প্রেমনগর
পর্বঃ৯ +১০
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
সকাল বেলা নীলার মা নীলার রুমে ঢুকতেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন, নীলা!!
নীলা মেঝেতে পরে আছে। মেঝের মাঝ খান থেকে শুরু করে কোনা বরাবর শুধু পানি আর পানি। রুমে থাকা জিনিস পত্রের ওপরেও পানি ছেটানো হয়েছে। নরম তুলতুলে বিছানাও বাদ যায় নি। নীলাকে মেঝেতে পরে থাকতে দেখে তিনি বাড়ির অনান্য সদস্যদের ডেকে আনলেন। তারপর নীলাকে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে নীলার পরনে জামা কাপড় গুলো পাল্টে দিয়ে বিছানায় শোয়ানো হয়। সারা রাত মেঝেতে পরে থাকায় নীলার জামা কাপড় ভিজে চুপচাপে হয়ে গিয়েছিলো। নীলার জ্ঞান নেই। ডাক্তার নিয়ে এসে চেপ আপ করানো হয়। ডাক্তার বললেন, মানসিক চাপেই সে চেতনা হারিয়েছে।
রুমে উপস্থিত নীলার বাবা নীলার মার দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব হলো কিভাবে?
নীলার মাঃ আসামি পালিয়েছে। তাকে বাড়ির কোথাও খুঁজে পেলাম না। নিশ্চয়ই সে পালানোর কোনো মতলব এটেছিল। আর তাই নীলার এই অবস্থা করে পালানোর পথ বের করে নিয়েছে। নীলা ওকে বেধে রেখেছিলো। সকালে পুলিশে দিব বলেছিলাম। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে গেল।
নীলার বাবাঃ পুলিশে তো ওকে আমি দিবই। আমার মেয়ের এই অবস্থা করে ও পালিয়ে পার পাবে ভেবেছো! আমি এক্ষুনি থানায় ফোন করে ছেলেটাকে ধরার ব্যবস্থা করছি।
.
এদিকে তুলির বাবা তুলির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। গ্রামেরই এক বড় ব্যবসায়ীর সাথে তুলির বিয়ে। কাল তুলি বাড়ি ফেরার পর সন্ধ্যায় বিয়ের সব কিছু পাকা করা হয়। এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করার কারণেই বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবার কাছে যে মুখ দেখানো যাচ্ছে না। তাছাড়া এতো বড় ব্যবসায়ী পাত্র হাত ছাড়া করা যায় না। মেয়ে বড় হয়েছে। কোন দিন কি করে ফেলে। পাছে সমাজে বাস করাই দায় হয়ে যাবে। তুলি মোটামুটি সুন্দরী হওয়ায় ব্যবসায়ী রেয়াকত আলীর আগে থেকেই তুলির দিকে নজর ছিলো। তাই বিয়ের কথা বলার সাথে সাথেই তার টনক নড়ে ওঠে এবং তুলিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। তার যেন আর দেড়ি সইছে না সে আজই তুলিকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চায়। তুলি কলেজ যাওয়া আসার পথে সে ড্যাবড্যাবিয়ে তুলির দিকে চেয়ে থাকতো। তুলি উনাকে একদমই পছন্দ করে না। বসে থাকতে থাকতে রেয়াকত আলীর ভুড়ি খুবই বেড়ে গিয়েছে। দেখতেও খানিকটা মোটা এবং লম্বা। বলতে গেলে ছোট খাট একটা হাতি। কিন্তু তুলির মতো কচি কচি মেয়েদের দিকেই তার সময় নজর। বিশেষ করে তুলিকে তার খুবই মনে ধরেছে। ভেবেছিলো পরীক্ষার পর পরই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে কিন্তু তুলির মা বাবা হয়তো এতো তাড়াতাড়ি রাজি হবে না। কিন্তু রেজাল্ট দেওয়ার সাথেই সাথেই যে তারা তুলির বিয়েটা দিতে রাজি হবে এটা কল্পনাতেও ভাবে নি সে। এতো মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেল মনে হয়।
.
