ভালোবাসি তাই Part:6&7

0
2003

ভালোবাসি তাই
Part:6&7
writer :Afifa Jannat Maysha

?

বাসায় আসার পর থেকেই সবার পাগলামী সহ্য করে চলেছি আমি। আপু তো পারে কেদেঁ কেঁদে সাগর বানিয়ে ফেলে। আল্লাহ আমার বোনটা এতো ইমোশনাল কেনো? মা, বাবা, ভাইয়া তারাও কত কথা শুনাচ্ছে আমায়।

এই মুহূর্তে ইট দিয়ে সারার আস্ত মাথাটা গুরাগুরা করতে ইচ্ছা করছে আমার। ফাজিল মেয়ে , কি দরকার ছিলো রাস্তার ঘটনার কথা বাড়িতে বলে দেওয়ার? এখন সবার লেকচারগুলো কি সে শুনছে? নাতো। সেই তো আমাকেই বসে বসে সবার উপদেশ গিলতে হচ্ছে।

– চোখ কি হাতে নিয়ে হাঁটিস নাকি? এখন তো মনে হচ্ছে সিনেমার নায়িকাদের মতো তোর জন্যও বডিগার্ড রাখতে হবে।

ভাইয়ার গা জ্বালানো কথায় মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আমি কি ইচ্ছে করে পড়ে যেতে চেয়েছিলাম নাকি? কি থেকে কি হয়ে গেছে আমি নিজেই তো বুঝতে পারছিলাম না। সবাই মিলে আমাকেই দোষ দিচ্ছে। আমার পার্স পড়ে গেছে আমি সেটা উঠাবো না? এখন আমার ঐ লোকটার উপর রাগ লাগছে যার সাথে ধাক্কা লেগে পার্সটা নিচে পড়ে গেছিলো। ব্যাটা আর কারো সাথে ধাক্কা খেতে পারলি না? আমার কাছেই কেনো মরতে এসেছিলি? এর নামে মামলা করে উচিৎ।

– তোর কোথাও লাগে নি তো?

আপুর কথার উত্তর না দিয়ে আমিই প্রশ্ন করলাম

– আমি কি মরে গেছি?

আমার কথায় আপু অবাক হয়ে বললো
– কি আজেবাজে কথা বলছিস তুই। মরতে যাবি কেনো?

– তাহলে এভাবে মরাকান্না জুরে দিয়েছো কেনো?

আমার কথা শুনে আপু জরিয়ে ধরলো আমায়। হয়তো আমার মুখ থেকে মরার কথাটা শুনে কষ্ট পেয়েছে। আমিও জরিয়ে ধরলাম আপুকে। আপু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলছে

– তোর কিছুই হবে না। তুই না থাকলে এই বাড়িটাকে সারাক্ষন মাতিয়ে রাখবে কে? বাবা – মা যখন বকবে তখন আমার হয়ে কথা বলা, ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করা, রেগে গেলে চিৎকার করে সারা বাড়ি মাথায় তুলে রাখা এসব কে করবে শুনি? আর কখনো এমন কথা মুখে আনবি না।

– আচ্ছা আনবো না। হ্যাপি?

আপু মুচকি হেঁসে বললো
– হুম।

আপুর হাঁসির বদলে আমিও এক চিলতে হাঁসি ফেরত দিলাম। বাবা – মাও হালকা হেঁসে চলে গেলো নিজেদের ঘরে। হয়তো তারা আমাদের তিন ভাই – বোনের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছেন। একটুপর আপুও চলে গেলো নিজের ঘরে। আপু চলে যেতেই ভাইয়া আমার কাছে এসে মাথায় গাট্টা মেরে বললো

– কিরে, রাস্তায় হাঁটার সময় কোন প্রেমিকের কথা চিন্তা করছিলি যে অন্যকিছুই খেয়াল ছিলো না।

– কি বললি তুই? আমি প্রেমিকের কথা চিন্তা করছিলাম?

– তা নয়তো কি। বুঝি বুঝি সব বুঝি।

– ওও তুই সব বুঝিস তাই না? তাহলে ঝাড়ুর বারি খেতে কেমন লাগে সেটাও বুঝিস নিশ্চই?

– তুই কি আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস?

