অদ্ভুত প্রেমানুভূতি,part: 9 last_part
Suraiya Aayat
আসাদ ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে সাদাফের করা সমস্ত মেসেজ ডিলিট করে দিল যাতে তা প্রথম বার ওর কাছে পৌঁছালেও দ্বিতীয়বার আর আরুশির কাছে না পৌঁছায়…..
আরোশী বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলো না একেই শরীরটা ভাল নেই তার ওপরে একটু দুর্বল দুর্বল ফিল করছে তাই বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিতেই আর কয়েক সেকেন্ড চোখটা বন্ধ করতেই সারা রাতের ঘুম যেন ওর ওপরে ভর করল তাই ফোন টার কথা দ্বিতীয়বার আর ভাবেনি…..
সারারাত সাদাফ নির্ঘুম কাটিয়েছি কেবলমাত্র আরুশির কথা ভেবে ,অপেক্ষা করেছে আরুশির এসএমএসের একটা রিপ্লাই এর জন্য ৷ নির্জনতার মাঝেও ও নির্ঘুম ও তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল তা হয়তো জানে কেবল ঘরের রকিং চেয়ার আর চার দেয়ালে বন্দী সেই ঘরটা ৷ কেউ কথা রাখেনি তার….
সিদ্ধান্ত নিলো কালকে সকালে আরূশির সঙ্গে দেখা করবে ও….
মেসেজগুলো ডিলিট করে আসাদ ভাবল কালকে ও আরুশিকে জানাবে যে ও আরূশি কে ভালোবাসতে শুরু করেছে আর ওর সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাতে চাই…..
আসলে আসাদ যতই অস্বীকার করুক তবুও এই কদিনে আরুশির সংস্পর্শে এসে আরূশির প্রতি সামান্য কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়েছিল তবে যখন আরুশির বাড়িতে গেল তখন আরুশিকে নিজের অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছে আর নিজের সঙ্গে মেলানো চেষ্টা করেছে বারবার ৷ আরূশির থেকে বুঝেছে যে কারো জন্য কখনো কারো জীবন থেমে থাকে না কখনো…
আসাদ জানে যে আরুশির সঙ্গে ও চুক্তির বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তবুও তাদের সম্পর্কের মধ্যে ওর ভালোবাসাটা না থাকলেও আরূশির ভালোবাসা তো আছে সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ও এক রাশ ভরসার হাত আরূশির দিকে বাড়াতে চেয়েছে…..
আরূশির বাবা আসাদের হাত ধরে যখন কেঁদেছিলেন তখন আসাদের বুকের ভিতর টা যেন সম্পূর্ণ উথালপাতাল হয়ে গিয়েছিল ৷ যখন জানলো যে ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসার অভাব নিয়ে বড় হয়েছে তখন আসাদ আর ফেরাতে পারেনি নিজেকে আরুশিকে ভালোবাসতে ৷
ওদের বিয়ে হয়েছে প্রায় একমাস হলো তবে এতদিন অব্দি আসাদ নিজে থেকে কখনো ওর কেয়ার টা দেখায় নি ৷ আজকে সকালে অফিসে যাওয়ার আগে দরজাটা যখন বন্ধ করে দিয়েছিল তখন ভেবেছিল একরাশ ক্লান্তি নিয়ে যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরবে তারপর যখন ওয়াশরুমের দরজা খুলবে আরুশি হয়তো রাগ করে দুটো থাপ্পর মারবে আর তখন আদর করে ভালোবাসা দুটি হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেবে কিন্তু তেমনটা আর হলো না ৷ হঠাৎ যখন অফিসে ওদের দুজনের করার বড়ো ডিলটা সাকসেসফুল হয় তখন আসাদের আরুশির কথা মনে পড়তেই মনে হলো যে ওকে আটকে এসেছে ওয়াশরুমে ৷ আরুশির শরীরটা এমনিতেই খারাপ আর তার ওপরে শরীর সম্পূর্ণ ভেজা তাই তাড়াতাড়ি দেরি না করে অফিস থেকে বেরিয়ে এল তারপর দেখল যে অজ্ঞান হয়ে ওখানেই পড়ে রয়েছে আরুশি ৷ কতটা সময় যে আরোশী অজ্ঞান হয়েছিল সেটা আসাদই জানে ৷ আসাদ প্রতিটা সময় ওর পাশে থেকেছে আর সারাটা সময় ওর হাত দুটো ধরে ছিল…
আসাদ কাল থেকে নতুন একটা দিন শুরু করতে চায় আর সেইসাথে সাদাফ নামের তৃতীয় ব্যক্তিকে ওদের জীবন থেকে সরাতে চাই, ৷ চাইলেও হয়তো কখনো তা সম্ভব নয়….
