ভালোবাসায়_পাগলামি লাস্ট পার্ট

0
5636

ভালোবাসায়_পাগলামি
লাস্ট পার্ট
#writer:Maliha Islam Tafsi (jeba)

?
সকাল বেলা চোখ মেলে সাবিহা আফরান এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আফরান ডেব ডেব চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাবিহা আফরান দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–
-গুড মর্নিং
-গুড মর্নিং বউ।
-এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
-আদর করতে ইচ্ছে করতাছে বউ টা কে।?
-এতো আদর লাগবে না আমার। আপনার ভালোবাসার পাগলামি তে এমনিতেই আমি পাগল হয়ে গেছি(হি হি করে হেসে বলল সাবিহা )
-তাই নাকি? (ভ্রু কুঁচকে বলল আফরান )
-হুম,,তাই। এখুনি সরুন। ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে নাস্তা বানাতে হবে।
-এতো সার্ভেন্ট কি রেখেছি আমার বউ টা কাজ করার জন্য? ?
-আমি থাকতে আপনারা অন্য কারো হাতের বানানো নাস্তা খাবেন কেন?আর বিশেষ করে মা খুব পছন্দ করেন আমার হাতের রান্না করা খাবার।
-আচ্ছা যেও একটু আদর করে দেই এখন।
(সাবিহা ঠোঁটের দিকে এগুতে এগুতে বলল আফরান )
-জ্বী না,,,, (আফরান কে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে উঠে গেল সাবিহা)
-এইটার ফল কিন্তু ভালো হবে না।(দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল আফরান )
-ঠিক আছে পরে দেখা যাবে।(হাসতে হাসতে কথাটা বলে সাবিহা একটা হলুদ কালার শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল।)


ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে নাস্তা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে দিল সাবিহা। এখন সবাই কে ডাকার পালা। শাশুড়ির রুমের দরজা নক করে শাশুড়িকে ডেকে আসল সাবিহা । আফরান ও নিচে এসে সবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

সাবিহা সোহরাব এর রুমের দরজা নক করল। সোহরাব রুমের দরজা খুলে সাবিহা কে কি যেন কাজ আছে বলে রুমে দাঁড় করিয়ে রাখল। হঠাৎ সোহরাব সাবিহা কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরল।
সাবিহা ভয়ে বলে উঠল—
-কি করছেন আপনি সোহরাব ছাড়ুন আমায়।(চিৎকার করে কথাটা বলে উঠল সাবিহা)
-কাম ডাউন সাবিহা। আমার কথাটা শুনো প্লিজ।
-কি কথা শুনবো আমি?ছাড়ুন আমাকে।

সোহরাব সাবিহার হাতে ধরে বলতে লাগল–
-দেখো সাবিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি । আর ঐদিন আমি নিজের চোখে দেখেছি আফরান তোমাকে খুব মারে। আর আমি এটাও জানি তুমি আফরান কে ভালোবাসো না। চলো আমরা দুইজন পালিয়ে যায় ।

অপরদিকে সাবিহা আসছিল না দেখে আফরান সাবিহা কে ডাকতে গিয়ে এইসব দেখে রেগে আগুন হয়ে আছে। এক টানে সোহরাব এর হাত ছাড়িয়ে সাবিহা কে নিজের বুকের মধ্যে এনে জরিয়ে ধরল আফরান ।
-তোর সাহস হলো কি করে সাবিহার হাত ধরার?
-আফরান দেখ,,,,
-আর কোনো কথা শুনতে চাই না তোর। এখুনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। আর কোনোদিন ও যেন তোকে সাবিহার আশেপাশে না দেখি। আরেকটা কথা মা যেন এইসব কোনোভাবেই বুঝতে না পারে। বুঝতে পারলে এর পরিণাম খুব খারাপ হবে।

সাবিহা আফরান কে কিছু বলতে যাবে তখনি আফরান বলে উঠল–
-তোমার কিছু বলতে হবে না। আমি জানি সব দোষ সোহরাব এর। আমি তোমাকে ভুল বুঝিনি । আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছি সোহরাব এর নজর তোমার উপর।

আফরান এর কথা শুনে সাবিহার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। আরও শক্ত করে সাবিহা কে জরিয়ে ধরল আফরান ।

?