– তোর কি মনে হয়?

– আমার কিছু মনে হয় না। তুই থাক আমি গেলাম।

– এই এখন পালাচ্ছিস কেনো? দাঁড়া, দাঁড়া বলছি।

ভাইয়া তার ঘরের দিকে দৌড় দিলো। আমিও ওর পেছন পেছন দৌড়াচ্ছি। আজকে ধরতে পারলে সত্যি সত্যিই মেরে আলুভর্তা বানিয়ে দেবো।

?

Tum mere ho iss pal mere ho
Kal shayad ye alam naa rahe
Kuch aisa ho tum tum naa raho
Kuch aisa ho hum hum na rahe

Yeh raaste alag ho jaaye
Chalte chalte hum kho jaaye

Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga (×2)

সেই কখন থেকে ভারসিটির ক্যান্টিনে বসে আছি। এমুহূর্তে বিরক্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছি আমি। একরাশ বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমার সামনে বসে থাকা সারার দিকে। সে চেহারায় দুঃখী দুঃখী ভাব এনে আরিজিৎ সিং এর গান শুনে চলেছে। এই নিয়ে সাতবার একটা গানই বাজিয়ে চলেছে তার মোবাইলে। গানের লিরিক্সগুলো মুখস্ত হয়ে গেছে আমার। নিজের নাম ভুলে গেলেও যেতে পারি কিন্তু গানের লিরিক্সগুলো কোনোদিনো ভুলবো না আমি। আমার মনে হচ্ছে মোবাইলেরও যদি প্রাণ থাকতো তাহলে এতক্ষণে সারার গালে ঠাস ঠাস করে চড় মেরে বলতো ” অন্য কোনো গান চোখে দেখিস না নাকি? এই এক গান প্লে করতে করতে বোরিং লাগছে আমার “। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই বেচারা মোবাইল বাবাজি সারার নির্দেশ অনুযায়ী এই গানটাই প্লে করে চলেছে বারবার।

আর চুপচাপ বসে থাকতে পারছি না আমি। কেমন যেনো বমি বমি পাচ্ছে আমার। কোনোকিছুর উপর খুব বেশি বিরক্ত হয়ে গেলেই আমার বমি পায়। যদিও শেষ পর্যন্ত বমি করা হয়ে উঠে না আর। তাই হয়তো এবারেও হবে না। কিন্তু এভাবে একজায়গায় বসে থাকাটাও আমার পক্ষে সম্ভব নয় আর। তাই সারাকে বললাম

– আর কতক্ষণ?

– কি, আর কতক্ষণ?

– ওফ, আর কতক্ষণ চলবে তোর এসব পাগলামী?

– তোর কাছে এটা পাগলামী মনে হচ্ছে?

– তা নয়তো কি।

– তোর মধ্যে কি ইমোশন বলতে কিছু নেই, মাইশা? তোর কি একটুও কান্না পাচ্ছে না?

– আরে আজব তো, শুধু শুধু কোনো কারণ ছাড়া কান্না পেতে যাবে কেনো?

– সেটাই তো। কোনো কারণ ছাড়া কান্না পাবে কেনো। কিন্তু আমার অনেক কান্না পাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার যদি একটা এক্স থাকতো!

– পাগলের মতো কিসব আবোল তাবোল বকছিস তুই? কান্না পাওয়ার সাথে এক্সের কি কানেকশন?

-আছে আছে কানেকশন আছে। আরিজিৎ সিং এর গান শুনলে এক্স না থাকলেও এক্সের জন্য কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া কাঁদলে তো লোকে পাগল বলবে। তাই ভাবছি একটা এক্স থাকলে নাহয় তার জন্য কাঁদতে পারতাম আমি।

– বাহ বাহ মানুষ হাঁসার জন্য কারণ খুঁজে আর তুই কাঁদার জন্য কারণ খুঁজছিস। মানতে হবে তুই একটা এক্সট্রা-ওরডিনারি মেয়ে। তোকে তো নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিৎ।

– তুই আমার প্রসংশা করছিস নাকি অপমান করছিস বলতো?

– তোর যেটা মনে হয় সেটাই। এনিওয়ে, এতই যখন এক্সের সখ, তখন এতো এতো ছেলেরা যে প্রপোজাল দেয় সেখান একটা এক্সেপ্ট করে নিতে পারিস না?

