ভালোবাসি তাই part:10

1
3115

ভালোবাসি তাই
part:10
Writer: Afifa Jannat Maysha

?

বাড়ির পেছনের বাগানটায় দাঁড়িয়ে আছি আমি। ভর দুপুরের রোদের তীব্রতা চারদিকে। এমন সময় নিশ্চই কেউ বাগানে দাঁড়িয়ে থাকে না। কিন্তু আমি আছি।এইমুহূর্তে বাড়ির ভেতরে থাকার থেকে এই বাগানে দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশি শান্তিময় মনে হচ্ছে আমার।

সায়ন ভাইয়ারা এসেছেন আজ।ড্রয়িংরুমে সবাই মিলে কথা বলছে। আমি সেখানে যাইনি। কারণ তারা সবাই কি নিয়ে কথা বলছে সেটা আমি জানি। ওখানে সবার সাথে বসে থাকাটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। বাড়িতে থাকতেই ইচ্ছে করছে না আমার। খালামনিরা আসবে বলে ভারসিটিও যাওয়া হয়নি আজ। সবাই যে আজ খুব খুশি সেটা তাদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু সায়ন ভাইয়া খুশি কিনা সেটা উনার মুখ দেখে বুঝতে ব্যার্থ হয়েছি আমি। খুশিই হবেন হয়তো। উনার তো খুশি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

রোদের তাপে বাগানের ব্যাঞ্চটাও গরম হয়ে আছে৷ হাত দিয়ে ধরলেই মনে হয় হাতটা পুড়ে যাবে। বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখারও ইচ্ছে নেই । কারণ বাগানের প্রতিটি কোণাও দেখা হয়ে গেছে আমার। বাগানের সবগুলো গাছের মধ্যে একটা গাছকে আমি সবচেয়ে বেশি যত্ন করি। কারণ সেই গাছটা আমাকে আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন সায়ন ভাইয়া। তখনও উনি আমার সাথে স্বাভাবিকই ছিলেন। আমার প্রত্যেকটা জন্মদিনে প্রথম উইশটা আমি সায়ন ভাইয়ার কাছ থেকেই পেতাম। কিন্তু উনাকে আমি ভালোবাসি এই কথাটা জানার পর থেকেই উনি কেমন হয়ে গেছেন। সবসময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। এককথায় উনি সহ্যই করতে পারেন না আমায়। এখন ভাবি, কেনো যে উনাকে ভালোবাসার কথা বলতে গেলাম আমি?

চিন্তা করায় এতই বিভোর ছিলাম যে সায়ন ভাইয়া কখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারিনি আমি। হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। আমি ঘুরতেই দেখতে পেলাম পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন সায়ন ভাইয়া। আমি আজ আর উনার মুখের দিকে তাকালাম না। উনার প্রতি আর কোনো ফিলিংস কাজ করতে দেওয়া চলবে না আমার। ভাবছি বাগান থেকে চলে যাবো এখন। কিন্তু এভাবে কোনো কথা না বলে চলে যাওয়াটাও হয়তো ঠিক হবে না। তাই সামনের দিকে তাকিয়েই বললাম আমি

– কথা বলা শেষ সবার?

– না, বড়রা এখনো কথা বলছে।

– ওহ। তাহলে আপনি চলে এলেন যে?

– বড়দের মাঝে বসে থাকাটা অত্যন্ত বিরক্তিকর।

– আমার থেকেও বেশি বিরক্তিকর কিছু আছে আপনার লাইফে?

আমার কথার কোনো জবাব দিলেন না সায়ন ভাইয়া। আমিও যে উনার জবাবের আশায় বসে আছি এমনটাও নয়। উনি হয়তো আমার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবার৷ আমার দৃষ্টি এখনো সামনের দিকে। যদিও সামনে তাকিয়ে থাকার মতো কিছুই নেই৷ কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি। মাঝে মাঝে কারণ ছাড়াই অনেক কাজ করতে হয় আমাদের। হঠাৎ করেই সায়ন ভাইয়া বলে উঠলেন

– তুই অনেক বদলে গেছিস মাইশা।

উনার কথায় অবাক হলাম আমি। একটু অবাক নয় একেবারে অনেকটাই অবাক হয়েছি। আমি বদলে গেছি না আগের মতোই আছি সেটা উনি খেয়াল করেছেন বুঝি? তারমানে আমার দিকেও নজর আছে উনার?

