জামাই-জব্দ —পর্ব চার এবং শেষ

0
5810

জামাই-জব্দ
—পর্ব চার এবং শেষ

,

— বাবা অয়ন, সাবধানে যাস তোরা।
— আচ্ছা মা! অথৈ এখানে কি করে এলো?
— কি করে আবার? তোর বাবা রেখে এসেছে।
— ও তোমরা তাহলে আমার পিছনে গোয়েন্দা ঠিক করে রেখেছিলে?
— রাগ করিস না বাবা। মেয়েটা অনেক লক্ষী।
–লক্ষী না ছাই। একটা বিড়ালের বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে।
— পৌঁছে ফোন দিস।
,
এই বলেই মা ফোন কেটে দিলো। ভিষণ রাগ হচ্ছে। বাবা নিশ্চিত কাউকে আমার পিছনে লাগিয়ে রেখে ছিল। না হলে কারো জানার কথা ছিল না আমি কোথায় যাচ্ছি।
এর মধ্যে দেখতে পেলাম কেউ একজন অথৈর সাথে কথা বলছে। আমি এগিয়ে গেলাম কাছে। কাছে যেতেই অথৈর কথা শুনতে পেলাম। লোকটাকে বলছে,,
–দেখুন, আমার বিড়ালের বাচ্চাটা কাউকে কোনো সমস্যা করবে না। এটা ছাড়া আমি যাবো না।
,
লোকটা অসহায়ের মতো মুখ টা করে বললো,,
,
–ম্যাম! এই সব জীব-জন্তু বাসের মধ্যে এলাও না। প্লিজ ওটা রেখে আপনাদের যেতে হবে।
— আপনি বললেই হবে আমি ঝিলমিল কে রেখে যাবো না।
আর আপনাদের বাসে কেন এলাও না জীব-জন্তু? ওদের কি কোনো ইচ্ছে নেই?
,

লোকটা অথৈর কথা শুনে চুপ করে আছে। আমাকে এগিয়ে কাছে যেতে দেখে বললো,,
–স্যার, বিড়ালের বাচ্চা টা রেখে যেতে হবে। এটা আমাদের কতৃপক্ষের আদেশ।
,
–আচ্ছা আমি দেখছি। আপনি যান আমি ওটা রেখে যাবো।
,
লোকটা আমার কথা শুনে চলে গেলো।
আমি অথৈ কে বললাম,,
–আচ্ছা তোমার সমস্যা কি?
এরকম করলে মানুষ কি বলে একবার ও ভেবেছো?
আমার কথা শুনে ও বললো,,
–আমার এতো ভেবে কাজ নেই। তুমি বসে বসে ভাবো।
— অথৈ পাগলামির একটা শেষ আছে। ওটা আমার কাছে দাও বাইরে রেখে আসি।
— আমি বুঝিনা ঝিলমিল সবার এতো সমস্যা কিভাবে করছে? যদি তোমার ভালো না লাগে তুমি থেকে যাও।
,
এই বলে বিড়াল টাকে আদর করতে লাগলো।
নাহ এই মেন্টাল মেয়ের সাথে কথা বলা অহেতুক। বেশি কিছু বললে হয়তো বাসের ভিতরে উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবে।
,
বাসের ড্রাইভারকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে এলাম। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
,
গাড়ি চলতে শুরু করেছে কক্সবাজের উদ্দেশ্যে।

