প্রেমনগর
পর্বঃ৭ +৮
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিন। তুলি এবার পরীক্ষা দিয়েছিলো। তুলির রেজাল্ট পাওয়া যায়। গাধী তুলি তিন সাবজেক্টে ফেল করেছে। ইংরেজি, ভূগোল এবং পৌরনীতিতে। তুলির মা মুখ দেখাতে পারছেন না। আত্মীয় সজনের সামনে মান সম্মান সব গেল। তুলির বাবাও লজ্জায় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তিনি ফোন করে তুলিকে গ্রামে নিয়ে যেতে বলেছেন। তুলির মা তুলিকে অনেক বকাবকি করতে করতে এক পর্যায়ে ঝাড়ু নিয়ে এসে পেটানো শুরু করলেন তখন অহনার মাসহ বাড়ির লোকজন এসে তুলির মাকে আটকায়। চিল্লাচিল্লিতে বাড়ি একদম মাথায় উঠে গেছে৷ নতুন জামায়ের সামনে এসব ঘটনায় অহনার বাবা মাও একরকম লজ্জায় পরে গেলেন। কাঁদতে কাঁদতে তুলি দৌড়ে গিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
অনেকক্ষণ থেকে তার কোনো সাড়া শব্দ নেই। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকা হলেও সে কোনো সাড়া দেয় নি।
শরিফাঃ খালাম্মা আফায় তো দরজা খুলে না। আফা খাইবো না?
তুলির মা রেগে বললেন,তোর এতো দরদ কিসের যা এখান থেকে। ওকে খাবার দেবার দরকার নেই।
.
মেঘ নীলাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলো। দেখলো সেখানে ড্রইংরুমের ভিতর অনেক মানুষের জটলা বেধে আছে। মেঘকে দেখে শ্রাবনী এগিয়ে এলো,
শ্রাবনীঃ তোমার জন্যই এমনটা হয়েছে, কাল পানিটা খেলে কি এমন হতো!
শ্রাবনীর কথা শুনে মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
মেঘঃ নীলা ঠিক আছে তো?
তখনই নীলার মা এগিয়ে এসে বললেন, ডাক্তার এসেছিলো। ওর পেট থেকে ঔষধ গুলো ওয়াশ করে বের করা হয়েছে আর কোনো ভয় নেই কিন্তু ওর জ্ঞান এখনো ফেরেনি!
শ্রাবনীঃ তুমি পানিটা কেন খেলে না মেঘ!
নীলার মা তখনই ভ্রু কুচকে জিগাসা করলেন, কিসের পানি?
শ্রাবনী এবার মুখ ফসকে বলে ফেললো, নীলা একটা পানি এনেছিল সেই পানি।
তার পরেক্ষনেই সাথে সাথে জিব্বায় কামড় দিয়ে বলে উঠলো, কিছুনা আন্টি কিছু না!
নীলার মা কিছুই বুঝলো না,তিনি বললেন, কাল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় ওর হাতে একটা ছোট পানির বোতল দেখেছিলাম।
শ্রাবনী চোখ বড় বড় করে বললো, তার মানে নীলা কালও শ্যামপুর গিয়েছিলো?
নীলার মা ভ্রু কুচকে আবার বললেন, মানে?
শ্রাবনীও আস্তে করে আবার বলে উঠলো, না আন্টি কিছু না।
তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো, সব কিছু হয়েছে তোমার জন্য!
নীলার মা এবার মেঘের দিকে তাকালেন আর সন্দেহবসত বললেন, তুমি কিছু করোনি তো?
.
নীলার মা ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে তাকিয়ে মেঘকে দেখছেন। মেঘ একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো, না না আন্টি,আমি আবার কি করবো!
নীলার মা তখনই নীলার বাবাকে ডাকলেন, ওগো এদিকে এসো,এই ছেলেটাই কিছু একটা করেছে।
নীলার বাবা এখানে এসে দাঁড়ালেন৷ ভয়ে মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
মেঘঃ আংকেল আমি কিছু করি নি!
নীলার বাবা রাগী গলায় বললো, তোমায় আমি পুলিশে দেব!
মেঘঃ আংকেল এখন তো নীলার বিপদ কেটে গেছে আর কোনো ভয় নেই।
নীলার বাবাঃ তাহলে আমার মেয়ে চোখ খুলছে না কেন!
