গল্পঃদেনাপাওনা পর্বঃ৩য়

0
2480

গল্পঃদেনাপাওনা
পর্বঃ৩য়
লেখাঃ Md. Nazmul Huda

নিলাদের বাসায় গেলাম।গিয়ে নিলাকে খুঁজলাম।পরে জানতে পারলাম আরো তিনমাস আগে নিলার বিয়ে হয়েছে।মাথায় বাজ ভেঙে পরলো।তারপরেও বিশ্বাস হলো না।

নিলাদের বাসার গেইটের সামনে সেই দুপুর থেকে এখন রাত ১১ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে বসে কাটাচ্ছি।ভাইয়া আর ভাবিকে কিছু না বলতে দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।নিলার বাবাও আমাকে একবার দেখেছে বাট কোনো কিছু না বলেই বাসার মধ্যে চলে গেলো।বাসার সামনে ফুটপাতে একটা দোকান ছিলো আমি সেই দোকানের ছাউনির নিচে বসে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছি।সেখানে বসে হেলান অবস্থায় গভীর ঘুমে মগ্ন হলাম বুঝতেই পারলাম না।ফজরের আজান যখন কানে ভেসে উঠলো,আমার ঘুম ভেঙে গেলো।ভোর বেলায় নিলায় বাবা নামাজে যায়,আমি সেই অপেক্ষা করতে লাগলাম।

নিলার বাবা নামাজ শেষ করে জগিং করতে বের হয়েছেন।আমি আস্তে আস্তে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।সেও আমাকে দেখে থমকে গেলো।পাশ কেটে হাটা দিতে গেলো…..

-আংকেল প্লিজ যাবেন না।আপনার সাথে যাস্ট কিছু কথা ছিলো।তারপরেই চলে যাবো।

-কি কথা বলো?নাকি আমার মেয়েকে অসুখি রাখার জন্য আবার এসেছো?

-ছি ছি কি বলছেন আংকেল?আমি নিলার সাথে একটু দেখা করবো।প্লিজ ওর বাসার ঠিকানা একটু দিন।

-না!নিলা সুখেই আছে,আর প্লিজ নিলার সামানে যেওনা।নিলার শ্বশুরবাড়ির লোকজনে যদি জানতে পারে তাহলে নিলাকে পদেপদে অপমান করবে।

-আংকেল কেউ কিছুই জানবে না।আপনি বরং নিলার স্বামীর ঠিকানা দিন।আমি তার সাথেই দেখা করবো।

-নিলয় প্লিজ!আমার এই অনুরোধ টুকু রাখো।প্লিজ!

-আপনি কি ভাবেন?আমি চাইলে নিলার সাথে এমন না করে নিলাকে বিয়ে করতে পারতাম।আপনার অমতেই নিলা আমাকে বিয়ে করতো।যেটা বলতাম নিলাকে সে ঠিক সেইটাই করতো।আজ আপনার জন্য আমরা দুইটা মানুষ মৃত।সব কিছু আপনার জন্যই হয়েছে।আপনি আমাদের কষ্ট কিভাবে বুঝবেন?আরে আপনি তো সব সময় স্বার্থের পিছে ছুটছেন।কখনো কি আপনার মেয়ে কথা ভেবেছেন?সে কি অন্যের হয়ে খুব ভালো থাকবে।মোটেই না!দুইটা মানুষ দুই প্রান্তে থাকবো,বাট আমাদের মন দুইটা ঠিক চৌম্বকের মত আকর্ষন করতে থাকবে।
যাক’গে আপনাকে বলে কি লাভ,আপনাকে পিতার সন্মান দেখিয়ে সব কিছু মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।
ভালো থাকবেন!