,
অথৈ সারা পথ কথা বলে বলে আমার মাথা ব্যথা করে দিয়েছে। যদি একটু চোখ বুজে এসেছে আঙুল দিয়ে খোঁচা দিয়ে ডেকে তুলে আবার ওর কথার ঝুলি শুরু করেছে। মনে মনে চিন্তা করি মেয়েটার মুখ ব্যথা করে না এতো কথা বলতে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে বিড়ালের বাচ্চা টা চুপচাপ ছিল। কোনো ঝামেলা করেনি। দেখতে দেখতে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেলো। আমরা রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। বাস সকালের আগে পৌছাবে না।
,
হঠাৎ করে টের পেলাম অথৈ আমার কাঁধে ঘুমিয়ে পরেছে। যাক বাবা বাঁচা গেলো। এবার যদি মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়। আমি ছিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। অথৈর চুল এলোমেলো হয়ে আমার নাকে মুখে এসে পরছে।
,
বেশ কয়েকবার চুল গুলো সরিয়ে দিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আমার যেন কি হলো। অথৈর চুল গুলোর সাথে একটা বেশ মিতালি তৈরি হলো। বরং ভালো লাগতে শুরু করলো ওর এলোমেলো চুলের দুষ্টুমি গুলো।
,
,
আমাদের হোটেল বুকিং করতে করতে সকাল হয়ে গেলো। বন্ধু ফোন করেছিল ওকে বললাম অথৈ আমার সাথে তাই হোটেলে উঠেছি। অনেক রিকোয়েস্ট করলো ওর বাসায় থাকার জন্য। কিন্তু শেষে বললাম , ” তোদের ওখানে সময় করে এসে ঘুরে যাবো।
,
এই মেন্টাল মেয়ে নিয়ে হোটেলে থাকাই ভালো।
দু জনে নাস্তা করে নিলাম। খাওয়ার পর অথৈ বললো,
,
— বাবু চলো আমরা সমুদ্রে ভিজে আসি।
— এই মাত্র জার্নি করে এলাম। আমি এখন ঘুমাবো। তুমি রেস্ট নাও। পরে যাওয়া যাবে।
–না এখন যেতে হবে। চলো,,
–পাগলামি ভালো লাগে না অথৈ।
,
এই বলেই আমি শুয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে এখনো বাসের ধাক্কা সমস্ত শরীরে ভো ভো করছে। হঠাৎ ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
ওকে মিষ্টি করে বললাম,,
— আমি ঘন্টা খানিক ঘুমাই তারপর বাইরে যাবো। তুমি কোনো কথা বলবে না ঘুমের ভিতরে। তোমার যদি ঘুম না আসে বসে বসে টিভি দেখো।
,
এই বলে ঘুমিয়ে গেলাম। না হলে কথা বলে বলে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিবে।
,
সারা রাতের জার্নি আর নির্ঘুম রাত সব মিলিয়ে কয়েক ঘন্টা কিভাবে কেটে গেলো জানি না। আমার যখন ঘুম ভাঙে ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি অথৈ নেই। কোথায় গেলো ও? ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। কিন্তু ও এখনো রুমে আসেনি। প্রথম ভেবেছিলাম হয়তো রুম থেকে বাইরে বের হইছে।
,
আমি রুমের বাইরে গিয়ে ওকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু ও কোথাও নেই। টেনশন হতে লাগলো মেয়েটা কোথায় গেলো। অচেনা অজানা জায়গা। যদি ওর কিছু হয়ে যায়। নাহ আমি আর ভাবতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবো টেনশনে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ওকে খুঁজতে লাগলাম। ওর ফোন টা রুমে দেখে এসেছি। ফোন করবো সেটা ও পারছি না।
,
আমি সমুদ্রের তীরে চলে এলাম। এখানে আসার সম্ভাবনা বেশি। সত্যি তাই যেটা চিন্তা করেছিলাম।
কাছে গিয়ে দেখি সমুদ্রের তীরে পা ডুবিয়ে বসে আছে বিড়ালের বাচ্চা কোলে নিয়ে।
,
প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। ইচ্ছে করছিল কষে একটা চড় দিতে। পাগলামির একটা লিমিটেড থাকে। কাছে গিয়ে ওকে রাগের সাথে বললাম,,
— রুমে চলো।
ও আমার রেগে যাওয়া চোখ দেখে ভয় পেলো। কোনো কথা না বলে রুমে চলে এলো।
,
তাকিয়ে দেখি চুপ করে বসে আছে।
কাছে গিয়ে মাথা উচু করে বললাম,,
— দেখো অথৈ আমি অনেক ভেবে দেখেছি তোমার মতো মেন্টাল মেয়ে নিয়ে আমার চলা সম্ভব না। ফিরে গিয়ে তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো।,
,
আমার কথা অথৈ চুপ করে শুনে যাচ্ছে।
আমি ওকে আবার বললাম,,,
— নতুন জায়গা তুমি কিছু চেন না। কোন সাহসে বাইরে গিয়ে বসে ছিলে। যদি কিছু হয়ে যেতো তোমার বাবা মা কে আমি কি জবাব দিতাম।