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেছে আরুশি, আজকে বেশ ভালো লাগছে ৷ আজকে আর অফিসে যাবে না , সাদাফ এর সঙ্গে দেখা করতে যাবে ৷
__” কাল থেকে তো সাদাফ একবারও আমাকে ফোন করল না , ওর কি আর আমাকে মনে নেই , আমাকে ভুলে গেছে এই কদিনে ! খুব একটা যোগাযোগও করেনি বা কল ও করে নি ৷ আমারও ভুল , আমারই ওকে কল করা উচিত ছিল ৷”
(এই কদিনের ব্যস্ততায় আরুশির আর সাদাফকে ফোন করা হয়ে ওঠেনি ৷ প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই, এমন টা খুব কমই আছে যেদিন ওর সাদাফের সঙ্গে কথা হয়নি…)
আসাদ অফিসে চলে গেছে অনেকক্ষণ ৷ আরূশির উঠতে দেরি হয়ে গেছে আজ৷ ওর ভেবে অবাক লাগল যে আসাদ ওকে ডেকে তুললো না , অন্যদিন হলে হয়তো এক বালতি জল ওর মুখে ঢেলে দিত কিন্তু আজকে তার ব্যতিক্রম তার কারণটা আরু বুঝতে পারল না….
ঘড়িতে প্রায় 11:30,,,,,
একটা লাল রংয়ের শাড়ি তার সঙ্গে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি করেছে যেগুলো সাদাফ ওকে কিনে দিয়েছিল তা পরেছৈ ৷ সাদাব কে ও খুব ভালভাবেই চেনে, আর তার সঙ্গে ওর পছন্দ গুলোও ৷ এতদিনের রাগ-অভিমান যা আছে তা সাদাফের পছন্দের জিনিসগুলো দিয়ে আরোশী ওর রাগ ভাঙাতে পারবে তা ও খুব ভালোই জানে , তাই সাদাফের পছন্দের জিনিস পরেছে সব…..
ওয়ারড্রব থেকে পার্সটা বার করতে যাবে তখনই বার হাতে একটা সাদা রঙের খাম আর তার সঙ্গে একটা গোলাপ ফুল রয়েছে দেখে হাত দিয়ে সেটা নিয়ে আরুশি বিছানার উপর বসল ৷ দেখল একটা চিঠি আর গোলাপ ফুল ৷ ফুলটা সতেজ তার থেকে অতি সুন্দর ঘ্রান আসছে ৷ আরুশি ফুলটা পাশে রেখৈ চিঠিটা খুলল,,,
ডিয়ার সোনা বউ,,,,,,
আমি তোমার সেই ডেভিল হাসবেন্ড যার কারণে তুমি কালকে এত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে , বিশ্বাস করো আমি চাইনি তুমি অসুস্থ হয়ে পরো , আমি তো সব সময় চেয়েছি তুমি যাতে ভালো থাকো ৷ আমার জন্য তুমি যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে আমি সত্যিই দুঃখিত ৷ তবে পুরনো সব অতীত আমি আর না মনে করে সবকিছুর শুভারাম্ভ ঘটাতে চাইছি, এখন আর কোন ছয় মাসের বৈবাহিক সম্পর্ক নয় সারা জীবনের জন্য তোমার সঙ্গে আমি থাকতে চাই, নিজের করে রাখতে চাই তোমাকে , নিজের সমস্ত ভালবাসাটাকে তোমার কাছে উজাড় করে দিতে চাই , আমি জানি কথাটা হয়তো তোমরা শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না তবে এটা সত্যি ৷ সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফিরব তাই একটা নীল রঙের শাড়ি রাখা আছে আমার ওয়াড্রপ এর মাঝে, ওটা পরে সুন্দরভাবে সেজে থেকো, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে….