সকাল সকাল উঠেই লেয়াকত আলী তার লোকজনদের বাড়ি সাজানোর দায়িত্ব দিয়েছে। একটু পর গায়ে হলুদ শুরু হবে।
রেয়াকত আলীর সাথে বিয়ের কথা শুনে বিগড়ে যায় তুলি। তবুও তার বাবা মা কোনো মতেই ভালো পাত্র আর হাতছাড়া করতে চায় না। একরকম জোর করেই রেয়াকত আলীর সাথে তুলির বিয়েটা হচ্ছে।
.
আকাশ হাসপাতালে গেছে রুগী দেখতে। বেলা বারতেই অহনা রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকলো। আজ দুপুর বেলা আকাশের মায়ের বাড়ির কিছু আত্নীয়দের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্যই বিভিন্ন পদের রান্না করা হচ্ছে। রান্না ঘরে আছেন আকাশের চাচী এবং দুইজন কাজের মহিলা।
রান্নাঘরে এসেই অহনা মিষ্টি করে হেসে বলছে, তোমরা কি করছো! রান্না করছো? কি রান্না করছো?
বলেই এটা ওটায় হাত দিতে শুরু করে। বাটি, কড়াই সব কিছুতে হাত দিয়ে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখছে।
অহনাঃ এটা কি? আর ওটা!
আকাশের চাচীঃ আহা হাত পুরে যাবে তো এগুলো তে হাত দিও না। খুব গরম।
অহনাঃ তাই?
আকাশের চাচীঃ হ্যাঁ। তোমার শাশুড়ির বাড়ি থেকে আজকে কিছু লোকজন আসছে। অনেক কিছু রান্না হচ্ছে।
অহনা আকাশের চাচীর দিকে তাকিয়ে আবারও বললো, ওমা তাই? আমি রান্না করবো!
আকাশের চাচীঃ তোমাকে রান্না করতে হবে না। তুমি ঘরে যাও।
.
কাজের মহিলা তখনই চুলা থেকে গরম কিছু নামাচ্ছে,আফা একটু সরেন। ছ্যাক লাগবো!
অহনা এদিকে তাকিয়ে তারপর একটু সরে যায়।
অহনাঃ আমিও রান্না করবো। কিন্তু কি রান্না করবো। আমি তো রান্নাই জানিনা।
আকাশের চাচীঃ তোমাকে কোনো কিছু রান্না করতে হবে না। তুমি ঘরে যাও৷ আহা ওটাতে হাত দিও না হাত পুরে যাবে!
অহনাঃ না আমি রান্না করবো। আমি এই বাড়ির বউনা?
আরেকজন কাজের মহিলা সবজি কাটছিলো। অহনা এবার সেদিকে এগিয়ে যায়।
আকাশের চাচীঃ আহা এগুলো তে হাত দিও না। তুমি কাটতে পারবে না,হাত কেটে যাবে।
অহনা কাজের মহিলাকে বললো, এই তুমি সরো তো ওদিকে যাও!
কাজের মহিলা চোখ উল্টিয়ে উল্টিয়ে অহনার সবজি কাটা দেখছে।
আকাশের চাচীঃ নাহ আমি আর পারছিনা! এই মেয়ে কোনো কথাই শোনা দেখি৷
.
আকাশের চাচী দৌড়ে তাড়াতাড়ি আকাশের মা মনিরা বেগমের ঘরে গেলেন।
মনিরা বেগমঃ কি হলো আমি না যেতেই রান্না শেষ?
আকাশের চাচীঃ না ভাবি। রান্না শেষ মানে ওদিকে তো রান্নার তেরোটা বেজে যাচ্ছে। বৌমা রান্না ঘরে ঢুকছে। যে টুকু রান্না হয়েছিলো সেটুকুও বোধহয় শেষ!
মনিরা বেগমঃ কিহ! ওকে কে বলেছে রান্না ঘরে ঢুকতে!
আকাশের চাচীঃ তোমার বৌমা কোনো বারন শুনছে না ভাবী! আকাশ এটা কাকে বিয়ে করে এনেছে আল্লাহ! রান্নার এদিক ওদিক হলে আমি আর রান্নার কিচ্ছু জানিনা ভাবি। তোমার বৌমা তুমি গিয়ে সামলাও৷
.
সাথে সাথে মনিরা বেগম আকাশকে ফোন করলেন, কোথায় তুই?
