গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ২৭
লেখাঃ Mst_Liza
,
আজ ২০ বছর পর মিরা খুলনায় আসছে। সোহাগের কাছে। শেষ আশাটুকু নিয়ে। যদি জীবনের বাকি দিনগুলো সোহাগের সাথে কাটিয়ে দেওয়া যায়! তাহলে ভালোই হবে। আর তা না হলেও মিরার কোনও দুঃখ নেই। মানুষটা যে তারই। সে যতই অপমান করুক।তাকে ঘিরেই যে মিরার বসবাস।মায়ার পাঠানো সারপ্রাইজ গিফটটাতে বাবা, মেয়ের একসাথে তোলা ছবিগুলো দেখে মিরা আর লোভ সামলাতে পারলো না।চলে এলো খুলনায়।কারণ মিরারও ইচ্ছা করে স্বামী, সন্তান নিয়ে জীবনের একটা দিন অন্তত কাটাবে। আর কত দিনই বা মিরার হাতে আছে? তাই আজ এই শেষবারের মতো মিরা একবার হার মানতে চায়। হার মেনে দেখতে চায় মানুষটাকে পাওয়া যায় কিনা আর যদি না পায় তাহলে সেটাই হবে মিরার ভাগ্য।
মিরা এখন মির্জা প্যালেসের সামনে দাড়িয়ে।তার মনের ভেতরে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে।শুধু ভাবছে, এতোদিন পর নিজের বাড়িতে যাবে অথচ এ বাড়ির কিছুই এখন তার নেই।বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে চোখটা বন্ধ করলেই ভেসে আসে সেই পার্টির রাতটার কথা।কিভাবে সোহাগ ধাক্কা দিয়ে মিরাকে বাড়ি থেকে বের করে মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল?
দূর থেকে মিরাকে দেখে দারোয়ান রহিম মিয়া এগিয়ে আসে।
রহিম মিয়াঃ একি বৌরানী তুমি? কেমন আছো? আর এতোদিন কোথায় ছিলে?
মিরা প্রতিউত্তরে শুধু একটা কথাই জানতে চায়।
মিরাঃ রহিম চাচা উনি কি বাড়িতে আছেন?
রহিম মিয়াঃ হ্যাঁ, আছে।
মিরাঃ উনাকে একটু ডেকে দেবেন।আমি কথা বলব।
রহিম মিয়া মিরাকে বসতে একটা চেয়ার টেনে দিয়ে সোহাগকে ডাকতে বাড়ির ভেতরে যায়।আর মিরা সেখানে বসেই সোহাগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মিরার অপেক্ষা যেন শেষ হবার নয়।এক একটা মুহূর্ত যেন হাজার বছরের মতো লাগছে।ওদিকে সোহাগ মিরা এসেছে শুনে ছুটে আসে।বাইরে এসে আর মিরাকে পায় না।খুব ভেঙে পরে সোহাগ।এতোগুলো দিন পরে মুহূর্তের মধ্যেই এতো বড় ধক্কা সোহাগ নিতে পারছে না।
সোহাগ মির্জাঃ কোথায়? আমার মিরা কোথায় রহিম চাচা?
রহিম মিয়াঃ বিশ্বাস কর বাবা এখানেই ছিলো। এইমাত্র আমি বৌরানীর সাথে কথা বলে তোমাকে ডাকতে গেলাম।
সোহাগ মির্জাঃ তাহলে দেখছি না কেন?
রহিম মিয়াঃ সেটাতো আমিও বুঝতে পারছি না।
সোহাগ সেখানে বসে পরে।চিৎকার করে বলে, কোথায় তুমি মিরা? আসলেই যখন তখন চলে কেন গেলে?
।
মায়াঃ এই ছাড়ুন না
মাহিরঃ নাহ
মায়াঃ কটা বাজে খেয়াল আছে?
মাহিরঃ বাজুক! আজ আমার অফ ডে!
মায়াঃ আমাকে তো উঠতে হবে।
মাহিরঃ বললাম তো না! যতক্ষণ আমি উঠবো না এই ভাবে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকো।
মায়াঃ এমন কেন আপনি?
মাহিরঃ উহু ম-ম কথা বলো না।খুব শীত করছে আমার।
মায়াঃ হুমমম।
এমন সময় মায়ার ফোনটা বেজে ওঠে।
মায়াঃ এই ফোন বাজছে তো
মাহির মায়ার ফোনের স্কীনে তাকিয়ে দেখে মিরার ফোন।ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিতেই ফোনের ওপাশ থেকে কেউ মাহিরকে কিছু বলে।মাহির কথাটা শুনেই থ হয়ে যায়। মায়াকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসে।
মায়াঃ এখন কি হলো?
মাহিরঃ মায়া
মায়াঃ কি?
মাহিরঃ মিরা মায়ের এক্সিডেন হয়েছে।
মাহিরের কথা শুনে মায়ার মুখটা এক নিমিষেই মলিন হয়ে যায়।মায়া পারে না নিজেকে সামলাতে।শুধু ভাবে মাহির কি বলছে এটা? যেই মাকে না জিজ্ঞেসা করে মায়া একটা কাজও করতে পারে না সেই মায়ের এক্সিডেন্ট? কথাটা শুনেই যেন মায়ার ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাহিরঃ এভাবে চুপ করে আছো কেন?
মায়া সমস্ত নিরাবতা আর চিন্তা কাটিয়ে উঠে মাহিরকে ঝাকিয়ে জানতে চায়,
মায়াঃ আপনি মিথ্যা বলছেন বলুন?
মাহিরঃ নাহ
মায়া কাঁদতে থাকে।
মায়াঃ আমাকে এক্ষুণি আমার মায়ের কাছে নিয়ে চলুন।
মাহিরঃ মিরা মা আমাদের হসপিটালে আছে।
মায়াঃ মা খুলনাতে?
মাহিরঃ হুমমম। তুমি কি যানতে মিরা মা আসবে?
মায়াঃ না।মা হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিল।কাল আমি মাকে সারপ্রাইজ গিফট পাঠিয়ে ছিলাম বলে।
মাহিরঃ তাই হবে হয়তো
মায়াঃ কিন্তু এক্সিডেন্ট টা কিভাবে হলো?
মাহিরঃ একটা ছোট বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে মিরা মা নিজে ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়েছে।এখন ও.টি চলছে।কল লিস্টের লাস্ট কলটা তোমার ছিল বলে তোমাকে ফোন করে জানিয়েছে।
মায়াঃ দেখেছেন? এভাবেই সারাটা জীবন আমার মা সকলের কথা ভেবেছে। সকলের ভালো চেয়েছে। অথচ দেখুন এই সমাজ কখনও তাকে একটু সম্মান দেয় নি। এতো অপমান আর অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকে আমার মা।আজ আমার মায়ের এই অবস্থা আমি পারছি না মেনে নিতে।
মাহির মায়াকে বুকে টেনে নিয়ে শান্তনা দেয়।
মাহিরঃ ওসব কথা ভেবে নিজেকে আর কস্ট দিও না।আমাদের এখন হসপিটালে যেতে হবে।মিরা মায়ের কাছে।যাবে না?
মায়াঃ হুমম।যাবো।
চলবে….
(প্রিয় পাঠকগন,,, আমার পরীক্ষা চলছে।যার জন্য সময় না পেলে গল্প লিখতে পারি না।গল্প ছোট হওয়ার জন্য, লেট হওয়ার জন্য // আপনাদের সকলের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।আশা করছি আপনারা আমার অসুবিধা টুকু বুঝবেন।)