যেমনটা_তুমি Part 3+4
Ayusha Akter Usha
-কি বলছিস এসব তুই নূর তোর মাথা ঠিক আছে তো?
-হ্যা বাবা আমি যা বলছি ঠিক বলছি।এই বিয়ে আমি করতে পারব না।
-কিন্তু কেন?সোম বাবা তোকে কিছু বলেছে।
-না বাবা ঊনি আমায় কিচ্ছু বলেননি।এই ডিশিসনটা আমার।একবার ভাবো বাবা উনারা কতো হাই সোসাইটিতে বিলং করে কতো বড় বড় মানূষের সাথে ওনাদের ওঠা বসা।আর আমরা?আমরা সামান্য গ্রামের লোক বাবা।আমরা উনাদের সামনে দাড়ালে আমাদের প্রতি মূহুর্তে মনে পরবে যে আমরা কতোটা গরীব।উনাদের সাথে আমাদের যায়না বাবা।বিয়ে সমানে সমানে হয়।উচু নিচু তে নয়।
-নূর তুই যা বলছিস ভেবে বলছিসতো।একবার ভাব মা তোর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেছে কিছুদিন পর তোর বিয়ে।গ্রামের সবাই এই কথা জানে।এখন যদি তুই বিয়ে ভাঙতে বলিস তাহলে আমার সম্মানের কি হবে।আমি মানুষকে মুখ দেখাবো কি করে।তুই তো জানিস এখানকার মানুষরা কেমন একটা ছেড়ে আরএকটা বলে।আচ্ছা তুই এদের কথা ছাড়।তোর মিরাজ আঙ্কেল।ওর কি হবে।আমি যে ওকে কথা দিয়েছি।আমি ওর সামনে দাঁড়ালো কি করে।আমাদের বন্ধুত্ব এ দাগ লেগে যাবে নূর।আর আমি যতদূর মিরাজ কে চিনি ও কখনওই ওপর নিচ বাছাই করবে না।করলে নিজ থেকে তোকে বাড়ির বউ করার জন্য আমাকে বলত না।নূর এখনও সময় আছে ভাব আমার সম্মান এইভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিস না।
-ববাবা আমি তোমাকে একটু পরে ফোন করছি।
বলেই ফোন কেটে দিলাম।এটা কি করেছিলাম আমি।আমি এটা কেন ভাবিনি যে এই বিয়ে টার সাথে আমার বাবা মার সম্মান ও যে জরিয়ে আছে।এই বিয়ে ভাঙলে যে বাবার এত বছরের বন্ধুত্ব টাও ভেঙে যাবে।স্যার যদি উনার বাবার জন্য আমার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজী হতে পারে তবে আমি কেন পারব না।ভাগ্য আমাকে যেদিকে নিয়ে যাবে আমাকেও সেদিকেই যেতে হবে।সব ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে এলাম।পরের দিন ফোন করে বাবাকে বিয়ের আয়োজন করতে বললাম।এইভাবেই দিন কাটতে লাগল আমার।
আজ আমার বিয়ে।স্যারের বাড়ি থেকে আমার সাজগোজের সব জিনিস পাঠানো হয়েছে।ওগুলো দিয়েই আমাকে সাজানো হলো।আমি এমনিই তো একটু মোটা তার ওপর একমণ ওজনের লেহেঙ্গা আর ভারী গয়না পরে আমি তো কাহিল।না পারছি কিছু বলতে না পারছি সইতে।রাত আটটায় স্যাররা এলেন।বরযাত্রী তে শুধু আঙ্কেল আন্টি স্যার আর উনার ছোট ভাই রেহান এসেছে।উনারা কিছুক্ষণ গল্প করে খাওয়া দাওয়া করে নিল।এখন আমার বিয়ে পরানো হচ্ছে কবুল বলার সময় অনেক ধরনের চিন্তা ভাবনা মাথায় জেকে বসেছিল।সবটাকে ছুড়ে ফেলে কবুল বললাম।রেজিস্ট্রি খাতায় সাইন করার সময় দেখলাম স্যার সাইন করে দিয়েছেন।এবার আমার পালা।কা পা কাঁপা হাতে সাইন করলাম।আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।আমি সম্পূর্ণভাবে উনার স্ত্রী হলাম।অনেক দূরের রাস্তা তাই বিয়ে পরানো শেষেই বিদায় নিতে হলো।বিদায়ের সময় সবাইকে ছেড়ে আসতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।বুক ফেটে যাচ্ছিল।বরযাত্রী তে দুটো গাড়ি এসেছে।একটাতে আমার শ্শুর শাশুড়ি আর দেওর বসেছে।অন্য টাতে আমি আর উনি বসেছি।খুব কান্না পাচ্ছে
আমি এমন একটা জীবনের দিকে এগোচ্ছি যার কোনো ভবিষ্যত্ নেই যার হাত ধরে যাচ্ছি সে যে কোনো সময় মাঝপথে আমার হাত ছেড়ে দিতে পারে।তখন কি করব আমি।এই যে এখন কাঁদছি এখন তো আমার কেউ নেই যে আমার মাথায় হাত রেখে আমায় সান্ত্না দেবে।আপন সবাইকে যে আমি পেছনে ফেলে চলে যাচ্ছি।আর যাকে আপন ভেবে যাচ্ছি সেই তো আমার সবথেকে বড় প….
