তুমি_আমার?Part_20
#Written_By_Samia_Islam
শান্ত:: সবার সামনে দিবো,,,?
রিধি:: হুম দেন,,?
শান্ত:: পরে কিন্তুু তুমিই লজ্জা পাবে,,,,
নিরা:: তাহলে আমরা যাচ্ছি ভাইয়া,,, আপনাদের ও একটু আলাদা টাইম স্পেন্ড করা দরকার,,,
নাহিদ:: হুম চলো,,,,,
নাহিদ আর নিরা ওখান থেকে চলে গেলো,,,
রিধি:: এখন বলেন কি গিফ্ট,,,,??
শান্ত একটু একটু করে রিধির পাশে যেতে লাগল,,, শান্তর চাহনি টা রিধির কাছে ভালো মনে হচ্ছে না,, রিধি উঠে দাড়িয়ে গেল,,,শান্তও রিধির পাশে এসে দাঁড়াল,,, শান্ত তবুও রিধির দিকে এগুতে লাগে,,,
রিধি পিছনে যেতে যেতে রেলিং এর সাথে লেগে গেল,,, রিধি ভয়ে পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়,, শান্ত রিধির হাত ধরে নিজের বুকে নিয়ে আসে,,, রিধিও ভয় পেয়ে শান্তর শার্ট খামছে ধরে,,,
শান্ত দুহাতে রিধির মুখটা উঁচু করে ধরে,,, রিধির নিশ্বাস শান্ত চোখে মুখে ছিটকে পড়ছে,,, শান্ত রিধির ঠোটের দিকে এগুতে লাগলেই রিধি বাঁধা দেয়,,,
শান্ত:: কি হলো গিফ্ট লাগবে না??
রিধি:: না,,,আমি চাইনা,,,
শান্ত:: কিন্তুু আমি যখন দিব বলেছি,, সো তুমি না বললেও দিব,,,
রিধি:: দ…দ…দেখুন আ,,,,,
রিধি কিছু বলার আগেই শান্ত রিধির ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিল,,, শান্তর ধীরে ধীরে নেশিটা আরো বাড়তে লাগল,,, আর রিধির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে,,,, শান্ত একসময় বুঝতে পারল যে সে খুব বেশি করে ফেলছে,,, রিধির চোখে পানি দেখে শান্ত খুব কষ্ট পেল,,
শান্ত:: রিধি Sorry,,,, আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে চাইনি,,
রিধি অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে নিল,,,
রিধি:: না না কষ্ট হবে কেনো,,, আমার সবকিছুতেই তো আপনার অধিকার আছে,,,তাই যখন যা ইচ্ছা হয় তাই করতে পারেন,,,,
শান্ত:: এটার মানে কি বুঝাতে চাইছো,,,
রিধি:: কিছু না,,,, আমি যাচ্ছি,,
শান্ত:: রিধি দাঁড়াও,,, ( রিধি যেতে লাগলে রিধির হাত ধরে নেয়)
রিধি:: হ্যাঁ বলুন,,,
শান্ত:: তুমি কি আমাকে এতটা কারেক্টটাললেস মনে করো,,,,?
রিধি:: আমি এটা কখন বললাম,,,?
শান্ত:: বলো নি কিন্তুু তোমার কথা এটাই বুঝাতে চেয়েছো,,,
রিধি:: না আমি তো শুধু,,,
শান্ত:: এনাফ রিধি,,, নিজেকে কন্ট্রোল করাটা আমার পক্ষে খুব বেশি হার্ড না,, তুমি কি ভাবছো বিয়ের আগেই আমি তোমার সাথে খারাপ কিছু করবো?? এতটা বিশ্বাস আমার প্রতি?? আমার ভালোবাসার প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই তোমার???
রিধি:: আমি এটা কখন বললাম,,,আপনার উপর পুরু বিশ্বাস আছে আমার,,,
শান্ত:: এটা মন থেকে বলছো না,,,তুমি ভেবোনা আমি শুধু তোমার দেহটা চাই,,,তোমার মনটা পেলেই আমি খুশি,,, Ok Promise করছি,,,আজ থেকে তুমি না চাওয়া পর্যন্ত কখনো তোমাকে টার্চ করব না,,, কিন্তুু তাই বলে তুমি এটা ভেবোনা তুমি স্বাধীন,,,, আমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের ছায়া স্পর্শ করতে পারবে না,,,আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসা তো দূরের কথা পছন্দও করতে পারবে না,,, ?