– মনের মতো কাউকে পেলে না করবো?

– এসব ফিল্মি ডায়লগ বাদ দে। যত্তসব আজাইরা চিন্তাভাবনা।

আমাদের কথার মাঝেই সায়ন ভাইয়া উনার বন্ধুদের সাথে ক্যান্টিনে প্রবেশ করলেন। উনার বন্ধুদের মধ্যে আছেন রাহুল ভাইয়া, সাদাব ভাইয়া আর ফাহাদ ভাইয়া। উনারা চারজনেই যে অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড সেটা উনাদের দেখলেই বোঝা যায়। ভারসিটিতে সবসময় একসাথেই থাকেন।

সেদিনের পর থেকে সায়ন ভাইয়াকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি আমি। উনাকে দেখলেই শুধু ” আই ওয়ান্ট মালিশা “কথাটা মনে পরে যায় আমার। সায়ন ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। উনার দিকে তাকালেই মনে হয় ছুটে গিয়ে বলি ” ভালোবাসি, ভালোবাসি “। কিন্তু এমনটা আর কখনোই করতে চাই না আমি। উনার প্রতি কিছুতেই দুর্বল হওয়া চলবে না আমার। আচ্ছা সায়ন ভাইয়া কি বুঝতে পারছেন না যে আমি উনাকে ইগনোর করছি? একটুও কি খারাপ লাগছে না উনার?

ধুর, আমিও যে কি ভাবছি। উনাকে আমি ইগনোর করছি কিনা সেটা নিয়ে ভাবার সময় আছে নাকি উনার। উনি তো এটাই চেয়েছিলেন যেনো আমি আর উনার পিছনে পরে না থাকি। তাই উনার খারাপ লাগবে কেনো? উনার তো খুশি হওয়ার কথা।

সায়ন ভাইয়া আর উনার বন্ধুরা আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলেন। আমি আর সেদিকে তাকাচ্ছি না। উনাদের মধ্য থেকে রাহুল ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– কেমন আছো মাইশা ?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা?

– আমরাও ভালো আছি। তোমরা এখানে কি করছো?

– ক্যান্টিনে মানুষ কি করতে আসে ভাইয়া?

– ওপস, সরি। ক্যান্টিনে তো সবাই খেতেই আসে। তোমাদের খাওয়া শেষ?

– না। এখনো শেষ হয়নি।

– তুই কি এখন বসে বসে ওর সাথে কথা বলবি নাকি কিছু অর্ডার করবি?

সায়ন ভাইয়ার কথায় রাহুল ভাইয়া চুপচাপ খাবার অর্ডার করতে চলে গেলেন। একটু পর ফিরে এসে আবার একই জায়গায় বসলেন উনি। আমাদের খাবার এসে পড়েছে। তাই চুপচাপ খাচ্ছি আমি আর সারা। আড়চোখে সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বন্ধুদের সাথে কথা বলছেন কিন্তু রাহুল ভাইয়া আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। রাহুল ভাইয়ার বিহেভিয়ারে মাঝে মাঝে প্রচুর অস্বস্থিতে পরে যাই আমি।

আমার অস্বস্থিটা কাউকে বুঝতে না দেওয়ার জন্য খুব মনোযোগে খাচ্ছি। এতটা মনোভাব বোধহয় ফিজিক্স ক্লাসেও কোনোদিন দেইনি আমি। তাহলে হয়তো সর্বোচ্চ নাম্বার পেতে পারতাম৷ হঠাৎ করেই একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলেন রাহুল ভাইয়া। আমার কপালের উপরে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলেন উনি। উনার এমন কান্ডে আমিসহ বাকি সবাইও অবাক হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখন উনি নিজের মধ্যে নেই। যখন উনি বুঝতে পারলেন কি করে ফেলেছেন তখন তারাতাড়ি করে নিজের দৃষ্টি নামিয়ে ফেললেন। আমতা আমতা করে বললেন

– সরি সরি আই এম এক্সট্রিমলি সরি। আমি আসলে বুঝতে পারি নি। আমি ভাবলাম চুলগুলো কপালে পড়ে থাকায় তোমার হয়তো প্রবলেম হচ্ছে। তাই….

