গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ১০

0
2616

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ১০
লেখাঃ #Mst_Liza
,
সোহাগ এক ধাক্কায় মেয়েটিকে নিচে ফেলে দেয়।তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখে, মাথার বিনি করা চুলগুলো দুইপাশে কুকুরের লেজের মতো বেকেঁ আছে, পড়নে গ্রাম্য মেয়েদের মতো পরিপাটি ধাজের শাড়ি।মুখের মধ্যেখানে ইইআআআ বড় একটা তিল।গায়ের রং কয়লার মতো কালো।আর চোখদুটো ট্যারা।ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে সোহাগের দিকে।মেয়েটি তার হাতের টুপলিটা রেখে উঠে সোহাগের মুখোমুখি এসে দাড়ায়।কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলে, ওগো আমারে তুমি ফেইলা দিলা?

সোহাগ মির্জাঃ এই মেয়ে এই! তুমি কি পাগলা গারদ থেকে এসেছো?

মেয়েটিঃ নাহ না গেরাম থেইকা আইছি!

সোহাগ মির্জাঃ সে তুমি যেখান থেকেই আসো! হুট করে এসে আমার গায়ে পরলে কেন?

মেয়েটিঃ অনেকদিন পর দেখছি তো তাই! বলেই আলহ্লাদে গদগদ হয়।

সোহাগের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

সোহাগ মির্জাঃ তুমি চেনো আমাকে?

মেয়েটি একটি হাসি দিয়ে লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে, কিতা কউ? তোমারে আমি চিনবো না?

সোহাগ মির্জাঃ তাই নাকি? কই আমি তো তোমাকে আগে কখনও দেখি নি!

মেয়েটি কান্না জুড়ে দিয়ে, হায় আল্লাহ! এই কস্ট আমি কারে দেহায়! আমার সোয়ামী আমারে কয় চেনে না।চোখের পানি শাড়ির আঁচলে মুছতে মুছতে বলে, ওগো তুমি আমারে ভুইলা গেলা?

সোহাগ মেয়েটিকে এক ধমক দেয়।ধমকের সাথে মেয়েটি একটু কেঁপে ওঠে।

সহাগ মির্জাঃ ন্যাকামো হচ্ছে? ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় দেব।ভালো ভাবে বল তুই কে?

মেয়েটাঃ ওগো ধমক দাও কেন? আমার ভয় লাগে!

সোহাগ দাঁত কটমট করে, ভয় পাচ্ছিস…?আগে বল কে তুই?

মেয়েটিঃ আমারে চিনতে পারতাছো না? আমি তোমার জড়িনা গো! জড়িনা!

সোহাগ মির্জাঃ জড়িনা? কোন জড়িনা? কিসের জড়িনা?
মাথাটা সোহাগের খারাপ হবার উপক্রম।

জড়িনাঃ তোমার বিয়া করা বউ জড়িনা।

এই মেয়ে বলে কি?
আমি তার স্বামী?
সে আমার বিয়ে করা বউ জড়িনা!
নিশ্চয় কোনও পাগলা গারদ থেকে চলে এসেছে! যত্তসব, আবল তাবল বকছে!
এখন তো মিরা চলে আসলেও সমস্যা।মিরা দেখার আগেই যে করে হোক মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করতে হবে।

সোহাগ মির্জাঃ এই মেয়ে বের হ বলছি।রাস্তায় গিয়ে তোর পাগলামি দেখা।দেখবি অনেক স্বামী পাবি।তাদের সাথে সংসার করিস।আমারে রেহায় দে।অনেক কস্টে আমার সংসারটা জোড়া লাগিয়েছি! তুই আর আগুন লাগাস না!
কথাগুলো বলে মেয়েটির হাত ধরে দরজার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় মিরার আগমন।
যার ভয় ছিল তাই হয়েছে।

মিরাঃ কে এসেছে গো?

সোহাগ মেয়েটিকে নিয়ে দাড়িয়ে পরে।সোহাগ মিরার দিকে ঘুরে দাড়াতেই মেয়েটি সোহাগের ধরে রাখা হাতটায় চুমু খেতে থাকে।মিরা দেখে চোখদুটো বড় বড় করে ফেলে।আর সোহাগ তো মিরার ভয়ে কিছু করতেও পারছে না।

মিরাঃ ছি: আপনি কি কখনো শুধরাবেন না? সারা জীবন এমনই থাকবেন?

সোহাগ মির্জাঃ মিরা আমার কথা শোনো?