– আমি বদলে গেছি?

– হ্যাঁ, অনেক বদলে গেছিস।

– আমার কাছে তো মনে হচ্ছে না।

– যে পাল্টে যায় তার নিজের কাছে মনে হয় না যে সে পাল্টে গেছে।

– আচ্ছা মানলাম আমি পাল্টে গেছি। কিন্তু সেটা আপনি বুঝলেন কি করে?

– বুঝার অনেক কারণ আছে। আমার এক্সিডেন্ট হওয়ার পর একদিন রাতেই শুধু আমার ঘরে এসেছিলি তুই। তারপর প্রায় এক সপ্তাহের মতো ছিলি আমাদের বাসায়। একদিনও আসিস নি আমার ঘরে।

– আমি আপনার ঘরে গেলে আপনি সিনক্রিয়েট করবেন ভেবে যাই নি। আর আপনিও আমার জন্য আশা করে বসেছিলেন না নিশ্চই?

আমার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সায়ন ভাইয়া। উনার দীর্ঘশ্বাসের কারণটা বুঝতে পারছি না আমি। কতক্ষন সময় চুপ থেকে আবার বলে উঠলেন

– আগেও তো তোর জন্য আশা করে বসে থাকতাম না কিন্তু তখন তো ঠিকই আসতিস।

– পরিস্থিতি সবসময় এক থাকে না।

– এখন পরিস্থিতির দোষ দিচ্ছিস? খুব না বলতি আমায় ভালোবাসিস। এই তোর ভালোবাসা?

– সেদিন আমি আপনাকে কি বলেছিলাম আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন। কিন্তু আমি ভুলিনি।বলেছিলাম আপনার প্রতি ভালোবাসাটা আর কোনো দিনও প্রকাশ করবো না আমি। আর আজ হঠাৎ এসব কথা আসছে কেনো। আপনি নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। আশা করি সুখী হবেন।

সায়ন ভাইয়ার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না মোটেও। উনার এমন শান্ত ব্যবহার মেনে নিতে পারছি না আমি। মনে হচ্ছে উনার এমন ব্যাবহারের মাধ্যমে উনি আমার মনের ক্ষতগুলোকে বারিয়ে দিচ্ছেন ক্রমাগত। আজকে হঠাৎ কি হলো উনার? এই ভর দুপুরে বাগানে এসেছেন আমার সাথে কথা বলতে? আর কিছু না বলে উল্টো দিকে ঘুরে পা বারালাম বাগান থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সফল হতে পারলাম না আমি। একটু এগিয়ে আসতেই হাতে টান পরলো আমার। পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরেছেন সায়ন ভাইয়া।

সায়ন ভাইয়ার এই কাজে আরেক দফা অবাক হলাম আমি। হাতে চিমটি কাটা ছাড়াই বুঝতে পারছি এটা কোনো স্বপ্ন নয়। একদম সত্যি। উনার এমন বিহেভিয়ারে আমি খুশি হবো না রাগ করবো বুঝে উঠতে পারছি না। আগে হলে হয়তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতাম আমি। কিন্তু এখন তো আমার রেগে যাওয়া উচিৎ। দুদিন পর উনি সারাজীবনের জন্য আপুর হাত ধরবেন আর এখন আমার হাত ধরে টানাটানি করছেন। সে হিসেবে আমার এখন অবশ্যই রাগ করা উচিৎ। কিন্তু আমি চাইলেও রেগে যেতে পারছি না আবার খুশিও হতে পারছি না।

সায়ন ভাইয়া আমার দিকে কেমন অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন। আমার হাত ধরে রেখেই উনি বললেন

– সেদিন শুধু একথাটাই বলিস নি। আরো একটা কথা বলেছিলি যেটা আমার মনে আছে।

– কি কথা?

– যে ভালোবাসা সামান্য ইগোর কাছে হেরে যায় সেটা ভালোবাসা অন্তত নয়। তুই এখন ইগো দেখিয়ে দুরে সরে যাচ্ছিস। তারমানে কি তোরটাও ভালোবাসা ছিলো না?

সায়ন ভাইয়ার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে উনার মুখোমুখি দাঁড়ালাম আমি। উনার চোখের দিকে তাকিয়েই বললাম

– এটা ইগো নয় সেক্রিফাইজ।

– সেক্রিফাইজ?