চিঠিটা হাতে নিয়ে আরোশী থর থর করে কাঁপছে৷ এদিকে কি হয়ে গেল আর কেনইবা হলো কিভাবে হলো তা কোন কিছুই জানে না ও ৷ হঠাৎ এভাবে এতটা পরিবর্তন একটা মানুষের মধ্যে কিভাবে হতে পারে ও বুঝতে পারছে না ৷ চিঠিটা পড়ে ও আনন্দিত হবে না খুশি হবে সেটা ও নিজেই জানে না , কিন্তু আসাদের যেমন ওর প্রতি অনুভূতি আছে আরুশির তো তেমন অনুভূতিটা নেই তাহলে আরূশি এখন কি করবে ?
ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ আর আরুশি ৷ দুপুরের খা খা রোদে সারা শরীরের রক্ত গুলো যেন আরো উষ্ণ হয়ে বয়ে যাচ্ছে ৷ সম্পূর্ণ শরীরটা যেন নেতিয়ে পরেছে , চারিদিকে নির্জনতার মাঝেও কোন অস্তিত্ব প্রকাশ পাচ্ছে না…
আজ বহুদিন পর আরুশি সাদাফকে দেখছে , আজ যেন এক অন্য এক সাদাফকে দেখছে ও , যাকে আরুশি চেনেনা ৷
চুল গুলো উস্কখুস্ক, গায়ে ঢিলা-ঢালা একটা শার্ট, মুখে দাড়ি গুলোও বেশ বড় হয়েছে , সম্পূর্ণ উস্কোখুস্কো লাগছে দেখতে ৷ এতোটুকু সময়ের মধ্যে একটা মানুষকে এতটা পরিবর্তন সম্ভব ?
সাদাফকে যা বলতে এসেছে আরুশি সেটা শোনার জন্য সাদাফ যেমন প্রস্তুত নয় তেমনি আরু নিজেও….. আসাদের সঙ্গে মিথ্যে সম্পর্কে নিজেকে আবদ্ধ করেও আসাদের প্রতি কোন অনুভূতি তৌরি হয়নি ওর ৷
আরুশি ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় সাদাফকে কিছু বলতে গেলেই সাদাফ বলতে শুরু করল,,,,,,
__”এভাবে আর কত ! আর কত পরীক্ষা নেবে আল্লাহ আমার ভালোবাসার! কাউকে ভালবাসলে কি সারাজীবন শুধু কষ্টই পেয়ে যেতে হয় , তাহলে এটা শুধুই কি একতরফা ভালোবাসা ! জানিনা হয়তোবা তাই….!