উনি আর কিছু না বলে চুপ করে গেলেন। সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে। হয়তো ভাবছে আমি এখন কেমন রিয়েকশন দেবো? কিন্তু আমি মুচকি হেঁসে বললাম

– ইটস ওকে ভাইয়া। আমি কিছু মনে করি নি।

আমার এমন উত্তরে যেনো জান ফিরে পেলেন উনি। হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠলেন

– থেঙ্ক ইউ সো মাচ। আমি জানতাম তুমি কিছু মনে করবেন না। এজন্যই তো তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে।

রাহুল ভাইয়ার কথায় অবাক হয়ে বললাম

– মানে?

– না মানে কিছু না।

বিরাট একটা শব্দ কানে আসতেই সবাই সামনে তাকালাম। সায়ন ভাইয়া উনার চেয়ারটা লাথি মেরে ফেলে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন ক্যান্টিন থেকে। সায়ন ভাইয়ার এমন আচরণে সবাই মিলে আরেক দফা অবাক হলাম। অবাকের রেশ কাটিয়ে রাহুল ভাইয়ারাও দৌড়ে গেলেন উনার পিছু পিছু।

আমি বসে বসে ভাবছি সায়ন ভাইয়ার রাগের কারণটা কি। কিন্তু আমার মাথায় এমন কিছুই আসছে না যার কারণে উনি রেগে গেলেন। সারার কথায় ভাবনার সুতো ছিড়লো আমার

– আজকে সবাই এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেনো রে?

– সেটা আমি কিভাবে জানবো?

– সেটাও ঠিক। কিন্তু রাহুল ভাইয়ার ব্যবহারে কেমন অন্যরকম গন্ধ পাচ্ছি।

– তোর নাক পচে গেছে হয়তো। নাহলে ব্যবহারেরও গন্ধ হয় নাকি।

– ধুর, হেয়ালি ছাড় তো। বলছি রাহুল ভাইয়াকে আজ কিন্তু অন্নেক ড্যাসিং লাগছিলো।

– তো আমি কি করবো? উনার জন্য কি মিস্টার ওয়ার্লডের প্রতিযোগিতার আয়োজন করবো?

– এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো? রাহুল ভাইয়াও কিন্তু সায়ন ভাইয়ার থেকে কম হ্যান্ডসাম না।

– উনি সায়ন ভাইয়ার থেকে বেশি হ্যান্ডসাম না কম হ্যান্ডসাম এটা দিয়ে আমি কি করবো?

– কেনো প্রেম করবি?

– উল্টাপাল্টা কথা বলা বন্ধ করবি সারা? আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। সায়ন ভাইয়ার সাথে আর কখনো কারো তুলনা করবি না।

ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম ক্যান্টিন থেকে। সারার এসব কথা শুনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। সে আমাকে পিছন থেকে ডেকেই চলেছে। কিন্তু আমি কথা বলছি না। সারাকে মাথার উপর তুলে একটা আছাড় মারতে পারলে বোধহয় শান্তি পেতাম।

হাটতে হাটতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগলো আমার। আমি তারাতাড়ি সরে দাঁড়ালাম। কিন্তু একি আমি তো সায়ন ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়েছি দেখছি। কিছু বুঝার আগেই আমায় থাপ্পড় মারলেন উনি। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। এই সামান্য একটা কারণে ভারসিটির সবার সামনে আমায় থাপ্পড় মারলেন উনি?

– সারাক্ষণ শুধু ছেলেদের ইম্প্রেস করার ধান্দা তাই না? এতোটা নির্লজ্জ কেনো তুই? ছেলেদের গায়ের উপরে পড়তে এতো ভালো লাগে তোর? থার্ডক্লাস মেয়ে কোথাকার।

সায়ন ভাইয়ার বলা শেষ কথাটায় মাথায় রক্ত উঠে গেলো আমার। সবার সামনেই উনার কলার ধরে বলতে লাগলাম

– কি বললেন আপনি? আমি থার্ডক্লাস মেয়ে? কি করেছি আমি যে আপনি আমাকে থার্ডক্লাস মেয়ে বলছেন? আমি কি ইচ্ছে করে আপনার সাথে ধাক্কা খেয়েছি নাকি। আচ্ছা মানলাম আমি ইচ্ছে করেই আপনার গায়ের উপর পড়েছি তাহলে আপনি কেনো ধাক্কা খেলেন আমার সাথে? সরে যেতে পারলেন না? নাকি আপনারও মেয়েদের গায়ের উপর পড়তে ভালো লাগে?

