দূরত্ব part:6

0
3283

দূরত্ব
part:6
#writer: Maliha Islam Tafsi(jeba)

প্রীতি শাড়ি পড়ার জন্য উঠতে যাবে তখনি রাহাত এসে প্রীতির পায়ে ধরে ফেলল,,,

– কি করছেন আপনি? আমার পায়ে কেন ধরেছেন? (চমকে গিয়ে প্রীতি )
-একটু চুপ করো তো।
– কেন?
– চুপ থাকতে বলছি চুপ থাকো।
– প্লিজ আপনি আমার পা ছাড়ুন।
– আবার কথা বলছো তুমি? বেশি কথা বললে মুখে টেপ লাগিয়ে দিব । চুপ করে বসে থাকো। আর দেখো আমি কি করি।

রাহাত বিছানার পাশের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করল। তারপর প্রীতির পায়ের পুরোনো ব্যান্ডেজ টা খুলতে লাগল।

-আহহহহহ,,,,
– সরি সরি,,,,ব্যাথা লাগছে?
-হুম,,,,,
-তাহলে কালকে এতো করে নিষেধ করার পর ও তুমি জায়গা থেকে নড়ছ কেন? আমার কথা শুনলে এতো ব্যাথা পেতে না আজকে।
-,,,,,,,,,,,,,,
-কি হলো চুপ করে আছো কেন?
-এমনি।
-ওহ,,,,,

আপনি পারবেন রাহাত আমার মনের ব্যাথা ভালো করে দিতে? কখনও পারবেন না (মনে মনে বলল প্রীতি)

আমি জানি তোমার মনে কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব কষ্ট কিন্তু আমি তোমার সেই কষ্ট ব্যাথা একদিন ঠিকি বুলিয়ে দিব প্রীতি।( মনে মনে বলল রাহাত)

ব্যান্ডেজ টা খুলে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিল রাহাত আর বলল নতুন করে ব্যান্ডেজ না করলে ইনফেকশন হয়ে যেত।

– আপনি আর কখনও আমার পায়ে ধরবেন না আমি নিজেই নিজের ব্যান্ডেজ করে নিতে পারব।(কথাটা খুব শক্ত ভাবে বলল প্রীতি)

– আমি করে দিলে কি কোনো অপরাধ হবে?
– না। কিন্তু স্বামী বউ এর পায়ে ধরতে নেই।
– কথাটা কে বলেছে তোমাকে?
-মা বলেছে।
– তার মানে তুমি মানো আমি তোমার স্বামী?
-জানিনা (অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল প্রীতি)
– চিন্তা করো না স্বামী হয়েছি বলে তোমার সম্মতি ছাড়া স্বামীর অধিকার ফলাবো না।

প্রীতি রাহাত এর কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,,

-আপনি কি করে জানলেন যে আমি এইটা ভাবছি?
-ভালোবাসি তাই তোমাকে বুঝি।
– ওহ,,,,
-আচ্ছা তুমি বললা না তোমার মা বলেছে যে স্বামী স্ত্রীর পায়ে ধরলে স্ত্রীর পাপ হয়।
-হুম,,,,
-স্ত্রীর সেবা করা কোনো পাপ না। আমি আমার বউ এর সেবা করছি তাই ওর পায়ে ধরেছি ।আর হাজার বার ধরতে রাজি আছি যতদিন না ওর পায়ের ব্যাথা ঠিক হচ্ছে আমিই ওর পায়ের ব্যান্ডেজ পাল্টে দিব।(মুচকি হেসে কথাটা বলল রাহাত)

প্রীতি রাহাত এর কথাটা শুনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে রাহাত এর দিকে।

রাহাত খুব ভালো আপনি। রাতে আপনার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করেছি কিন্তু আপনি আমার সাথে রাগ না দেখিয়ে এত সেবা আর সম্মান দিচ্ছেন আমায়। আমি এইসবের যোগ্য না রাহাত। আপনি খুব ভালো কাউকে ডিজার্ব করেন। রোহান তোমার জন্য আজকে এই পরিস্থিতি । তোমার জন্য আমি আজকের এতো ভালো একটা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছি । আমি জানি রাহাত খুব কষ্ট পাচ্ছে কারণ স্বামী হয়েও সে তার স্ত্রীর কাছে নিজের অধিকার ফলাচ্ছে না।( মনে মনে কথা গুলো ভাবতে থাকল প্রীতি)

রাহাত সেই কখন থেকে প্রীতি কে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু রাহাত ডাক প্রীতি কানে যাচ্ছেই না। হঠাৎ রাহাত এর স্পর্শে প্রীতি ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে হলো আর থতমত করে বলতে লাগল,,,,

-কি হয়েছে?
-সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি । এতো কি ভাবছো যে আমার কথা তোমার কান পর্যন্তই যাচ্ছে না?
-আসলে বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছিল।
-সকালে কথা বলো নি তোমার আম্মুর সাথে?
-হুম,,,বলেছি।
– আচ্ছা কোন শাড়ি টা পড়বা বলো।
– আপনার যেইটা ইচ্ছে হয় পড়িয়ে দিন।
-তাহলে বেগুনি কালার টা পড়িয়ে দেই?
-দিন। আচ্ছা আপনার কি বেগুনি কালার পছন্দ?
-হুম,,,,