আকাশঃ হসপিটালে! রোগী দেখছি।
মনিরা বেগমঃ তোর ঘরেই রোগী থাকতে তুই বাহিরে গিয়ে রোগী দেখছিস!
আকাশঃ ডাক্তারদের কাজই তো হচ্ছে রোগী দেখা মা। কেন মা কি হয়েছে?
মনিরা বেগমঃ তোর বউয়ের চিকিৎসা কর ভালো করে। ও রান্না ঘরে ঢুকেছে। গিয়ে রান্নার তেরোটা বাজাচ্ছে।
আকাশঃ হোয়াট! ওকে তোমরা ঢুকতে দিলে কেন? ওকে আটকাও! ও হাত কেটে ফেলবে! ও হাত পুড়িয়ে ফেলবে!
মনিরা বেগমঃ কিচ্ছু জানিনা আমি। তোর বউ তুই সামলা।
আকাশঃ আমি এক্ষুনি বাড়ি আসছি। মা তোমার পায়ে পরি, ততক্ষণে ওকে একটু আটকাও৷
.
অহনার চিন্তায় আর ভয়ে আকাশ অস্থির হয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত রোগীদের দেখা বাদ দিয়েই কাউকে কিছু না বলে আকাশ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।
.
থানা থেকে নীলার বাবার কাছে ফোন এসেছে, ওসি সাহেব বলছেন, ছেলেটার বাড়ি প্রেমনগর। আফতাব চৌধুরীর ছেলে মেঘ চৌধুরী। আমরা খুব শিঘ্রই সেখানে গিয়ে খোঁজ করছি৷
সারারাত পানিতে ভিজে নীলার জ্বর এসে গেছে। নীলার মাথায় নীলার মা পট্টি দিয়ে দিচ্ছেন। জ্বরের ঘোরে নীলা বির বির করে বলছে, মেঘ! তোকে আমি ছাড়বো না! ছাড়বো না…..
নীলার বাবা ফোন কানে নিয়ে তখনই নীলার মুখের দিকে তাকালেন আর নীলার বির বির করে বলা কথাটা শুনতে পেলেন আর তারপরই লাইনে থাকা ওসি সাহেবকে বললেন, ছাড়বেন না! একদমই ছাড়বেন না….ওসি সাহেব!
ওসিঃ এই আবু জাফরের হাত থেকে কেউ আজ পর্যন্ত রেহাই পায় নি৷ আমি প্রেমনগরে তল্লাশি চালাচ্ছি। দরকার হলে পুরো গোষ্ঠী শুদ্ধ জেরা করে হাজতে ভরবো।
.
রৌদ্র ক্যাম্পাসে আসার সাথেই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেয়েরা ওকে ঘিরে ধরলো। কয়েকজন এসে রৌদ্রের সাথে হাগও করলো। তারপর ওদের মধ্য থেকে একজন মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো, দুইদিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে?? তোমাকে খুব মিস করেছি!
রৌদ্রও হেসে হেসে জবাব দেয়, Mee too sweetie!
মেয়ে গুলো সবাই ছোট ছোট ড্রেস পরে আছে। হাটু, কাধ, পিঠসহ শরীরের অনেক অংশই খোলা দেখা যাচ্ছে। আর বুকে ওড়না থাকার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। রৌদ্র হেসে হেসে ওদের প্রত্যেকের কথার জবাব দিচ্ছে। তারপর হাটতে হাটতে ওদের নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে চলে গেল।
.
