স্বামী পর্ব-৩৫

0
8114

স্বামী
পর্ব-৩৫
#Nirzana(Tanima_Anam)

প্রায় তিন ঘন্টা ওটি করার পর শুকনো মুখে বের হয় ড.আনিকা।মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখেছে সে!
আনিকা আপুর মুখ দেখে নির্ঝরের বুকটা ধুক করে উঠে…
তাহলে কি অনু………???

আজ সারাদিন নির্ঝরের বুকের ভেতরে কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিলো!!
অনুর ডেলিভারি ডেট যতো এগিয়ে আসছে নির্ঝরের ভয়টাও ততোই বেড়ে চলেছে তবে আজকের অনুভূতিটা সম্পূর্ণ আলাদা।
কোনো রমকে অফিসের পাট চুকিয়ে বাড়িতে আসতেই দেখে অনু বিছানা থেকে পড়ে যাচ্ছে। নির্ঝর ছুটে গিয়ে অনুকে ধরে নেয়।ততো ক্ষনে অনু ঙ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।

নির্ঝর অনুকে হাসপাতলে নিয়ে আসে।তবে এইটুকু পথ পাড় করতেই চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলেছে বেচারা।

আনিকা আপুর রেফারেন্সে অনুকে সোজা ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।তবে সমস্যা হলো এখনো কোনো লেবার পেইনই ওঠে নাই।কোনো উপায় না পেয়ে সরাসরি ট্রিটমেন্ট শুরু করে সবাই

অনুকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার আগে একটা বন্ড পেপার সই করতে নির্ঝরের প্রায় আধা ঘন্টা সময় লেগেছিল।

ওটিটা অনেক সিরিয়াস।একেই তো ক্রিটিকাল প্রেগনেন্সি তার উপর টুইন বেবি। বেশ সিরিয়াস
সিচুয়েশন। নির্ঝরের কেন যেন বার বার অনুর বলা কথা গুলো মাথায় ঘুরছিলো….আসলে সময়টা খারাপ তাই খারাপ কথাগুলোই মাথায় আসবে এটাই স্বাভাবিক!!!

-শুনুন মি.চৌধূরী আমি যদি মরে যাই তাহলে কিন্তু একদম বিয়ে করবেন না।

-কেন করলে তোমার সমস্যা কি? তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না আমি কাকে কি করলাম না করলাম তাতে তোমার কি??

-শুনুন কষ্ট করে সংসার করলাম আমি।আপনাকে বন মানুষ থেকে মানুষ বানালাম আমি আর শেষে কিনা আপনাকে অন্য কেউ নিয়ে নেবে!!
-নিলে ক্ষতি কি??
-উম্ম…আমি মরে গেলেও ভূত হয়ে আসবো আপনার ঘাড় মটকাবো!!কাউকে নিতে দিবো না!হুহ!!
-ও বা বা তাই নাকি!!
-হুহ
-বুঝলাম
-কি?
-তুমি তোমার বরের প্রেমে পরছো!!
-তা পরেছি অনেক আগেই তাইতো ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না!! তবে আমি মরে গেলে সত্যিই কি আপনি আরেকটা বিয়ে করবেন???
-আরেক বার মরার কথা বললে ভালো হবে না কিন্তু
-শুনুন আমার কপালে যদি মৃত্যু লিখা থাকে তা কি আর কেউ আটকাতে পারবে….
-অনু….
“সেদিন আর বাকি কথা বলতে পারেনি বেঁচারা….কথাগুলো গলার কাছে এসে আটকে যায়।চোখের জল হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। অনু নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে…..এরকম মানুষকে ফেলে কে যেতে চাইবে পরপারে।”
তবে একটা একটা সন্তান যে আমার চাই”….মা হওয়ার সুখ পেতে চায় সে তাতে যদি প্রিয়জন দের ছেড়ে অকালে ঝড়ে যেতে হয় তাতেও রাজি….”

অনুর কথাগুলো মনে হতেই নির্ঝরের হৃদযন্ত্রটা দ্বিগুণ গতিতে কেঁপে উঠে।
প্রায় তিন ঘন্টা হতে চলেছে তবে অনুর কোনো খবর নেই।
হটাৎই ওটির দরজা খুলার শব্দে নির্ঝরের ধ্যান ভাঙ্গে।
সামনে তাকিয়ে আনিকা আপুর এমন মুখ দেখে নির্ঝর যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
তবে কি আনিকা আপু আমার অনুকে বাঁচাতে পারেনি???
সব কি শেষ হয়ে গেল???
অনু হাত ধরে কি কাটাতে পারলাম না জীবনের শেষ বসন্ত…..
এমন হাজারো চিন্তা মনের ক্যান্ভাসে আকিবুকি করছে চোখের জলে।আনিকা আপুকে কিছু জিঙ্গাসা করার সাহসটুকুও নেই….
নির্ঝর শুধু এক দৃষ্টিতে আনিকা আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
“সিচুয়েশন যেন অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর”

আনিকা আপুই প্রথম কথা বলতে শুরু করে….
-নির

আনিকা আপুর ডাকে নির্ঝরের সারা শরীরটা যেন আরো কেঁপে উঠে….
নির্ঝর কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে
-আপু অনু….ঠিক আছে তো সব কিছু….
-আসলে…
-কি হলো বলো??
-আসলে অনু….(মাথা নিচু করে….)
-বলো
-আসলে অনুর…
-বলবা তো…(ধমক দিয়ে)
-নির আসলে তোর একসাথে দুইটা মেয়ে হয়ছে মানে টুইন বেবি যাকে বলে আর অনুও একদম ঠিক আছে….(এক নাগাড়ে গড় গড় করে)