– হ্যাঁ, সেক্রিফাইজ। আমি না চাইলেও এই সেক্রিফাইজটা করতে হবে আমায়। কেনো জানেন? কারণ আমার ভালোবাসাটা ছিলো একতরফা। আপনি তো আমায় কোনোদিনও ভালোবাসেন নি। আর বাসবেনও না। আর এখন আপনি, আপু দুজনেই এই বিয়েতে রাজি। সে হিসাবে আমি আপনাদের মধ্যে একজন তৃতীয় ব্যাক্তি মাত্র। আর সেক্রিফাইজ শব্দটা বোধ হয় তৃতীয় ব্যাক্তিদের জন্যই তৈরি হয়েছে। তারা না চাইলেও তাদেরই সবসময় সেক্রিফাইজ করতে হয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

আমি আবারো চলে আসার জন্য উদ্যত হতেই সায়ন ভাইয়া বলে উঠলেন

– সত্যি সত্যিই কি সেক্রিফাইজ? নাকি ভালোবাসার জন্য নতুন কাউকে পেয়ে গেছিস?

– মানে?

– তুই সত্যিই মানেটা বুঝতে পারছিস না?

– না বুঝতে পারছি না। ভালোবাসা কি বাজারের কোনো পণ্য যে একেক সময় একেক জনকে দিয়ে দেবো? নাকি আমার ভালোবাসাকে আপনার ঠুনকো মনে হয়? কোনটা?

– সেটা তো তুই নিজেই ভালো বলতে পারবি।

আমাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উনি বাগান থেকে চলে গেলেন। আর আমি এখনো ওখানে দাঁড়িয়েই উনার কথার মানে বুঝতে চেষ্টা করছি। আমি নতুন কাউকে পেয়ে গেছি মানে?

?

রাত ১০ঃ০০ টা বেজে গেছে। রাতের খাওয়া – দাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে এসে পরেছি আমি। সায়ন ভাইয়ারা সন্ধ্যায় চলে গেছে। দুপুরের পর আর নিজের ঘর থেকে বের হইনি। ঘরে বসে বসে সারাদিন ধরে শুধু সায়ন ভাইয়ার বলা কথাটার মানে খুঁজে বেরিয়েছি৷ কিন্তু বারবারই ব্যার্থ হয়েছি আমি।

বিছানায় চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। এতো তারাতাড়ি ঘুম আসবে না আমার। কিন্তু চোখদুটো খুলা রাখতেও যেনো একঝাক আলসেমি ঘিরে ধরছে আমায়। এই মুহূর্তে চোখ খুলাটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে হচ্ছে। এভাবে শুয়ে থাকতেই ভালো লাগছে আমার।

কিন্তু আমার ভালো লাগাটা বোধ হয় আমার মোবাইলটা সহ্য করতে পারেনি। তাই তো সেই কখন থেকে গলা ছেড়ে চিৎকার করে চলেছে সে। আমার এখন ইচ্ছে হচ্ছে ফোনের ভেতর ঢুকে গিয়ে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটিকে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মেরে আসি। কল করার আর সময় পায়নি।

বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার মাঝে। যত ইচ্ছা বাজতে থাকুক। আমার যখন মন চাইবে আমি তখনই রিসিভ করবো। ততক্ষন নাহয় ফোনের রিংটোনটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো কাজ করুক। আমি চোখ বুজে শুয়ে আছি আর চারপাশে মিউজিক বাজছে। একদম বাংলা নাটকের মতো।

গুনে গুনে পাক্কা এগারোবার রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ করলাম আমি। কানে নিতেই ভেসে আসলো সারার কন্ঠ

– ফোন কি মঙ্গল গ্রহে ফেলে রেখেছিলি নাকি?

– সেটা তোর না জানলেও চলবে। কিসের জন্য ফোন করেছিস সেটা বলে ফটাফট ফোন রাখ। ব্যাস্ত আছি আমি।

– কি নিয়ে এতো ব্যাস্ত তুই? যে আমার ফোনটাও এতক্ষন ধরতে পারলি না?

