কাঠগোলাপ_এবং_তুমি
পর্ব – ১০
নীশু রাজ্যের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। তার একটাই কারণ। রাজ্য তার ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছে। যখন দেখেছে ঘুমিয়ে পড়েছে তখন ডেকে তুলার কোনো মানেই হয় না। নীশু দাঁত কটমট করে বললো,
“আপনার উচিত হয়নি আমাকে জাগিয়ে দেওয়া। কফি মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন। সকালে কফিটা হাতে দিয়ে গুড মর্নিং জানালে কি হতো??”
রাজ্য ভ্রু কুঁচকে বললো,
“মানে??”
“মানে কিছুই না। এটা হলো স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা।”
রাজ্যের ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিতে দিতে ভালোবাসা শেখাতে। কিন্তু সে নীশুকে কথা দিয়ে ফ্যাঁশাদে পড়ে গেছে। রাজ্য কফির মগ টেবিলে রেখে গিয়ে শুয়ে পড়ে। নীশু কিটকিটিয়ে হেসে মুখ লুকায়। রাজ্য তা দেখতে পেয়ে নীশু কে জড়িয়ে ধরে। তার ঘাড়ে মুখ ডুবায়। নীশু রেগে বললো,
“এসব কি হচ্ছে??”
“স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা।”
নীশু মুখ ছোট করে ফেলে। তার নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেছে। নীশু কাঁদকাঁদ সুরে বললো,
“প্লিজ, নিজের মুখ সরিয়ে নিন।”
“কেনো?? সরাবো কেনো??”
“আমার শুরশুরি লাগছে।”
রাজ্যও নীশুর মতো হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। নীশু জোরে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়। রাজ্য ধাক্কা খেয়ে একটুর জন্য ফ্লোরে পড়ে যায়নি। বিছানা থেকে নেমে নীশু বললো,
“আপনি আপনার কথার খেলাপ করছেন কিন্তু।”
রাজ্য ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে। সামান্য কারণেই নীশু রেগে যাবে তা কল্পনাও করে নি রাজ্য। নীশু রাজ্যকে স্তব্ধ থাকতে দেখে বললো,
“আপনার সাথে এক বিছানায় থাকা অসম্ভব। বলুন, আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো না আপনি??”
রাজ্য নীশুর কথায় পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি বিছানায় শুয়ে পড়, নীশু। আমি চলে যাচ্ছি।”
রাজ্য কথাটা বলে ব্যালকনিতে চলে যায়। একটা সিগারেট ধরিয়ে নেয়। সে সচরাচর সিগারেট খায় না। খুব কম খায়। খুব মন খারাপ হলে। আর মন খুব ভালো থাকলে খায়। আজ তার মন খুব খারাপও না, ভালোও না। তার মন মেঘের আড়ালে ঢেকে গেছে। রাগ হচ্ছে খুব নিজের উপর। ইচ্ছে করছে মাথার চুল গুলো টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রাজ্য দেয়ালে সজোরে আঘাত করে। এদিকে নীশুও বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে। ঘুম কিছুতেই আসছে না চোখে। রাতটা দুজনেই নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়।
সকাল সকাল নীশুর আবদার শুনে রাজ্যের মনটা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেলো। নীশু এখন হসপিটালে যেতে চাইছে। উদ্দেশ্য নীড়ের সাথে দেখা করা। রাজ্য বাড়িতে খুব কষ্টে ম্যানেজ করে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি চালানো দেখে ঘাবড়ে যায় নীশু। মিনমিন করে বলল,
“আপনার মরার ইচ্ছা থাকলেও আমার নেই।”
রাজ্য কোনো কথা না বলে গাড়ির স্পিড না কমিয়ে খানিকটা বাড়িয়ে দেয়। নীশু দাঁত চেপে বলে,
“আপনি গাড়ি ঘুড়িয়ে নিন। আমি যাবো না কোথাও। কারো রাগ দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।”
রাজ্যের কোনো ভাবান্তর হলো না। সে আগের মতই আগের স্পিডেই গাড়ি চালাচ্ছে। হসপিটালে পৌঁছানোর পর নীশু গাড়ি থেকে নেমে একা একাই ভেতরে চলে যায়। রাজ্যের দিকে ফিরেও তাকায়নি। দেখেওনি সে আসছে কি না। রাজ্য গাড়ি পার্ক করে গিয়ে দেখে নীশু বেশ ভালোভাবেই কথা বলছে নীড়ের সাথে। রাজ্যকে দেখেও না দেখার মতো করে এড়িয়ে গেল। রাজ্য হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। ইচ্ছে করছে দুটোকেই তুলে বাইরে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসতে। কিন্তু সে তুলতে যাওয়ার আগেই নীশু চলে আসে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নীড়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
“আসছি নীড়। খুব দ্রুত আবার আসছি কিন্তু!”
তারপর রাজ্যের দিকে তাকিয়ে তাকে দেখে মুখ পাল্টে বললো,
“আপনি কি দাঁড়িয়ে থাকবেন?? আমি চলে যাবো??”
নীশু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে রাজ্যের। রাজ্য এক হাতে নীশুর গলা চেপে ধরে। তারপর নাক ফুলিয়ে বলে,
“তোমাকে আমি উড়তে দিয়েছি। তাই বলে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে চোখের আড়াল হতে দেবো না। বুঝেছো??”
নীশুর দম আটকে আসছে। খকখক করে কেশে উঠে। রাজ্য নীশুর গলা ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে। তারপর টানতে টানতে নিয়ে যায় কেবিন থেকে। চাদরে মুখ ঢেকে রাখা নীড় মুখটা হালকা বের করে উঁকি দিয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখে। রাজ্যকে বের হতে দেখে বুকে থুথু দিয়ে আবার মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে। নীশু আর রাজ্যের মার খাওয়ার পর সে আর বিছানা ছাড়তে পারছে না। আজকে নীশুকে দেখে ভয় পেলেও তার সাথে কথা বলার পর শান্তি লাগছে। পরে আবার রাজ্যের রাগ দেখে আত্মা উড়ে গিয়েছিল ভয়ে। এখন আবার শান্তি লাগছে।
রাজ্য নীশুকে টানতে টানতে পার্কিং লটে নিয়ে আসে। গাড়ির দিকে পা বাড়াতেই নীশু তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। রাজ্য নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারল না। মেয়েটাকে সৃষ্টিকর্তা হয়তো রাক্ষুসী বানাতে গিয়ে ভুলবশত মানুষ বানিয়ে ফেলেছেন। তা না হলে এমন করে কেউ কামড়িয়ে রক্ত ঝারাতে পারে??
.
.
.
(চলবে)
~ জান্নাত মাহ্জাবীন
[আইডি থাক বা না থাক। এখন থেকে গল্প দেবো। রোজ দেবো। সত্যি বলছি। তবুও বকবেন
না, প্লিজ!]