সে_দিন_ছিল_শরৎের_এক_সন্ধ্যা পর্ব_০৩(শেষ)

0
5090

সে_দিন_ছিল_শরৎের_এক_সন্ধ্যা পর্ব_০৩(শেষ)
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

রাত ১২ টা,
নিস্তব্ধতা বিরাজ মান চারিদিকে সবাই ঘুমিয়ে গেছে
আমান ও।
কিন্তু আমার ঘুম নাই চোখের তারা বুঝেই না।
কিছু সময় বারান্দায় কাটিয়ে একটা চাদর নিয়ে ছাঁদে চলে এলাম।
আকাশে চাঁদ নাই কিন্তু হাজার তারার সমাহার।
অসাধারণ ফিলিংস আসছে ভেতর থেকে।
ছাদের এক কোনে দোলনা আছে একটা।
বড়ো অনেকটা।
দোলনার এক পাশে বসে পড়লাম।
মাথাটা পাশে ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
–কফি নেও ভালো লাগবে।
হটাৎ আমান আমার পাশে এসে বসে আমাকে কফি কাপ ধরিয়ে দিল।
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,
–আপনি না ঘুম ছিলেন।
–হ্যাঁ ছিলাম ত নেও।
ওনার থেকে কফি টা নিলাম।
সত্যি তার সাথে এক দোলনায় হাতে কফি আর সময় টা যদি এমন হয় তবে ত কথাই নাই।
এমনি ত স্বপ্ন ছিল আমার সব সত্যি হচ্ছে যে অজান্তে।
–জানো তোমায় প্রথম কই দেখেছিলাম?
–কই?
–শরৎের এক সন্ধ্যায় মাথায় ঘাস ফুলের বেড়ি ব্যান্ট একটা সাদা থ্রি-পিস পরে কাশফুলের সাথে ছবি তুলছিলে।
ওনার কথায় মনে পরে গেল সেই দিনের কথা।
সত্যি আমি সে দিন দুরে এক জন কে দেখেছিলাম গাড়ির সামনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে তখন তেমন পাত্তা দেয় নি।
আমি বান্ধবী দের সাথে ছবি তোলায় ব্যাস্ত ছিলাম তাই।
কিন্তু আমি ত বুঝতে পারি নি সে দিনের ওই ছেলেটা আজ আমার হাসবেন্ড হবে।
–কি কিছু মনে পরলো?
–হ্যাঁ।
পরেছে সে দিনের কথা।
কিন্তু বুঝলেন কি করে আমি সে আর খুঁজে পেলেন কি করে?
–খুঁজে পেলাম বলতে তোমায় খুঁজেছি অনেক কিন্তু সেভাবে কখনো খুঁজে পাই নি।
সে দিন ভাইয়ার মেয়ে দেখতে ছলের বসে ভাইয়ার সাজে আমি চলে এসেছিলাম।
এটা আসলে আমাদের জমজ হবার একটা বেনিফিট।
যাই হোক সে দিন মেয়ে দেখতে এসে মেয়ের বোনকে দেখে মনে হয়েছিল হাতে চাঁদ পেয়েছও আমি।
তার পর প্লান করলাম বিয়ের দিন এই কাজ করব।
আমার বিষয়ে অবশ্য কেউ না জানলেও ভাইয়া সবি জানত।
তুমি খুব ভালো বোনের জন্য সব করতে পারো।
তাই ত এভাবে বোকা বানাতে পেরেছি।
তুমি আমার আগামি পথ চলার সাথী হবে এটা ভেবে কতোটা ভালো লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না।
আর আজ তোমায় এভবে কাছে পেয়ে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব থেকে পবিত্র সম্পর্ক আমাদের।
যদি আমরা প্রেম করতাম তবে সেটা হতো অবৈধ।
তোমার সাথে কথা বলা তোমার সাথে দেখা করা সব হতো লুকিয়ে কিন্তু এই যে দেখ তুমি আমি কতো কাছে এই মাঝ রাতে কারোর কিছু বলার সাহস নেই।
যদি এর আগে তোমায় পেতাম তবে বিয়পটা আমাদের লাভ ম্যারেজ হতো।
এটাআমি সিওর কিন্তু সেটা হয় নি ভালো হয়েছে।
তোমায় খুঁজে যখন না পেতাম তখন বলতম আল্লাহ কেন ওকে পাই না আমি।
কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সে দিন পেলে এই সুন্দর সময় টা সুন্দর হতো না।
সে দিন না পাবার জন্য ই আজ পুরোপুরি পাওয়া।
ওনার কথা খুব মন দিয়ে শুনছি৷
সত্যি কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে জানা ছিল না।
আমি এতো লাকি আমি এমন এক জনকে পেয়েছি।