– শুয়ে শুয়ে চোখে ঘুম ডেকে আনতে ব্যাস্ত ছিলাম। এনিয়ে আর একটা কথাও বলবি না। ফোন কেনো করেছিস সেটা বলবি এক্ষুনি, ফাস্ট।

আমার কথায় যে সারার সর্বাঙ্গ রাগে রি রি করছে সেটা ফোনের এপাশ থেকেই বুঝতে পারছি আমি। রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এগারোবার রিং হওয়ার পর ফোন ধরে কেউ এমন উত্তর দিলে অবশ্যই রাগ উঠে যাবে। সে অনুযায়ী সারাও রেগে গেছে। কিন্তু তাতে আমার কি?

আমার সাথে রাগ দেখিয়েও যে কোনো লাভ হবে সেটা সারা নিজেও জানে। কারণ সে যখনই আমার উপর রাগ দেখায় আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। যেনো তার রাগ করা আর না করায় কিছু যায় আসে না আমার। তাই শেষ পর্যন্ত রাগটা আমার উপর পুরোপুরি ঝারা হয়ে উঠে না তার।

প্রতিবারের মতো এবারেও নিজের রাগটাকে হজম করে নিয়ে বললো

– দোস্ত, শোন না।

– শোনার জন্যই তো ফোনটা কানে ধরে আছি।

– দোস্ত আমি না অনেক এক্সাইটেড।

– তো?

– এমা, তুই জিজ্ঞেস করবি না আমি কি নিয়ে এক্সাইটেড?

– আমি জিজ্ঞেস না করলেও যে তুই বলবি সেটা আমি জানি।

– অবশ্যই বলবো। বলার জন্যই তো ফোন করেছি।

– তো বলে ফেল।

– আজকে তো তুই ভারসিটি আসিস নি। ভারসিটি থেকে কক্সবাজারে একটা ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছে। সেই জন্যই তো আমি এতো এক্সাইটেড।

– ওহ, ভালো।

– শুধু ভালো? তুই খুশি হোসনি?

– হুম, হয়েছি তো।

– তোর কথা শুনে তো তা মনে হচ্ছে না।

– আর মনে হতেও হবে না। কাল ভারসিটিতে দেখা হচ্ছে। এখন রাখছি।

সারাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দিলাম আমি। সত্যিই তো কক্সবাজার যাওয়ার কথা শুনে একটুও খুশি হয়নি আমি।আমার মধ্যে “খুশি “নামক অনুভুতিটাই কি মরে গেলো নাকি?

?

ভারসিটির বড় বটগাছটার নিচে বসে আছি আমি আর আর সারা। খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে সারা।আমি রাহুল ভাইয়ার সাথে ঘটে যাওয়া নানান মজার আর অদ্ভুত ঘটনাগুলো তাকে বলার পর থেকেই ভাবনায় মগ্ন হয়েছে সে। জগদীশ চন্দ্র বসু বেশি ভাবতেন বলে নাম দেওয়া হয়েছিলো “ভাবুক ছেলেটি”। আমার এখন সারাকেও ” ভাবুক মেয়েটি ” নামে আখ্যায়িত করতে ইচ্ছে করছে। গণিতের কোনো সমস্যা সমাধান করতে গিয়েও বোধ হয় এতোটা ভাবেনি সারা। সবসময় তো আমাকেই জিজ্ঞেস করে “এই মাইশা, একের সাথে এক যোগ করলে কত হয় রে? দুই থেকে কি তিন বিয়োগ করা যায়? “। আর এখন সেই মেয়েটাই গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে। এটা তো কিছুতেই হজম করতে পারছি না আমি। আমার কাছে মনে হয় এই বিষয়টা যদি আমি এতো সহজে করে ফেলি তাহলে পৃথিবী থেকে ” হজমী ” নামক বস্তুটার ব্যাবহারই উঠে যাবে। এমা, তাহলে তো হাজার হাজার মানুষ পেটের সমস্যায় ভুগবে। এটা তো কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। তাই আমি বললাম

– কি নিয়ে এতো ভাবছিস?

– হুম, ভাবছি।

– ভাবছিস সেটা তো আমিও দেখতে পারছি। কিন্তু কি নিয়ে এতো ভাবছিস। আমার তো মনে হচ্ছে ভাবতে ভাবতেই শহীদ হয়ে যাবি তুই।

– ওফ, বাজে কথা বলা বন্ধ কর। আমি তো রাহুল ভাইয়ার কথা ভাবছি।

– তুই আবার রাহুল ভাইয়াকে নিয়ে পরলি কেনো?