শান্ত হনহন করে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে আসল,,,,
রিধি অসহায়ের মতো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল,,,তারপর আস্তে আস্তে রুমের দিকে যেতে লাগল,,, রিধি রুমে গিয়ে দেখে নিরা শুয়ে আছে,,, রিধি কোনো শব্দ না করেই নিরার পাশে শুয়ে যায়,,,
সকালে,,,,,,,,,
শান্ত রিধিকে না বলেই অফিসে চলে গেল,,, রিধির খুব খারাপ লাগছে সামান্য একটা ব্যপার নিয়ে শান্ত এতটা বাড়াবাড়ি করছে,, রিধিকে একবার বলে যাওয়ার প্রয়োজন ও মনে করল না,,,
নাহিদ বলল বিকালে ওদের ড্রপ করে দিবে কিন্তুু রিধি কিছুতেই থাকতে চাইছিল না,, রিধি এখনি চলে যেতে চায়,,শান্তর আব্বু আম্মু ভেবেছিল হয়ত নয়ন আর নিপার জন্য খারাপ লাগছে তাই চলে যেতে চাইছে,,, তাই শান্তর আব্বু আম্মুও আর বারণ করেনি,,,,,
সকালে নাহিদ রিধি আর নিরাকে ওদের বাসায় দিয়ে আসল,,,, রিধি পুরু রাস্তায় একটা কথাও বলেনি,,,,, নিরা আর নাহিদও বুঝতে পারল না যে সকাল সকাল রিধির কি হল,,,
রিধি বাসায় গেলে এরকম চুপচাপ থাকতে দেখে নিপা ভাবল হয়ত তারা ফোন নি করায় রিধি মন খারাপ করছে,,,,,
সন্ধ্যায়””””
রিধি ফোন হাতে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে বসে আছে ভাবল হয়ত শান্ত বাসায় এসে কল দিবে কিন্তুু রিধির আশাটা মিথ্যা ছিল,,,অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও শান্ত কল দিল না,,,
রিধির এখন খুব খারাপ লাগছে,,,রিধি আর অপেক্ষা করতে না পেরে নিজেই কল দিল,,, ১ম বার রিসিভ করল না দ্বিতীয় বার দিলে তারপর রিসিভ করে…..
রিধি:: হ্যালো,,,
শান্ত:: হ্যাঁ বলো,,,,
রিধি:: কোথায় আপনি?
শান্ত:: কাজে আছি,,,
রিধি:: এখনো বাসায় যাননি??
শান্ত:: না,,, কিছু বলবে,,,?
রিধি:: বলছিলাম যে আজ কি খুব বিজি ছিলেন একবারও কল দেন নাই,,
শান্ত:: কোনো প্রয়োজন ছিলনা তাই নক করলাম না,,,
রিধি:: Sorry,,,, ?
শান্ত:: কেন???
রিধি:: কালকের পুরু ব্যাপারটার জন্য,,,
শান্ত:: আর কিছু বলবে,,,?
রিধি:: Sorry বললাম তো,,,?
শান্ত:: এখন রাখছি তাহলে,,,
রিধি:: আরে শুনুন,,,
শান্ত:: হ্যাঁ বলো,,
রিধি:: বাসায় কখন ফিরবেন,,,?
শান্ত:: জানিনা,,
রিধি:: ডিনার করছেন??
শান্ত:: অন্যকোনো কথা থাকলে বলো,,,আমি কাজে আছি,,,
রিধি:: আমি কি ডিস্টার্ব করছি,,,??
শান্ত:: হুম এখন রাখছি ,,,,,,
রিধি ফোনটা বালিশের পাশে রেখে চোখের পানি মুছে নিল,,, রিধি নিজেও সকাল থেকে কিছুই খায়নি,,,
নিপা দরজায় নক করল,, রিধি বেড থেকে উঠে দরজা খুলে দিল,,,
রিধি:: হ্যাঁ ভাবি বলো,,,
নিপা:: কিছু কথা ছিল,,,
রিধি:: ভিতরে আসো,,,
নিপা আর রিধি বেডে বসল,, নিপা রিধির হাতের উপর হাত রাখল,,
নিপা:: কিভাবে যে বলব এটা ভেবে পাচ্ছি না,,,
রিধি:: কি হয়েছে বলো,,, ভাইয়া কোথায়??
