গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০৮
লেখাঃ #Mst_Liza
,
চোখ খুলেই মিরা চোখের সামনে সোহাগকে দেখতে পাই।সোহাগকে দেখে মিরা নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।দেখে এপাশে হুমাইরা বেগম, শাহীন খান আর সেই মেয়েটা দাড়িয়ে আছে যার জন্য সোহাগ মিরার উপর গতকাল এতোটা অত্যাচার চালিয়েছে।মুহূর্তেই মিরার কানে সোহাগের বলা প্রত্যেকটা কথা বেজে ওঠে।মনে মনে ভাবে, এতোটা ভালোবাসেন এই মেয়েটাকে, যার জন্য আমার গায়ে ওভাবে হাত তুললেন?
সোহাগ মিরার ডান হাতটা ধরে নিজের বুকের বাম পাশটায় রাখে,
সোহাগ মির্জাঃ কস্ট দিয়েছি তোমাকে আমি! আর নিজেও কস্ট পেয়েছি।যানো তোমাকে না পেয়ে কতোটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম?
মিরা নিজের হাতটা সোহাগের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
সোহাগ আবার মিরার হাতটা শক্ত করে ধরে, নিজের হাতের মুঠোয় আনে।তারপর মাথাটা হাতের সাথে ঠেকায়।
সোহাগ মির্জাঃ প্লিজ এমনটা করো না মিরা! আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি সত্যিই খুব অনুতপ্ত।
এবার মিরা নিজের মুখ খোলে।কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
মিরাঃ আমার কাছে কেন ক্ষমা চাচ্ছেন? আমি আপনার কে? আমার জন্য তো আপনার কস্ট হবার কথা না! আমি চলে যাব আপনার জীবন থেকে আর কখনও আসবো না।এই মেয়েটাকে নিয়ে আপনি সুখে থাকেন।আর যদি পারেন ওকে বিয়ে করে নিয়েন।তাহলে যদি আপনার পরনারীর সাথে রাত্রী যাপনটা কমে।আপনার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দিন কাটান।তাতে আমার কি?
রাইশাঃ ভাবি, এসব তুমি কি বলছো?
মিরাঃ ভাবি???
রাইশাঃ হ্যাঁ, ভাবি। তোমার বুঝতে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।আসলে ভাইয়া তোমার সাথে যা করেছে এর সবকিছুই নেহার চক্রান্ত।
মিরাঃ…..?
রাইশা মিরাকে সব খুলে বলে।নেহা যা যা করেছে এতোদিন ধরে সব বুঝিয়ে বলে মিরাকে। মিরা সব শুনে সোহাগকে ক্ষমা করে দেয়, কিন্তু তা প্রকাশ করে না। রাইশাকে বলে,
মিরাঃ সব বুঝলাম ননদিনী কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না।এখানে আসলাম কিভাবে?
হুমাইরা বেগমঃ আমরা নিয়ে এসেছি।
মিরাঃ তোমরা নিয়ে এসেছো?
হুমাইরা বেগমঃ হুমম।তুমি আমাদের গাড়ির সামনে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে।আমরা কি ওভাবে তোমাকে রেখে আসতে পারতাম? প্রতিবেশী হওয়ার তো একটা কর্তব্য থাকে।সোহাগকে ফোন দিলাম! শুনলাম একটা জরুরি দরকারে বাইরে আছে। এতো রাতে তোমাকে একাও সোহাগের বাড়িতে রেখে আসতে পারতাম না। তাই আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলাম।
মিরা সোহাগের দিকে তাকায়। দেখে সোহাগ এখনও অস্থির হয়ে আছে।মিরা একটু হালকা কাশী দেয়,
মিরাঃ উহু উহু।শুনছেন?
সোহাগ নিরুপায়ের মতো মিরার দিকে তাকায়।
মিরাঃ চলুন বাড়িতে যাবো!
মিরার মুখে কথাটা শুনে সোহাগের ফ্যাকাসে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মাথা কাত করে সম্মতি যানায়।
মিরা উঠতে যায় কিন্তু পারে না।সারা শরীরের ব্যাথায় কুঁকড়ে থাকে।সোহাগ বুঝতে পারে মিরার খুব কস্ট হচ্ছে।তাই মিরাকে কোলে তুলে নেয়।আর মিরা তাকিয়ে দেখে সবাই মুচকি হাসছে।লজ্জায় মিরা সোহাগের বুকে মুখ লুকায়।
,
,
মির্জা প্যালেস,
রাত অনেক গভীর।রাইশা তার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।আর সোহাগ মিরাকে নিয়ে রুমে গিয়ে শুইয়ে দিয়েছে।
মিরাঃ আজ আমায় সোফায় শুয়াবেন না?
সোহাগ মির্জাঃ মিরা…….?