নিলার বাবা মাথা নিচু করে হেটে গেছে!কথা গুলো অনেক রাগ নিয়েই বললাম তাছাড়া আর কিছুই করার নাই।আমি যে এলাকায় থাকতাম সেই এলাকায় গেলাম।সেই এলাকার অনেক মানুষের সাথে চলাফেরা আছে।ওদের সাথে দেখা করেই চলে যাবো।

পরে একবন্ধুর কাছে জানতে পারলাম নিলার স্বামী রাহুল ইন্ডাস্ট্রির এমডি।এবং নিলার স্বামীর নামই রাহুল।আমি সেই ইন্ডাস্ট্রির ঠিকানা নিয়ে চলে গেলাম।অফিসের বারান্দায় বসে আছি।কারন নিলার স্বামী এখনো আসে নি।প্রায় ঘন্টা খানেক বসার পরে যানতে পারলাম নিলার স্বামী মিস্টার রাহুল এসেছে।তার অফিসের পিয়নকে জানিয়ে রেখেছিলাম যে তাদের বসকে জানাতে যে একটা লোক তার সাথে দেখা করতে এসেছে।

নিলার স্বামী আমাকে ডেকে পাঠালেন।আমি মিস্টার রাহুলের রুমে প্রবেশ করলাম।তিনি মাথা উঠাতেই আমি চমকে উঠলাম।

এই তো সেই রাহুল যে রাহুল কয়েকটা রেইপ কেইসের আসামি। এবং আমরা যখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ছিলাম তখন আমাদের এক ব্যাস নিচের একটি মেয়েকে রেইপ করেছিলো।সেই মেয়েটি থানায় মামলা করার পরেও কোনো সঠিক বিচার পায়নি।বাবা অঘাত টাকার বিনিময়ে সব কেইসের ফয়সালা করতো।মেয়েটি সঠিক বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করে মারা গেলো।আর এই রাহুল কিনা এখন বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে।

আচ্ছা নিলা কি এইসব বিষয়ে কিছুই জানে না?নিলার বাবাও কি টাকার জন্য সব কিছু ভুলে গেছেন।কিভাবে নিলার জন্য মানিয়ে নিয়ে পারলো এই জানোয়ারটাকে?

-কি ব্যাপার আপনি চুপ কেনো?আর এভাবেই অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

-সরি!হঠাৎ করে একটা কাজের কথা মনে পরে গেলো তাই চিন্তিত হয়ে গেলাম।

-কি জন্য আসছেন বলেন।পিয়ন বললো আপনি অনেক আগেই এখানে এসেছেন।

-জ্বী,আসলে আমি এই শহরে এসেছি একটা চাকরির জন্য।এক বন্ধু বললো আপনার এখানে নাকি কর্মচারী নিবেন?তাই জানতে আসলাম আমার কি কি আনতে হবে বা আগে কোন ধরনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।(আসলে কথাটা মিথ্যা বললাম।এই মুহুর্তে নিলার কথা উঠালে ফেঁসে যেতাম।)

-কাগজপত্র কিছু এনেছেন?

-না স্যার!

-ঠিক আছে কালকে নিয়ে আসবেন।এখন আসুন আমার একটা জরুরী কাজ আছে!

– ওকে স্যার!

আমি চলে আসলাম।মাথায় মধ্যে এখন অন্য কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে!ইচ্ছা করতেছে এই রাহুলকে খুন করে কুত্তা দিয়া খাওয়াইতে।নেমক হারাম একটা জানি না কত মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।আর কত মেয়ের জীবন ধ্বংস করেছে।

ভাবছি এই জানোয়ারটা নিলাকে কেমন ভাবে রেখেছে।নিলা কি সুখে আছে?আমার নিলার সাথে কথা বলা দরকার।খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিলা কেমন আছে?

নিলা আমাকে যে বান্ধবীর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো আমি সেই বান্ধুবীর বাসায় গেলাম।গিয়ে নিলার খোজ খবর নিলাম।

নিলাকে নাকি নিলার বাবার বাসায়ও যেতে দেয় না নিলার শ্বশুর বাড়ির লোকজনে।এখন নিলার বাবার কাছে আগের পাওনা টাকা ফেরত চাচ্ছে নিলার শ্বশুর।তারমানে নিলা সব জানতে পারছে যে নিলার বাবা এই পাওনা টাকার জন্যই নিলাকে রাহুলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।

আমি নিলার সাথে কেনো সেদিন ওই আচরন করেছিলাম তা বুঝাতে পারবো নিলাকে।নিলা বুঝতে পারবে যে ওর বাবার স্বার্থের জন্যই আমি নিলার সাথে এমন আচরন করেছিলাম৷

নিলার বান্ধুবীর ফোন দিয়ে আমি নিলাকে ফোন দিলাম।অপর পাশ থেকে নিলার কন্ঠ ভেসে আসলো..