মেঘঃ আমি খোলাবো….নীলার রুমটা কোনদিকে?
শ্রাবনী হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে বললো,ওই যে ওইদিকে…
মেঘ দৌড়ে সেদিকে চলে যায়
নীলার মাঃ এই ছেলে এই… তুমি ওইদিকে কোথায় যাচ্ছো!
বাকিরাও সবাই মেঘের পিছু পিছু এসে নীলার রুমে উপস্থিত হয়।
.
তুলি দরজা খুলছে না। ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দও নেই। তুলির মা এবার ভয় পেয়ে গেলেন। ভিতরে কোনো অঘটন ঘটে নি তো! বাড়িতে কান্নার রোল উঠে গেল। দরজায় অনেক বার ঢাক্কা ঢাক্কি করার পরও কোনো কাজ হলো না। দরজা ভিতর থেকে লক৷ মিস্ত্রি এনে দরজা ভাঙা হলো।
এইসব কান্ড দেখে রৌদ্র সবার চোখের আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছে।
.
দরজা ভাঙার সাথে সাথেই সবাই হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পরে। তুলির মা চিৎকার করে বলছেন, মা রে তুলি!
তুলি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে আছে। তাকে ধরে বিছানায় তোলা হয়। আকাশ এসে তুলির চেক আপ করছে।
আকাশঃ ভয়ের কিছু নেই, আপনারা শান্ত হন। জ্ঞান এখনই ফিরবে। ওর কিছুই হয় নি। ভয়ই মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে।
পানি ছেটানোর পর তুলি চোখ খুললো।
.
মেঘ নীলার রুমে এসেই নীলাকে অনবরত ডেকে যাচ্ছে।
মেঘঃ এই নীলা ওঠ। ওঠ না? তোর বাবা তোমাকে পুলিশ দেবে বলছে। ওঠ না। আমি তোর পানি খাব। কোথায় রেখেছিস পানি বল৷ আমি এক্ষুনি খেয়ে নিচ্ছি।
মেঘ নীলার রুমে এখানে ওখানে পানির বোতল খুঁজতে থাকে,
মেঘঃ এই নীলা বল না কোথায় রেখেছিস বোতলটা আমি তো খুঁজে পাচ্ছি না৷
নীলার মাঃ এই ছেলে এই তুমি রুমের জিনিস পত্র এভাবে এলো মেলো করছো কেন!
মেঘঃ আমি বোতলটা খুঁজে পাচ্ছি না। নীলা বল না কোথায় রেখেছিস!
নীলার মাঃ আরে কিসের পানি!! কিসের বোতল!
.
কিছুক্ষণ পর নীলা চোখ খুললো। আর বালিশের নিচ থেকে সে বোতলটা বের করলো। মেঘ সেটা দেখার সাথেই কিছু না বলে নীলার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ঢক ঢক করে বোতলের সব পানি টুকু খেয়ে নেয়। সবাই চোখ বড় বড় করে সেদিকে চেয়ে আছে।
মেঘঃ আংকেল দেখুন আপনার মেয়ে এখন চোখ খুলেছে।
নীলাঃ তোমরা সবাই এখন যাও এখান থেকে।
.
সবাই একে একে চলে গেল। মেঘ বিছানা থেকে উঠতেই নীলা মেঘের হাত টেনে ধরে,তুই কোথায় যাচ্ছিস। তুই বস।
মেঘঃ কেন এরকম করেছিলি। তোর যদি কিছু হয়ে যেত।
নীলাঃ হলে তো তুই সব থেকে বেশি খুশি হতি।
মেঘঃ চুপ! এরকম কথা আর কখনো বলবি না৷
.
হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নীলা এগিয়ে এসে মেঘের ঠোঁটে চুমু দিয়ে ফেললো আর মেঘকে জড়িয়ে ধরে রইলো।
.
অহনার কে বিদায় দেয়া হয়েছে। বিদায়ের সময় অহনা প্রচন্ড রকমের হাসি হাসছিলো । তুলিরও ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তুলি পরীক্ষায় ফেল করায় তুলির মা রাগ করে তুলিকে নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। আকাশ, অহনা এবং রৌদ্র বেড়িয়ে পরলো প্রেম নগরের উদ্দেশ্য। গাড়িতে বসে অহনা এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আকাশঃ কি আশ্চর্য! এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেন?
