গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ৩৩
লেখাঃ #Mst_Liza
,
মাহির এখন মানসিক রোগী। সারাক্ষণ অন্ধকার রুমে এলোমেলো ভাবে বসে থাকে আর আংড়নো অবস্থায় মুখ বাকিয়ে থপথপ করে হাটে ও বিনবিনিয়ে গান গায়। কেন যে এলে বা জড়ালে প্রেমে কেন তুমি আমায়…কেন বুঝিনি কি হারিয়ে আমি পুড়ে পড়ে যে ছাই…জীবনে কি খেলা খেলেছো যে হায়… এর শেষ বল কোথায়…ঢেউয়ে ভাঙে দুকুল ভাঙে স্বপ্ন হায়..আমি আধাঁরে হারায়..
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মাহির ভয়ে গুটিশুটি হয়ে বিছানার চাদরটি টেনে নিয়ে নিজের মুখের ওপর ধরে রাখে।পড়নের পাজামার দড়িটা মুখের মধ্যে ভরে চিবাতে থাকে।এদিকে মুফতি খান আর রাইশা এসে রুমের লাইটটা অন করে মাহিরকে ডাকে।মাহির সোনা, বাবা আমার, ওষুধ খেতে হবে না? কোথায় তুমি?
লাইটের আলো মাহিরের অসহ্য লাগে।মায়েরা কাছে আসতেই চিৎকার জুড়ে দেয়।চোর চোর।আমার মায়াকে নিয়ে গেছে, এখন আমাকে নিতে এসেছে।মাহিরের দুই মা এসে মাহিরকে শক্ত করে ধরে ওষুধ খাওয়ানোর চেস্টা করে। মাহির দাঁপাদাপি ঝাঁপাঝাপি শুরু করে দেয়।যার ফলে রুমের জিনিসপত্র সব এলোমেলো হতে থাকে।কাচের তৈরি জিনিসগুলো ভেঙেচুরে একাকার।রাইসূল শব্দ শুনে রুমে এসে মাহিরের হাত, পা, খাটের সাথে বাঁধে।তারপর মাহিরকে একটা ইনজেকশন দিয়ে চলে যায়।
রাইশা আর মুফতি দুজনে মিলে কাঁদছে আর একে অপরকে শান্তণা দিচ্ছে।
রাইশাঃ কোথায় চলে গেলি তুই মায়া?
মুফতি খানঃ ছেলেটা কি কখনও সুস্থ হবে না বোন?
রাইশাঃ রাইসূল তো বলেছে মায়া ফিরে আসলে মাহিরের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
মুফতি খানঃ সব ওই কাননাগিনীর জন্য হয়েছে।মায়ের জেলে যাওয়ার প্রতিশোধ পূরণ করতে মিথ্যা নাটক করে আমার বৌমাকে ছেলের থেকে আলাদা করে দিয়েছে ওই স্নিগ্ধা।
রাইশাঃ বাদ দাও তো বোন স্নিগ্ধা যে মাহিরকে ডিভোর্স দিয়েছে এটাই অনেক।মাহির এখন একটা ধাক্কার মধ্যে আছে।মায়াকে এইভাবে ঠকিয়েছে ভেবে সহ্য করতে পারে নি। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে মাহিরের জন্য।
মুফতি খানঃ হুমমমম। বোন আমার বৌমা ঠিক আছে তো? না জানি এতোদিন কোথায় আছে।কেমন আছে?
