বড়োলোকের_বখাটে_ছেলে
পর্ব তিন
অধরা জেরিন
– এতো সস্তা দামের ঘড়ি এই নীল পড়ে না। আর কখনও আমার জন্য এতো আদিখ্যেতা দেখাতে আসবে না। আমি তোমাকে এই বাড়ির কেউ বলে মনে করি না। আর হা তোমাকে আমি মার্কেটে নিয়ে গেছি বলে ভেব না আমি তোমার প্রেম এ পড়েছি। শুধু বাবা কে খুশি করার জন্য ।
,
এই বলে নীল চলে গেল । সেদিন আমার কষ্টে মনে হচ্ছিল আমি হয়তো মরে যাবো। কেন আমার সাথে এমন হচ্ছে । নীল কোনও দিন কি আমাকে বুঝবে না । আমাকে দেখে আমার শ্বাশুরি বললো ,,,,
,
— তোমার কি হয়েছে বৌমা ?? চোখ মুখ ফোলা কেন ?? নীল কিছু বলেছে ??
,
– না মা কিছু না । বাইরে থেকে আসলাম তো এই জন্য এমন লাগছে । একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে ।
,
এই বলে তাদের জন্য আনা গিফ্ট গুলি দিলাম । অনেক খুশি হয়েছে আমার শ্বশুর শ্বাশুরি । এই টা বা আমার জন্য কম কিসের । তাদের মুখের হাসি তো দেখতে পাচ্ছি ।
সকাল থেকে রেডি হচ্ছি। আজকে আমি আর নীল কক্সবাজার যাচ্ছি । যদিও আমাদের কারো মনে এই নিয়ে কোনও ফিলিংস নেই । আসলে আমরা দুই জনই ভাল অভিনয় করছি। আমি করছি নীল কে নিয়ে ভালবাসার অভিনয় । আর নীল করছে ওর বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিনয় । আমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি। কিন্তু নীল এখনও রেডি হয়নি । কারণ ওর কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। আর আমার সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ ওর কিছু ধরা।
,,
আমি মনে মনে বললাম, ,, এই বার মজা বুঝুক । কেমন লাগে । নীল চেঁচিয়ে যাচ্ছে । আর বলছে ,,,
,
– মা মা ! আমার জিনিস গুলি খুঁজে পাচ্ছি না। এমনি তেই দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
,
আমার শ্বাশুরি বললেন ,,
– বৌমা তুমি একটু দেখ ও কি কি পাচ্ছে না ???আমার হাতে একটা ঝামেলার কাজ রয়েছে ।
আসলে তিনি ইচ্ছে করে আমাকে পাঠালেন ,,
আমি কাছে যেতেই নীল বললো ,,,
– তুমি কেন এসেছো ?? মা কোথায় ??
– আমাকে পাঠালেন ।
এই বলে আমি ওকে সব কিছু গুছিয়ে দিলাম ।
,,
আমি আর নীল গাড়ি তে উঠলাম । আমাদের গাড়ি কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কি যে সুন্দর চারিদিক । আমি মুগ্ধ চোখে চারিদিক দেখছি। নীল আমার পাশেই বসা। না বসে উপায় নেই । দেখতে দেখতে অনেক রাত হলো । সারা গাড়ি তে নীল কখনও কথা ফোনে কথা বলেছে কখনও গেম খেলেছে । আমরা রাতের খাবার খেয়ে নিলাম । দু জনেই চুপচাপ । আমি বাইরে দিকে তাকিয়ে আছি। রাতের অন্ধকার বাইরের প্রকৃতি আরো সুন্দর করেছে। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম নীল আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । হয়তো ঘুমের ঘোরে কিছু টের পাচ্ছে না। আমি নীলের শরীরের গন্ধ পাচ্ছিলাম । আমার নেশার মতো কাজ করছিল । এই ভাবে সকাল হয়ে গেল । বাইরের আলো চোখে পড়তেই নীলের ঘুম ভেঙে গেল । ও কিছু টা লজ্জা চোখে আমার দিকে তাকালো আর বললো ,,,
,
:– আসলে আমি দুঃখিত । টের পাইনি।
,,
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ,,,
নীল যদি বুঝতো আমার রাত টা কতো টা মধুর কেটেছে ।
,,
আমরা হোটেলে উঠলাম । একটু পর আমার শ্বশুর কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমরা ভাল মতো এসে পৌছে গেছি। নীল আমাকে বললো ,,,
– এই খানে আমি এক রুমে থাকবো না। আমি আরেক টা রুম ভাড়া করবো।
আমার মন টা খারাপ হয়ে গেল । কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ।
,,
সারা দিন জার্নি করেছি। তাই আগে গোসল সারতে চাইলাম । আমি কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলাম। কিন্তু ভিতরে একটা তেলাপোকা দেখে ভয়ে চিৎকার করে নীল কে এসে জড়িয়ে ধরলাম। নীল হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ,,,,, !