মিরাঃ আমি কি কিছু ভুল বলেছি? সেই বিয়ের প্রথম দিনটা আপনার মনে আছে? কতটা স্বপ্ন আর আশা নিয়ে আপনার ঘরে এসেছিলাম আমি।আর আপনি কি করেছিলেন? আমাকে স্টোর রুমে নিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলেন।
সোহাগের শার্টের কলার টেনে ধরে, এই আপনি যানেন না আমি অন্ধকারকে ভীষণ ভয় পাই? তাহলে কেন অমনটা করেছিলেন আমার সাথে বলুন?
সোহাগ দুই হাত দিয়ে মিরার গালটা আকড়ে ধরে, আমি ভুল করেছি স্বীকার করছি মিরা।প্লিজ আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও। আর কখনও তোমার সাথে এমনটা করবো না।বিশ্বাস কর আমাকে! আমি সত্যিই খুব অনুতপ্ত।
মিরাঃ বিশ্বাস আর আপনাকে? আপনার মতোন একটা খারাপ, পাষাণ আর নির্দয় মানুষকে কখনও ক্ষমা করা যায় না।
সোহাগ মির্জাঃ প্লিজ মিরা আমায় একটা সুযোগ দাও।
মিরাঃ সুযোগ???
মিরা একটু ভেবে দেখার রিএ্যাক্ট করে,
ঠিক আছে একটা সুযোগ আপনাকে আমি দিতে পারি কিন্তু তার জন্য আপনাকে পরীক্ষা দিতে হবে।সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই আমার ক্ষমা পাবেন।
সোহাগ মির্জাঃ কেমন পরীক্ষা?
মিরাঃ সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাইশা আর আমার জন্য চা করে দিবেন।তারপর সকালের নাস্তা বানিয়ে আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে যাবেন।দুপুরে জাস্ট বারোটা বাজলেই বাড়িতে চলে আসতে হবে।নিজের হাতে রান্না করে আমাদের সাথে লান্স করবেন।তারপর এঁটো থালাবাসন পরিষ্কার করে দু’ঘন্টা আমার শরীরের যেখানে যেখানে এতোদিন আঘাত করেছেন, ম্যাসার্চ করবেন।সন্ধ্যায় আবার অফিস যাবেন। রাতে বেশী রাত করে ফিরতে পারবেন না।আর সাথে করেও কোনো মেয়েকে আনতে পারবেন না।আসার সময়ে আমার জন্য আখঁ কিনে আনবেন।যদি সারাদিনের কাজে যেমনটা বলেছি তার মধ্যে কোন গাফিলতি খুঁজে পাই তাহলে সেই আখঁ দিয়ে আপনাকে সায়েস্তা করব।আর যদি দেখি সবকিছু ঠিক ঠাক করেছেন তাহলে একসাথে বসে রাতে আখঁ খেতে খেতে জোসনা বিলাস করব।
মিরা কথাগুলো বলে একটা জোড়ে নিশ্বাস নেই।সোহাগের দিকে তাকালে দেখে সোহাগ হা করে আছে।
কি পারবেন তো এসব করতে?
সোহাগ মির্জাঃ এটা পরীক্ষা নাকি টর্চার?
মিরাঃ ওহহ তার মানে আপনি দিবেন না পরীক্ষাটা? ঠিক আছে ক্ষমাও পাবেন না।
সোহাগ মির্জাঃ না আমি সেটা বলতে চাই নি?
মিরাঃ তো কি বলতে চেয়েছেন?
সোহাগ মির্জাঃ একটা ঢোক গিলে, আচ্ছা মিরা এসব কতোদিন করতে হবে?
মিরাঃ যতোদিন না আমি বুঝবো আপনি একজন আদর্শ স্বামী হয়ে উঠতে পেরেছেন ততোদিন।
সোহাগ মির্জাঃ আদর্শ স্বামী হতে গেলে এসব করতে হয় বুঝি?
মিরাঃ এই আপনি রাজি কিনা তাই বলুন তো আগে?
সোহাগ মির্জাঃ ঠিক আছে।চেস্টা করব।
মিরাঃ ওকে এখন ঘুমান!
সোহাগ বিছানায় যেই শুতে যাবে,
মিরাঃ এই করছেন কি?
সোহাগ মির্জাঃ কেন ঘুমাচ্ছি!
মিরাঃ এখানে কেন ঘুমাচ্ছেন।
বিছানার থেকে বালিশটা নিয়ে সোহাগের মুখের উপর ছুড়ে মেরে বলে, যান গিয়ে সোফায় ঘুমান।
চলবে…..
(সুন্দর করে একটা পর্ব লিখেছিলাম।কিন্তু আপনারা বললেন সোহাগের থেকে মিরাকে আলাদা না করতে।ঠিক আছে! পর্বটাই ডিলিট করে দিয়েছি।আর নতুন করে এটা লিখেছি।এবার বলুন কেমন হয়েছে?)