গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০৬
লেখাঃ #Mst_Liza
,
জ্ঞান হারিয়ে মিরা সোহাগের বুক থেকে ঢলে পরছে! এমন সময়ে সোহাগ মিরার হাতদুটো শক্ত করে ধরে বসে।মিরাকে টেনে নিজের বাহুডোরে মিশিয়ে নেয়।মিরাকে ঝাঁপটে ধরে,
,
সোহাগ মির্জাঃ মিরা??
এই মিরা???
এই, সত্যিই কি তুমি আমাকে এতোটা ভালোবাসো?
কি হলো? কথা বলছো না কেন??
,
সোহাগ মিরার মুখটা নিজের সামনে নিয়ে আসে। দেখে মিরার কোনো সারা শব্দ নেই।সোহাগের রাগ এখন অনুশোচনায় পরিণত হয়।মিরার সারা শরীরের ক্ষতগুলোতে চোখে বুলাতে থাকে।মিরার ক্ষত-বিক্ষত শরীরটা দেখে সোহাগের চোখ বেয়ে পানি পরছে।যন্ত্রণায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
,
সোহাগ মির্জাঃ কতোটা ব্যাথা আর যন্ত্রণা দিয়েছি তোমাকে আমি! কেন আমি এতো রাগতে গেলাম? তুমি তো যানোই রাগ হলে আমার মাথার ঠিক থাকে না। তাহলে কেন তুমি আমাকে রাগাও?
মিরার শরীরের ক্ষত স্থানগুলোতে সোহাগ হাত বুলিয়ে দেয়, পিঠের ক্ষত গুলোতে আলতো ঠোঁটের পরশ ছুইয়ে দেয় তারপর গলায় দেওয়া সেদিনের কামড়ের দাগটাতে একটা গভীর চুম্বনে ডুবে থাকে।এমন সময়ে,
-উহু উহু, দরজার কাছে দাড়িয়ে হাসান হালকা কাশি দিয়ে ওঠে।
,
সোহাগ মির্জাঃ হাসান তুমি এখানে?
,
হাসানঃ স্যার, একটা গুড নিউজ দেওয়ার ছিল!!
,
সোহাগ মির্জাঃ কি এমন গুড নিউজ, যা বলতে বাড়িতে চলে আসতে হলো?
,
হাসানঃ স্যার এটা এমন নিউজ যে আমি না এসে পারলাম না।ভাবলাম নিজে এসে আপনাকে নিউজটা দিই।
,
সোহাগ মির্জাঃ কি বলতে এসেছো তাই বল?
,
হাসানঃ আপনার শ্বাশুড়ি মায়ের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছি আপনার সালা সাহেবের কাছে।
,
সোহাগ মির্জাঃ মানে???
,
হাসানঃ আজই আপনার সালা সাহেব দেশে ফিরছে।
,
সোহাগ হাসানের দিকে জিজ্ঞেসা বোধক চিহ্ন নিয়ে তাকায়…..???
সোহাগ মির্জাঃ তুমি কি বলছো যানো?
,
হাসানঃ আমি সব জানি স্যার।
,
সোহাগ মির্জাঃ কি যানো তুমি?
,
হাসানঃ স্যার। কাল রাতে অফিসে একটা মেয়ে এসেছিল, আপনাকে খুঁজতে। তার কাছ থেকেই সব যানতে পেরেছি আমি।
,
সোহাগ মির্জাঃ কি যানতে পেরেছো?
,
হাসানঃ আপনার বোন একজনকে ভালোবাসে আপনার অমতে গিয়ে বিয়ে করে।কিন্তু তার শ্বাশুড়ি মা অন্য এক মেয়েকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে ঠিক করে রাখে।কাল সেই মেয়েটিই এসেছিল।
,
সোহাগ মির্জাঃ কি বলতে এসেছিল মেয়েটি?
,
হাসানঃ আপনার শ্বাশুড়ি মা একজন হার্টের পেশেন্ট। বিয়ের পর যখন আপনার বোনকে নিয়ে আপনার শ্বাশুড়ি মায়ের সামনে দাড়ায়, তখন আপনার শ্বাশুড়ি মা সবটা যেনে হার্ট অ্যাটাক করেন।তারপর……
,
সোহাগ মির্জাঃ থাক এসব কথা রাখও।শুধু বল, তুমি কি শিওর? ওই প্রতারকটা আজই আসছে?
,
হাসানঃ জ্বি, স্যার।আমি একদম শিওর।
,
সোহাগ মির্জাঃ ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি।
,
সোহাগ মিরাকে বিছানায় রাইশার পাশে শুইয়ে দিয়ে এয়ারপোর্টে চলে যায়।আর এদিকে সোহাগ চলে যাওয়ার পর হাসান আবার মির্জা প্যালেসে আসে।মিরার মুখের উপর ঝুঁকে,
হাসানঃ মিরা তুমি আমার স্বপ্ন ছিলে।কিন্তু তোমাকে আমি পায় নি।সোহাগ মির্জার কাছে তুমি কখনোই ভালো থাকতে পারবে না।চলো আজ তোমায় আমি নিয়ে যাবো। অনেক ভালোবাসা দেব দেখও! এতোটা ভালোবাসা দেব যে এই সোহাগ মির্জাকেই তুমি ভুলে যাবে।
,
কথাগুলো বলে হাসান মিরাকে সেন্স লেন্স অবস্থায় কোলে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়।তারপর মিরাকে গাড়িতে শুইয়ে নেহার ফোনে একটা ম্যাসেজ করে, “থ্যাংক ইউ নেহা।তোমার জন্যই আজ আমি মিরাকে পেয়েছি।”
,
সোহাগ এয়ারপোর্টে গিয়ে অপেক্ষা করে কিন্তু রাইসূল আসে না।দুপুর গড়িয়ে বিকাল, বিকাল গড়িয়ে রাত অবশেষে সোহাগ বাড়ি ফেরে।
সোহাগ বাড়ি ফিরতেই রাইসা হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এসে সোহাগকে জড়িয়ে ধরে,
,
রাইসাঃ ভাইয়া।কোথায় ছিলে তুমি?
