নেই বললেই চলে তবে বিছানায় সুয়ে সুয়ে বারবার ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে অনু।স্বাভাবিক ভাবে ব্যাথ্যাটা মাথায় হওয়া উচিত যেহেতু মাথাটা ফেটেছে কিন্তু অনুর ব্যাথ্যা হচ্ছে পেটে।যাকে বলে প্রচুন্ড ব্যাথ্যা।
অনু ঐ অবস্থায় বেশ কয়েকটা টেস্ট করা হয়।বর পক্ষ কনে পক্ষ মোটামুটি সবাই উপস্থিত আছে।
অনুর বাবার তো মুখটা শুকিয়ে গেছে।একমাত্র মেয়ের এ অবস্থা তাও আবার এমন শুভ দিনে।
সায়নের চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে।কোথায় মেয়েটাকে লাল শাড়ি জড়িয়ে বউ সেজে শ্বশুড় বাড়ি নিয়ে যাবে তা নয় বরং হালকা নীল পোশাক পড়ে হাসপাতালের বিছানায় পরে আছে……
“অনু তুমি ভালো হয়ে যাও প্লিজ।আমি আর নিতে পারছি না”
সায়নের ভাবনায় ছেদ পরে ডাক্তার অনামিকার ডাকে…..
অনামিকা নির্ঝরের ফুপাতো বোন।অনু সম্পর্কে সবটায় জানে সে।
অনামিকা সায়নকে ডেকে বলে,
-সায়ন পেশেন্ট সম্পর্কে কিছু কথা ছিলো সেগুলো তুমি আলাদা শুনবে না কি সবার সামনে??
পাশ থেকে সায়নের মা উঁচু সুরে বলতে থাকে
-এখানে অনুর পরিবার উপস্থিত রয়েছে তাই অনু সম্পর্কে সবটা জানার অধিকার তাদের ও রয়েছে!!তুমি সবার সামনে বলো!!
-সায়ন তুমি কি অনু সম্পর্কে আগে কিছুই জানতে না???
-মানে??
সবগুলো কৌতুহলী চোখ ডাক্তারের দিকে
-তাহলে শোনো!!প্রত্যেকটা মেয়ের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ভ্রুন থলি যেখানে মেয়েরা মানব ভ্রুনকে ধারনকরে কিন্তুর ক্ষেত্রে সমস্যা হলো…
একটু থেমে গিয়ে…
-কি??
-অনুর সেই ভ্রুন থলি তুলনামূলক অনেক ছোট সন্তান ধারনের জন্য যথেষ্ট নয়।তাই অনু চাইলেও সন্তান ধারন করতে পারবে না!!
ডাক্তারের মুখে কথাটা শুনে সায়নের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল…
-কি বলছো কি আপু??
-হুম্ম।রিপোর্টে তাই লিখা আছে।
সায়ন ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে।অনু সম্পর্কে এতো বড় ধাক্কা সে আশা করে নি।
অনুর মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে।
গোটা মহল জুরে পিনপিনে নিরবতা।
নিরবতা কাটিয়ে সায়নের মা বলে ওঠে
-সায়ন!!
-(…)
-ওঠো আমি বাড়ি যাবো!!
সায়ন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে
-কি হলো উঠতে বললাম না??
-মা অনু
-চুপ একদম চুপ অনুর নাম যেন তোমার মুখে না শুনি
সায়নের মায়ের কথা শুনে অনুর বাবা এগিয়ে আসে।
-বেয়ানসাহেবা এসব কি বলছেন??সায়নকে নিয়ে যাবেন মানে?অনু মার গ্ঞান ফিরলে তো সায়ন বাবাকে খুজবে
-ঠকবাজ লোক কোথাকার খবরদার আমাকে বেয়ান বলবেন না এরকম বাঁজা মেয়েমানুষের সত্য গোপন করে আমার ছেলের ঘাড়ে চাঁপাচ্ছিলেন??
সায়ন বিস্ফোরিত চোখে মায়ের দিকে তাকি আছে..
