অদ্ভুত প্রেমানুভূতি,part:6,7

0
3116

অদ্ভুত প্রেমানুভূতি,part:6
suraiya

দুইদিন পর,,,,,,

আরূশির কোমরের ব্যাথা টা এখনো কমেনি বরং যেন আরও বেড়ে গেছে , বুঝতে পারছে না যে আসলে কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে নাকি আরো কিছু ৷ কারণ কোন মেডিকেল চেকআপ ও করেনি, শরীরটাও খুব একটা ভালো লাগছে না ৷ এদিকে অফিসের চাপ তার ওপর আসাদের সমস্ত পাগলামো টর্চার ওকে সহ্য করতে হয় ৷ যতই চেষ্টা করছে সমস্ত কিছু ভালোবাসা দিয়ে ঠিক করার কোনো কিছুই যেন ঠিক হচ্ছে না৷ শরীরটা আর কোন ভাবেই পেরে উঠছে না….

সবে অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে আসাদ আর আর আরোশী ৷ প্রথম প্রথম দুজনে আলাদা আলাদা গেলেও এখন বাড়ির লোকের জোরাজুরিতে দুজনকে একসাথেই যেতে হয়….

আরোশী সবে ফ্রেশ হয়ে সোফাতে একটু বসেছে, সেখানে বসে যেন কোনভাবে শান্তি পাচ্ছেনা তাই না পেরে গেল একটু ছাদে গিয়ে ফ্রেশ হাওয়া খেয়ে আসবে তাই ৷ যদিও জানে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে গেলে কোমরে ব্যথা আরো বাড়বে ৷ বন্ধ ঘরের মধ্যে যেন জীবনটা থেমে গেছে ৷ না পেরে ছাদের দিকে গেল….

আসাদ ঘরে এসে দেখল আরোশী ঘরে নেই যদিওবা ও জানার ইচ্ছা নেই যে আরোশী কোথায় ৷ মেয়েটার থেকে যত দূরে দূরে পারুক ও থাকতে চাই তার কারণ এভাবে যদি সবসময় আরুশির সাথে থাকে তাহলে নির্ঘাত কোন না কোন একদিন মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে যাবে ৷ আর ও নতুন করে কোনো মেয়ের ছলনাযর শিকার হতে চায় না….

অনেকক্ষণ ধরে আসছেনা দেখে ব্যাপারটা নিয়ে একটু আস1দ নড়েচড়ে বসল ৷
প্রথমে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল আরুশি সেখানে আছে কি? না পেয়ে ছাদের দিকে গেল কারণ আসার সময় ও দেখেছে ওর মায়ের ড্রয়িংরুমে একা …..

আরুশি দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে তার কারণ এই বাড়িতে আসাদের মা ছাড়া ওর দেখার মত কেউ নেই যে ওকে ঠিকমত কেয়ার করবে ৷ আসাদের থেকে এসমস্ত কোন কিছুই আশা করে না ও কারণ ও জানে আসাদের থেকে এগুলো আশা করা বেকার৷ আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে আরুশির ৷ মায়ের ভালোবাসার কমতি অনুভূতি করছে আজ ৷ এই প্রথম এতদিন ওর বাবার ভালোবাসা পেয়ে কখনো এমন অনুভূতি টা হয়নি এখনো মনে হচ্ছে ওর মা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে কোনদিন হয়ত ওকেকে কষ্ট পেতে দিতো না ৷ মায়ের ভালোবাসা সত্যিই আলাদা যেটা সকলে পায় না আবার যারা পায় অনেক সময় তারা ও তার সম্মান দিতে জানে না….

নীরবে কাঁদতে কাঁদতে আর না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো , হাটু গেড়ে বসে পড়ল ছাদের মেঝেতে৷ কোমরের ব্যথা,আর একটু জ্বর জ্বর লাগছে ওর৷

আসাদের মা কে কখনো এই সমস্ত কিছু বুঝতে দেইনি ও ……

হঠাৎ কারোর পায়ের শব্দে আরোশী চোখটা মুছে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো, উল্টো দিকে বাইরের দিকে ফিরে তাকাল ৷ নিজের কষ্ট কাউকে দেখাতে চায় না ও ৷

মেয়েদেরকে চেনা বড় কঠিন, কষ্টের সময়েও নিজের মুখে হাসি টুকু ধরে রাখতে তারা জানে , এটাই হয়তো তাদের সবথেকে বড় ক্ষমতা….

আসাদ দেখল আরোশী পিছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর কান্নার কোন শব্দ না হলেও আরশির শরীরটা যে কাপছে তা দেখে আসাদ বুঝতে পারছে, হয়তো কান্না থামালেও কাঁপাটা এখনো থামেনি….

বেশ গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করল :এত রাতে কি করছো এখানে?