আর ভাবতে হলো না কারন উনি আমার দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দিলেন।আমি উনার দিকে একবার ছলছল চোখে দেখে টিস্যু টা হাতে নিলাম।নাহ যতটা ও খারাপ ভাবেছিলাম ততটাও খারাপ নয়।গাড়িতে কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারিনি।ভোরে যখন ঘুম ভাঙল তখন কারো ডাক শুনতে পেলাম।পাশে তাকিয়ে দেখি উনি নেই।গাড়ির জানালার কাছে এসে আমার শাশুড়ি মা আমায় ডাকছেন।আমি উনার কথায় সায় দিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম।উনি আমায় নিয়ে সামনে এগোতে লাগলেন।আমি সামনের দিকে তাকাতেই অবাক এত এক রাজপ্রাসাদের থেকে কম নয়।এত বড় বাড়ি এই প্রথম দেখলাম আমি।আর বাড়ি এত সুন্দর করে সাজিয়েছে যে আমি দেখেই হা হয়ে গেছি।মা আমাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেলেন।ভেতরে গিয়ে আমি আরো অবাক।মনে হয় আমি কোনো স্বপ্ন পুরিতে আছি।এত সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে।আর বাড়ি ভর্তি লোকজন।এরা কেউ বরযাত্রী যায়নি কারন অনেক দূরের রাস্তা।আমাদের দেখেই সবাই এগিয়ে এলো।আমি আড়চোখে দেখলাম।স্যার সোফার ওপর বসে আছেন।আমাকেও সেখানে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো।এরি মধ্যে উনার আমাদের ঘিরে ধরল।নানা ধরনে কথা বলতে লাগল।বিয়ের বাকি নিয়ম গুলো পালন করতে করতে প্রায় সকাল হয়ে গেছে।সব নিয়ম শেষে উনি ওঠে চলে গেলেন।যাওয়ার সময় উনার রুমে ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিতে বললেন।অন্য দিকে আমাকে উনার কাজিনরা সবাই ঘিরে রেখেছে।কথা বলছে হাসাহাসি করছে।আমিও কখনও কখনও ওদের সাথে তাল মেলালাম।ওদের কথায় বুঝতে পারলাম ওরা সবাই স্যারকে কত ভয় পায়।প্রায় আটটা বাজে তখন স্যার ওপর থেকে নিচে এসে বললেন।
-মোম আমি অফিসে যাচ্ছি।
উনার কথা শুনে সবাই হা করে উনার দিকে তাকালো।
-অফিসে যাবি মানে কালই তোর বিয়ে হলো আর আজ তুই নতুন বউকে একা রেখে অফিসে যাবি।
মা অবাক হয়ে বললেন।
-আহহা বাধা দিচ্ছো কেন যাক না অফিসে।বিয়ে হয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে।বউ তো আর পালিয়ে যাবেনা।এমনিই কাল অফিস যায় নি অনেক কাজ পরে আছে হয়তো।আজো অফিস না গেলে তো অনেক চাপ পরে যাবে ওর উপর আর এমনিতে এখানে আর ওর কোনো কাজ নেই।ও বাড়ি তে থাকলেও দেখবে ল্যাপটপ নিয়ে ঘরে বসে পরেছে।তার থেকে থেকে বরং ও অফিসেই যাক।বিকেলে ফাংশন এটেন্ট করবে।
বাবা সোফায় বসতে বসতে বললেন।
-হুম সেটাই কর।বাপ ছেলে দুজনেই এক।বাবাও তো আর কম নয় নিজের বাসর রাতে অফিসে মিটিং করতে চলে গেছিলেন তার ছেলে আবার কেমন হবে।
