তুমি_আমার?Part_16
#Written_By_Samia_Islam
রিধি এসব দেখে একদম সহ্য করতে পারছে না,, শান্ত রিধিকে দেখিয়ে রাইসার মুখে কেক লাগিয়ে দিলো,,, রাইসাও হেসে শান্তর পুরু হাতে মুখে কেক লাগিয়ে দেয়,,, রিধি নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে,,,
কিন্তুু তবুও পারছে না,,, চোখের পানিগুলো বড্ড বেসামাল,,, রিধি বারবার চোখ মুছে হাসার চেষ্টা করছে কিন্তুু পারছে না,,,
নিরা:: রিধি তোর কি খারাপ লাগছে,,,?
রিধি:: না,,, আমি ঠিক আছি,,,
নিরা::: সিউর তো,,,
রিধি:: হুম,,,
একে একে সবাই হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে,,, নিরা আর নাহিদও গিয়ে হলুদ লাগিয়ে আসলো,,,, এরপর সবাই রিধিকে যেতে বললো,,, রিধি এমনিতেও চোখেন পানি থামাতে পারছে না,,, তার উপর হলুদ লাগাতে গেলে কি করে থামাবে,,সবার জোরাজোরিতে রিধি স্টেইজে উঠে রাইসার পাশে বসলো,,
রিধি রাইসাকে হলুদ লাগিয়ে চলে আসতে লাগলে সবাই চিৎকার দিয়ে উঠে শান্তকেও দেওয়ার জন্য,,, রিধি বাধ্য হয়ে হলুদ নিয়ে শান্তর দিকে এগিয়ে যায়,,,কিন্তুু রিধির হাত গুলা কাঁপছে,,, রিধি চোখ বন্ধ করে শান্তর মুখে হলুদ লাগিয়ে দৌড়ে স্টেইজ থেকে নিচে নেমে গেল,,,
তারপর সেখানে না বসে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসায় চলে আসলো,,, নিরাও রিধির পিছন পিছন আসলো,,, রিধি বাসায় এসে শান্তর আম্মুর রুমে গিয়ে বালিশে মুখ গুজে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে থাকে,,, বাসায় এখন তেমন কেউ নেই সবাই অনুষ্টানে,,,
নিরা রুমে এসে দেখে রিধি বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে,,, নিরা বেডে বসে রিধির কাঁধে হাত রাখে,,, রিধি বুঝতে পেরেছে যে এটা নিরা,,, রিধি উঠে নিরাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কাঁদতে থাকে,,,
নিরা:: নিজেকে সামলে নে রিধি,,, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কি করে হবে??
রিধি:: আমি আর পারছি না নিরা,,এভাবে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না,, আমার নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে,,, মনে হচ্ছে এক্ষুনি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে,,,আমি এগুলা আর দেখতে পারছি না,,, ?
নিরা:: আমি তোর মনের অবস্থা টা বুঝতে পারছি,,,কিন্তুু আমি কি করতে পারি বল,,, তোকে এভাবে দেখতে আমারো ভালো লাগছে না, ,,, ,
রিধি:: নিরা আচ্ছা আমি কয়েকদিনের জন্য না হয় কোথাও চলে যাই,,,,
নিরা::: ফালতু কথা একদম বলবি না,,, কোথায় যাবি তুই??? কেন যাবি??
রিধি::: তাহলে এসব কি করে সহ্য করবো,,,??
নিরা:: আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে কিন্তুু আল্লাহর উপর ভরসা রাখ সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,
পরের দিন,,,
সকাল থেকেই সবাই নানা কাজে ব্যস্ত,,, রিধি রাতে মিউজিক এর শব্দে ঘুমাতে পারে নি,,, তাই এখন ঘুমাচ্ছে,,,, নিরা নাহিদের সাথে বসে কথা বলছে,, নিপা সবার সাথে কাজ করছে,,,আর শান্ত নিজের রুমেই আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে,,,
সবাই যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছে,,,, বিকালে সবাই রেডি হয়ে নিলো,,, যেহেতু বর বউ দুজনেই একি বাসায় তাই আর বেশি তাড়াহুড়া করতে হবে না,,, নয়ন নাহিদ মিলে শান্তকে তৈরি হতে হেল্প করলো,,,আর রাইসাকে সবাই মিলে সাজাতে ব্যস্ত,,, নিরা রিধিকে টেনে তুলে বসিয়ে দিল,,,
রিধি:: কি হয়েছে??? এত সকাল সকাল এভাবে টেনে তুললি কেন???
নিরা:: এখন সকাল??
রিধি:: তা নয়তো কি?? ( ঘুম ঘুম চোখে,,)
নিরা:: ১ টা বাজতে চললো,,,
রিধি:: রাত একটা সময় এসে ডাকাডাকি করছিস কেন??
নিরা:: ধুররর কার সাথে যে আমি কথা বলছি,,, আরে রিধি রাত না দুপুর ১ টা বাজতে চললো,,,
রিধি:: দুপুর,,,??