কাল থেকে অনেক বার কল করেছিলাম ধরিস নি, হয়ত এতটাই বিরক্তিকর মানুষ হয়ে গেছি আমি যে নাম্বারটা ব্ল্যাক লিস্টে ফেলতে হয়েছে তোকে যাতে করে কলটা তুই অব্দি পৌঁছতে না পারে ৷ তারপর অন্য নাম্বার থেকে মোবাইলে এস এম এস পাঠালাম রিপ্লাই দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলি না ৷ মানুষ পরিবর্তনশীল সেটা এতদিন কেবল শুনেছি তবে তা যে বাস্তবে হবে তা যে স্বচক্ষে প্রমাণ পাব সেটা ভাবি নি , হয়তো আমি তোদের দুজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে তোকে ভালোবেসে গেছি , তবে এটুকু কখনো ভাবি নি যে দূরে থেকেও এতটা ভালোবাসে ফেলবো তোকে ৷ তোকে আর ফিরে পাবো না হয়তো কিন্তু চিন্তা নেই আমি তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে কখনোই ফিরে যাবো না , আমি চাই তুই সুখে থাকিস ভালো থাক ৷ দ্বিতীয়বার তোদের মাঝে আসবেনা…”
কথাটা বলে সাদাফ এগিয়ে গিয়ে ঝিল পাড়ের দিকে , বসে গেল সেখানেই ৷ সাদাফ তাকিয়ে আছে জলের দিকে, আজ সূর্য টা হয়তো তাড়াতাড়ি অস্ত যাবে ৷ তারও বুঝি আজ মন খারাপ !
আজ আরুশির সাদাফকে অনেক কিছু বলার ছিলো তবে তা হয়তো আর হয়ে উঠবে না ৷
আরুশি বুঝতে পারল ভুলটা ওরই , এভাবে দুটি পুরুষের জীবনে একটি নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এটা ওর অন্যায় , তবে ও কখনো এমনটা চাইনি ৷ ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয় ! এমন বেদনাময়….!
আজ আরুশির সাদাফকে অনেক কিছুই বলার ছিল হয়তো ও নিজেও সাদাফকে খুব বেশী চাই তবে চাইলেই কি আর সব কিছু সব সময় পাওয়া সম্ভব ? থেকে যায় কিছু হাতছানি….!
চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে আরুশির৷
সাদাফের দেওয়া কাচের চুড়ি থেকে একটা কাচের চুড়ি খুলে সেই বসার জাইগার ওপর রেখে দিলো যেখানটায় দুজনের বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে এমনকি আজও দেখা করতে এসেছে যেখানে ৷ আর চুড়িগুলো না হয় সাদাফের স্মৃতি হয়েই থাক ৷
একবার সাদাফের দিকে চেয়ে দ্বিতীয়বার আর ফিরে চাইলো না আরুশি সেদিকে ৷ চলে গেল এক নাম না জানা কোন এক পথে যেখানে নেই কোন ত্রিকোণ প্রেম আর নেই কোন সম্পর্কের দায়বদ্ধতার জটিলতা ৷ হয়তো আর ফিরে পাবোনা কাউকে, কখন নিজের প্রিয় মানুষটাকে বলা হবে না যে ভালোবাসি , দেখাতে পারবে না তার প্রতি ভালোবাসা….
এমন গন্তব্যের দিকে পা বাড়ালো আরোশী যা হয়তো শীতের ধোঁয়াশার মাঝে এক সাদা কালোর আবছা স্মৃতি।
____________________সমাপ্ত_____________________
গল্পটার নাম অদ্ভুত প্রেমানুভূতি তার কারণ হলো আমরা যেমনটা সবসময় নিজেদের মতো করে কল্পনাবিলাসী হয়ে নিজেদের জীবনটাকে যেমনভাবে সাজাতে চাই তেমনটা সবসময় ঠিক হয়ে ওঠে না, না চাইতেও আমরা একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি যার ভিত্তিটা খুবই দুর্বল ৷ এমনকি এমনও হয় যে আমরা যাকে ভালবাসি তাকে আমরা ঠিক পেয়ে উঠি না কারণ সে হয়তো অপর একজনকে ভালোবাসে, এভাবেই চলতে থাকে একটা ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক যাতে ভেঙে চুরমার হয় হাজারো মন ৷ যেমনটা এই গল্পের তিনটি চরিত্রের ক্ষেত্রে হয়েছে ৷