নিপা:: তোমার ভাইয়া ঠিক আছে,,, উনি তোমাকে কি বলবে ভেকে পাচ্ছে না,, তাই আমাকেই পাঠালেন,,?
রিধি:: কি এমন কথা ভাবি??
নিপা:: আসলে,,,
রিধি:: হ্যাঁ বলো ভাবি ,,,
নিপা:: তোমাকে গতকালই বলা উচিত ছিল কিন্তুু তুমি মন খারাপ করবে তাই বলা হয়নি,,, আসলে কাল শান্তদের বাসায় যাওয়ার পিছনে একটা কারণ ছিল,,,
রিধি:: কি কারণ??
নিপা:: শান্ত আব্বু আম্মু চাইছিল খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাক তাই কাল যেতে বলেছেন,,,
রিধি:: ??
নিপা:: উনারা বলেছেন এখন কোনো অনুষ্টান না করেই শুধু বিয়েটা হয়ে যেতে,,, পরে সবাইকে জানাবে,, তাই উনারা কালই বিয়ের আয়োজন করতে বলেছে,,
রিধি:: কাল,,,,,!!!!!?
নিপা:: হুম,,,
রিধি:: এত তাড়াতাড়ি কি করে,,,,
নিপা:: আমরাও প্রথমে না বরেছিলাম কিন্তুু গুরুজন রা যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওটা তো শুনতেই হবে,,,
রিধি:: তাই বলে,,??
নিপা:: মন খারাপ করো না,,, সবঠিক হয়ে যাবে,,,
রিধি:: কিন্তুু শান্তও কাল আমাকে বলল না কেন??
নিপা:: শান্তকেও বলা হয়নি,,
রিধি:: ??
নিপা:: রিধি দেখ একদিন না একদিন তো ওখানে যেতেই হবে,,,, তাই মন খারাপ করে কি করবে,,, কাল সন্ধ্যায় ওনারা আসবে বলেছেন,,,
রিধি:: ??
নিপা:: আচ্ছা তোমার যদি ওখানে ভালো না লাগে কয়েকদিন পর পর চলে আসবে,,, আর আমরা তো যাবই,,,
সকালে,,,,,
নিরাও চলে আসল,,, রিধি ভাবে নি এত তাড়াতাড়ি এই বাসা থেকে চলে যাবে,,,আসলে মেয়েদের জীবনটাই এমন,,, নিজের বলতে কিছুই নেই,,, বিয়ের আগে বাবা মার সম্মানের কথা চিন্তা করেই নিজেকে সেভাবে চলতে হয়,,
আর বিয়ের পর পুরু জীবনটা স্বামীর হাতে,,, স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই,,, প্রতি পদক্ষেপে বাঁধা সৃষ্টি করে,,,,,আর সেই বাঁধা ফেরিয়ে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়,,, এক পর্যায়ে মৃত্যুর সামনে দাড়িয়ে সেই বাঁধা থেকে মুক্তি পায়,,,
সন্ধ্যায়,,,,,
নাহিদ, শান্ত, শান্তর আব্বু- আম্মু আর শান্তর একটা ফুফিও এসেছে,,, নিরা আর শান্তর ফুফি রিধির রুমে বসে আছে,, নিপা সবার জন্য নাস্তা তৈরি করছে,, কিছুক্ষণ পর শান্তর ফুফি আর শান্তর আম্মু নিপা আর নিরাকে কয়েকটা শফিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বলল রিধিকে রেডি করিয়ে দিতে,,,
নিপা আর নিরা রিধিকে শাড়ি পড়িয়ে দিল,,,কান্না করার কারণে সাজাতে পারেনি,,, শান্তর আম্মু এসে রিধিকে গোল্ডের এয়ার রিং,নাকফুল আর আর খুব ভারি কতগুলা গয়না পড়িয়ে দিল,,, রিধি এক সেকেন্ডের জন্যও কান্না বন্ধ করছে,,,
যতই সময় যাচ্ছে কান্নার পরিমান টা আরো বেড়ে যাচ্ছে,,,, রিধির কান্না দেখে নিরার চোখের পানিও টলমল করছে,,, নয়ন নিজের বোনের কান্না সহ্য করতে পারবে না তাই রিধির পাশেও আসছে না,, কিন্তুু সবার আড়ালে গিয়ে বারবার চোখের পানি মুছে নিচ্ছে,,,,
