কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৫
নীশুর মাথা ঝিমঝিম করছে তো করছেই। কিছুতেই চোখ খুলে তাকাতে পারছে না সে। মেসেজের টুংটাং শব্দে চোখ খুলে ফোন হাতে নেয়। মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখে রাজ্যের মেসেজ। নীশু মেসেজ ওপেন করে। মেসেজটা দেখে নীশুর হাত থেকে ধপ করে ফোনটা পড়ে যায় ফ্লোরে। মাই গড! কি ভয়ংকর কথা! নীশুর পেটের বাম পাশের লাল তিলটা নাকি অসাধারন। রাজ্য কিভাবে জানলো তিলটার কথা?? নীশু দ্রুত ফোন তুলে রাজ্যকে ফোন করে। রাজ্য ফোন রিসিভ করতেই নীশু কর্কশ গলায় বললো,
“এসব কি ধরনের ফাজলামো??”
“ফাজলামো না তো?? সত্যি বলছি তোমার পেটের লাল তিলটা আজ আমায় ঘুমোতে দেবে না। নিশ্চিত।”
“আপনি একটা ফাজিল ছেলে।”
“আমি ফাজিল?? নিজে মাতাল হয়ে এলোমেলো কাজ করলে! আর ফাজিল বলছো আমায়??”
“এলোমেলো কাজ মানে??”
“আমি মুখে বলতে পারবো না।”
নীশুর হাত থেকে দ্বিতীয় বারের মতো ফোন পড়ে যায়। তার সব শেষ। নীশুর কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না। কিন্তু গলায় কান্না কাটার মতো বিঁধে আছে। কিছুতেই বেরুচ্ছে না। ছেলেটা কি সাংঘাতিক! নীশু আবার ফোন হাতে নেয়। রাজ্যকে লাইনে দেখে সে বলল,
“খবরদার কাল আপনি কিছুতেই আসবেন না আমাদের বাড়িতে। যদি আসেন তাহলে সত্যি বলছি এক কোপে আপনার ঘাড় থেকে মুন্ডু টা আলাদা করে ফেলবো আমি।”
নীশুর কথা শুনে রাজ্য হো হো করে হেসে উঠে।তাতে নীশুর রাগ আরও বাড়ছে। ইচ্ছে করছে এখনি দিয়ে তাকে উপরে পাঠিয়ে দিতে। রাজ্য হাসতে হাসতেই বলল,
“আমি মাতাল মেয়েদের সুযোগ নেই না। যদিও তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।”
কথাটা বলে রাজ্য ফোন কেটে দেয়। নীশু হতভম্ব হয়ে বসে থাকে বিছানায়। ঘড়িতে সময় সাড়ে সাতটা। ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে তার। কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না। সে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গভীর ঘুমের তলদেশ হারিয়ে যায়।
নীশুর ঘুম ভাঙে মানুষের চিল্লাচিল্লি শুনে। বিছানা ছেড়ে আড়মোড়া ভেঙে বাইরে যায়। বিশাল আয়োজন বাড়িতে। মনে হচ্ছে আজ তার ইংগেজমেন্ট না বিয়ে। কিন্তু নীশু জানে রাজ্য আসবে না। তাকে যা হুমকি দেওয়া হয়েছে তাতে সে নিশ্চিত ঘাবড়ে আছে। তা না হলে ফোন কেটে দিত নাকি! কিন্তু নীশুকে ভুল প্রমাণ করে রাজ্য তাইরে নাইরে করতে করতে ইংগেজমেন্টে চলে আসে। রাজ্য সোজা নীশুর ঘরে ডুকে যায়। নীশু তখন কানের দুল পড়তে চেষ্টা করছিল। হটাৎ ঘাড়ে স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে। আয়নায় রাজ্যকে দেখে আরও বেশী চমকে দেখে। রাজ্য হেসে বলল,
“আমি ভুত না। শান্তশিষ্ট সাধারণ মানুষ।”
নীশু রাজ্যের হাত ছাড়িয়ে বললো,
“আপনাকে যে শান্তশিষ্ট সাধারণ মানুষ বলবে সে নিঃসন্দেহে বোকা।”
“আমি শান্তশিষ্ট না??”
“মোটেও না। আপনাকে তো আমি বারণ করেছিলাম না আসার জন্য। তবুও বেহায়ার মতো চলে আসলেন?”
“দেখো নীশু। আমার রাগ উঠাবে না। তাতে তোমারই ক্ষতি।”
“বেহায়াকে বেহায়া বলবো না তো কি বলবো?? আপনাকে বলেছিলাম আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তারপরও নাচতে নাচতে চলে এলেন!”
“বিয়ের আগে এমন কিছু হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়।”
“আমার প্রাক্তন দের সংখ্যা জানেন কত?? অসংখ্য। গুণে শেষ করা যাবে না।”
“আচ্ছা! তোমার আষাঢ়ে গল্প শেষ হলে…”
“আমি আষাঢ়ে গল্প দিচ্ছি না। নীরব তো আমার বর্তমান। আমার প্রাক্তন জানেন কে??”
“কে শুনি??”
“আরাফ, সিয়াম, নাহিদ, মাহিদ, রহিম, করিম ইত্যাদি ইত্যাদি।”
রাজ্য মোটেও ঘাবড়ে না গিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“এখন থেকে নীরব সহ সবাই প্রাক্তন। ওদের নাম কেটে শুধু রাজ্যের নামটা লিখে নাও। বুঝতে পেরেছো??”
“সম্ভব না।”
রাজ্য ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কেনো সম্ভব না??”
“সম্ভব না মানে সম্ভব না।”
“আমি তোমাকে বারণ করেছিলাম আমার রাগ না ওঠাতে। এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।”
নীশু আমতা আমতা করে বলল,
“এত এত বয়ফ্রেন্ড! আমি তো ভার্জিন নাও হতে পারি।”
কথাটা শুনে রাজ্যর পায়ের রক্ত এক লাফে মাথায় উঠে যায়। নীশুর কাছে গিয়ে তার চুলের মুঠি ধরে টেনে নীশুকে নিজের সাথে আটকে দেয়। তারপর দাঁত চেপে বলে,
“তুমি ভার্জিন হও আর না হও তুমি আমার। কথাটা মাথায় ডুকিয়ে নাও। নেক্সট টাইম এমন কথা শুনলে খুব খারাপ কিছু হবে।”
রাজ্য কথাটা বলে নীশুর নাকের ডগায় কামড় বসিয়ে চলে যায়। নীশু ফ্লোরে বসে পড়ে। মাথা ব্যাথা করছে তার। চুলগুলো নিশ্চয়ই ছিঁড়ে ফেলেছে। নাকটাও বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস আটকে সে নিশ্চিত মারা যাবে এখন। মারা যাওয়ার আগে তার একটাই উইশ। রাজ্যকে ইচ্ছে মতো পিটিয়ে তার চুলগুলো একটা একটা করে ছেঁড়া।
.
.
.
(চলবে)
~ জান্নাত মাহ্জাবীন