গল্পঃ প্রতিশোধ পর্বঃ ৩৪

0
3377

গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ৩৪
লেখাঃ #Mst_Liza
,
স্নিগ্ধা তার পোষা গুন্ডাদের ফোন করছে।কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না দেখে রাগ করে ফোনটাই আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে দেয়।ফোনটা ছুড়ে মারতেই নেহার পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে।নেহা বসা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।

নেহাঃ এসব কি করছো?

স্নিগ্ধা রাগি লুক করে চুলগুলো এলোমেলো করে চেচিয়ে ওঠে,

স্নিগ্ধাঃ তো কি করবো? সেই তিন ঘন্টা ধরে ছেলেগুলোকে ফোন করছি কিন্তু তুলছেই না।আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে এখন।

নেহাঃ আহা; এতো অসহ্য লাগার কি আছে? আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম ওই সোহাগ মির্জা আর তার স্ত্রীকে একেবারে মেরে ফেলো। হয়ে যেত সব প্রতিশোধ পূর্ণ।শুধু শুধু তোমার এই ছেলে মানুষী।

স্নিগ্ধাঃ না আন্টি! এতো সহজে ওই সোহাগ মির্জা আর তার স্ত্রীকে আমি মৃত্যু দেব না।তিল তিল করে একটু একটু যন্ত্রণা দিয়ে মারবো ওদের। ওই সোহাগ মির্জা আমার ছোট খালামনিকে মেরেছে, নানুকে মেরেছে।ওর জন্য আমার মায়ের জেল হয়েছে।ওর মেয়ের জন্য আমার ভাইয়ের জেল হয়েছে।আর ওই মাহির! যাকে আমি ভালোবেসতে চেয়েছিলাম সেও আমার ভাই, ভাইয়ের বউকে জেল খাটাতে কম কাটখোরি পুড়ায় নি।ওরা আমার কাছ থেকে আমার পুরো পরিবারটাই কেরে নিয়েছে।এখন আমিও ওদের সবার জীবন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেব।যেন মনে হয় বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াটা আরও ভালো ছিলো।

তখন নেহার ফোনটা বেজে ওঠে।নেহা ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে বলে,

নেহাঃ হোয়াট? এখন কোথায় আছে ওরা?

ওপাশ থেকেঃ,,,,,,,

নেহা কথাটা শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ফোনটা কাটে।

স্নিগ্ধাঃ কি হয়েছে আন্টি?

নেহাঃ পালানোর চেস্টা করেছিল সোহাগ মির্জা আর তার স্ত্রী মিরা।

স্নিগ্ধা চমকে ওঠে।

স্নিগ্ধাঃ মানে?

নেহাঃ হুমমম।কিন্তু পারে নি।এতোক্ষণ সেইজন্যই ছেলেগুলো ভয়ে তোমার ফোন ধরে নি।এখন ফোন করেছে আর ফোনটা তো তুমি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছো।এজন্য আমাকে ফোন করল ওরা।

স্নিগ্ধাঃ কিভাবে পালানোর চেস্টা করে ওই সোহাগ মির্জা আর মিরা? ছেলেগুলোর কিচ্ছু করতে হবে।একটা কাজ যদি ঠিক ভাবে না করতে পারে তাহলে ওদের রেখে কি লাভ!

নেহাঃ এজন্যই বলছিলাম মেরে ফেলো সোহাগ, মিরাকে। একবার যখন চেয়েছে আবার চেস্টা করবে পালাতে।

স্নিগ্ধাঃ না পারবে না আন্টি।

নেহাঃ তুমি কিভাবে বলতে পারো পারবে না?

স্নিগ্ধাঃ কারণ রোজ ওদের শুধু একটা রুটি খেতে দেওয়া হয়।দুজনের সারাদিনে এতটুকু খেয়ে অতটা শক্তি হবে না, যে আমাদের জাল থেকে বেড়িয়ে যাবে।

নেহাঃ তুমি ভুল করছো স্নিগ্ধা আমার মনে হয় এখন ওদের মেরে ফেলাই উত্তম। অনেক শাস্তি দিয়েছো ওদের এখন অন্তত্য মেরে ফেলো।

স্নিগ্ধাঃ না আন্টি ওদের আমি তিল তিল করে মারবো।

নেহাঃ ঠিক আছে তুমি শুনবে নাতো।তাহলে আমিই মেরে ফেলবো।আমি আর পারছি না ধৈর্য ধরতে। ওদের মৃত শরীরটা দেখার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে আছি।

স্নিগ্ধাঃ একদম না।ওরা আমার শিকার। আপনি ওদের শাস্তি দেওয়ার কেউ না।

নেহাঃ আমি কেউ না? তুমি ভুলে যেও না স্নিগ্ধা আমার প্লানে ওরা আজ তোমার কবলে। অতীতটা ভুলে গেলে?