মিরাঃ কি শুনবো আপনার কথা? একটা দুশ্চরিত্র, নোংরা! খারাপ! পুরুষ মানুষ আপনি! আমার লাইফটায় শেষ করে দিলেন।

সোহাগ মেয়েটির থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে মিরার কাছে যায়।মেয়েটিও সোহাগের পিছন পিছন ছোটে।

সোহাগ মির্জাঃ প্লিজ মিরা আমার কথাটা তো শোনো!

মিরাঃ আমি কালই আমার মায়ের কাছে চলে যাব। আর থাকবো না আপনার মতো প্রতারকের কাছে।

সোহাগ মির্জাঃ আমাকে একবার সুযোগ দাও আমার কথাটা বলার!

মিরাঃ লজ্জা করে না আপনার? আবার সুযোগ চাচ্ছেন?

সোহাগ মির্জাঃ মিরা! তুমি ভুল বুঝছো আামাকে!

মিরাঃ আমি ভুল বুঝছি আপনাকে? এতোগুলো দিন ধরে চোখের সামনে যেসব করেছেন তার সবই কি ভুল?

সোহাগ মির্জাঃ দেখও, তুমি যেটা দেখেছো সেটা সত্যি না।আসলে…

মিরাঃ থাক! আর কিচ্ছু বলবেন না আপনি!
ভেবেছিলাম আপনার সাথে নতুন ভাবে জীবনটা শুরু করবো।কিন্তু আপনি? ছি:
সোহাগের শার্টের কলারটা টেনে ধরে, চলে যাব আমি।থাকুন আপনি একা আপনার এসব বাজে অভ্যাস নিয়ে।

মেয়েটি মিরাকে টেনে সোহাগের থেকে দূরে সরিয়ে ঠাসসসস করে একটা চর বসিয়ে দেয়।
তারপর মিরার চুলের মুঠি ধরে, আমার সোয়ামীর শার্টের কলার ধরনের অধিকার তোরে কেডা দিছে?

মিরা মেয়েটির থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেস্টা করছে। কিন্তু পারছে না! সোহাগ এসে একবার বলে, এই মেয়ে ছাড়ো আমার স্ত্রীকে।মেয়েটি তখনই মিরার চুল ছেড়ে পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়ে, আপা আমারে আপনি ক্ষমা কইরে দিয়েন।আমি যানতাম না, আপনি আমার সতিন।

মিরাঃ এই মেয়ে আমার পা ছাড়ো!

তখন মেয়েটি মিরার পা ছেড়ে দেয়।ঘুরে দরজার কাছে গিয়ে তার টুপলিটা নিয়ে আবার ফিরে আসে।সোহাগ আর মিরার মাঝখান থেকে থরবর করে হেটে সিঁড়ি বেয়ে সোহাগের রুমে চলে যায়।

সোহাগ মেয়েটিকে বের করে দেবে, তাই মেয়েটির পিছনে ছুটছে,,,মিরা সোহাগের হাত ধরে টেনে থামিয়ে দেয়।

সোহাগ মির্জাঃ ছাড়ো মিরা যেতে দাও!

মিরাঃ হয় আপনাকে আমি ছেড়ে দিয় আর আপনি আমার সতিনের কাছে যান?

সোহাগ মির্জাঃ কিসের সতিন? ওই মেয়েটিকে আমি চিনি না বিশ্বাস কর!

মিরাঃ চেনেন নাহ? তাহলে ও আপনার রুম চিনলো কিভাবে?

সোহাগ মির্জাঃ সেটা আমি বলতে পারব না।

মিরা কেঁদে দেয়, আমি সতিনের ঘড় করতে পারবো না।আপনি থাকেন আপনার ওই বউ নিয়ে আমি কালই আমার মায়ের কাছে চলে যাব।
,

ওদিকে,,,
,

মেয়েটি সোহাগের রুমে গিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।কোমড়ে গুজে রাখা সেলফোনটা বের করে কাউকে ফোন করে,,,
তাকে বলে, হ্যাঁ আপু সবকিছু ঠিকঠাকই আছে।তুমি চিন্তা করও না তো, ওই সোহাগ মির্জা আমায় চিন্তে পারে নি।তবে দেখও আমরা ঠিকই ওর কর্মের ফল ওকে ফিরিয়ে দিতে পারব।আচ্ছা রাখি, পরে কথা বলবো।

মেয়েটি ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরে।তোমাকে তোমার কর্মের ফল ভোগ করতেই হবে সোহাগ মির্জা। আর সেটাই হবে তোমার প্রতি আমাদের তিন বোনের নেওয়া প্রতিশোধ।ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেব তোমার জীবনটা।তখন তুমি বুঝবে কস্ট কাকে বলে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here