– মাইশা।

– এখন চিৎকার করছেন কেনো। অন্যের উপর খুব সহজেই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফেলা যায়, তাই না? আসলে কি জানেন? পুকুরের এপাশের চোর কিন্তু ওপাশের ইমামকেও চোরই মনে করে।

ভারসিটির সবাই খুব মজা নিয়েই আমাদের কথা শুনে চলেছে। উনার কলার ছেড়ে দৌড়ে চলে এলাম ভারসিটির বাইরে। আজ সায়ন ভাইয়া খুব বেশি করে ফেলেছে। তাই উনার সাথে এটুকু হওয়ারই ছিলো। সবসময় আমিই কেনো সহ্য করবো। উনাকেও বুঝতে হবে আমিও প্রতিবাদ করতে পারি।

চলবে…..

[ নাইস, নেক্সট কমেন্ট করবেন না প্লিজ। আপনারা না বললেও আমি পরের পার্ট দিবো। পারলে গঠনমূলক মন্তব্য করুন। এতে লেখার আগ্রহ বাড়ে৷ ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ ]

#ভালোবাসি তাই
part:7
Writer: Afifa Jannat
Maysha

?

পড়ন্ত বিকেল । সুর্য মামা জানান দিচ্ছে তার অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলেছি আমি। রাস্তার দুপাশে মস্ত বড় বড় ঝাউগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে প্রবাহিত হচ্ছে উষ্ণ বাতাস। আমার পায়ের নুপুরের শব্দের সাথে বাতাসের শব্দ মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম সুর। এককথায় রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ।

এরকম পরিবেশে প্রিয়জনের সাথে থাকতে পারাটা অনেক আনন্দের। তাই আমিও আনন্দিত। আমার পাশাপাশি হেঁটে চলেছেন সায়ন ভাইয়া। উনার গায়েও বাসন্তি রঙের পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবীর বুকের দিকটায় লাল রঙের সুতার কাজ করা যেমনটা আছে আমার শাড়ীর আঁচলে। চুপচাপ হেঁটে চলেছি দুজন। দুজনের নিরবতাটাই যেনো বলে দিচ্ছে একে অপরের না বলা কত কথা।

হঠাৎ করেই সায়ন ভাইয়া আরো কাছে এসে আমার একটা হাত নিয়ে নিলো নিজের হাতের দখলে। সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম আমি। এক অন্যরকম ভালোলাগা ছেয়ে যাচ্ছে আমার হৃদয়ে। ইশ! ভালোবাসার মানুষটার এতটা কাছে আসলে বুঝি এমনই ভয়ানক অনুভুতি হয়?

আমি নির্লজ্জের মতো উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। শেষ বিকেলের সুর্যের লাল আভায় উনার ফর্সা মুখ জ্বলজ্বল করছে। এক অদ্ভুত মায়া ভেসে উঠছে উনার মুখে। আজ মনে হচ্ছে “মায়াবী ” শব্দটাও উনার জন্য ব্যবহৃত হতে পেরে নিজেকে ধণ্য মনে করছে। আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি সেটা সায়ন ভাইয়া ঠিকই বুঝতে পেরেছেন কিন্তু কিছু বলছেন না। নিরবতা কাটিয়ে আমিই প্রশ্ন করলাম

– আমরা কোথায় যাচ্ছি?

উনি সামনের দিকে তাকিয়েই বললেন

– যাওয়ার পরেই দেখতে পারবি।

– প্লিজ বলুন না কোথায় যাচ্ছি।

– তুই কি আমায় বিশ্বাস করিস না?

– এমা না না। আমি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি।

– কেনো করিস?

