গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ০৯

0
3001

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০৯
লেখাঃ #Mst_Liza
,
সোহাগ বালিশটা নিয়ে, সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মিরার দিকে মুখ করে মিরার মুখপানে চেয়ে থেকে ভাবে, কতোটা নিষ্পাপ আমার এই মিরা? আর আমি কিনা এর সাথেই!
নাহহ আর ভাবতে পারছি না।
ভাবলেই যেন বুকের ভেতরটা অস্থির হয়ে ওঠে।

রাত তিনটার কাছাকাছি সময়,,,
সোহাগের চোখে এখনও ঘুম নেই। যদি একটু মিরাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারত হয়তো শান্তিতে ঘুমটা হতো।
সোহাগ একটু টুকটাক শব্দ করে বোঝার চেস্টা করে মিরা সজাগ কিনা? যখন বুঝতে পারলো মিরা ঘুমিয়েছে, সোহাগ আস্তে করে গুটিগুটি পায়ে সোফা ছেড়ে উঠে মিরার পাশে এসে শুয়ে পরে।কিছুক্ষণ কোনোও সারা শব্দ করে না।মিরার পাশে চুপটি করে শুয়ে, মিরার ঘুমন্ত মুখটার পানে চেয়ে থাকে।তারপর মিরাকে টেনে এক ঝাটকায় নিজের বাহুডোরে মিশিয়ে নেয়।মিরার কাটা পিটটায় আলতো করে হাত বুলাতে থাকে।আর পরক্ষণে মিরার ঘারে নাক ডুবিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

সকালে সোহাগের বরাবরের জন্যই একটু তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস।সেই ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর সোহাগ একা হাতে বাড়ি এবং বিজনেস সবটা সামলিয়েছে।আর আজও তার ব্যতীক্রম কিছু হয় নি।মিরা হয়তো যানে না সোহাগ কি কি করতে পারে!

মিরার দেওয়া শাস্তি সোহাগ খুব খুশি মনে উপভোগ করছে।ঘুম থেকে উঠেই সকালের নাস্তা তৈরী করা শেষ।এবার চা বানিয়ে প্রথমে রাইশাকে ডেকে দিয়ে এসে এখন মিরাকে ডাকছে।কিন্তু মিরা যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন!! সোহাগ মিরাকে ডাকতে ডাকতে মিরার কানের কাছে চলে আসে।তারপর নিজের নাকটা দিয়ে মিরার কান ঘেষে
ফিসফিসিয়ে বলে,
সোহাগ মির্জাঃ মিরা? এই মিরা? এই ওঠো! দেখ চা এনেছি!

মিরা ঘুমের ঘোড়ে এমন শিরশিরানি অনুভব আর আবেগ মাখানো কণ্ঠস্বর শুনে এক লাফে উঠে পরে।
আপনি???

সোহাগ মির্জাঃ একটু মুচকি হেসে, তোমার জন্য চা বানিয়ে এনেছি!

কথাটা শুনে মিরা একটু অবাক হয়ে যায়।এতো সকালে চা বানিয়ে এনেছেন? তাকিয়ে দেখে সোহাগের মুখে অনেক হাসি!!
মিরা সোহাগের দিকে তাকাতে তাকাতে চায়ের কাপে এক চুমুক দেয়।একি??? সবকিছু তো ঠিকঠাক আছে।

মিরাঃ এই সত্যি কি চা’টা আপনি নিজে বানিয়েছেন?

সোহাগ মির্জাঃ কেন বিশ্বাস হয় না তোমার?

মিরাঃ যানি না! হতেও পারে আপনি রাইশাকে দিয়ে…

সোহাগ মির্জাঃ আমার বোনকে দিয়ে আমি কখনও কাজ করাই না!

মিরা ঠোঁটটা একটু বাকিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলে, দারোয়ান আংকেলকে দিয়ে পাড়ার মোড় থেকে আনিয়েছেন নিশ্চয়!

সোহাগ মির্জাঃ এই তুমি আমাকে কি ভাবো বলো তো? বিশ্বাস যদি না হয় তাহলে চলো! তোমার সামনে দাড়িয়ে আমি আবার বানিয়ে দেখাবো!

মিরাঃ থাক! দরকার নেই! যান গিয়ে সকালের নাস্তা রেডি করে খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখুন।আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।

সোহাগ মির্জাঃ ব্রেকফাস্ট আমি আগেই গুছিয়ে রেখে এসেছি।

মিরা কোন কথা বলে না।সোহাগের দিকে তাকিয়ে থাকে।আর মনে মনে ভাবে সত্যিই কি এই লোকটা নিজের হাতে সব করছে?

কিছুক্ষণ পর মিরা বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে, সোহাগ এসে মিরাকে আস্তে করে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।

মিরাঃ কি করছেন কি ছাড়ুন! আমি পারবো যেতে।

সোহাগ মির্জাঃ চুপপপ! আমি আছি কি করতে? ব্রাশে প্রেস্ট লাগিয়ে,

সোহাগ মির্জাঃ ইইইইই দাঁত বের কর!

মিরাঃ আমি পারব আপনি যান।

সোহাগ মির্জাঃ তুমি যে পারবে সেটা আমিও যানি।তবুও আমাকে একটু আমার বউয়ের সেবা করতে দাও।

মিরাঃ উউউ ঢং!

সোহাগ মির্জাঃ এই ঢং কি হ্যাঁ! আমি কি আমার বউয়ের যত্ন নিতে পারি না?