-মা কি বলছো কি?
-তুমি যদি আমার ছেলে হয়ে থাকো যদি তোমাকে আমি জন্ম দিয়ে থাকি তুমি আর একটি কথাও বলবে না।যে মেয়ে আমায় নাতি নাতনী দিতে পারবে না যে মেয়ে আমার সন্তানকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবে না সে মেয়েকে বউ তো দূরের কথা আমার ছেলের (..) করেও ঘরে তুলবো না
বাবা হয়ে নিজের মেয়ে সম্পর্কে এমন কথা শুনে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তবুও সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছেন।প্রশ্নটা মেয়ের ভালোবাসার মেয়ের জীবনে।
সায়নের মা অনুর বাবাকে চরম অপমান করেন তারপর দলবল নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
অনেক আকুতি মিনতি করেও আটকাতে পারে নি অনুর বাবা।
এদিকে অনুর যতোবারই হুস ফিরছে তো সমানে সায়ন সায়ন করে যাচ্ছে….
সম্পূর্ণ ঘটনার আরেক জন সাক্ষী রয়েছে যে আড়াল থেকে সবটা দেখেছে।অনুর জন্য দু ফোটা চোখের পানিও ফেলেছে।
রাতের মাঝা মাঝি অনুর হুস ফিরে।কেবিনে শুধু একজন নার্স রেয়েছে।অনুর ধারনা সায়ন বাহিরে আছে তাকে হয়তো ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় নি।অনু টলমল পায়ে ধীরে ধীরে বাহিরে চলে আসে।কোই বাবা মা ভাইয়া ভাবি সবাই বারন্দায় আছে সায়ন তো নেই।
অনু সায়নকে খোজার জন্য আরেকটু এগিয়ে যায়।সিড়ির কাছে যেতেই হটাৎ মাথাটা ঘুরে আসে…
অনু পরে যেতে নিলেই কেউ একজন ধরে নেয়।সোজা অনুকে কোলে তুলে নেয়।
এদিকে অনুকে খোজা খুজি চলছে।
সেই একজন অনুকে কোলে তুলে হাটা ধরে কেবিনের দিকে।অনুকে কোলে করে কেবিনে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেয়।
সেই একজন ছিলো নির্ঝর।নির্ঝর সব জেনে শুনেই অনুর বাবা মাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।নির্ঝরের বিষয়ে খোঁজ খবর করে।তারপরেরটা সবারই জানা……!!!
বর্তমানে…
সকাল সকাল অনুর ঘুম ভাঙ্তেই দেখে নির্ঝর অনুকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।অনু নড়ছেনা শুধু ফ্যালফ্যাল করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
কোই সেদিনের মতো তো আজ রাগ লাগছে না।
তাহলে কি আমি ওনার প্রেমে পরলাম??
-হুম্ম পড়েছো!!
অচমকায় নির্ঝরের কথা শুনে অনু চমকে যায়
নির্ঝর ফিক করে হেসে দেয়
-মেয়ে তুমি বোধয় সত্যি সত্যিই আমার প্রেমে পড়লে….
নির্ঝর অনুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে….
অনু কি ভেবে উওর দেয়
-মানুষ প্রেমে নাকি একবারই পড়ে আমিও পড়েছিলাম একবারই।
অনুর উওর শুনে নির্ঝরের মুখটা কালো হয়ে যায়।।
-কিন্তু জানো তো অনু আমি প্রেমে পড়েছিলাম একবারই আর সে হলে তুমি……
কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।যেন তার সব অভিমান সব রাগ সব কষ্টের সমাপ্তি ঐ ঠোঁটে মাঝে লুকিয়ে রেখেছে।
চলবে……
(আমি চেষ্ট করবো গল্পটা দ্রুত শেষ করার।আজকে একটু ব্যস্ত থাকায় ছোট করে লিখলাম।নেক্সট বড় করে লিখবো।কেমন হয়েছে জানাবেন ধন্যবাদ)