অহনারঃ কি করবো,আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।
অহনা এবার মুখ চেপে আবারও হাসতে শুরু করলো।
আকাশঃ তোমাকে না বলেছি এভাবে পাগলের মতো যখন তখন হাসবে না! আর অবশ্যই ওই বাড়িতে গিয়ে এরকম করবে না তুমি।
.
হঠাৎ করে বিকট শব্দে গাড়ির টায়ার ফেটে গেল। আর চলন্ত গাড়িটা ব্রেক করে থেমে গেল। সবাই ঝাকুনি খেয়ে উঠলো।
আকাশঃ ওই দেখ তো কি হলো!
ড্রাইভার আর রৌদ্র নেমে দেখলো টায়ার ফেটে গেছে।
রৌদ্রঃ ভাইয়া টায়ার ফেটে গেছে। এটা চেইঞ্জ করতে হবে।
আকাশঃ ওট শিট! রাস্তা তো আরো বহুদুর। আর মেঘ কোথায় রে। সকাল থেকে ওর কোনো পাত্তাই পাচ্ছি না।
রৌদ্রঃ জানিনা ভাইয়া কোথায় গেছে। আমাকে বলে যায়নি।
ড্রাইভারঃ স্যার আমি সামনে এগিয়ে দেখছি কোনো গ্যারেজ আছে কিনা।
রৌদ্রঃ আমিও যাব।
আকাশঃ ঠিকাছে সাবধানে যাস।
.
রৌদ্র আর ড্রাইভার হাটতে হাটতে সামনে চলে গেল। রাত হয়ে এসেছে।
আকাশঃ এমন একটা জায়গায় গাড়িটা নষ্ট হলো কোনো জন মানবও নেই। আরেকদিকে আবার ঘন অন্ধকার।
অহনা এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আকাশঃ সমস্যা কি তোমার। এমন একটা পরিস্থিতিতেও তুমি হাসছো?
অহনাঃ তো হাসবো না?
আকাশঃ কেন তোমার ভয় করছে না?
অহনাঃ ভয়? কিসের ভয়। না তো!
.
কিছুক্ষণ পর রৌদ্র আর ড্রাইভার একটা খোলা পুরোনো জিপ নিয়ে ফিরলো।
ড্রাইভারঃ স্যার সামনে কোনো গ্যারেজ নেই। এটা করেই যেতে হবে।
খোলা জিপটা দেখে আকাশ ভ্র কুচকে বলে উঠলো, এটা আবার কোথা থেকে পেলে?
ড্রাইভারঃ একটা বাংলো বাড়ির ভদ্রলোক দিলো।
জিপের ভিতরে সামনের সিটে বসা রৌদ্র বলে ওঠে, ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে উঠে পর। আমাদের এটা করেই যেতে হবে তারপর সামনে গিয়ে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।
আকাশঃ আরে নাহ! আমি ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলছি।
রৌদ্রঃ ভাইয়া প্লিজ! ওই গাড়ি আসতে আসতে আমরা অনেক দূর অবদি চলে যাব।
রৌদ্রের জোরাজুরিতে আকাশ আর অহনা গাড়িতে গিয়ে উঠলো। পুরোনো জিপ প্রচন্ড শব্দ করে করে আর ঝাকুনি দিয়ে দিয়ে চলছে। ঝাকুনিতে মাথার নাট বল্টু সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।
.
এদিকে মেঘ নীলার রুমে ঘুমিয়ে পরেছে। সন্ধ্যার নাস্তার পর পানি খাবার সময় মেঘের পানিতে নীলা কিছুটা এলকোহল মিশিয়ে দিয়েছিলো। আর তারপর নীলার রুমে এসে গল্প করতে করতে মেঘের চোখ দুটো আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে আসে।
.
চলবে….
#প্রেমনগর
পর্বঃ৮
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
মেঘ ঘুমিয়ে যাবার পর পরই নীলা দড়ি দিয়ে মেঘের হাত পা বেডের সাথে বেঁধে ফেললো। তারপর রুমের ভিতর একা একাই হাসতে হাসতে শোফায় গিয়ে বসলো। নীলার মা রুমে ঢোকার সাথেই আঁতকে উঠলেন, একি ওকে এভাবে বেধেছিস কেন?