রাইশাঃ ওই উপর অলার উপর ভরসা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।দেখ আমার বিশ্বাস ছিলো আমার সন্তান বেঁচে আছে।তাই তো আমি এতো বছর পর মাহিরকে ফিরে পেয়েছি।
।
।
।
হসপিটাল থেকে রুসা বের হয়েছে। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। ড্রাইভার ছুটিতে আছে বলে নিজেই ড্রাইভ করছে।হঠাৎ জঙ্গলের রাস্তায় রুসার গাড়ীটা বন্ধ হয়ে যার।স্ট্রাটই হচ্ছে না।তাকিয়ে দেখে প্রেক্টোল শেষ।কি আর করবে লিফটের জন্য দাড়িয়ে আছে।প্রায় আধ ঘন্টা পর একটা গাড়ী আসে। রুসাকে দেখেও পাত্তা না দিয়ে কিছু দূর চলে যেয়ে আবার ফিরে এসে রুসার সামনে দাড়ায়।রুসা খুশি হয়ে এগিয়ে গিয়ে গাড়ীর দরজায় নক করে বলে, একটু লিফট দেওয়া যাবে।সাথে সাথেই কয় একজন ছেলে মাতাল অবস্থায় গাড়ী থেকে নেমে রুসাকে টেনে গাড়ীর ভেতরে ফেলে দেয়।রুসা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে।এরইমধ্যে ছেলেগুলো রুসার জামার হাতা দুপাশ থেকে ছিড়ে ফেলে।
ঠিক ওই রাস্তা দিয়েই অফিসের থেকে বাড়ি ফিরছিলো আবির। রুসার চিৎকার শুনে আবির এগিয়ে এসে এমন অবস্থা দেখে ছেলেগুলোকে গন পিটুনি দেয়।ছেলেগুলোর মাতাল অবস্থায় আবিরকে মারার শক্তি ছিলো না।তাই শুধুই মার খেয়ে যায়।তারপর আবির রুসার জামার হাতা ছিড়া দেখে চোখ সরিয়ে নিজের কোর্ট টা খুলে রুসার পিঠের উপর রাখে।
কোর্ট টা ঠিক করে পড়তে পড়তে রুসা আবিরকে বলে,
রুসাঃ আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব? আজ যদি আপনি না থাকতেন তাহলে…
আবিরঃ থাক! আমি বুঝি না আপনারা মেয়েরা এতো রাত্রে এই রাস্তায় কি করেন?
রুসাঃ আপনি ভুল বুঝছেন। আমি একজন ডাক্তার।আসলে ইমারজেন্সি রোগী ছিল তাই দেরি হয়ে গেছে।
আবিরঃ ওহহ ছরি।আমি বুঝতে পারি নি।
রুসাঃ নাহ না ঠিক আছে।
আবির চলে যেতে লাগে রুসা আবিরকে ডাক দেয়।
রুসাঃ শুনুন
আবির রুসার দিকে ঘুরে দাড়ায়।
আবিরঃ কিছু বলবেন?
রুসাঃ আসলে আমার গাড়ীর প্রেক্টোল শেষ হয়ে গেছে।যদি একটু লিফট দিতেন।
আবিরঃ ওহহ শিওর আসুন।
আবির গাড়ী চালায় আর রুসা আবিরের দিকে আড়চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকায়।হঠাৎ রুসার মনে একটা ভালো লাগা কাজ করে আবিরকে নিয়ে।
বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রুসা নেমে যায়।
আবিরঃ এখানে আপনার বাসা?
রুসাঃ না একটু সামনে।
আবিরঃ তাহলে এখানে নামলেন কেন?
রুসাঃ মায়ের ভয়ে।মা যদি দেখে আপনার গাড়ী থেকে আমি নেমেছি তাহলে রাতের মধ্যে আমাদের বিয়ে দিয়ে ছাড়বে।
রুসার কথা শুনে আবির হেসে দেয়।
রুসাঃ একি হাসছেন কেন?
আবিরঃ আপনার কথা শুনে।
রুসাঃ ওকে আসি হ্যাঁ। নইলে মা চিন্তা করবে।
বলেই রুসা চলে যায় আর যাওয়ার সময় আবিরের গাড়ির মধ্যে নিজের ফোনটা ইচ্ছে করে ফেলে রেখে যায়।যাতে পরে যোগাযোগ রাখতে পারে।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
চলবে……