আমি নীল কে জড়িয়ে ধরতেই ও আমাকে জোড়ে একটা চড় দিয়ে ধাক্কা মেরে খাটের উপরে ফেলে দিয়ে বললো ,,,
,- তোর এতো বড়ো সাহস হলো কি করে । আমাকে সপর্শ করার। এখানে আমি যা বলবো তাই হবে । আর কখনও আমাকে সপর্শ করলে তোকে খুন করবো ।
,,
আমি নীলের কথা শুনে চমকে উঠলাম । আমি জানতাম নীল খারাপ কিন্তু এতো টা জঘন্য খারাপ ধারনার বাইরে ছিল । সে পুরুষ নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে সে কখনও ভাল হতে পারে না।
,,
নীল আমার সামনের থেকে চলে গেল । আমার সারা রাতের জার্নির কষ্ট আর নীলের দেওয়া প্রথম অত্যাচার সব মিলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম । আমার যখন ঘুম ভেঙেছিল অনেক বেলা হয়ে গেছে । আমি তাকিয়ে দেখলাম নীল ঘরে নেই । টেবিলে খাবার রাখা। তাঁর মানে নীল দুপুরে খেয়ে বাইরে গেছে । আমার খাবারের কোনও ইচ্ছে ছিল না । আমি বাইরে বের হলাম । সমুদ্রতীরে গিয়ে বসলাম । কিছু সময় পর সূর্য ডুবে যাবে । আমি বসে বসে সূর্য ডুবে যাওয়া দেখলাম । চারিদিকে অন্ধকার নেমে এলো । আমি আস্তে আস্তে উঠে হোটেলের দিকে ফিরলাম ।
আমি রুমে ঢুকতেই দেখলাম নীল বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে । ওকে দেখে আমার ভয় করে উঠলো। শুধু একটা কথা বার বার কানে বেজে উঠলো “”তোকে খুন করে ফেলবো “”
আমাকে দেখে নীল বললো ,,,
,- এতো সময় কোথায় ছিলে ?
আমি ভয়ে চমকে উঠলাম । আবার যদি আমাকে মারে। আমি ভয়ে ভয়ে উওর দিলাম ,,
,- সূর্য ডুবে যাওয়া দেখতে গিয়ে ছিলাম ।
ও বললো ,,
– নাকি বয়ফ্রেন্ড্ এর সাথে রোমাঞ্চ করতে গিয়ে ছিলি ?
,,
আমি নীলের কথা শুনে ভাবতে পারছি না। ও কতোটা জঘন্য । ওর প্রতি আমার ঘৃণা বেরে গেল । আমি বললাম ,,,
,- আপনি যেমন আমাকে ও তাই মনে করবেন না ।
,
আমি এই কথা বলতেই ও আমার দিকে এগিয়ে এলো । আমি মনে করলাম এখনই হয় তো আমার গায়ে হাত উঠাবে। কিন্তু না ও তার থেকে ও কঠিন কথা বললো ,,,
আমাকে বললো ,,,
,- তোর হাতে দুই টা পথ আছে । যে কোনও একটা পথ তোর বেছে নিতে হবে । হয় এখান থেকে অনেক দুরে চলে যাবি না হয় আমাকে ডিভোর্স দিবি।
,
আমার সমস্ত পৃথিবী কেঁপে উঠলো নীলের কথা শুনে । আমি কি বলবো ওকে ?