নীলাঃ ও হচ্ছে আসামি! তাই বেধেছি। তুমি এখন এখান থেকে যাওতো মামনি।
নীলার মাঃ আসামি তোর ঘরে রাখছিস কেন! অন্য ঘরে রেখে আয়! কাল সকালে পুলিশে দিলেই হবে।
নীলাঃ তুমি যাও তো মামনি!
.
নীলার মা রুম থেকে চলে গেলে নীলা আবারও হাসতে শুরু করে। বিছানায় চিৎ হয়ে শোয়া ঘুমন্ত মেঘের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিতে দিতে বলেছে , তুমি এবার ধরা খেয়ে গেছো মেঘ, আটকা পরে গেছো। সকাল বেলা চোখ খুলে যখন তাকাবে তখন এই নীলা ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না তুমি। কারণ এই পানিপড়ার পাওয়ার আগেরটার চেয়েও বেশি। চোখ খোলার সাথে তুমি অন্য এক দুনিয়া দেখবে! সেখানে শুধু নীলা আর নীলা! হিহিহি…..
.
পুরোনো জিপের ইঞ্জিনের শব্দে ড্রাইভাররের মাথা ঘুরছে। রৌদ্র কানে ইয়ার ফোন গুজে দিয়ে আছে। জিপটা ঝাকুনি দিয়ে চলায় সেই ইয়ার ফোনটাও বার বার কান থেকে পরে যাচ্ছে। জিপের ব্রেকটাও ঠিকমতো হচ্ছে না। একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক। এভাবে একেঁবেঁকে সাপের মতো চলছে। রিরক্তিতে আকাশও মুখটা এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছে। অতিরিক্ত ঝাকুনিতে অহনা একদম গভীর নিদ্রায় চলে গেছে।
আকাশ একবার অহনার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো, এর মধ্যেও মানুষ ঘুমায় ক্যামনে!
.
হঠাৎ জিপটা অতিরিক্ত পরিমাণে শব্দ করতে করতে বিকট শব্দ হয়ে থেমে গেলো।
রৌদ্রঃ ভাইয়া এটাতে করে বোধহয় আর যাওয়া যাবে না।
আকাশঃ নে আরও ওট! আমি গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছি। গাড়ি আসছে। নমো সবাই।
.
অহনাকে জিপ থেকে নামার জন্য কয়েকবার ডাকা হলেও অহনা শুনলো না। অহনা মরার মতো ঘুমাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আকাশ অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
রৌদ্র পিছনে ফিরে এই দৃশ্য দেখে বলে উঠলো, হোয়াট এ রোমান্টিক সিন!
আকাশ চোখ গরম করে দাঁত কড়মড় করে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই রৌদ্র আবারও হাটতে শুরু করলো। কিছুটা সামনে এগোতেই গাড়ি চলে এলো। অহনা এখনো ঘুমাচ্ছে। গাড়িতে বসে আকাশ অহনার মাথাটা আলতো করে নিজের কাধে রাখলো। মেয়েটা একদম ছোট বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে। আকাশ অহনার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে দেয়।
.
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নীলা আয়নায় নিজেকে দেখছে আর একা একাই আয়নার ভিতরে থাকা নিজের প্রতিচ্ছটাকে বলছে, কি! কি দেখছো! এখন মেঘ তোমার তাইনা! তুমি জিতে গেছো। আর কিছুক্ষণ পরেই তো মেঘ তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দেবে।
নীলা এবার লাজুক ভঙ্গিতে মুচকি হাসতে হাসতে দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেললো কিন্তু তারপরেক্ষনেই আবার হাতটা সরিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো, কি! লজ্জা পাচ্ছো কেন!
.
নীলা ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে আইলারনার দিয়ে সাজতে শুরু করে। সাজতে সাজতেই আয়নার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মারলো আর লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটটা কিস দেওয়ার স্টাইলের মতো করে রয়েছে।
তখনই মেঘ চোখ খুললো। হাত পা নড়াতেই টান টান অনুভব করতেই দেখলো তাকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। মেঘের মাথা ঘুরছে। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। মাতালের মতো লাগছে । পাশে তাকাতেই নীলাকে দেখে বলে উঠলো, নীলা!