কন্ঠ টাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে :এমনি এলাম৷

আসাদ কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছিল তখন ওর সমস্ত ভাবনাকে চুরমার করে দিয়ে আরুশির ফোনে সাদাফের ফোন এলো , ফোনটা আসতেই আসাদের চোখে পড়ল তখন ও ভাবল হয়তো সাদাফ এর সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে বলে আরুশি কাদছে৷

আসাদ রেগে গিয়ে বলল : প্রেমিকের সঙ্গে ঝামেলা করে এখন ঢং কর এখানে কাঁদছ, ভারি নির্লজ্জ মেয়ে তুমি ৷ আসলে তুমি কেন! আমার এখন তো মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল মেয়েই তোমার মত ৷ এতই যখন ছেলেটাকে ভালোবাসো তাহলে চলে যাও আমার জীবন থেকে ,আমিও মুক্তি পাই….

আসাদের দিকে ঘুরে :6 মাস কিন্তু এখনো হয়নি, সবে তো আজ দশ দিন বলে সেখান থেকে চলে গেল কারণ আসাদের কথা গুলো বড্ড গায়ে লাগছিল ওর৷ নিজেকে নিয়ে একটা নোংরা বিষয় বানানো কেউ কখনোই পছন্দ করবে না , তেমনি আরোশি ও নয়……

পরের দিন সকাল বেলা…..

সেদিন রাত্রে আরুশির আসাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয়ে গিয়েছিলে আর আসাদ এর ও পাল্টা রাগ করার কারণে অন্য ঘরে ঘুমিয়েছিলে, তাই রাত্রে দুজন দুজনের অবস্থাটা কেউ জানতে পারেনি ৷

সকালে আসাদ যখন ওর রুমে আসলো দেখল আরুশি একটা প্লাজো আর একটা অফ শোল্ডার টপ এর উপর কোট পড়েছে, আর লাগেজ প্য1ক করছে৷

আসাদ ভাবল আরোশী হয়তো কালকের ঘটনার জন্য চলে যাচ্ছে….

আসাদের একটু খারাপ লাগছে তার কারণ কথাগুলো আসলে ও না জেনে শুনেই বলেছে সেই কারণে হয়তো৷

কোথায় যাচ্ছ তুমি লাগেজ প্য1ক করে?

আমার বাড়ি যাচ্ছি৷

কেন? (বাঁকা চোখে দেখে)

ইচ্ছা হল তাই৷

কালকের কথা তাহলে বেশ ভালোই গায়ে লেগেছে!

শুধু আমি একা না , আপনিও যাচ্ছেন আমার সঙ্গে৷

তোমার মাথা খারাপ যে আমি তোমার কথা শুনবো আর তোমার সাথে নাচতে নাচতে তোমার বাড়িতে চলে যাব…

তা নয় তো কী?আমি যেমন আপনার কথা শুনি তখন আপনার ও আমার কথা শোনা উচিত…..

কখনোই না! তুমি যা বলবে আমি কখনোই তা শুনবো না, আর যাচ্ছো চলে যাও ৷

আপনার লাগেজটা গাড়িতে রয়েছে , তাই চলে আসবেন তাড়াতাড়া, বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ওর লাগেজ নিয়ে ৷

এই মেয়েকে আচ্ছা করে পিটালে তবে আমার শান্তি হয় ৷

অদ্ভুত প্রেমানুভূতি,Part:7
suraiya

বাধ্য হয়েই আসাদকে আসতে হয়েছে ,তবে আরূশির কথায় নয় ওর মায়ের কথাই এসেছে ৷
আজ দুদিন হল আসাদ আরুশির বাড়িতে রয়েছে৷
আরুশির নানান ধরনের টর্চার ওকে সহ্য করতে হয়েছে, হয়তো এতদিন ওর সাথে যা যা টর্চার করেছে তার.ই শোধ নিচ্ছে আরুশি ৷
আজকাল তো কোন কিছু খেতেই ওর ভয় ভয় লাগে,এই বূঝি আবার কিছু মিশিয়ে দেয় খাবারে ৷

আগের দিন ওয়াশরুমে শ্যাম্পু দিয়ে দিয়েছিল আর আসাদ ঢুকতে গেলেই পড়ে গেলে ৷ তা দেখে আরুশি হাসতে হাসতে শেষ ৷ আসাদকে ইতিমধ্যে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে আরুশি ৷ যাবে কি যাবে না বুঝতে পারছে না, এখানে কোন কিছু করতেও পারছেনা ৷ ঠিক করল বাড়ি গিয়ে আরুশিকে দেখে নেবে….

আরুশি : আপনাকে কখন থেকে ডাকছি আপনি খেতে আসছেন না কেন ? খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো ,আর বাপি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে৷

আমার খিদে নেই৷

খিদে নেই মানে ? আলবাদ খিদে আছে, আপনার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ৷চলুন খাবেন ৷

আমার পেটের অবস্থা খুব খারাপ ৷

আপনাকে আমি যখন বলেছি আপনি যাবেন তো যাবেন ৷ বলে আসাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল….

খাবার টেবিলে বসে আছে আসাদ সামনে অনেক রকমের খাবার সাজানো কিন্তু কোনটা দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না ৷ও বুঝতে পেরেছে যে খাবারে কোন গন্ডগোল তো অবশ্যই আছে…..