মায়ের এই কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হাসতে লাগল।রেহান হাসতে হাসতে বলল
-মা তুমি একদম চিন্তা কর না আমি কিন্তু মোটেই বাবার মতো হয়নি আমি বিয়ে করলে পরপর একমাস আমি কোনো কাজ ঘুরেও দেখব না প্রমিস।
বলেই আবার হাসতে লাগল।আমিও হাসছি শুধু একজন ছাছাড়া।
-ওহ গড তোমরা এসব নাটক বন্ধ করবে।আমি অফিসে গেলাম বিকেলে ফিরবো।
বলেই চলে গেলেন উনি।আর আমি উনার যাওয়া দেখতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর সবাই মিলে আমাকে উনার ঘরে নিয়ে গেল।উনার ঘর দেখে এবার আমার জ্ঞান হারানোর পালা।আমাদের গ্রামের বাড়ির তিনটে ঘর মিলিয়ে ও হয়তো এই ঘরের সমান হবে না।আর সবথেকে বড় ঘর কত সুন্দর করে সাজানো।এসব কিছু বাদ দিয়ে আমার চোখ আটকে গেল বারান্দার দিকটা।ঘর থেকে বারান্দাটা ভালোই দেখা যাচ্ছে।থাই গ্লাস ভেদ করে বারান্দার সৌন্দর্য সবটাই পরিষ্কার দেখতে পারছি।ওরা সবাই আমাকে ফ্রেশ হতে বলে চলে গেল।ফ্রেশ হতে বলল কিন্তু পরব কি আমি।কাপড় তো কিছুই আনা হয়নি।সামনে আলমারি দেখে আমি কিচ্ছু না ভেবেই আলমারি খুললাম।খুলেই এবার আমার হা হওয়ার পালা।এ অর্ধেক শহরের কাপড় এখানে রাখা।শাড়ি কামিজ গোল জামা সব ধরনের কাপর রাখা এখানে।আমি ওখান থেকে একটা লাল রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম।একেবারে গোসল করে বেরিয়ে এলাম।দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে।
-নূর মা কাপড় পছন্দ হয়েছে তো তোমার।
-জ্বী মা।না পছন্দ হওয়ার কি আছে।
-সবগুলিই আমি পছন্দ করেছি।আচ্ছা ঠিক আছে তোমার নিশ্চয়ই খিদে পেয়েছে।খাবার এনেছি খেয়ে নাও কেমন।আমার বাইরে অনেক কাজ পরে আছে গো আমি গেলাম।তুমি খেয়ে নিও।
বলেই মা চলে গেলেন।আমি রুমে চাথিদিক ভালো করে দেখে।বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম ।খিদে নেই তাই না খেয়েই শুয়ে পড়েছি।শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়ালই নেই।
to be continue….
#যেমনটা_তুমি
Ayusha Akter Usha
“”4″”
love part start….
ঘুমের ঘোরেই মনে হলো কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।চোখ খুলেই দেখি মা অগ্নি মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি মাকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলাম।
-মা আপনি??
-হ্যা আমি।তুমি কি গো নূর তোমাকে আমি সেই কখন খাবার দিয়ে গেছি আর তুমি না খেয়েই শুয়ে পরেছে।
-মা আসলে আমার খিদে ছিল না তাই….