-হ্যালো মিতু বল কি খবর?

-আমি নিলয়!প্লিজ ফোন কাটবে না।তোমার বান্ধুবীর ফোন দিয়ে ফোন দেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলো না।

-কি জন্য ফোন দিয়েছেন?আমাকে আবার অপমান করতে?

-নিলা আমি তোমাকে দশ টা মিনিটের জন্য চাই!

-মানে?

-তুমি আমার সাথে দশ মিনিটের জন্য দেখা করো নিলা।প্লিজ!তোমাকে কিছু কথা জানানো আমার খুব দরকার,না হলে যে আমি তোমার কাছে সারাটি জীবন ঘৃনার পাত্র হয়েই থাকবো।

-অসম্ভব!আমি দেখা করার তো দুরের কথা আপনার সাথে আমি কথা বলতেও পারবো না।

-প্লিজ নিলা প্লিজ!

-ঠিক আছে!বিকেল চারটায় সেই যায়গায় থাকবেন।

– ওকে।

বিকেলে আমি পার্কের সেই বেঞ্চটাতে বসে আছি।যে বেঞ্চটাতে আমি আর নিলা সব সময় বসে থাকতাম।একটা কালো গাড়ি থেকে নিলা নামলো পরনে গোলাপি কালারের একটা শাড়ি পরা।মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে নিলা এগিয়ে আসলো।আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম।কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।কোনো কিছু ভেবে না পেয়ে বললাম…

-বসো!

-না ঠিক আছে।কি বলবেন বলেন?

-কেমন আছো?

-যেমনটা থাকার কথা!

-নিলা প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না।আমি সেদিন তোমাকে যে সব বলেছি তা সব তোমার বাবার অনুরোধে।

-মানে?

-হ্যা।তোমার শ্বশুর তোমার বাবার কাছে অনেক টাকা পায়।সেই টাকা তোমার বাবার পরিশোধ করার মত কোনো সামর্থ ছিলো না।তোমার শ্বশুর তোমার বাবাকে বলেছিলো তোমাকে তার ছেলের বউ করে নিবে।বিনিময়ে টাকা ফেরত দিতে হবে না।

-জানি!তবে আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতে।

-নিলা তারপরেও অনেক কিছু লুকানো আছে যা তুমি যানো না।

-কি?

-তোমার স্বামীকে আগে তুমি চিনতে?তোমার স্বামী কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে তা তুমি জানো?কিছুই জানো না।তোমার স্বামী বাবার টাকার অহংকারে অনেক মেয়েকে রেইপ করেছে।এবং তোমার স্বামীর কারনে সুইসাইডও করেছে একটি মেয়ে।

-খবরদার!নিজের দোষ ঢাকতে রাহুলের ব্যাপারে কোনো কথা বলবে না।রাহুল আমাকে সময় দেয় না তা ঠিক আছে, কিন্তু এই ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলবে না।

-তুমি কি জানো তোমার স্বামীকে আমি খুন করে দিবো!(মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেলো।)

-মানে?

-হ্যা!যা বলছি তাই!খুন করবো মিস্টার রাহুলকে।ওর সাথে আমার অনেক বুঝ পাট আছে।

-নিলয়!(আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলো নিলা)

আমি আর কিছুই বললাম না।সোজা সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।জানি!নিলা হয়তো কাঁদছে!কাঁদলে কাদুক,তা আমার ভাবার বিষয় নাই।আমার লাইফটা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে,তাই লাইফটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবো।খুন করবো আমি,রাহুলকে খুন করেই আমি এই শহর ছাড়বো!…….

#চলবে?

আগের পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া আছেঃ-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here