আরুশির বাবা : বাবা তুমি খাচ্ছ না কেন?খেয়ে দেখো ভালোই হয়েছে আরুশি মা নিজের রান্না করেছে৷ মামনির হাতের রান্না একবার খেয়েছি বেশ ভালই রান্না করে , তুমিও খেয়ে দেখো ভালো লাগবে৷

আরূশির দিকে তাকিয়ে :খাব?

অবশ্যই ৷

আসাদ খেতে শুরু করল প্রথমে একটা বাটিতে হাত দিতেই তার রান্নাটা খেয়ে বেশ ভালই লাগলো কোন খারাপ নেই রান্নাই ৷ ভয়ে ভয়ে দ্বিতীয়বার খেয়ে দেখলে খাবার প্রচন্ড তেতো মুখে দেওয়ার মতো নয়৷ কোনরকমে খেতে পারছে না আসাদ ৷ অপরদিকে আরূশির বাবা বারবার বলেছেন খাওয়ার জন্য তার জন্য নাও করতে পারছেন না ৷ নানান খাবারে নানান ধরনের টেস্ট পাচ্ছে আসাদ ৷ এমন খাবার খাওয়ার সৌভাগ্য যেন আর কোনদিন না হয় ওর , আর এ ধরনের খাবার খেতে ও চায় না ওর জীবনে….

শেষের খাবারটা মুখে দিতেই ওখানে আর বসে থাকা হয় তোর পক্ষে সম্ভব না, খাবারটা এতই ঝাল যে ওর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে, এরকম অবস্থায় কোনো রকম খাবারটা খেয়ে ঘরে চলে গেল ৷ ওয়াশরুমে গিয়ে বারবার চোখেমুখে জল দিয়ে কুলকুচি করতে লাগলো কিন্তু কোনভাবেই যেন ঝালটা কমছে না ৷

আরোশী মজা নেওয়ার জন্য রুমে গিয়ে দেখল আসাদের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে প্রচন্ড রেগে যে আছে সেটা আরুশি ওকে দেখে বেশ ভালই বুঝতে পারছে ৷ কিন্তু ও তো এটাই চেয়েছিল আসাদকে জব্দ করার ৷

তোমাকে আমি দেখে নেব একবার শুধু বাড়িতে চলো, আর তুমি আমার খাবারে ঝাল কেন মিশালে?

ওখানে অনেক ধরনের খাবারই তো ছিল, আপনি ঝালটা খেলে আমার কি করার ! আর আমি তো ঠিকঠাকই রান্না করেছি ৷

একদম বাজে কথা বলবে না আজ তোমার জন্য বলে আরূশিকে চেপে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট দুটো মিশিয়ে দিল ,কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে ৷ ঝাল এখন অনেকটাই কম লাগছে….

আজকে আরুশি আর আসাদ বাড়িতে যাচ্ছে ৷ আসাদ বেশ খুশি কিন্তু আরুশি কোন ভাবেই খুশি না কারণ ও জানে গেলে আসাদ নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করে ওকে জব্দ করবে তাই ওর যেন যেতে মন চাইছে না কিন্তু কিছু করার নেই যেতে তো ওকে হবেই….

আসাদ গাড়ি চালাচ্ছে আর আরুশি জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে ৷

তা ম্যাডাম ভালো লাগছে তো এখন?

একদম চুপ করুন আপনার জন্য আমাকে এত তাড়াতাড়ি চলে আসতে হলো একদম ফালতু কথা বলবেন না ৷

বাড়ি চলো ম্যাডাম সব ভালো লাগবে ৷

আরুশি বাড়ি আসতেই আসাদের মা খুশি হলেই কারণ আজকে অনেকদিন পর আরুশি বাড়ি এসেছে ৷ আসাদ এর মধ্যে এক দুবার বাড়ি আসলেও আরুশির জন্য ওকে থাকতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়৷ সেই কদিন আরুশি আসাদকে জ্বালিয়ে মেরেছে….

সকাল সকালই ওরা বাড়ি এসেছে, যাতে বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যেতে পারে৷

আসাদ রেডি হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে, আরুশি ওয়াশরুমে যদিও প্রথমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আসাদ যেতে দেয়নি….

আরোশী যেই ওয়াশরুমে ঢুকলো আশাদ তখন দরজা বন্ধ করে দিল, ততক্ষণে আরুশির সমস্ত শরীর জলে ভিজে গেছে….

ওয়াশ রুমে ঢুকে আরুশির মনে পড়লো যে ও ড্রেস আনতে ভুলে গেছে , তাই ও আসাদকে হেল্প এর জন্য বললে বাইরে থেকে কোন সারা শব্দ পেল না ৷
আসাদ দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে, আর যাওয়ার সময় ওর মাকে বলে গেছে যে আরুশি অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে তাই সে ক্ষেত্রে আসাদের মা ও আর আসাদের ঘরে গেলেন না একবারও ৷

আরে এদিকে দরজা খুলতে না পারায় আরুশিকে ওয়াশরূমেই থাকতে হচ্ছে, এভাবে অনেক্ষণ ধরে থাকলে যে জ্বর জ্বর কাশি হবে সেটা ও খুব ভাল করেই জানে, কিন্তু চেঁচালেও ওর গলার শব্দ কারো কান অবধি যাবে না সেটাও ও জানে ৷

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here