মেঘের কথায় নীলা চমকে উঠে এদিকে ফিরলো তারপর এগিয়ে আসতে আসতে বললো, ও মাই জান তুমি উঠে গেছো!
মেঘ রুমের চারিদিক তাকাতে তাকাতে বলে ওঠে, আমি কোথায়? আমার কি হয়েছে, আমার হাত পা বাঁধা কেন?
.
নীলা মেঘের মাথার কাছে এসে বসলো। মেঘের চুলে আলতো ভাবে হাত রাখতে রাখতে বললো, তুমি তো আমার ঘরেই আছো জান।
মেঘ শুয়ে থেকেই চোখ উপরে তুলে নীলার দিকে তাকায়। মেঘের তাকিয়ে থাকা দেখে নীলার বুকের ভিতরটা দুরুদুরু করছে।
মেঘঃ কিন্তু আমাকে এভাবে বেধে রেখেছিস কেন?
নীলাঃ আমি এখনি বাধন খুলে দেব তার আগে তো কিছু বল! আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না! আমার এখনি জানতে হবে।
মেঘ এবার একটু রেগে যায়, মানে? কি নাটক শুরু করেছিস! খুলে দে এগুলো!!
নীলাঃ তুই আমায় ধমক দিয়ে কথা বলছিস!
মেঘঃ তো?
নীলাঃ এমন তো হবার কথা ছিল না।
মেঘঃ তাহলে কেমন হবার কথা ছিল। তাড়াতাড়ি এগুলো খুলে দে বলছি!
নীলা এবার মেঘের মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে৷ তারপর ভ্রু কুচকে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, তুই আমায় ভালোবাসিস না??
মেঘও ভ্রু কুচকে রেগে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘঃ না বাসি না!
নীলা এবার চট করে দাঁড়িয়ে গেলো, ভালো বাসিস না মানে!
মেঘঃ ভালোবাসি না মানে বাসি না। না বাসলে জোর করে বাসাবি নাকি। এখন খুলে দে এগুলো! আমার অসহ্য লাগছে।
.
নীলা মাথায় এবার বাজ পরতে শুরু করে। পানি পড়া খাওয়ার পরেও কেন মেঘ এরকম কথা বলছে। এতোক্ষণে তো মেঘের নীলার প্রেমে পরে হাবুডুবু খাওয়ার কথা। কবিরাজ তো এমনটাই বলেছিলো। পানি পড়া খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই নাকি এটি কাজ করতে শুরু করবে৷ নীলা আবার মেঘের দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে মেঘের পাশে বসতে বসতে মেঘের গায়ে হাত দিতে দিতে বললো, তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না। এখন সত্যিটা বল, নীলা আই লাভ উ!
মেঘ রেগে বললো, নাটক তো তুই করছিস! তাও আমার এই রাতের বেলা। খুলে দে এগুলো আমি বাড়ি যাব।
নীলা আবারও ভ্রু কুচকে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, মেঘ তুই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস না?
মেঘঃ হাবুডুবু তো দূরের কথা আমার রীতিমত অসহ্য লাগছে। খুলে দে এগুলো।
.
রাগে নীলা আবারও দাঁড়িয়ে গিয়ে টেবিলে থাকা কাচের গ্লাসটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে দিলো। তাহলে কি কবিরাজের দেওয়া পানি পড়া কোনো কাজই করে নি? মেঘ তো পুরো পানি টুকুই খেয়ে নিয়েছিলো। তারপরও কেন মেঘের কোনো পরিবর্তন হলো না? কপাল ভাজ করে নীলা ভাবতে ভাবতে শোফায় বসে পরলো।
.
গ্লাস ভাঙার শব্দ শুনেই নীলাদের বাসার একজন একজন সিকুরিটি গার্ড দৌড়ে এই রুমের ভিতর চলে এসেছে। তাকে দেখার সাথেই যেন মেঘ কলিজায় পানি পেলো, ভাই আমার বাধন গুলো খুলে দেন। আমাকে বাঁচান!