রোহান ও তো সবসময় বলতো ওর বেগুনি কালার খুব পছন্দ । বিয়ের আগে বলতাম না বর থেকেই শাড়ি পরব সবসময় । আজকে আমার বরই শাড়ি পরিয়ে দিবে আর তুমি দেখে ভিতরে ভিতরে জলবে। যেই কষ্ট আমাকে দিয়েছ তুমি সেই কষ্ট তোমাকেও পেতে হবে রোহান শেখ।(মনে মনে বলল প্রীতি)

রাহাত খুব সুন্দর করে প্রীতি কে শাড়ি পরিয়ে দিল। একদম বেগুনি পরী লাগছে তোমায়। রাহাত এর কথায় প্রীতির হুশ ফিরল।

প্রীতি হালকা হেসে বলল বেগুনি পরী ও হয় বুঝি?
-হয়। আর এইতো আমার সামনেই আছে।

রাহাতের কথা শুনে প্রীতি আবার হাসতে লাগল আর রাহাত মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রীতির হাসি মাখা মুখটার দিকে। আচমকা রাহাত প্রীতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগল,,,

-এই হাসিটা যেন সবসময় থাকে তোমার মুখে। খুব সুন্দর লাগে হাসলে তোমাকে আমার বেগুনি পরী।(মুচকি হেসে)

রাহাত এর কথায় প্রীতি থ,,,হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রিহা এসে দরজা নক করে বলল ভাইয়া আসবো?
-আয়,,?

রিহা প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল বাহ,,,,,,,ভাবি তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে বেগুনি কালার শাড়িতে। আর তুমি এতো সুন্দর করে শাড়ি পরা কোথায় শিখেছ?

রোহান ভাইয়া তো বলল ভাবি শাড়ি পরতে পারে না তাহলে,,,,

আমি পরিয়ে দিয়েছি।

রাহাত কথায় হেসে দিল রিহা। ভাইয়া তুমি শাড়ি পড়াতে পারো নাকি?
– হুম তোমার ভাইয়া পরিয়ে দিয়েছে।(প্রীতি)
-বাহ,,,,,ভাইয়া তুমি খুব সুন্দর করে শাড়ি পরাতে পারো তো।কিন্তু শিখলে কোথায়?
-ইউটিউব থেকে,
-ভালোই তো(বলে রিহা আবার হাসতে লাগল)

রাহাত রিহার কানে ধরে বলল এতো না হেসে তাড়াতাড়ি তোর ভাবি কে নিয়ে নিচে আয় বলে চলে গেল রাহাত।

আল্লাহ যা করে হয়তো ভালোর জন্যই করে(মনে মনে বলল রিহা)

অপরদিকে রোহান অপেক্ষা করছে কখন প্রীতি নিচে আসবে কখন সে প্রীতি কে দূর থেকে দেখে একটু হলেও শান্তি অনুভব করবে।

কিছুক্ষণ পর রিহা প্রীতি কে নিয়ে নিচে নেমে এল। প্রীতি তার শশুড় আর শাশুড়ি কে সালাম করল।

– বেঁচে থাক মা। তুই যেন এই সংসার টা কে আমার মতো আগলে রাখতে পারিস দোয়া করি(রাহাত এর মা)
এখন চলো সবাই নাস্তা করবে। সবাই চুপচাপ নাস্তা করছে কিন্তু প্রীতি নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাচ্ছে । রিহা দেখে বলল কি হল ভাবি খাচ্ছ না কেন? লজ্জা পাচ্ছ নাকি?

লজ্জার কিছু নেই বউ মা। এইটা তোমারই বাড়ি আমরা তোমার পরিবার লজ্জা পেয়ো না খেয়ে নাও। আচ্ছা রাহাত এদিকে আয় তো? (রাহাত এর মা)

কেন মা?

আসতে বলছি আয়।

রাহাত এর মা প্রীতির পাশে বসে নিজের হাতে প্রীতি কে খাইয়ে দিল। রিহা বলে ওঠল ভাবি তুমি খুব লাকি এমন একটা শাশুড়ি পেয়েছ ।

এই রিহা তুই চুপ কর তো। প্রীতি আমি তোর মা এখন থেকে কখনও আমাকে শাশুড়ি ভেবে ভয় পাবি না বুঝেছিস?
-জ্বী মা।

খাওয়া শেষে সবাই ড্রয়ং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর প্রীতি সবার মাঝে বসে সবার কথা শুনছে। অপরদিকে তার মুখোমুখি বসা দুটি চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রীতি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে কিন্তু সে অনুভব করতে পারছে তার খুব চেনা পরিচিত চোখ দুটো বার বার তাকে পর্যবক্ষেণ করছে।

আচমকা রোহান বলে ওঠল প্রীতি সরি,,,,ভাবি আমি আপনাকে কিছু দিতে চাই,,,,,,,

চলবে,,,

(যাদের এই গল্প টা ভালো না লাগে প্লিজ আপনারা গল্প টা ইগনোর করতে পারেন। আমি তো জোর করছি না আপনাদের গল্প টা পড়ার জন্য । তাই ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন শুধু শুধু খারাপ মন্তব্য করে গল্প টা লিখার মন মানসিকতা নষ্ট করবেন না। যাদের কাছে গল্প টা ভালো লাগে তারা পড়লেই যথেষ্ট । আর বানান ভুল হলে একটু নিজেরা বুঝে পড়ে নিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here