– ভালোবাসি তাই।

আমার উত্তরে উনি মুচকি হাঁসলেন শুধু। কিছু বললেন না। আমিও আর প্রশ্ন করলাম না। কিছু কিছু সময় পরিবেশটা নিরব থাকলেই ভালো লাগে।

হঠাৎ কানে এলো মিষ্টি একটা মেয়েলি কন্ঠ। কেউ আমার নাম ধরে ডেকে চলেছে পেছন থেকে। আমরা দুজনেই পিছনে তাকালাম। এই মেয়েটা আর কেউ না, আমার আপু। সেও ঠিক আমার মতই সাজিয়েছে নিজেকে।

আপুকে দেখেই মনের মাঝে এক অজানা ভয় সৃষ্টি হলো। কেনো যেনো মনে হচ্ছে সায়ন ভাইয়াকে হারিয়ে ফেলছি আমি। উনি কি আপুর কাছে চলে যাবেন? আর আমার সাথে হাঁটবেন না? আমার সাথে হাঁটতে ভালো লাগছে না উনার? নাকি উনার ভালোলাগাটুকু আপুর মাঝেই নিহিত? না আর ভাবতে পারছি না আমি। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। ভাবনাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে মাথায়। এ কেমন অসহ্যকর অনুভুতি। নিজের বোনকে দেখে এতটা ভয় পাচ্ছি কেনো আমি?

আপু আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম সায়ন ভাইয়ার হাত। আপু আলতো করে নিজের হাতটা রাখলো আমার গালে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলেই চলেছে

– এই মাইশা, মাইশা। চোখটা খোল নারে বাবু। আমার দিকে তাকা। আরে তুই শুনতে পারছিস? আরে তাকা না আমার দিকে।

আপু এমন অদ্ভুত কথা বলছে কেনো? আমি তো তার দিকেই তাকিয়ে আছি। কই, আমার চোখ তো বন্ধ নয়। চোখ যদি বন্ধই না থাকে তাহলে খোলবো কি করে? আমাকে সায়ন ভাইয়ার সাথে দেখে কি আপু পাগল হয়ে গেছে? এতক্ষন আস্তে আস্তে কথা বললেও এবার আমার নাম ধরে জোরে চিৎকার করলো আপু।

চোখ পিটপিট করে তাকালাম আমি। একি, আমি তো আমার বিছানায়। আমার গায়ে তো শাড়ী নেই। আর না আমার পাশে আছে সায়ন ভাইয়া। এবার আপুর দিকে তাকালাম। আপুও তো শাড়ী পড়ে নি। তারমানে এতোক্ষন আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? হ্যাঁ, স্বপ্ন বলেই তো সায়ন ভাইয়া এতো ভালো বিহেভ করছিলো আমার সাথে। বাস্তবে যেটা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু এটা আমার জীবনের বেস্ট স্বপ্ন ছিলো। আপুর কথায় স্বপ্ন নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিলাম আমি।

– কিরে ঘুম শেষ হয়েছে?

– হুম।

– দুপুরে খাওয়ার পরে কেউ এভাবে রাতের মতো ঘুমায়?

– আমি ঘুমাই।

– বুঝলাম। এবার চল তারাতাড়ি রেডি হো।

– কেনো আমরা কি কোথাও যাচ্ছি?

– হ্যাঁ, সবাই না। শুধু তুই আর আমি।

– কোথায়?

– সেটা গেলেই বুঝতে পারবি। প্লিজ না করিস না?

আমি বিছানা থেকে নামতে নামতে বললাম

– ঠিক আছে তুমি রেডি হও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

একটুপর রেডি হয়ে আপুর ঘরে গেলাম। আপু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে কাজল দিচ্ছে। আমি যেতেই আমার দিকে কাজলটা বারিয়ে দিয়ে বললো

– নে তুইও লাগিয়ে নে।

– আমার প্রয়োজন নেই। তুমি তো জানো আমার কাছে সাজতে ভালো লাগে না।

– তাই বলে সামান্য কাজল লাগানো যাবে না?

– যাবে তো। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে না। প্লিজ আপু জোর করো না।

– ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছা।

?