-থাক আর বলতে হবেনা আমারি ভুল ছিল।তুমি যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।
-না মা আসলে…
-বললাম না যাও।
মায়ের কথা শুনে আমি বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।মা আমাকে বিছানায় বসতে বলল।আমিও চুপচাপ বসে পরলাম।তারপর মা নিজের হাতে ভাত মেখে আমায় খাইয়ে দিতে লাগল।মায়ের এই ভালোবাসা দেখে আমার চোখ ছলছল করে উঠল।এক মাকে ছেড়ে এসে আর এক মা পেয়েছি।খাইয়ে দিতে দিতেএ মা কথা বলা শুরু করল।কথা বলতে বলতেই একসময় বলল
-আমার ছেলেটা একটু চুপচাপ থাকে ঠিকি কিন্তু দেখো ও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে।আমার ছেলের মতো ছেলে লাখে একটা পাওয়া যায়।ওকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আকড়ে রেখ মা।দেখবে তোমাদের সংসার সুখের সাগরে ভাসবে।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটা সৌজন্য মূলক হাসি দিলাম।মা কত সরল মনের তা উনার কথার মাধ্যমেই বোঝা যায়।মা উনাকে ভালোবাসার কথা বলছেন কিন্তু মা তো জানে না উনার ছেলে বিয়ের আগেই উনাকে না ভালোবাসার ডিল করে এসেছে আমার সাথে।মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলেন।বিকেলে বউভাতের রিসেপসন শুরু হলো।উনিও ঠিক সময় মতো এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন।আমাকে সাজিয়ে গুজিয়ে স্টেজের ওপর উনার পাশে বসানো হলো।সবাই আমাদের সাথে দেখা করে একটা সেল ফি নিয়ে চলে যাচ্ছে।বাবাও এসেছিল।কিছুক্ষণ থেকেই চলে গেছেন।বিয়ের পর দিন বাবার বাড়ি যাওয়ার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়ম পালন করা হলো না।সবাই সবার মতো কথা বলছে।গেস্টরা এদিক সেদিক যা কথা বলছে তার মধ্যে আমাকে নিয়ে ওদের তাচ্ছিল্যের হাসিটাই আমি বেশি শুনতে পাচ্ছি।এরকম বড় বাড়িতে আমার মতো মেয়ে বউ হয়ে এলে এরকম কথা সইতেই হবে।রাতে রিসেপসন শেষে।আমাকে উনার ঘরে নিয়ে আসা হলো।ঘরটা বাসর ঘরের মতো সাজানো হয়েছে।কিন্তু কিছুক্ষণ আগেও এই ডেকোরেটটা ছিল না।আমাকে বেডের ওপর বসিয়ে রেখে সবাই চলে গেল।আমি আর উনার আসার জন্র অপেক্ষা করলাম না যখন জানি উনি আমার জন্য এই ঘরে আসবেননা।তাই আমি কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।ড্রেস চেন্জ করে এসে আমি বারান্দায় গেলাম।এই জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর।থাই গ্লাস দিয়ে সবুজ পাতা গুলো বেয়ে নিচে নেমেছে।টবের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনে ফুল গাছ রাখা।হয়তো নিয়মিত কেউ এগুলোর দেখভাল করে।আমি বারান্দার রেলিং ধরে দাড়ালাম।বাইরের শহরটাকে দেখতে লাগলাম।এই সম্পর্কটা কতদিনই বা টিকবে।একদিন না একদিন নিশ্চয়ই উনি আমার ওপর বিরক্ত হয়ে যাবেন।আর আমাদের এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে চাইবেন তখন আমার কি হবে ।আমি কোথায় যাবো।আমার সাথেই কেনো এমনটা হতে হলো।এই কোলাহল পূর্ণ শহর একসময় নিস্তব্ধ হয়ে যাবে আচ্ছা আমার জীবনটাও কি এই শহরের মতোই একসময় নিস্তব্ধ হয়ে যাবে।কি জানি কি হবে।তবে যেটা হবে সে ভবিষ্যতে দেখা যাবে।এখন ওসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দা থেকে রুমে এলাম।দেখি উনি ওয়াশরুম থেকে এখটা টাওজার আর একটা টি শাট পরে বেরোচ্ছেন।আমাকে দেখে বললেন।
-আজকের দিন টা এখানেই এডজাস্ট করে নিন কাল থেকে আর অসুবিধা হবে না।কাল মোম ডেড চলে গেলে আপনি অন্য রুমে শিফ্ট হতে পারবেন।