অবশেষে কাজি এসে বিয়েটা পড়িয়ে দিল,,, রিধিকে যখন কবুল বলতে বলল ওর মনে হচ্ছিল ওর জীবনটা অন্যকারো নামে লিখে দিচ্ছে,,, রিধির এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল ওর নিশ্বাস টা বন্ধ হয়ে যাবে,,
বিদায়ের সময় রিধির কান্না দেখে নয়ন আর নিপা নিজেদের আর কন্ট্রোল করতে পারল না,,, নয়ন রিধিকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কেঁদে উঠল,,, কেননা আজ ওর কলিজাটাকে ছিঁড়ে অন্য কারো বাসায় দিয়ে আসছে,,
নিরা একটু দূরে দাড়িয়েই কাঁদছে,,, রিধির নয়নকে ছেড়ে নিপাকে জড়িয়ে ধরল,,, এতটা কষ্ট রিধির কখনো হয়নি আজ সবাইকে ছেড়ে যতটা কষ্ট হচ্ছে,,, নিরা রিধির কাছে আসতেই রিধি নিরাকেও জড়িয়ে ধরে,,, নিরা রিধি দুজনেই সমান তালে কাঁদতে থাকে,,, এরপর নয়ন রিধিকে শান্তর হাতে তুলে দিল কিন্তুু মুখ দিয়ে কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না,,,
নয়ন:: আমার কলিজাটা ছিঁড়ে আজ তোমাকে দিয়ে দিলাম,, রিধিকে কখনো কষ্ট দিওনা,, তাহলে আমি মরে যাবো,,, আমার বোনটার চোখে আমি কখনো পানি দেখতে পারব না,,, আজ যেভাবে আমার বোনটা কান্না করতে করতে বের হচ্ছে এর পরের বার যেন এভাবে হাসতে হাসতে আমাদের বাসায় আসে,,, ??
শান্ত:: আমি বেঁচে থাকতে রিধির উপড় ফুলের আঁচড়ও লাগতে দিব না,,,
এরপর নয়ন রিধির কপালে অনেকগুলা চুমু দিল,,,আর রিধিকে গাড়িতে উঠিয়ে দিল,,, যতক্ষণ গাড়িটা দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ নয়ন আর নিপা তাকিয়ে ছিল,,, এরপর চোখ মুছে বাসায় ভিতরে আসল,, নয়ন ড্রয়িংরুমে এসে সোপায় বসে যায়,,, কিছুক্ষণ পর হাটতে হাটতে রিধির রুমের দিকে যায়,,, নিপাও নয়নের পিছন পিছন যায়,,,
নিপা:: ঘুমাবেন না???
নয়ন:: ঘুম আসবে না,,,
নিপা:: এত চিন্তা করবেন না,, শান্ত রিধিকে খুব ভালো রাখবে,,
নয়ন:: হুম জানি নিপা,,,,কিন্তুু এখন থেকে তো আমার বোনটাকে সকালে ও ঘুম থেকে উঠার আগে আমি অফিসে যাওয়ার সময় ওর কপালে চুমু দিতে পারব না,, ও যদি রাতে এলোমেলো হয়ে ঘুমায় তাহলে তো ব্ল্যানকেট টেনে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারব না,, ওর প্রতিদিনের আবদারও আর শুনতে পারব না,,অফিসে থেকে এসে রিধি বলে কাউকে ডাকতেো পারব না,,,ডিনারের সময় ঘন্টার পর ঘন্টা কারো জন্য অপেক্ষাও করতে পারব না,,,
নয়ন কথাগুলো বলছে আর চোখ নিয়ে অনরবত পানি পড়েই যাচ্ছে,,,
নিপা:: কষ্ট কি শুধু আপনারই হচ্ছে,,, আমার হচ্ছে না?? ?
নয়ন:: আমি জানি নিপা তুমি আসার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছো,,, কারণ তুমিতো ওর ভাবি না ওর মা ছিলে,,
নিপা:: মেয়েদেরকে এরকম হাজারো জিনিস ত্যাগ করতে হয়,,, দেখবেন রিধি আস্তে আস্তে সব মানিয়ে নিতে পারবে,,,,
নয়ন:: আমিও সেটাই দোয়া করি ,,,,,
নিপা:: হুম এখন চলেন,,,
নয়ন:: তুমি যাও আমি আর একটু এখানে থাকি,,,,
চলবে,,,,,