,
ও আবার বললো ,,,
,- তুই এখান থেকে চলে গেলে আমি বাবা কে বলবো তুই রাতের আধারে পালিয়ে গেছিস। আমার আর কোনও চিন্তা করতে হবে না । বল কোন টা করবি।
,
আমি বললাম ,,
,- নীল !! তুমি দয়া করে এমন করো না। তোমার বাবা মায়ের কথা একবার চিন্তা করো ।
,- আমি অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
,
আমি বললাম, ,
,- তুমি আমাকে একটু সময় দাও ,,
,- ঠিক আছে কাল আমাকে জানাবে । আর আমাকে এই রুমে থাকতে হচ্ছে । কারণ কোনও রুম খালি নেই । তুমি ওই সোফায় গিয়ে ঘুমাবে। আর এই সব কথা যদি বাবা ভুলেও জানতে পারে তাহলে আমার আরো জঘন্য রুপ দেখতে পাবে ।
,,
আমার সারা রাত ঘুম হয়নি । শুধু ভেবেছি কি করবো। আমি যদি রাজি না হই ও আমাকে সত্যি হয়তো খুন করে ফেলবে। কারণ ও সব পারে সব।
,,
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে ,, আমার যে করে হোক আগে ফিরতে হবে । নীল কে বলবো আমি ওকে ডিভোর্স দিতে রাজি আছি। আর একবার ফিরে যাই তারপর যা করার করা যাবে ।
,,
আমি সকালে আমার সিদ্ধান্তের কথা নীল কে জানালাম । ও শুনে খুব খুশি হলো । কেউ যে ডিভোর্স এর কথা শুনে এতো টা খুশি হতে পারে সেই টা ওকে দেখে বুঝলাম ।
,,
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেল । আমরা আমাদের মতো থেকেছি। কাল সকালে ফিরে যাবো । সেই টা আমাকে নীল মনে করিয়ে দিল। আমি মনে করেছিলাম এই হানিমুন টাই আমার জন্য সুখের বার্তা এনে দেবে। কিন্তু না আমাকে পৃথিবীর সব থেকে কষ্টের বার্তা এনে দিল ।
,,
ফিরার আগের রাতে। ,,
,
আমি ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ করে নীল এলো । সে দিন ও প্রচুর মদ খেয়েছিল । ওর কোনও হুস ছিল না । ও এসে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো । আমি ওর চোখে অন্য কিছু দেখতে পারছিলাম । ওর চোখে কামনার আগুন জলজল করছিল । ও আমাকে ওর অনেক কাছে টেনে নিল। এই প্রথম আমি ওর সপর্শ পেলাম । এক রকম বাধ্য হয়ে আমি নিজেকে ওর কাছে সঁপে দিলাম ।
,,
সকালে নীল আমাকে বললো ,,,
,
:– আমি কালকে বেশি নেশার ভিতরে ছিলাম । কি হতে কি হয়েছে বুঝতে পারি নি। সরি।
,,
আমার ভিতরে যে খুশি টুকু ছিল এক নিমিশে হারিয়ে গেল । আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল ,,,
,,,,
তোদের মতো কাপুরুষ দের কাছে আমরা নারী রা বলির পাঠা।তোরা হাজার টা অন্যায় করলে একবার সরি বললে সব মাফ। আর নারী দের একটা ভুল হলে তার মাশুল দিতে হয় কঠিন ভাবে । সে দিন আমার নীল এর উপরে ঘৃণা খুব বেশি হয়েছিল ।
,,
আমরা ফিরে চলে এলাম। এসে দেখি আমার শ্বশুর অনেক অসুস্থ । তাকে তাড়াতাড়ি করে ক্লিনিকে ভর্তি করা হলো। হার্টে সমস্যা হয়েছে । তিনি ইমার্জেন্সিতে দুই দিন ভর্তি রইলেন । তারপর চলে গেলেন না ফেরার দেশে । আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম । যে মানুষ টা আমার পাশে ছায়ার মতো ছিল সে আজ নেই ।
,,
কিন্তু যাওয়ার আগে আমার শ্বশুর সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন । সেইটা শুনা মাত্র নীল রেগে আগুন । আমি নীল কে বললাম ,,,
,
চলবে
লেখা অধরা জেরিন