সত্যি আমার ৪ কপালে আল্লাহ তায়লা যেন শুখ লিখেছে শুধু।
–কি হলো এমন ভাবে তাকিয়ে কি দেখ?
–তোমাকে।
–মেয়ে পাগল হয়ে গেছে কি বলো তুমি।
–সত্যি ত এই হলদে ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।
মুচকি হাসি উফ কথা বলে যেন বুকে তির লাগে।
–হেই তুমি ফ্লাট করছো?
–অবশ্যই না আমার বরকে এসব বলব না ত কি বাইরের ছেলেকে বলব?
–না না তোমারি ত বর তাই না।
–হ্যাঁ শুধু আমার।
–হুম শুধু তোমার।
–সত্যি ত শুধু আমার ত।
–দেখ ফাজিল হতে পারি কিন্তু লয়েল আমি।
তোমাকে ভালোবাসি অনেক৷। কখনো খারাপ কিছু হবে না।
–সত্যি বলাটা আমার খুব বেশি পছন্দ হয়।
–তুমি মেয়েটাই ত একটা সত্যি পুতুল।
আমি আরকিছু না বলে তার কাছে মাথা দিলাম।
–খুব বেশি ভালোবাসা হয় নি হয় ত।
সত্যি বলতো হয়ত ভালোবাসাই হয় নি এই টুকু সময়ে ভালোবাসা হয় না।
কিন্তু যা হয়েছে তা ভালোবাসার সমান হয়েছে।
–আচ্ছা তাই নাকি।
–হ্যাঁ। মি.খান আর আমি হলাম পার্মানেন্ট মিসেস.খান।
–নিচে যাবে না।
–না আজ রাত এভাবে কাটাবো আপনার কাঁধে মাথা দিয়ে সমস্যা কোন?
–না কোন সমস্যা না।
–হুম গুড সমস্যা হলেও মানতাম না।
–ওহ আচ্ছা তাই নাকি।
–এক দম তাই।
সেই রাত টা তার কাঁধে মাথা রেখে হয়েছিল অনেক কথা।
সত্যি আমার জীবন টা পূর্ণ করে দিলো এই খান সাহেব।।
,
৫ বছর পর,
সকাল থেকে শুরু হয়েছে মুখ গোমড়া এর খেলা।
হয় বাবুর মুখে হাসি নেই নয় তার বাবার মুখে হাসি নেই।
আমি কাজ করছি কিন্তু এই বাপ ব্যাটির কি হইছে তা আল্লাহ মাবুদ সেই জানেন।
আমি দেখেও না দেখার ভান করে কাজে মন দিচ্ছি.
–দেখছিস বাবু তোর আর আমার কোন মূল্যেই নাই।
বাবার কথা শুনে বাবু আবার একটু ভ্যেটকিয়ে দেয়।
সে কি কান্ড,
–আচ্ছা তোমাদের বাপ মেয়ের সমস্যা কি?
–সমস্যা কিছু না সমস্যা একটাই রাজি হয়ে যাও না মা।
–তোমাদের বাপ মেয়েকে আমি কি পিটা করব বলতে পারো।
বলছি না এখন যাওয়া যাবে না কিছু দিন পর যাবো বাসায় আপু অসুস্থ।
এ দিকে মাও নেই ওদের একা রেখে কি করে যাই বলো?
–মাত্র ৩ দিনের সফর মা চলো না।
বাবা বুঝাও।
–হ্যাঁ বাবু আম্মু চলো না।
–মার খাবে দুজন এক সাথে।
(পরিচয় তৃপ্তি মেঘ আমানের এক মাত্র কন্যা বয়স ৩ বছর)
–এই কি হচ্ছে এখানে (মেঘের আপু মানে বড়ো ভাবি)
–আরে আপু বলিস না কক্সবাজার টুরে যাবে বাপ মেয়ে এখন তুই অসুস্থ মা বাসায় নেই আমি কি করে যাই।
–আল্লাহ এটা কোব কথা।
তোর ভাইয়া ৩ দিনের ছুটি পাইছে চলো আমরা এক সাথে যাি আমান।
–হ্যাঁ ভাবি ঠিক বলেছো।
–কি মেঘ এখব ত সমস্যা নাই।
–না নাই।
,
বিকালে রওনা দিলাম সমুদ্র দেখতে।
হাহা আসলে আমর কথা গুলো এমন।
,
সেখানে পৌঁছে রাতে শুধু ঘুম।
সকাল ৬ টার দিকে বের হলাম আমরা।
সবাই মিলে সূর্য দেখতে।
বেশ অনেকটা সময় হাটলাম।
আমান বাবুকে কোলে করে উপরের দিকে দিয়ে কোলে নিচ্ছে।
এমন দৃশ্য সত্যি অসাধারণ কিছু।
চোখ দুটো জুড়িয়ে গেল।
আমনের মতো হাসবেন্ড তৃপ্তির মতো মেয়ে আর পরিবার
সব মিলিয়ে এক কথায় জীবনটা রঙিন।
সেই শরথের সন্ধ্যার ফলে আজ এতো সুন্দর আমার জীবন।
সমাপ্ত।
(বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন রিচেক দিবার সময় পায় নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here