– কারণ আছে বান্ধবী, অনেক কারণ আছে। আমার মনে হয় রাহুল ভাইয়া প্রেমে পড়েছে।

– ওহ মাই গড, সত্যি? আচ্ছা তুই কিভাবে জানলি? আর কার প্রেমে পড়েছেন উনি?

– কার আবার, তোর।

সারার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি। রাহুল ভাইয়া নাকি আমার প্রেমে পরেছেন। যত্তসব গাজাখুরি কথা-বার্তা।

– তোর এতক্ষনের ভাবনা বিফলে গেলো রে, সারা। এতো ভেবেও আসল মানুষকে বের করতে পারলি না।

– জ্বী না। আমার ভাবনা একদমই বিফলে যায়নি। আমি শিউর রাহুল ভাইয়া তোরই প্রেমে পড়েছে।

– চাপা মারা বন্ধ কর। উনি আমার প্রেমে পরতে যাবে কোন দুঃখে?

আমার কথায় সারা অবাক হওয়ার ভান করে বললো

– কি বলছিস তুই এসব? আমি তো চাপা কাকে বলে সেটাই জানিনা। তাহলে চাপা মারবো কি করে?

– ওওও তুমি চাপা কাকে বলে জানো না। তাই না? আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সুন্দর করে চাপার সঙ্গাটা বলে দিচ্ছি তোমায়।

– হ্যাঁ, বল। আমিও শিখি চাপা কাকে বলে।

– আংশিক সত্যকে কেন্দ্র করিয়া মিথ্যার সমান ব্যাসার্ধ নিয়া অংকিত বৃত্তচাপকে চাপা বলে।

– রাইট, আংশিক সত্যকে কেন্দ্র করিয়া। মানে আংশিক হলেও সত্য যে রাহুল ভাইয়া তোর প্রেমে পড়েছে।

– আবার এই এক কথা। তুই বসে থাক আমি গেলাম।

– এই না, না, দাঁড়া আমিও আসছি।

সারাও দৌড়ে এসে হাটতে লাগলো আমার পাশাপাশি। ভারসিটির গেট পর্যন্ত আসতেই থেমে গেলাম আমরা। হুট করে কোত্থেকে এক ছেলে এসে হাটু গেরে বসে পরলো আমাদের সামনে। কিছু বুঝার আগেই বলে উঠলো

– আই লাভ ইউ।

ছেলেটা বোধহয় অনেক তাড়ায় আছে তাইতো বেচারা ফুলটাকেও উল্টো করে ধরে আছে। কথা সেটা না। কথা হচ্ছে ছেলেটা প্রপোজ কাকে করলো? আমি আর সারা দুজনেই কনফিউজড হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি বারবার।

ছেলেটা সেই কখন থেকে বসে আছে নিচে। আর বেশিক্ষন বসে থাকলে হয়তো প্যান্টটাই ফেটে যাবে তার। কনফিউশান দূর করতে আমিই প্রশ্ন করলাম

– আপনি কাকে প্রপোজ করছেন ভাইয়া?

আমার প্রশ্ন শুনে ছেলেটা লজ্জারাঙা হয়ে বললো

– তোমার বান্ধবীকে শালীকা।

কি আজব! একমুহূর্তেই আমাকে শালীকা বানিয়ে ফেললো ছেলেটা। সারার দিকে তাকিয়ে দেখি কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। তাই আমিও সেটা শোনার প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। সারা বললো

– আপনার মাথা ঠিক আছে তো ভাইয়া?

সারার কথায় ছেলেটা একটু মনক্ষুন্ন হলো যেনো। যাকে সে গার্লফ্রেন্ড বানাতে চাইছে সে তাকে ভাইয়া বলে ডাকছে। আহারে বেচারা! ছেলেটা বললো

– কেনো?

– আরে আমি বিবাহিতা একটা মেয়ে। আর আপনি আমায় প্রপোজ করছেন?

– কি বলছো তুমি। আমি তো জানি তুমি বিয়ে করোনি।

– আসলে ভাইয়া আমি আর আমার হাজবেন্ডের লাভ মেরেজ তো। তাই পরিবারের কেউ মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু অনেক কষ্ট করে রাজি করিয়েছি। পরিবারের লোক ছাড়া অন্য কেউ এখনও জানে না।তাই না মাইশা?