উনার কথা শুনে আমি শুধু মাথা নাড়ালাম আর কিছুই বললাম না।শুনেছি মা বাবা নাকি এখানে থাকেন না।সিলেটে বাবার নিজস্ব বিজনেস থাকায় তারা ওখানেই থাকে।বাবা অসুস্থ তাই মা ঊনাকে একা ছাড়েননা।উনি আবার বললেন
-আপনি বেডে শুয়ে পরুন আমি সোফায় শুয়ে পরছি।
-আমার একটা কথা বলার ছিল আপনাকে।
-কি কথা
ভ্রু কুঁচকে বললেন উনি।
-আসলে আমি জবটা কান্টিনিও করতে চাই।যদি আপনি পারমিশন দেন তো…
-এতে আমার পারমিশন নেওয়ার কি আছে।এটা আপনার লাইফ আপনার ডিশিসন।তবে হ্যা অফিসের অফিসের আমাদের বিয়ের ব্যাপারে জানতে না পারে।আমি চাই আমার পারসোনাল লাইফের কারনে আমার প্রোফেশনাল লাইফ নষ্ট হোক।
উনার কথা আমার বুকে সুই হয়ে বিধল।এমন কপাল আমার নিজের স্বামিকেও স্বামী পরিচয় দেওয়ার অধিকার নেই।কি আর করার আমি চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরলাম।উনিও কম্বল মুড়ি দিয়ে সোফায় শুয়ে পরলেন।সারারাত এপাশ করেছি কিছুতেই ঘুম আসছিল।বিভিন্ন ধরনে চিন্তা মাথায় ভর করেছিল।অনেক কষ্টে শেষ রাতে একটু ঘুম পেল।কিন্তু আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে কাবার্ড থেকে জায়নামাজ খুঁজে নামায পরলাম।নামায পরে আবার গিয়ে শুয়ে পরলাম কিছুক্ষণ পর টের পেলাম উনি উঠে ওয়াশরুমে গেলেন।ওখান থেকে বেরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে।এত সকাল সকাল কোথায় গেলেন।আমিও আর দেরি না করে নিচে নেমে এলাম।দেখি মা রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট তৈরী করছেন।আমি গিয়ে মাকে সাহায্য করতে লাগলাম।মা বাধা দিলেও আমি জোর করেই মাকে সাহায্য করলাম।মা আর আমার অনেক গল্প করাও হলো।ব্রেকফাস্ট তৈরী আমরা সব ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রেখে গল্প করতে লাগলাম।প্রায় সাততটার দিক দেখি স্যার বাড়ি ফিরলেন।উনার ড্রেস দেখেই মনে হচ্ছে উনি জোগিংয়ে গেছিলেন।ঊনাকে আসতে দেখে মা রান্নাঘর থেকে গ্রীনটি এনে আমার হাতে দিয়ে উনাকে দিয়ে আসতে বললেন উনি জোগিংয়ের পর গ্রিন টি খেতে পছন্দ করেন।আমি মায়ের হাত থেকে কাপ নিয়ে সোজা রুমে আসি।রুমে এসে দেখি কেউ নেই।হয়তো ওয়াশরুমে।তাই আমি গ্রিন টি টি টেবিলের ওপর রেখেই চলে এলাম।কিছুক্ষণ পর বাবা রেহান এসে ডাইনিং টেবিলে বসল।তার কিছুক্ষণ পর উনিও চলে এলেন।সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করলাম।ব্র েকফাস্ট শেষে সবাই সবার রুমে চলে গেলেন।আমি মাকে টেবিল গোছাতে হেল্প করতে লাগলাম।দেখি উনি রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলেন।আর আমি মা বাবা আর রেহানের সাথে সময় কাটালাম।ওদের সাথে সময়টা ভালোই কাটল।রেহান তো আমার নিজের বড় বোন মেনেই নিয়েছে।বিকেলে স্যার বাড়ি ফিরলে মা বাবা রেহান সবাই সিলেটের যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরল।রেহান সিলেটের এক হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।আমি মাকে থাকতে বললেও উনি বললেন বাবার নাকি একটা কাজ পরে গেছে তাই উনাদের যেতেই হবে।স্যার ওনাদের এগিয়ে দিয়ে এলো।আমি ততক্ষণে বাড়িটা ঘুরে দেখতে লাগলাম।আসার পর থেকে বাড়িটা ভালো করে দেখাই হয়নি।এত বড় বাড়িতে এখন স্যার আমি একা থাকব।আর কিছু সার্ভেন্ট।ভাবতেই কেমন ভয় লাগছে।স্যার যদি আমাকে মেরে ফেলে এই বাড়িতে পুঁতে দেয় তখন কি হবে।এসব ভাবতে ভাবতেই স্যার চলে এলেন।আমাকে আমার জিনিস পত্র নিয়ে অন্য ঘরে যেতে বললেন।আর কাল থেকে অফিস জয়েন করতে বললেন।আমি আমার সব জিনিসপত্র নিয়ে উনার পাশের রুমটায় চলে এলাম।