বিয়ে করার জন্য রেয়াকত আলী তুলিদের বাড়ি এসে উপস্থিত হয়। তার পরনে রয়েছে সাদা পাঞ্জাবি। হাটার সময় তার ভুড়িটা আগে আগে যাচ্ছে। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি রেয়াকত আলীর বিয়ের তাড়ার জন্যই তুলির বাড়ির আত্নীয়সজনদের বলা হয়ে ওঠে নি। তবে পরে আবার সব আত্মীয় সজনদের নিয়ে বড় করে একটা অনুষ্ঠান করা হবে। রেয়াকত আলী বিয়েতে তার ব্যবসায়ীর কাজে লিপ্ত থাকা দলবল গুলোকেও সঙ্গে করে এনেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তুলি নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে। তুলিকে জোর করেই বেনারসি শাড়ী পরিয়ে বউ সাজানো হয়। ওই মোটা ভুড়ি ওয়ালা লোকটার সাথে আর কয়েক মিনিট পরেই বিয়ে হতে যাচ্ছে এটা ভেবেই তুলির যেন জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। কাজী সাহেব এসে গেছেন। বাড়ির সকলে এখন বর পক্ষের খেদমত করতে ব্যস্ত। এই ফাঁকে তুলি তার ঘরের পিছনের দরজাটা দিয়ে বেড়িয়ে এলো। আর তারপরই ছুটতে থাকে। কোথায় যাচ্ছে জানে না। জঙ্গল মেঠো পথ সব কিছু পার করে শুধু ছুটছে আর ছুটছে।
.
চলবে….
#প্রেমনগর
পর্বঃ১০
লেখাঃ নীলাদ্রিকা নীলা
.
আকাশ বাড়ি ফিরেই দ্রুত রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। এখানে দুইজন কাজের মহিলা কাজ করছে। অহনা তো সেখানে নেই। আকাশ রুমে চলে আসে। রুমে আসতেই বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ পাওয়া গেল।
আকাশ বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, অহনা? জান তুমি কি ভিতরে?
অহনা ভিতর থেকে আওয়াজ দেয়, হ্যাঁ গোসল করছি। তুমি কখন এলে?
আকাশঃ এইতো কিছুক্ষণ হলো। জান তুমি ঠিক আছো তো?
অহনা বাথরুমের দরজাটা একটু খুলে মাথা বের করে বললো, কেন! আমার আবার কি হবে?ঠিকই তো আছি।
মাথা বের করায় অহনার ভেজা চুল গুলো থেকে টপ টপ করে পানি পরতে দেখা যাচ্ছে। অহনাকে দেখার পর আকাশ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অহনা বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আকাশ গলা থেকে টাইটা খুলতে খুলতে বিছানায় বসলো।
.
১ ঘন্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে অহনা এখনো বাথরুম থেকে বের হয়নি। শুধু পানি পরার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে আকাশ জামা কাপড় চেইঞ্জ করে হালকা নাস্তাও সেরে নিয়েছে।
আকাশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো, কি করছে এতোক্ষন!এখনো বের হয় না? আরে বাবা আমিও তো গোসল করবো। বিকালে আবার চেম্বারে যেতে হবে৷ আর কতোক্ষন বসে থাকবো।
আকাশঃ অহনা! আর কতক্ষণ লাগবে তোমার?
অহনাঃ এইতো আর একটু।
আকাশঃ সেই কখন থেকে বলছো শুধু আর একটু আর একটু।
বাথরুমের ভিতর থেকে শুধু পানি পরার আওয়াজ আসছে। আকাশ বাথরুমের দরজার সামনে এগিয়ে গেল। আকাশ মনে মনে ভাবছে এতো কি করছে ভিতরে!
আকাশ বাথরুমের দরজায় টোকা দিলো, জান তুমি ঠিক আছো তো?
.
অহনা বাথরুমের দরজাটা খুলে আবারও মাথাটা বের করলো,কি হয়েছে! আমার আরও সময় লাগবে তো।
আকাশ দরজাটায় হাত দিয়ে আরেকটু ঢাক্কা দিতেই অহনার টাওয়েল পেচানো ভেজা শরীর দেখতে পেল। অহনাকে দেখতে খুবই সেক্সি লাগছে। ভেজা চুপসানো চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে।
অহনাঃ কি করছো এতো! দেখি।
অহনা দরজা চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আকাশ দরজাটা ধরে আটকে রেখেছে।
অহনাঃ কি হলো সরো।
আকাশ মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো, উহুম।
সে দরজাটা আরও একটু খুলে এবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।
অহনাঃ আরে আরে কি করছো, সরো। আমি গোসল করছি তো৷
আকাশঃ আমিও গোসল করবো।
অহনাঃ আহা আমি একদম ঠিক আছি। তোমার এখন আসতে হবে না। তুমি গিয়ে বসো৷ আমি ঠিক আছি।
.