মিরা কোনও কথা বলে না।সোহাগের দিকে তাকিয়ে থাকে।কারণ সোহাগকে যে বড্ড ভালোবাসে মিরা।চুপচাপ সোহাগ যা বলে শুধু তাই শোনে।যতোই চায় সোহাগকে শাস্তি দেবে।সোহাগের করা সব অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবে, ততোই সোহাগ কাছে আসলে মিরা দূর্বল হয়ে পরে।

,
বেলা ৮টা,
খাবার টেবিলে বসে আছে রাইশা আর মিরা।সোহাগ সার্ভ করে দিচ্ছে।সোহাগের রান্না এতো সুস্বাদু যে মিরা চেটেপুটে খাচ্ছে।ঝাঁলঝাঁল আমের চাটনির সাথে খিঁচুরি আর ডিম শিদ্ধ।আহ কি তৃপ্তি এই খাবারে!! মিরা মনে মনে ভাবছে, সোহাগকে দিয়েই সারা জীবন এমন রান্না করিয়ে খাবে।
খেতে খেতে মিরা বলে, মা ফোন করেছিল রাইসূল সামনের সপ্তাহে আসছে! কথাটা শুনে রাইশার বিষুম লেগে যায়। সোহাগ রাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে এক গ্লাস পানি রাইশার সামনে ধরে।

রাইশার চোখ ছলছল হয়ে ওঠে।যেন চোখের পানি বাঁধ মানছে না।

সোহাগ মির্জাঃ তুই কাঁদছিস কেন ছুটকি? দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে!

রাইশাঃ কিভাবে ঠিক হবে? তুমি বল ভাইয়া! কোন মুখে দাড়াবো আমি ওর সামনে? নেহা যে বলেছে, আমাদের সন্তানকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে।ওকে আমি কি জবাব দিব? আমি তো যানি না আমার সন্তান বেঁচে আছে নাকি মরে…

মিরা রাইশার মুখটা চেপে ধরে, ওসব কথা কখনও মুখে আনবে না তুমি! ওই সৃস্টিকর্তার উপর একটু ভরসা রাখও! তাছাড়াও তোমাকে নিয়ে আমি অনেক মিথ্যা বলেছি আমার ভাইটাকে।

সোহাগ মির্জাঃ মিথ্যা? কি মিথ্যা বলেছো তুমি মিরা?

রাইশাঃ মিথ্যা বলেছো মানে?

মিরাঃ হ্যাঁ, রাইসূল যানে তুমি তোমার ভাইয়ের বাড়িতে আছো।সেদিন আমি তোমার জন্য বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলাম।সেখানে নেহাকে দেখি! আমি ওর পিছু নিই আর ও কারও সাথে ফোনে কথা বললে, যানতে পারি তোমার সাথে কি করেছে!অনেক চেস্টা করেও আমি তোমার কোনও খোঁজ পাই নি।রাইসূল আমাকে ফোন করলে ওকে বুঝিয়ে ছিলাম তুমি তোমার ভাইয়ের বাড়িতে আছো।যেদিন তুই নিজের পায়ে দাড়াতে পারবি সেদিনই ওর ভাই তোদেরকে মেনে নেবে।তুই প্রতিষ্ঠিত হয়ে এসেই তোর বউকে নিয়ে যাবি।আমি নিজে রাইশাকে তার ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। আর এই সিদ্ধান্তটা রাইশার ভাইয়ের।

সোহাগ মির্জাঃ তুমি মিথ্যা কেন বলতে গেলে?

মিরাঃ এটা না বললে যে আমার ভাইটা খুব ভেঙে পরতো।

রাইশাঃ কিন্তু আমার শাশুড়ি মা? উনি তো কখনও আমাকে মেনে নিবে না।

মিরাঃ কে বলেছে মেনে নিবে না? আমি মাকে সব খুলে বলেছিলাম।আসলে আমার বাবার একসময় বিজনেসে লস হয়।নেহার বাবা আমার বাবার বন্ধু ছিল।নেহার বাবা অতন্ত্য ভালো একজন মানুষ।তিনিই আমাদের সেই দূর দিনে পাশে দাড়িয়ে ছিলেন।আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।যার জন্য বাবা নেহার বাবার দেয়া রাইসূলের সাথে নেহার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।বাবা মাকে তার বন্ধুকে দেওয়া ওয়াদার কথা বলেছিল।আর তাই মা চেয়েছে বাবার সেই ওয়াদা পূরণ করতে।তবে এখন নেহার আসল রূপটা নেহার বাবা-মায়ের কাছেও পরিষ্কার।আমি জানতাম মা যদি নেহার সামনে মুখ খোলে তাহলে নেহা মায়ের ক্ষতি করবে।এইজন্য মাকে বলি, রাইসূল না আসা অবদি নেহার সাথে অভিনয় করতে।

সোহাগ মির্জাঃ তুমি কি যানতে রাইশা আমার বোন?

মিরাঃ যানতাম কিন্তু আপনাকে বলার কোনও সুযোগ পাই নি।কাল আমি রাইশাকে দেখে চিনতে পারি নি কারণ বাড়িতে রাইশার একটাও ছবি ছিল না।আর আপনি তো রাইশাকে মেনে নেন নি।যদি যানতে পারেন আমি রাইসূলের বোন হয়তো আমাকে মেরে ফেলতেন তাই রাইশার ব্যাপারে আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহশ হয় নি।

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ।সোহাগ গিয়ে দরজাটা খুলতেই একটা মেয়ে সোহাগের বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।আর ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে বলে,
ওগো, তোমার কি আমার কথা একটুও মনে পড়ে না? এতো বদলে গেছো তুমি!

চলবে…..

(আমার পরীক্ষা চলে,,,আপনারা তো বলেন গল্প তারাতারি দিতে।কিন্তু আমি খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম ও পড়ার শেষে যখন সময় পায় তখন গল্প লিখি।আশা করছি দেরি হবার কারণটা বুঝবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here