এবার ও মুখ খুললো বললো,,,
–আমি বাইরে যেতে চাইনি। ঝিলমিল হারিয়ে গিয়েছিল তাই ওকে খুঁজতে গিয়ে,,,,,,,
,
ওর কথা শুনে নিজেকে কনট্রোল করতে পারলাম না। চিৎকার করে বলে উঠলাম,,,
— ঝিলমিল ঝিলমিল,,, এই শব্দ টা আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে। ওকে আমি এখন ই বাইরে রেখে আসবে। দাও এদিকে দাও।
,
আমি এক রকম জোর করে ওটা নিয়ে বাইরে রেখে এলাম। আপদটা বিদায় হলো।
রাগ পুরোপুরি কমাতে পাছিলাম না ওটা কে বাইরে না রাখা পর্যন্ত।
,
অথৈ সেই থেকেই চুপ করে বসে আছে। আমি দুপুরের খাবার সেই বিকেলে খেলাম। অথৈ অনেক আগেই খেয়ে নিয়েছিল আমি ঘুম থাকতে থাকতে।
,
সেদিন বাইরে যাওয়ার মুড আর ছিল না। বাবা মায়ের সাথে কথা বললাম কিছু সময়। অথৈ ও কথা বলেছিল কিন্তু ওর সেই চটপটে ভাব ছিল না। কেমন যেন চুপচাপ। ওর এই চুপচাপ দেখে আমার কেমন যেন একটা শূন্যতা কাজ করছিল। যেটা শুধু অনুভব করতে পারছিলাম কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিলাম না।
,
রাতে দুজনেই ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ করে আমার ঘুম ভাঙলো ওর শরিরের গরম তাপে। ও শীতে জড়োসড়ো হয়ে আছে। আমি কপালে হাত রাখতেই টের পেলাম প্রচন্ড জ্বর ওর গায়ে। আমার মনে হচ্ছে হাত পুড়ে যাবে। আমার বুঝতে বাকি নেই এটা হওয়ার কারণ। নতুন আবহাওয়া তারপর কয়েক ঘন্টা পা ডুবিয়ে বসে ছিল।
,
যতো সময় যেতে লাগলো ও বেশি কাঁপতে লাগলো। ওর গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলাম। কিন্তু না কাঁপা থামছে না। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। গভীর রাত কাকে ডাকবো। এ সব চিন্তা করে ওর গায়ে দুই তিন টা আরো কম্বল জড়িয়ে দিলাম।
,
সমান ভাবে কেঁপে যাচ্ছে। ওকে নিজের আলিঙ্গনে জড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কোনো কিছু না ভেবে ওকে আমার শরীরের উষ্ণনায় জড়িয়ে ধরলাম।
ওভাবে ধরার পর ও কিছু সময় কেঁপেছে।
অনেক সময় পর ও স্থির হলো।
,
কিন্তু আমি ওকে ছাড়লাম না। ওভাবে ঘুমিয়ে গেলাম।
হয়তো পাগলিটার প্রেম এ পরেছি। আর একবার বউয়ের প্রেম এ পরলে চোরাবালির মতো শুধু ভালোবাসায় তলিয়ে যেতে হয়।
,
সকালে ঘুম ভাঙলো বউয়ের চিৎকারে।
আমাকে একটা ঘুসি দিয়ে বললো,,,
,
— অনেক ঘুমাইছো এবার ওঠো?
ওর এমন পাগলামিতে আমার সয়ে গেছে তাই ব্যথা পাওয়া জায়গা ডলতে ডলতে বললাম,,,
— এভাবে কেউ ঘুম ভাঙায়? কি হয়েছে বলো?
— তুমি কাল আমার ঝিলমিল কে বাইরে রেখে এসেছো। ও মন খারাপ করে ওই যে বসে আছে। যাও ওকে সরি বলে নিয়ে আসো।
,
এই প্রথম ওর কথায় হেসে দিলাম। আমি বুঝে গেছি ওর এই পাগলামি দেখেই আমার সারা জীবন কাটাতে হবে। তাই দেরি না করে আপদটাকে এটা ওটার লোভ দেখিয়ে ওকে এনে দিলাম। বউ আমার ভিষণ খুশি। কিছু কিছু ভালোবাসা আছে তাদের হাসিমাখা মুখটাই বেশি ভালো লাগে সেটা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে হোক।
,
আমি আমার বউকে নিজে আজ শাড়ি পরিয়ে দিলাম। তারপর সারা দিন ওর হাতে আমার হাত রেখে সমুদ্র ঘুরলাম। ভিষণ একটা ভালো লাগা কাজ করছিল। অন্ধকার হতেই আমরা পাড়ে বসলাম। সূর্য ডুবা দেখলাম দুজনে মিলে। অথৈ আমার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। বিড়ালের বাচ্চা টা চুপ করে আমাদের পাশে বসা। ও হয়তো বুঝে গেছিলো আমাদের আবেগের অনুভুতি গুলো।
,
ওর চুল গুলো আমার সাথে আবারও মিতালি করতে এলো। আমি নিজেকে ওর মাঝে হারিয়ে ফেললাম।
,
মনে মনে বাবা-মার উপরে ভিষণ রাগ হচ্ছিল। আরো কয়েক বছর আগে জোর করে বিয়েটা দিলেই কিন্তু হতো। শুধু শুধু সময় গুলো নষ্ট করলাম।
,
রাত এখন অনেক গভীর। আমি আমার বউকে নিয়ে হোটেলে ফিরবো এখন।
,

,

(আর আপনারা???? এই যে পাঠকপাঠিকা হ্যা আপনাদের বলছি অনেক তো খুনসুটি আমাদের শুনলেন। এবার না হয় বাকিটা আমাদের মতো করে থাকতে দিন।????

,,
সমাপ্ত
—– লেখা অধরা জেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here