সেই কখন থেকে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমি আর আপু। এখনে এভাবে বসে থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না আমার। কিন্তু আপুকে কিছু বলতেও পারছি না। আপু বললো কেউ একজন আসবে তার জন্য অপেক্ষা করতে। “অপেক্ষা ” শব্দটা কোনো কালেই পছন্দ নয় আমার। তার উপর এমন একটা জায়গায় কারো জন্য অপেক্ষা করাটা আরো বেশি অপছন্দের।

প্রত্যেকটা টেবিলেই কাপলসরা বসে আছে। শুধুমাত্র আমাদের টেবিলেই আমরা দুবোন বসে আছি। এত্ত এত্ত কাপলের মাঝে আমাদের দুবোনকে বেমানান লাগছে নিশ্চই। কেউ যে কারণেই হাঁসছে না কেনো আমার কাছে মনে হচ্ছে আমাদের দেখেই হাঁসছে। কিন্তু আপুর অন্য কোনো দিকে নজর নেই। সে রেস্টুরেন্টের ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাঁসছে। বুঝলাম না, ছাদে কি কোনো কমেডি শো চলছে? কিন্তু আমি তো দেখতে পারছি না।

আমার চোখ আটকে গেলো রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে। রেস্টুরেন্টে ঢুকছে সায়ন ভাইয়া। একদম কালো গেটাপ। দুধসাদা শরীরে কালো রঙটা অনেক সুন্দর মানিয়েছে। কিন্তু উনি এখানে কি করছেন? আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার মানে আমরা এতোক্ষণ সায়ন ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

সায়ন ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো

– সরি, একটু দেরি হয়ে গেলো। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে ফেলি নি তো তোমাকে?

– না না ঠিক আছে।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি শুধু। এই প্রথম সায়ন ভাইয়ার মুখ থেকে আপুকে তুমি করে ডাকতে শুনলাম। আগে তো উনি আমাদের দুজনকেই তুই করে ডাকতেন। তারমানে উনি আপুর সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।

এখন এই দীর্ঘশ্বাসটাই আমার সঙ্গী। সায়ন ভাইয়া বোধ হয় এতক্ষণ খেয়াল করেন নি আমায়। কিন্তু যখন আমার দিকে তাকালেন তখনই রাগে লাল হয়ে গেলো উনার চোখ। উনি রাগটাকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন

– ও এখানে কি করছে, মালিশা?

– না মানে আমার সাথে এসেছে।

– কেনো?

– আমিই নিয়ে এসেছি।

– কেনো? একা আসলে কি হতো? আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে তুমাকে খেয়ে ফেলতাম।

– না আসলে আমার একা আসতে কেমন লাগছিলো। তাই ভাবলাম মাইশাকে নিয়ে আসি।

– আমাদের কি কোনো প্রাইভেসি নেই? আমাদের দুজনের মধ্যে থার্ড পারসন হিসেবে ওকে নিয়ে আসা কি খুব জরুরী ছিলো?

সায়ন ভাইয়া যে আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করছেন তা বেশ বুঝতে পারছি আমি। কিন্তু কিছু বলছি না। আপুর সামনে আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না।

– ও নিজেই নিশ্চই তোমার সাথে এসেছে? আমার তো এটাই মনে হচ্ছে। সত্যি, মানুষ এতোটা ছেচড়া কি করে হতে পারে?

– না না আপনি ভুল বুঝছেন। ওতো জানতোই না যে আমরা আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি।

– মিথ্যা বলে লাভ নেই। আমি সব বুঝতে পারছি।

আপু আর সায়ন ভাইয়ার কথার মাঝেই রাহুল ভাইয়ার গলা শুনা গেলো।

– আরে সায়ন, তুই এখানে কি করছিস?

– এসেছি একটা কাজে। এবার বল তুই এখানে কি করছিস?

– আমি তো এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু তোকে দেখে ভেতরে ঢুকলাম।

– ওহ।

এবার রাহুল ভাইয়া আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন

– আই থিঙ্ক, তুমি মালিশা। মাইশার বোন। এম আই রাইট?

– জ্বি।

– বুঝতেই পারছিলাম। তোমাদের চেহারার মিল আছে। এনিওয়ে মাইশা, মালিশা নাহয় ওর উডবির সাথে দেখা করতে এসেছে। তুমি কেনো এসেছো?