পরের দিন অফিসেও গেলাম।অফিসে উনি আমার সাথে এমন বিহেভ করে যেন অফিসের বাইরে উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্কই নেই।এভাবেই সময় কাটতে লাগল।সময় দিনে দিন সপ্তাহে আর সপ্তাহ মাসে পরিণত হলো।আজ ছয় মাস আমাদের বিয়ের।আজ পর্যন্ত আমাদের সম্পর্কে কোনো উন্নতি হয়নি।কোনো প্রয়োজন ছাড়া আমরা একে ওপরের সাথে কথা বলি না।উনি উনার মতো তো আমি আমার মতো চলি।এখন উনার থেকে আমার কোনো এসপেকটেসন ও নেই।এখনো অফিসে কেউ জানে না আমাদের বিয়ের ব্যাপারে শুধু জানে আমি বিবাহিতা আর স্যার ও বিবাহিতা এর বেশি কেউ কিছু জানেনা। এত মাসে বদলেছে তো শুধূ একটা জিনিস।সেটা হলো আমি এখন আর উনার অফিসের সামান্য স্টাফ নই এখন আমি ঊনার পি এ।এটা অবশ্য বাবার কেরামতি।বাবার জোড়াজুড়ি তেই উনি আমাকে উনার পি এর পজিশসনটা দেন।তাঁও আমাকে আগে আমার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়েছে তার পর।এখন সবসময়ই আমাকে ঊনার আগে পিছে ঘুরতে হয়।যেমন এখন ঘুরছি।উনি কনফারেন্স রুম থেকে মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে যাচ্ছেন আর আমি উনার পিছু পিছু ফাইল আর কলম নিয়ে।উনি কেবিনে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললেন।
-মিসেস নূর হিলির যে প্রোজেক্টের ফাইলটা আপনার কাছে আছে ওটা ভালো চেক করে আমাকে দিয়ে যান।
-ওকে স্যার।
-আর কানাডার যে ক্লাইন্ডস রা এসেছে তাঁদের সাথে আজ ছয়টায় মিটিং ফিক্স করুন।
-ওকে স্যার।
বলেই চলে আসতে যাবো তখনি স্যার আবার ডাকলেন।
-মিসেস নূর
আমি ঘুরে দাড়ালাম।
-yes sir..
-মি প্রদীপকে আমার কেবিনে আসতে বলুন।
-ওকে স্যার।
বলেই চলে আসব আবার স্যারের ডাক পরল।
-মিসেস নূর।আমার মনে হয় আপনার এখান থেকে যাওয়ার একটু বেশি তাড়া।
আমি দাঁড়িয়ে পরলাম।
-কই না তো সার।
-তবে এত তাড়া করে কোথায় যাচ্ছেন।আমি কি আপনাকে যেতে বলেছি।
– ন না তো স্যার আসলে…
-আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসুন।
-ওকে স্যার।আর কিছু।
এবার স্যার আমার দিকে তাকালেন
-নো মিসেস নূর।
আমি উনার কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম।উফ হাপ ছেড়ে বাচলাম।না জানি কেন উনার কেবিনে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে কফি আনতে গেলাম।যাওয়ার আগে প্রদীপ স্যার কে স্যার এর কেবিনে যেতে বললাম।প্রদীপ স্যার স্যার এর মেনেজার।আমি কফি এনে স্যারকে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আমার কেবিনে ঢুকলাম।কানাডার ক্লাইন্ডস দের ইমেইল করে মিটিং য়ের সময় জানিয়ে দিলাম।তারপর হিলির ফাইল খুঁজে নিয়ে ওটাতে চোখ বুলাতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর একটা ইমেইল রিপ্লাই এলো।আমি ওটা স্যারের একাউন্টে সেন্ট করে দিলাম।আবার ফাইলে চোখ দিলাম।এমন সময় কেউ আমার দরজায় নক করল।
-মে আই কাম ইন মেডাম।
আমি না দেখে বললাম
-কাম ইন।
-আমি কি এখানে বসতে পারি মেডাম।
এবার আমি মাথা উপরে তুলে বললাম।
-নিললয়…তুমি মজা বন্ধ করবে।
-বারে আমি আবার কি করলাম।মেডাম কাজে এতটাই বিজি যে আমার দিকে তাকানোর সময়ই নেই।
-তেমন কিছুই না আমি জাস্ট ফাইলটা দেখছিলাম।
-ওহ নূর সবসময় কাজ কাজ কর কেন।একটু আমাকেও সময় দাও।আমাকেও একটু ফ্লাট করার সময় দাও।
-আচ্ছা নিলয় বাবু এখন তাহলে আমায় ফ্লাট করতে এসেছেন।
-ধরে নিতে পারো সেটাই।
-তো এখন যদি আপনি আমাকে ফ্লাট করেন তবে আপনার ওই টিনা মিনা রিনা এসবের কি হবে?