সারার কথায় আমিও মাথা নাড়লাম যার অর্থ হ্যাঁ, কেউ জানে না। আমাদের কথা ছেলেটা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি হয়তো। তাই বললো

– তুমি মিথ্যা কথা বলছো।

– একদম না। আমি সত্য কথা বলছি। আচ্ছা দাঁড়ান। আমার হাজবেন্ডও এই ভারসিটিতে পড়ে। আমি এক্ষুনি ওকে ডেকে আনছি। মাইশা তুইও দাঁড়া।

সারা ছুটে চলে গেলো ভারসিটির ভেতরে। এতক্ষন সারার কথা শুনে একটুও অবাক হইনি আমি। কারণ যে ছেলেই ওকে প্রপোজ করে সে ছেলেকেই ও এই একই কথা বলে। সারার একটা বড় গুণ হলো মিথ্যে কথা বলার সময় এতটা কনফিডেন্ট থাকে যে, যেকেউই কনফিউজড হয়ে যায়। যেমনটা এই ছেলেটাও হয়ে গেছে। কিন্তু এই ভারসিটিতে ওর হাজবেন্ড পড়ে মানে? ও কি সত্যি সত্যিই বিয়ে করে ফেললো নাকি।

আমি এবার ছেলেটাকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম। চেহারা, উচ্চতা সবমিলিয়ে মাশাআল্লাহ পুরাই বাংলা সিনেমার দিলদারের মতো।

একটুপরই আমাদের কাছে এলো সারা। সারার সাথে আছে রাহুল ভাইয়া। আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। রাহুল ভাইয়া সারার হাজবেন্ড?

– এই যে ভাইয়া, ইনিই আমার হাজবেন্ড। কিগো বলো না।

সারায় ইশারায় রাহুল ভাইয়া ঝটপট উত্তর দিলো

– হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি ওর হাজবেন্ড। তোমার সাহস তো কম না আমার ওয়াইফকে প্রপোজ করো।

রাহুল ভাইয়ার উত্তরে মুখ কালো হয়ে গেলো ছেলেটার। বাংলা সিনেমায় যেমন নায়ক নায়িকা কষ্ট পেলে মনের ভেতর ঘুর্নিঝড় শুরু হয়ে যায়। ইয়া বড় বড় ঢেউ আছড়ে পরে সাগরের বুকে। আমার মনে হয় ছেলেটার মনেও সেরকমই চলছে। কিন্তু সিনেমায় ঘুর্নিঝড়টা দেখা গেলেও ছেলেটার ক্ষেত্রে তা দৃশ্যমান নয়।

রাহুল ভাইয়াকে সরি বলে চলে গেলো ছেলেটা। এবার ওদের দুজনের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালাম আমি। কিন্তু সারা আমাকে সম্পুর্ণ উপেক্ষা করে রাহুল ভাইয়াকে বললো

– থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া। আপনি নিজেও জানেন না কত বড় উপকার করলেন আমার।

– ইটস ওকে শালীকা। তোমাকে হেল্প করতে পেরে আমি ধন্য।

রাহুল ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি। আজকে কি সবাইকে “শালীকা ” রোগে ধরলো নাকি। তখন ঐ ছেলেটা আমায় শালীকা বললো আর এখন রাহুল ভাইয়া সারাকে শালীকা বলছে। যখনই বুঝতে পারলাম ওরা এতক্ষণ নাটক করছিলো তখন আর হাঁসি আটকে রাখতে পারলাম না আমি। হাঁসি আটকে রাখলে যেকোনো মুহুর্তে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো। কিন্তু এতো তারাতাড়ি মরার কোনো সখ নেই আমার। তাই জোরে জোরে হেঁসে দিলাম আমি।

আমার হাঁসি থামলো রাহুল ভাইয়ার কথা শুনে। যখন উনি বললেন

– এভাবে হেঁসো নাগো। বুকে ব্যাথা লাগে আমার।

এটুকু বলেই সারাকে হাই ফাইভ করে চলে গেলেন উনি। আমি আবুলের মতো দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি বউ সাজালেন সারাকে আর বুকে ব্যাথা লাগে আমি হাঁসলে? কি অদ্ভুত!

চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here