নিরা:: হ্যাঁ,,,,, এখন উঠ,,,
রিধি:: এতক্ষন ডাকলি না কেন??
নিরা:: ডেকেছি কিন্তুু তোর কান পর্যন্ত যায়নি,,, এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে,,,
রিধি:: রেডি কেন হবো??
নিরা:: মেইন রোডের মাঝখানে দাড়িয়ে ছেলেদের দেখানোর জন্য,,,,
রিধি:: মানে??
নিরা:: মানে আবার কি??? উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করিস কেন?? সবাই রেডি হয়ে গেছে একটু পড়েই বিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে,,,আর তুই বলছিস কেন রেডি হবি,,,??
রিধির রুমের জারদিকে তাকিয়ে দেখে,,, হ্যাঁ এটাতো রিথুর রুম নয়,,,রিধির কালকের সব দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠল,,,,
নিরা:: কি হলো চুপ হয়ে গেলি কেন??
রিধি:: তুই এখন যা,,, আসি পড়ে আসবো,,,
নিরা:: জ্বী না,,, সেটা কখনো হবেনা,,, নিপা আর নয়ন ভাইয়া বলছে তোর কাছ থেকে যেন ১ মিনিচের জন্যও কোথাও না যাই,,, এখন উঠতো,,,
রিধি:: আমার ভালো লাগছে না,,, ?
নিরা:: রিধি এমন করিস না চল প্লিজ,,,, ??
রিধি:: ?
নিরা রিধিকে অনেক জোরাজোরি করে একটা ড্রেস পরালো,,, তারপর অনেক কষ্টে অনুষ্টানের মাঝে নিয়ে যাওয়া হলো,,, রাইসা আর শান্ত কে দুইটা স্টেইজ এ মুখামুখি বসিয়েছে,,, রাইসাকে অনেক সুন্দর লাগছে,,, আর রাইসাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও অনেক হ্যাপি,,, শান্তও ওর ফ্রেন্ডস দের সাথে হাসিমুখে কথা বলেছে,,, এখন বিয়ে হওয়ার পালা,,
কাজি সাহেব প্রথমে শান্তর কাছেই গেল,,, রিধি যেন আর ধৈর্য্য ধারণ করতে পারছে না,, শান্ত যেই সাইন করতে যাবে তখনি রিধি দৌড়ে গিয়ে পেপারটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিলো,,, রিধি নিজেও জানেনা এটা সে কেন করলো,,, সবাই হা করে এটা দেখছে,,, হঠাৎ করে রিধি এরকম করবে এটা কেউ ভাবে নি,,, শান্তও রিধির দিকে তাকিয়ে আছে,,
রিধির চোখ থেকে অঝরে পানি পড়তে থাকে,,,, রিধি সবার সামনেই শান্তর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর শব্দ করই কাঁদতে থাকে,, সবাই ভাবে নি এরকম কিছু হবে,,, রাইসা পাথরের মতো বসে এটা দেখেই যাচ্ছে,,, শান্ত রিধিকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো,,,
শান্ত::: কি ড্রামা শুরু করছো?? এসবের মানে কি?? ?
রিধি:: আমি আ,,,,,
শান্ত::: জাস্ট সেট আপ,,,,, এক্টিং করা বন্ধ করো,,,
রিধি:: আমি এক্টিং করছি না,,, আমি সিরিয়াসলি আ,,,,,
শান্ত::: তোমার সাহস কি করে হয় পেপারটা ছিঁড়ে ফেলার,,,?
রিধি:: তো কি করবো আমি,,,, চোখের সামনে আপনাকে অন্যকারো হতে দেখে যেতাম,,,,
শান্ত::: হ্যাঁ এটাই দেখতে,,,
রিধি:: আমার কাছে এতটা ধৈর্য্য নেই,,, আমি এটা কখনো পারতাম না,,,?
শান্ত::: কেন??? তোমার কিসের প্রবলেম??
রিধি:: আমি আমার ভুল স্বীকার করছি,,, প্লিজ তবুও এভাবে আমাকে পর করে দিবেন না,,,??
শান্ত::: ভুলটা তোমার না আমার ছিল,,,তোমার মতো লো মাইন্ড এর মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম,,,কিন্তুু এখন আমি এসব আর ভাবি না,,, ভুলে গেছি সব,,,
রিধি:: কিন্তুু আমি কিছুই ভুলতে পারিনি,,,,?
শান্ত:: ঐ দিন আমি কি বলেছিলাম মনে আছে,,,,?