অতীত,

নিশা নামের একটি মেয়ে হুবহু মিরার মতোন দেখতে।চেহারাটায় হুবহু মিরার মুখটা বসানো।একদিন নেহার গাড়ির সামনে মেয়েটি চলে আসে।নেহা খোঁজ নিয়ে যানতে পারে মেয়েটা খুব অসহায়।বাড়িতে অসুস্থ বাবা আর ছোট একটা বোনকে নিয়ে তার সংসার।একা হাতে নিশার সবটা সামলাতে হয়।নেহা ঠিক করে নেয় এই মেয়েটিকে কিছু টাকার লোভ দিয়ে সোহাগের জীবনে একবার এ্যান্টি করাতে পারলেই পুরোনো প্রতিশোধ পূর্ণ করতে পারবে।নিশাকে নেহা প্রস্তাব দেয় মিরার অভিনয় করার জন্য।কিন্তু নিশা রাজি হয় না।কিছুদিন পর নিশা নিজের থেকেই নেহার কাছে এসে মিরার অভিনয় করার জন্য প্রস্তুত হয়।কারণ ইতিমধ্যে নিশার শরীরে ক্যান্সার ধরা পরে।খুব একটা বেশি দিন নিশার হাতে সময় নেই। সে যদি মারা যায় তাহলে তার বাবা, বোন একেবারে নিস্ব হয়ে যাবে।নিশার সিদ্ধান্তে খুশী হয়ে নেহা অনেকগুলো টাকা দেয়।টাকাগুলো নেয়ার পর থেকে নিজের চলন, আচারণ মিরার মতো করার চেস্টা করে নিশা।নেহা মিরার ব্যাপারে সব বোঝাতে থাকে নিশাকে।নিশা সব প্রাক্টিস করার পর নিজেকে মিরা ভাবার চেস্টা করে অভিনয়টার জন্য।বাড়ি ফেরার পথে নিশা মাথা ঘুরে রাস্তায় পরে যায়।হসপিটালে কিছু টেস্ট করে করে নিজের নাম মিরা দিয়ে।পরের দিন রিপোর্টগুলো আনতে গেলে দেখে সবকিছু নরমাল আছে।কারণ আসল মিরার সাথে নিশার রিপোর্টগুলো বদলে যায়।যার জন্য আসল মিরা ভেবে নেই তার ক্যান্সার হয়েছে।

মিরা সোহাগের সাথে পরেরদিন সকালে দেখা করতে এসে মির্জা প্যালেসের সামনে বসে অপেক্ষা করতে থাকে।তখন নেহা আর নিশা দুজনে মিরাকে বাড়ির সামনে বসে থাকতে দেখে চমকে যায়। তাই প্লান করে কৌশলে মিরাকে তুলে নিয়ে চলে যায় নেহা।যাওয়ার সময় দস্তাদস্তিতে মিরার ফোনটা পরে যায় সেখানে।নোহা আর মিরা চলে যাওয়ার পর নিশা সোহাগের বাড়িতে যাওয়া ধরে হঠাৎ রাস্তায় একটা ছোট্ট বাচ্চাকে এক্সিডেন্ট হতে দেখে দৌড়ে যায় বাঁচাতে।যার ফলে নিজেই এক্সিডেন্টে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।তার পরের ঘটনার যা কিছুই হয় সব নিশার সাথে ঘটে।সবাই নিশাকে মিরা ভাবে।তবে নিশা কোমায় যাওয়ার এক্টিং করেছিল।সোহাগকে দেখে মিরার হাব ভাব বোঝাতে নেহার শিখিয়ে দেওয়া অভিনয় করেছিল।আর যার কবরের কাছে মায়া সোহাগকে নিয়ে গিয়েছিল সে মিরা নয় নিশা।

অন্যদিকে যখন মনার ছুড়ির আঘাতে সোহাগ মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিল তখন বিদেশ থেকে আসা নাম করা ডাক্তার জাকির হোসাইন রাইসূল আর মাহিরের মনের অবস্থা ভালো না দেখে ও.টি থেকে দুজনকে বুঝিয়ে বের করে দিয়ে একা স্নিগ্ধা আর ডা.মানহার সাথে সোহাগের চিকিৎসা করে।তারপর ডা.জাকির হোসাইন টাকা খেয়ে স্নিগ্ধাও মানহার প্লানে সাই দেয়। সবাইকে বলে সোহাগ মারা গেছে।তারপর সোহাগের দেহটা কফিনে ভরে পোর্ট মডেমের জন্য পাঠিয়ে দেয়।সকলে কান্না করতে থাকে আর ওদিকে সোহাগের দেহটা সরিয়ে দেওয়া হয়।অন্য একটি কাটা ছেড়া লাশের সাথে।যার চেহারা বির্ভস্ত ছিলো। ডা.মানহা একবার মায়াকে খুন করার চেস্টা করে যার জন্য সেও এখন জেলে।

বর্তমান,

স্নিগ্ধাঃ কোনও অতীত ভুলি নি আমি।তবে আমি চায় না মেজ খালামনির দেওয়া কথার খেলাপ করতে।আমি তাকে কথা দিয়েছি সোহাগ মির্জা আর তার স্ত্রীকে খুন করব না।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here