,
সোহাগ মির্জাঃ কি হয়েছে ছুটকি হাঁপাচ্ছিস কেন?
,
রাইসা হাত দিয়ে কিচেনের দিকে ইশারা করে।সোহাগ বোনের দিকে তাকিয়ে দেখে খুব ভয় পেয়ে আছে।বোনকে ধরে কিচেনে গিয়ে দেখে সব কিছু এলোমেলো।মনেই হচ্ছে এখানে খুব দস্তাদস্তি হয়েছে।একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে অন্ধকারে কালো জ্যাকেটে, মুখে মুখোশ পরিধানকৃত কেউ জানালার পাশ কেটে পালাচ্ছে।সোহাগ বোনকে রেখে তার পিছন পিছন ছোটে কিন্তু তাকে আর ধরতে পারে না।সোহাগ ফিরে আসে।বোনকে জিজ্ঞাসা করে, ওটা কে ছিল ছুটকি? মুখটা দেখেছিস?
রাইশা মাথাটা কাত করে হ্যাঁ, উত্তর দেয়।
,
সোহাগ মির্জাঃ কে ছিল?
,
রাইশাঃ নেহা।
,
সোহাগ মনে মনে ভাবছে, একি সেই নেহা যে সেদিন আমায় ফোন করেছিল? কিন্তু ও আজ এইভাবে কেন এসেছে?
,
সোহাগ মির্জাঃ কেন এসেছিল ও?
,
রাইশাঃ আমাকে মারতে ভাইয়া! এ সেই নেহা যার সাথে আমার শ্বাশুড়ি মা রাইসূলের বিয়ে ঠিক করেছিল।আমি যখন বিয়ের পর রাইসূলের বাড়িতে যায় তখন আমার শ্বাশুড়ি মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়।নেহার কথাতেই হসপিটালে আমি আর রাইসূল আমার শ্বাশুড়িকে বোঝায়।নাহ আমাদের বিয়ে হয় নি।আমরা শুধুই বন্ধু।নেহা ব্যাপারটাকে মজা করেছি বলে পাল্টে দেয়।রাইসূল আমাকে আলাদা একটা ফ্লাটে রাখে।মাঝে মাঝে ও আমাকে দেখে যেত।যখন আমি আট মাসের গর্বভতী তখন নেহা এসেছিল আমায় দেখতে। কথায় কথায় আমার হাতে একটা বিয়ের কার্ড ধরিয়ে দেয়। কার্ডটা ছিল ওদের বিয়ের।নেহা আমাকে রাইসূলের জীবন থেকে সরে যেতে বলে।কিন্তু আমি তাতে রাজি হই না।তাই নেহা আমাকে মেরে ফেলতে চায়।ভাগ্যক্রমে তখন রাইসূল চলে আসে বলেই আমি বেঁচে যায়।তারপর থেকেই রাইসূল দিন রাত আমার সাথে পরে থাকতো।আমার অনেক যত্ন নিত।কিন্তু কতোদিন? রাইসূলের মা আবার অসুস্থ হয়ে পরে।তখন ওকে আমি জোড় করি ওর মায়ের কাছে যেতে।তবুও ও আমাকে একা ছাড়তে চাই নি।আমাকে ওর আপুর কথা বলে। ভাবলাম ওর আপু আমাদের অবস্থাটা বুঝবে!তাই ও আপুর সাথে কথা বলে আমাকে খুলনার বসে উঠিয়ে ওর আপুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল।বাস খুলনাতেই আসছিল কিন্তু মাঝপথে নেহার দলবল আমাকে আটক করে।অনেক চেস্টা করেও আমি পালাতে পারি না।আমাকে নেহা অনেক আঘাত করে। আমার সন্তান ভূমিষ্ট হতেই ও নিয়ে যায় আমার থেকে।আর আমাকে পিছিয়ে দিয়ে যায় ওর গাড়ির সাথে।তারপরের কোনও কথা আমার মনে নেই।শুধু চোখ মেলে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করি।ডাক্তার, নার্স সবাইকে দেখতে পাই কিন্তু আমার সন্তানকে পায় না। আমার সন্তান কোথায় ভাইয়া! প্লিজ ওকে আমার কাছে এনে দাও! আমি আর কখনও তোমার কাছে কিচ্ছু চাইবো না প্লিজ। রাইশা কাঁদতে থাকে।
সোহাগ রাইশাকে জড়িয়ে ধরে, শান্ত হ বোন।
কিছুক্ষণ পরে,
সোহাগ মির্জাঃ একটা কথার উত্তর দিবি আমাকে? তুই কি কখনও রাইসূলের আপুকে দেখেছিস?
রাইশাঃ না ভাইয়া তবে শুনেছি ওর আপু খুবই ভালো।সবসময় ওর আপুর প্রশংসা শুনতাম।
চলবে……