আনিকা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে্ নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে একটা মিচকি হাসি দেয়।

নির্ঝর তখনও স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিকা আপুর দিকে…..
হটাৎই কোথা থেকে দুজন নার্স তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে দুটো বাচ্চা নিয়ে নির্ঝরের দিকে এগিয়ে আসে।নির্ঝর চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।আনিকা আপু ইশারায় নির্ঝরকে হাত বাড়িয়ে দিতে বলে।

নির্ঝরও হাত বাড়িয়ে বাচ্চা দুটোকে কোলে তুলে নেয়।
কেমন বাবা বাবা অনুভূতি কাজ করছে….আবেগ ধরে রাখতে না পেরে নির্ঝর ওখানেই কেঁদে দেয়।ততোক্ষনে অনু নির্ঝরের বাড়ির সবাই চলে এসেছে।নির্ঝরকে এরকম কাঁদতে দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য তারাও থমকে গিয়েছিলো।
আসলে মানুষের মনে ভালোর চেয়ে খারাপই তো আগে আসে কিনা!!

তবে শেষ অব্দি সবাই হেসেছিলো।
কারন নির্ঝরের এ কান্না কোনো দুঃখের কান্না নয়।এ কান্না সুখের কান্না!!
ব্যাস এবার সবাই খুশি।

বাচ্চাদের নাম রাখা হয়…..
মৌনতা আর পূর্নতা..
নাম নিয়ে তেমন কোনো বিলম্বনা হয় নি।দুটো নামই আনিকা আপুর দেওয়া!!
নির্ঝর অনুও আনিকা আপুর দেওয়া নাম দুটো সাদরে গ্রহন করেছে।

আল্লাহ মানুষকে রক্ষা করে কোনো না কোনো মধ্যমের ভেতর দিয়ে।
নির্ঝর অনুর কাছে আল্লাহর সেই মাধ্যম হলো আনিকা আপু।তার চেষ্টা পরিশ্রম,সঠিক চিকিৎসা আর আল্লাহর ইচ্ছায় আজ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে…!!

প্রায় চার দিন পর অনুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।আজ অনু একজন পূর্ণ নারী স্বামী সংসার সন্তান সবই আছে আর কি চায়।
শ্বাশুড়িরও আর কোনো রাগ নেই অনুর উপর…..
ওনিও বেশ আদর সোহাগে ভরিয়ে রেখেছেন নাতনীদের সাথে অনুকেও।। আজকাল অনুকে বেশ চোখে হারান তিনি।

কতোটা মনের জোড় থাকলে এভাবে মা হওয়া যায়।

দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেছে।বাচ্চারা হামা গুড়ি দিচ্ছে।আধো আধো বুলিতে অনুকে মা মা করছে… আর নির্ঝরকে দেখলেই দুজন একসাথে…….বা…বাবাবাবাব বি বু…..অদ্ভুত সব আওয়াজ করে আর নির্ঝর যখন কথাবলে দুজন একসাথে খিল খিল করে হেসে উঠে….

অনু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে বাবা মেয়েদের দিকে।।।মাঝে মাঝে অনুও খিল খিল করে হেসে দেয়!!!

তবে সমস্যা হলো একজন কাঁদলে আরেক জনও তাল মিলিয়ে কাঁদতে থাকে এরকম দুজন বিচ্ছুকে সামলাতে হিম সিম খাচ্ছে অনু।
সারাদিন বাচ্চা সামলানোর দায়িত্ব অনুর আর রাতে নির্ঝরের।

সব মিলিয়ে দিব্যি চলছে অনুর সংসার।

তবে ভাগ্য কখনো কখনো কারো জন্য সুখের দূত হয় আবার কারো ক্ষত্রে বেশ নির্মম।

[আজ অনু পূর্নতা পেলেও একজন নারী অপূর্নতার সাগরে ডুবে আছে…
একটু পূর্নতা লাভের আশায় গভীর থেকে গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে সে তবে কোথাও বিন্ধু মাত্র পূর্নতার লেম মাত্র নেই……]

সকাল সকাল কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুর ঢুলু ঢুলু চোখে অনু নিচে নেমে এসে দরজা খুলতেই দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে।সায়নের কাঁধে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।

এলোমেলো পোশাক উশখু খুশখো চুল। এক হাতে সায়নের শার্টটা খামচে ধরে আছে সে।অনু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।সায়নের চেহারার ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।চোখের নিচে কালো দাগ চোখ মুখ বসে একাকার।

অনু সায়নকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে
-তুমি এতো সকালে?কিছু না বলে এভাবে চলে এলে যে?আর নীরা কোই বেশ কিছুদিন ধরে ওর কোনো খবরও তো দিচ্ছো না আর এই মেয়ে টা কে??
-(…)
-কি হলো বলে নীরা কোই…..

মেয়েটা সায়নের বুক থেকে মাথা তুলে তাকায় অনুর দিকে….
অনু খানিকটা অবাক হয় ঠিক অবাক নয় বরং চমকে যায়…..

-নীরা….!! এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার!!

(নতুন করে সরি বলার আর কিছুই নেই।কথায় আছে বিপদ যখন আসে চারদিক থেকেই আসে।হটাৎ করে আম্মু সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে এক পায়েরই দুই জায়গায় ভেঙ্গে গেছে….আপাতোতে ফুল প্লাস্টার।সবাই আম্মুর জন্য দোয়া করবেন।আর গল্পের লাস্ট পার্ট কালকে দিবো(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here