-ওরা তো সবাই আছেই।ওরা আমার গার্লেফ্রন্ড বলে কথা।
বলেই হাসতে লাগল নিলয়।আমিও ওর সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলাম।ঠিক তখনি আমার টেবিলে থাকা কন্ট্রাক্ট ফোন বেজে উঠল।
-দেখ হয়তো এস কে স্যার ফোন করেছে।
নিলয় ভ্রু উচিয়ে বলল।আমি ওর কথা মুচকি হেসে ফোন ধরলাম।
-হ্যালো নূর স্পিকিং।
-এক্ষুনি আমার কেবিনে আসুন।
বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল।আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম ।
-নিশ্চয়ই স্যার তোমাকে নিজের কবে নে ডাকছে রাইট।
আমি মাথা ঝাকালাম।
-আমি জানতাম এরকমি কিছু একটা হবে।আমি যখনি তোমার সাথে একটু কথা বলতে আসি ওমনি স্যারের ডাক পরে।আমি নিশ্চিত এস কে স্যার আমার কোনো শত্রু ছিল।তাই এরকমটা করে।তবে চিন্তা করনা আমিও আজ আট ঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছি
।আজ তো তোমার সাথে কথা বলেই এখান থেকে নড়ব।নইলে একপা কোথাও যাচ্ছি না।আমার সব কাজ শেষ আর অফিস আওয়ারও শেষ হতে চলল।তুমি শুনে এসো স্যার কি বলে।তারপর এখানে বসে গল্প করব।তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু আমি অপেক্ষা করব।আজ আমি স্যারকে হার মানাবোই।
নিলয়ের কথা শুনে আমি অবাক।কি বলছে ও এসব।
-কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কে ওভাবে যাও আমি এখানে ওয়েট করছি তোমার জন্য।জলদি এসো।
আমিও বেরিয়ে পরলাম স্যারে কেবিনের উদ্দেশ্য।নিলয় আমার কলিগ।একসাথে কাজ করলেও আগে কখনকখনও আমাদের কথা হয়নি।আজ তিন মাস হলো আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছে।নিলয় খুব মজার মানুষ।ভালোই লাগে তার কথা গুলো।আমি স্যারের কেবিনে নক করলাম।
-মে আই কাম ইন স্যার।
-কাম ইন।
ল্যাপটপে চোখ রেখেই বললেন উনি।
আমি ভেতরে গেলে উনি বললেন
-আপনাকে যে কাজ টা দিয়েছিলাম ওটা হয়ে গেছে।
-না স্যার আর অল্প কাজ বাকি আছে।
-বাকি আছে মানে কি?এটা কি অফিস নাকি আপনার ডেটিং প্লেস যে আপনি কাজ না করে ডেট করছেন।
স্যার ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলেন কথা গুলো।
আমি ভয়ে কুকরে গেলাম।
-ssorry sir..আ আমি এক্ষুনি ফাইল কম্প্লিট করছি।
বলে চলে আসব তখনি উনি বলে উঠলেন
-স্টপ।
উনার কথায় আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে পরি।
-বাইরে কোথায় যাচ্ছেন।এখানে বসে নিজের কাজ কমপ্লিট করুন।বলেই স্যার উঠে দাড়ালের।
আমি দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কিন্তু স্যার ফাইলটা তো আমার কেবিনে।
-আমাকে কি আপনার অন্ধ মনে হয়।
-না স্যার তা কেন মনে হবে।
স্যার তাক থেকে একটা ফাইল বের করে আমার দিকে ছুড়ে মেরে বললেন।
-এই ফাইলটা কমপ্লিট করুন।অফিস আওয়ার শেষ হওয়ার আগে এই ফাইলটা আমার কমপ্লিট চাই।
আমি ফাইলটা হাতে নিয়ে চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসে পরলাম।ইস নিলয় হয়তো এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।ফোনটা ও তো নিয়ে আসলাম না যে একটা টেক্স করে দেব যে আমি যেতে পারব না যেন আমার জন্য ও অপেক্ষা না করে।উফফ বেচারা নিলয় না জানি কি করছে।
to be continue…..