সিকুরিটি গার্ডটা মেঘের বাধন খুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই ভাঙা কাঁচের টুকরোতে পা দিলো। অতিরিক্ত কৌতুহলবসত মেঘকে দেখতে ব্যস্ত থাকার কারণে সে নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে নি৷ আর নীলার রুমে আসতে গেলে তাদের সবার জুতা খুলে খালি পায়ে আসতে হয়। কাঁচের টুকরোয় পা দেওয়ায় সাথে সাথে পা কেটে রক্ত বেড়িয়ে গেল।
তখনই নীলা বলে ওঠে, খবরদার ওকে কেউ খুলে দেবে না! এখন যাও এখান থেকে।
সিকুরিটি গার্ডটা পা কেটে আহত হয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে নীলার রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
.
ওর বেড়িয়ে যাওয়া দেখে মেঘ হতাশ হয়ে যায়। নীলা রাগ চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মেঘ রুমে থাকা দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। সময় রাত ১ টা বেজে ৫ মিনিট। মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
মেঘঃ আমায় একটু পানি দিবি?
নীলা রেগে চেচিয়ে বললো, তোকে এক ফোঁটাও পানি দেব না আমি!
মেঘঃ তাহলে আমাকে খুলে দে। আমি বাড়ি যাব।
রাগে নীলা এগিয়ে এসে মেঘের শার্টের বোতাম খুলে দিচ্ছে। জোরে টানাটানি করতে করতে শার্ট কিছুটা ছিড়েও গেল।
মেঘঃ আরে আরে এ্যাই কি করছিস কি! ছাড়!
নীলাঃ আমার যা ইচ্ছে তাই করবো! খুলে দিতে বলেছিস, নে খুলে দিয়েছি।
.
নীলা আবার শোফায় গিয়ে বসলো আর তারপর মেঘকে দেখিয়ে দেখিয়ে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেলো। তবুও মেঘকে এক ফোঁটা পানিও দিলো না৷ ঘুমে মেঘের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। মেঘ চোখ বুঝলো।
.
আকাশ,অহনা ও রৌদ্র মাঝরাতে প্রেমনগরের চৌধুরী মহলে ফিরেছে। ওদের ফেরার চিন্তায় বাড়ির কেউই এখনো ঘুমাতে পারে নি। সবাই ড্রইংরুমে বসে গল্প করতে করতে অপেক্ষা করছিলো। আকাশ অহনাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। অহনা এখনো ঘুমাচ্ছে। অহনাকে আকাশের কোলে দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র তার ঘরে চলে যায়।
মনিরা বেগমঃ তোরা এতো দেড়ি করলি কেন? আর বৌমার কি হয়েছে!
আকাশ কিছু না বলে অহনাকে নিয়ে ঘরে চলে গেল। সবাই ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে থেকে মনে কৌতুহল নিয়েই যে যার ঘরে চলে যায়৷
.
অহনাকে বিছানায় শোয়ানোর সাথেই অহনা
আকাশকে জড়িয়ে ধরলো। ঝাকুনিতে আকাশের শরীরও ক্লান্ত হয়ে গেছে। আকাশ অহনার গায়ের ওপর পরে থাকা অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করলো।
.
সময় রাত সাড়ে তিনটা। ঘুমে নীলার চোখও বন্ধ হয়ে এসেছিলো। হঠাৎ বাথরুম পেয়ে গেল। রুমের লাইটটা জ্বালানোই রয়েছে। নীলা শোফা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। তখন মেঘকে দেখিয়ে দেখিয়ে বেশি পানি খাওয়ার কারণেই বাথরুমটা বেশি পরিমাণে পেয়ে গেছে। বাথরুম সেড়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে টাওয়েলটা হাতে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আর বিছানার দিকে তাকাতেই চেচিয়ে ওঠে, মেঘ!!
.
বিছানার ওপর দড়ি গুলো পরে রয়েছে। ঘরের জানালা খোলা। জানালার পাল্লা দুটো বাতাসে একটার সাথে আরেকটা বারি খাচ্ছে। মেঘ পালিয়েছে।
রাগে নীলা ওয়াশরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এসে রুমের ভিতর পানি ঢালতে থাকে।
নীলাঃ নে নে। নে পানি!
বাহিরেরও এই সময় বৃষ্টির পানিতে গাছপালা, রাস্তাঘাট ভিজে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কোথাও জোরে জোরে বজ্রপাতও হচ্ছে।
.
চলবে….