আমি কিছু বলার আগেই সায়ন ভাইয়া বললেন

– কেনো আবার। অন্যের প্রাইভেসি নষ্ট করতে।

এতোক্ষণ ধরে সব সহ্য করলেও এবার আর রাগটা ধরে রাখতে পারলাম না। একটা বাইরের লোকের সামনে উনি আমাকে অপমান করে চলেছেন। আমি চিৎকার করে বললাম

– শেষ হয়েছে বলা? শান্তি পাচ্ছেন এখন? আমাকে অপমান করে কি লাভ হয় আপনার? সেই কখন থেকে বলেই চলেছেন। আরে আপু যে বলছে আমি জানতামও না যে আপনি এখানে আসবেন। সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না? সত্যি বলছি, আমি যদি জানতাম যে এখানে আপনার সাথে দেখা হবে তাহলে কখনোই আসতাম না। ট্রাস্ট মি, আপনার এই মুখটা দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

আপু আমাকে থামাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি থামছি না। রেস্টুরেন্টের সবার দৃষ্টি এখন আমাদের দিকে। বাঙালির এই এক স্বভাব, কোথাও কোনো ঝামেলা হচ্ছে আর তারা সেদিকে তাকাবে না সেটা তো হতে পারে না। এক পর্যায়ে রাহুল ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো

– তোরা কথা বল। আমি মাইশাকে নিয়ে যাচ্ছি।

রাহুল ভাইয়ার একথা শুনে যেনো সায়ন ভাইয়া আরো রেগে গেলেন। আপুকে কিছু একটা বলে খুব দ্রুত বেরিয়ে গেলেন রেস্টুরেন্টের বাইরে৷ উনি বাইক নিয়ে এসেছিলেন বলে বাইকে উঠে হাই স্পিডে চলে গেলেন। সবাই চুপ করে আছে। রাহুল ভাইয়া আমাকে বললেন

– বুঝতে পারছি না সায়ন ইদানিং এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেনো? তুমি মন খারাপ করো না।

আমি কিছু বললাম না৷ আপু আমার কাছে এসে বললো

– এতোটা সিনক্রিয়েট না করলেও পারতি। অন্তত আমার জন্য হলেও চুপ করে থাকতি। তোর থেকে এটা আশা করি নি আমি।

আপুর কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি সিনক্রিয়েট করেছি? অথচ সায়ন ভাইয়া যে আমাকে অপমান করলো সেটা চোখে পরলো না আপুর? আজকাল আপুও কেমন হয়ে যাচ্ছে।

?

বাসায় আসার পর থেকে আমার সাথে একটা কথাও বলছে না আপু। বুঝতে পারছি না ওখানে আমার দোষটা কি ছিলো। মন খারাপ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি। এখন মনে হচ্ছে এরকমটা না করলেও পারতাম। আবার মনে হচ্ছে যা করেছি ঠিকই করেছি। আচ্ছা, আমি কি আজকাল সায়ন ভাইয়ার সাথে বেশি রুড বিহেভ করে ফেলছি?

ফোনের রিংটোনে ধেয়ান ভাঙলো আমার। এটাতো সায়ন ভাইয়ার নাম্বার। উনি আমায় ফোন করছেন কেনো? ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে অপরিচিত কেউ একজন বলে উঠলো

– আপনি কি মাইশা বলছেন?

– জ্বি।

সায়ন আপনার কি হন?

– জি আমার খালাতো ভাই।

– ওহ। আপনি তারাতাড়ি একটু সিটি হসপিটালে চলে আসুন।

– কেনো?

– মিস্টার সায়নের এক্সিডেন্ট হয়েছে।

লোকটার কথা শুনে শরীর কাঁপছে আমার। মাথায় শুধু ঘুরছে ” আমাকে হস্পিটালে যেতে হবে “। কোনোভাবে ছাদ থেকে নেমে এলাম আমি।

চলবে…..

[গল্প অনেক আগেই লিখা শেষ কিন্তু ওয়াই-ফাইয়ের কানেকশন প্রবলেম হচ্ছিলো বলে পোস্ট করতে দেরি হলো। আজকে বিকালের দিকে আরেকটা পার্ট দিবো ইনশাআল্লাহ। ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

next part:https://m.facebook.com/groups/2581414678629687?view=permalink&id=2784126125025207

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here