[[[[[ শান্ত:: আজ তোমাকে আমি যেভাবে রিকুয়েস্ট করেছি একদিন এই একই ভাবে তুমি আমাকে রিকুয়েস্ট করবে,,, আমি এই মুহূর্তে তোমাকে যতটা ভালোবাসি এর থেকে হাজার গুন বেশি তুমি আমাকে ভালো বাসবে,,, তুমি সবার সামনে বলেছো আমার জন্য তোমার মনে আমার জন্য এক বিন্দু ভালোবাসা ও নেই যা আছে সব ঘৃণা ,, তুমি একদিন বলবে যে তোমার মনে আমার যত এতটুকু জায়গা নেই যেখানে ভালো বাসা নেই,,, তোমার মনের পুরুটা জায়গা জুড়ে আমি থাকবো,,, আমারকে পাওয়ার জন্য তুমি মরতেও রাজী থাকবে,,, আমাকে দেখার জন্য তুমি দিনের পর দিন অপেক্ষা করবে,,, আমাকে স্পর্শ করার জন্য হাজার যুগ বাঁচতে ইচ্ছে করবে,,,, আর আজকের দিনটার জন্য মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আপসোস করবে,,,, ভেবোনা এটা শুধু মুখে বলছি,,, সময় সাথে মিলিয়ে নিও,,, ]]]
রিধি:: হ্যাঁ আমার সবকিছুই মনে আছে,,, হ্যাঁ আপনি ঐ দিন আমাকে যতটা ভালোবাসতেন তার চেয়ে শতগুন বেশি এখন আমি আপনাকে ভালোবাসি,, সেদিন বলেছিলাম আমার মনে আপনার জন্য একটুও ভালোবাসা নেই যা আছে সব ঘৃণা কিন্তুু আজ বলছি আমার মনে আপনার যত এতটুকু জায়গা খালি নেই যেখানে আপনার জন্য ভালোবাসা সেই,,,আমার মনের পুরুটা জায়গা জুড়ে শুধু আপনি,,,,, আপনাকে পাওয়ার জন্য আমি মরতেও রাজী আছি,,,
শান্ত::: কিন্তুু এখন তোমার জন্য আমার মনে কোনো ফিলিংস আসে না,,,
রিধি:: মিথ্যা কথা,,, আমি জানি আপনি আমাকে এখনো ততটাই ভালোবাসেন যতটা আগে বাসতেন,,,,
শান্ত:: এটা তোমার মিথ্যা ধারণা,,, আমি আমার ভালোবাসাকে সেদিনি মাটি চাপা দিয়ে পেলেছি,,,
রিধি:: না এটা হতে পারে না,,,,
শান্ত:: এখন তোমাকেও আমি ততটাই ঘৃণা করি যতটা তুমি আমাকে করতে,,,
রিধি:: আমি কিন্তুু নিজেকেই শেষ করে দিব,,,
শান্ত::: তবুও আমার ভালোবাসা পাবেনা,,,
রিধি একপা একপা পিছাতে লাগে,,,, সিঁড়ির কাছে আসতেই রিলিং ধরে দৌড়ে উপরে উঠে যায়,,, তারপর রুমে এসে দরজা লক করে দেয়,,, নিরা, নাহিদ, নিপা,নয়ন সবাই রিধির পিছন পিছন যেতে লাগে,,, কারণ রিধি রাগ করলে কি করে ও নিজেও যানেনা,,,
এদিকে রিধি দরজা লক করে রুমের সব জিনিস ভাঙ্গতে থাকে,,, পুরু রুমের ফ্লোরে কাঁচ পড়ে আছে,, রিধি পায়েও কাঁচ ডুকছে,,অন্য সময় হলে রিধি চিৎকার করতো কিন্তুু রিধির এই সময়ে পায়ের ব্যাথার থেকে মনের ব্যাথাটাই অনেক বড়,,, রিধি ইচ্ছা করেই কাঁচের উপর দিয়ে হাঁটছে,,
কিন্তুু রিধির রাগটা এখনো কমেনি,,, রিধি বেডের পাশে টেবিলের উপর থাকা ফল কাটার ছুঁড়িটা নিয়ে নিজের হাত উপর ধরলো,,, যে মেয়েটা একটা মশা কামড়ালেও কান্না করতে করতে বাসার সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করতো সে আজ নিজেকেই এভাবে কষ্ট দিতে একটুও হাঁত কাপঁছে না,,,
রিধি হাতের মধ্যে ছুঁড়িটা ধরে দুই তিনবার কাটতেই মাথাটা ঝিমঝিম করতে থাকে,,, চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে,,,হঠাৎ করেই হাত থেকে ছুঁড়িটা নিচে পড়ে যায়,,, রিধিও আর চোখ খুলতে পারছে না,, নিজেকে ধরে রাখার শক্তিটাও জারিয়ে ফেলেছে,,,
এদিকে অনেক্ষণ ধরে সবাই দরজা ধাক্কাছে কিন্তুু রিধির কোনো আওয়াজ না পেয়ে সবাই অনেক ভয় পেয়ে যায়,,, শান্ত সবাইকে সাইড হতে বলে দরজা ভেঙ্গে ফেলে,, শান্ত ভিতরে ডুকে রিধির এই অবস্থায় দেখে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না,,,
চলবে,,,