কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ৭
রাজ্যের কথা শুনে নীশু চোখে অন্ধকার দেখছে। ছেলেটা এত বাজে হতে পারে তা তার কল্পনার বাইরে। নীশুর ইচ্ছে করছে রাজ্যের কান ধরে টেনে নিয়ে তার বাবা-মা কে দেখিয়ে বলতে,
“দেখো, তোমরা কার সাথে আমার বিয়ে দিতে যাচ্ছো। কি ভয়ংকর বাজে ছেলের সাথে।”
কিন্তু তার হাত-পা বাঁধা থাকায় সে নড়তেও পারছে না। সেখানে এসব ভাবা হাস্যকর। নীশুর চোখ টলমল করছে। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজ্যের দিকে। রাজ্য সিগারেট শেষ করে ফেলে দিয়ে বললো,
“কেমন অনুভূত হচ্ছে??”
নীশু চুপ করে আছে। তার ইচ্ছে হচ্ছে রাজ্যকেও এভাবে বেঁধে তার সামনে কয়েকটা কুকুর লেলিয়ে বলতে, “কেমন অনুভূত হচ্ছে স্যার??” কিন্তু সে পারছে না। রাজ্য গম্ভীর করে বলে,
“আমি বলেই কি কোনো অনুভূতি পাচ্ছো না?? এখানে যদি নীড় থাকত তাহলে অনুভূতি পেতে?? তাই না??”
“নীড় আপনার মত অমানুষ না।”
নীশুর কথায় রাজ্য হো হো করে হেসে উঠল। নীশু বোকার মত তার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারল না এতে হাসার কি আছে। অন্য সময় তো রেগে আগুন হয়ে তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলত। রাজ্য হাসতে হাসতেই বলল,
“তারমানে রাজ্য আরও খারাপ কিছু?? শয়তান?? ইবলিশ??”
নীশু ভ্রু কুঁচকে তাকায় রাজ্যের দিকে। রাজ্য হটাৎ করেই হাসি থামিয়ে বললো,
“বুঝতে পারছো না?? এই প্লানটা তোমার প্রাক্তন নীড়েরই। বেচারা তো হসপিটাল। তার হয়ে আমি করে দিচ্ছি।”
নীশু এতক্ষণে বুঝতে পারছে তার হটাৎ সেন্সলেস হওয়ার কারণ টা। নীড় চকলেটে কিছু মিশিয়ে নিশ্চয়ই। নীশু করুন দৃষ্টিতে রাজ্যের দিকে তাকায়। রাজ্য চেয়ার থেকে উঠে বাইরের দিকে যেতে শুরু করে। নীশু চিৎকার করে উঠল,
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?? আমাকে ফেলে যাচ্ছেন কেনো??”
রাজ্য রেসপন্স না করে যেতেই থাকে। পেছনেও তাকায়নি। নীশু এখানে একলা থাকার কথা ভাবতেই কেঁপে উঠলো। মিনতি করে বললো,
“প্লিজ! আমাকে নিয়ে যান। আমি আপনার সব কথা শুনবো। বাড়ি থেকে এক পাও বের হবো না।”
নীশুর কথা শেষ না হতেই রাজ্য ধুপধাপ পা আবার ফেলে চলে আসে। তারপর চেয়ারের হাতলে নিজের হাত রেখে নীশুর মুখের সামনে গিয়ে বললো,
“সিউর?? নাকি এখান থেকে গেলে ভুলে যাবে??”
নীশু মুখ বাচ্চাদের মত করে দোলায়। যার অর্থ সে ভুলবে না। রাজ্য যেভাবে তাকে এখানে এনেছিল সেভাবেই নিয়ে চলে যায়। সারা রাস্তায় নীশু কোনো কথাই বলে নি। নীশুকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রাজ্য সবে মাত্র বাড়ি গিয়ে গোসল করে। তখনই হসপিটাল থেকে ফোন আসে। সে দৌড়ে হসপিটালে যায়। হসপিটালে কান্ড দেখে সে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নীশু নীড়ের ব্যান্ডেজের জায়গায় ইচ্ছে মত কিল ঘুষি যা পারছে দিচ্ছে। তার হাতে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ। সেটা দিয়েই সবাই কে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। নীড়ের চিৎকারে হসপিটালের সবাই জড়ো হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে। রাজ্য থতমত খেয়ে সেখানেই পড়ে আছে। পরে ভাবল বেচারা এভাবে মার খেলে নিশ্চিত মারা যাবে। এমনিতেই তাকে মেরে পুলিশ কে ম্যানেজ করতে অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। এখন মার্ডার কেস হলে সে নিজেই মার্ডার হয়ে যাবে। রাজ্য রুমাল বের করে নীশুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এটা দিয়ে মুখ বেঁধে নাও। তাহলে চিল্লাচিল্লি করতে পারবে না।”
নীশু রাজ্যের কথায় খুশি হয়ে হাত বাড়াতেই রাজ্য তার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মেশায়। তারপর হাত থেকে সিরিঞ্জ নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। নার্স আর ডাক্তাররা নীড়ের ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেয়। নীশুকে আটকানোর জন্য রাজ্য নিজেও কয়েকটা কিল ঘুষি খায়। তারপর তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে যায় বাড়িতে।
সেদিন থেকে নীশু সত্যি সত্যি বাড়ি থেকে বের হয়নি। একে বারে বিয়ের দিনই বের হয়। একরাশ মন খারাপ নিয়ে বের হতে হয় বাড়ি থেকে। এক নতুন জীবনের সূচনা করতে। সে জানে সে জীবন তার কখনোই মনের মত হবে না। সেখানে হয়ত তাকে বন্দিনী রাজকন্যার মত জীবন কাটাতে হবে। তাকে ফুল দিয়ে সাজানো ঘরটায় রেখে সবাই চলে যায়। তার বড্ড একা লাগছে। কান্না পাচ্ছে খুব।
,
,
,
(চলবে)
~ জান্নাত মাহ্জাবীন