এক বছর পর,,,,,
হাসপাতালে ওটি র সামনে বসে আছে আফরান আর ওর মা। কিছুক্ষণ আগে সাবিহা কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে সে। সাবিহা মা হতে যাচ্ছে । এই এক বছরে অনেক খুশিতে ভরিয়ে দিয়েছে সাবিহা আফরান এর জীবনটাকে। আজ আফরান এর ভুলের জন্য সাবিহা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। ডাক্তার বলেছে মা সন্তান দুইজন কে বাঁচানো অনেক হার্ড।

সাবিহার বাচ্চা সাবিহা দুইজনই খুব ভালো ছিল। আজ এই দশা শুধু আফরান এর জন্য । ওদের কিছু হলে আফরান মরে যাবে।
সকাল বেলা আফরান কে অনেক ডেকেছিল সাবিহা কিন্তু আফরান সারারাত অফিস এর একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে তাই গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিল সে। রুমে পানি না থাকায় আফরান কে অনেক ডেকেছিল সাবিহা । নয় মাস চলছিল তার প্রেগনেন্সির তাই সে নিচে যায় না একা একা যদি কিছু হয়ে যায় । কিন্তু আজ তার ভয় টা সত্যি হয়ে গেল। আফরান কে ডেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পিপাসায় সে নিজেই গেল পানি আনতে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পা পিচলে পড়ে গেল সাবিহা। সাবিহার চিৎকারে আফরান সার্ভেন্ট সবাই দৌড়ে এসে দেখে সিঁড়ি দিয়ে রক্ত গড়গড়িয়ে পড়ছে।

কথাগুলো মনে করে পাগল এর মতো কাঁদতে লাগল আফরান। আফরান এর মা সেই কখন থেকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আফরান পাগল এর মতো কেঁদেই যাচ্ছে । তার বার বার মনে পড়ছে গাড়িতে তার বুকে মাথা রেখে সাবিহার বলা শেষ কথা গুলো। হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় ব্যাথায় কুকড়াতে কুকড়াতে আফরান এর বুকে মাথা রেখে সাবিহা বলেছিল—-


আফরান আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন । আজ যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আপনি একদম ভেঙে পড়বেন না। আয়েশা আপনাকে ছেড়ে যাওয়া তে যেভাবে পাগলামি করেছিলেন সেইভাবে একদম পাগলামি করবেন না। আর আপনার ভালোবাসার পাগলামি টা সত্যি পাগল করে দিবে যেকোনো মানুষ কে। আমি সারাজীবন আপনার এই ভালোবাসার পাগলামি টা দেখতে চাই আমার জন্য সারাজীবন ।
সাবিহার কথাগুলো শুনে আফরান সাবিহা কে আরো শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে রেখেছিল ।


অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু ওটির ভিতর থেকে এখনও কোনো ডাক্তার বেরিয়ে আসছে না। তাহলে কি সাবিহা কে বাঁচাতে পারবে না তারা । কথাটা ভাবতে ভাবতে আফরান ওঠে দাড়াল।
-কোথায় যাচ্ছিস?
-তুমি এখানে থেকো মা । আমি আসছি। আমি পারছি না আমার সাবিহার কষ্ট দেখতে।
-কিন্তু?
মায়ের কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে আফরান গাড়ি নিয়ে চলে আসল কবরস্থান এর কাছে। গাড়ি থেকে নেমে কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল অনবরত ঝরতে লাগল আফরান এর। হে সে আজ তার আয়েশার কবরের কাছে এসেছে।

আয়েশা তুমি জানো?সাবিহা আজ আমার ভুলের জন্য মৃত্যুর সাথে লড়ছে। আমি এতো ইরেসপন্সিবল কি করে হলাম?আজ যদি সাবিহার কিছু হয় আমিও শেষ হয়ে যাবো আয়েশা। তুমি চলে যাওয়ার পর সাবিহা আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে আজ ওর কিছু হলে আর কাকে নিয়ে বাচবো আমি??


হঠাৎ আফরান এর ফোন বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখল মায়ের ফোন? ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে যা শুনল শুনে আর এক মুহূর্ত ও দেরি করল না সে গাড়িতে ওঠে তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে এসে দৌড়ে গিয়ে একটি কেভিনে ঢুকল।

কেবিনে ঢুকে হাঁটু গেড়ে বসে কেঁদে দিল আফরান । এই কান্না কষ্টের কান্না না। এই কান্না তার সাবিহা কে ফিরে পাওয়ার কান্না । এই কান্না তার আজ বাবা হওয়ায় খুশির কান্না । আজ আফরান বাবা হয়েছে ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে তার দেখতে একদম সাবিহার মতো কিন্তু হলুদ পরী না সাদা পরী ?

আফরান উঠে সাবিহার হাত টা শক্ত করে ধরে এলোপাথাড়ি কিস করতে লাগল। তারপর মেয়ের কপালে আলতো ভাবে চুমু দিল। সাবিহা আফরান এর দিকে তাকিয়ে বলল এই দেখো তোমার মেয়ে টা কতো কিউট হয়ছে । তোমার আয়ানা একদম তোমার মতো কিউট হয়েছে। আফরান সাবিহার কথা শুনে হেসে দিলো।

সাবিহা আফরান এর হাত টা শক্ত করে ধরে একটা চুমু দিয়ে বলল–
বলেছিলাম না আমি সারাজীবন তোমার ভালোবাসার পাগলামি দেখতে চাই?এখন আমি আর আমার মেয়ে দুজন মিলে দেখব আপনার ভালোবাসার পাগলামি আফরান চৌধুরী??



(সমাপ্ত )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here