আকাশ এবার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলছে, দেখি কেমন ঠিক আছো। নিজের সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা সেটাই কি ভিতরে বসে বসে দেখছো নাকি এতোক্ষন?
অহনা চোখ গরম করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশঃ দেখি কেমন ঠিক আছো তুমি।
বলেই আকাশ জোর করেই ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। শাওয়ারের পানি গায়ে পরে আকাশ ভিজে যাচ্ছে। অহনা চিৎকার দিতেই আকাশ অহনার মুখ চেপে ধরলো।
অহনাঃ আরে..আ..আ… উম..
.
এদিকে বিয়ে না করে তুলি পালিয়ে গেছে বলে রেয়াকত আলীর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। রেয়াকত আলী তুলিদের বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেছিলো। বহু কষ্টে তাকে সবাই মিলে আটকায়। তারপর দলবল নিয়ে বেড়িয়ে পরলো তুলিকে খোঁজার উদ্দেশ্য। তুলিকে ধরে নিয়ে এসে আবার সে বিয়ের আসরে বসবে। তুলির চিন্তায় তুলির মা অচেতন হয়ে গেছে। তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। আর তুলি বাবা কপাল চাপড়াচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিতে গিয়ে শেষে মেয়েটাকেই না হারিয়ে ফেলে। তুলির কোনো খোঁজ নেই। কোথায় গেছে কেউ জানে না। গ্রামের পথ ঘাটে লোকজনদের জিগাসা করা হলেও তারা জানায়,তারা তুলিকে যেতে দেখেনি৷
.
ওসি সাহেব প্রেমনগরের উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলেও মাঝ রাস্তায় পথ ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গেছেন। এরিমধ্য নীলার জ্ঞান ফিরলো আর চোখ খুলে বাবাকে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে শুনলো।
নীলার বাবাঃ ছাড়বেন না। ছেলেটাকে একদম ছাড়বেন না!
ওসিঃ আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।
কিন্তু ওসি সাহেব যে এদিকে রাস্তা ভুল করে অন্য দিকে চলে গেছেল সেই ব্যপারটা এড়িয়ে গেলেন। তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন তিনি নিজেও তা জানেন না৷
নীলাঃ বাবা! তুমি কাকে ধরার কথা বলছো?
নীলার বাবা এদিকে ফিরে নীলাকে দেখে বলে উঠলেন, ও মামনি তুমি উঠে গেছো, এখন কেমন লাগছে?
নীলাঃ ভালো। কিন্তু তুমি কাকে ….
নীলার কথা শেষ না হতেই নীলার বাবা হাসতে হাসতে বললেন, তুমি কোনো চিন্তা করো না মামনি,আসামির খোঁজ পাওয়া গেছে। ছেলেটাকে আজই হাজতে ভরা হবে। কাল রাতে তোর এই অবস্থা করে পালিয়েছে। আর আমি ওকে ছেড়ে দেব?
নীলাঃ কার কথা বলছো। মেঘ!..ওকে তোমরা ধরতে যাবে কেন? ও তো কিছু করেনি। পানি আমি নিজেই ঢেলেছিলাম। ওকে নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাতে হবে না। ওর বিষয় আমি দেখবো। ওর গায়ে একটা টোকাও যেন না লাগে বলে দিলাম।
.
নীলার কথা শুনে নীলার বাবা ওসি সাহেবকে আবারও ফোন করলেন, কিন্তু এবার ফোনে ওসি সাহেবের কোনো কথাই আর বোঝা যাচ্ছে না এবং ওসি সাহেবও এখানকার কোনো কথা শুনতে পাচ্ছেন না। কারণ উনি এখন যেখানে আছেন সেখানে নেটওয়ার্ক নেই। উনি একচুয়ালি কোথায় আছেন উনি নিজেও জানেন না। আশে পাশে শুধু জঙ্গল৷
.
নীলাঃ ছাড়বো না আমি ওই কবিরাজকে! ভন্ড! আমার অনেক টাকা খেয়েছে। আর শেষে কিনা পানি পড়ায় কোনো কাজই হলো না? আমি শ্যামপুরে গিয়ে ওই ভন্ড কবিরাজের আস্তানাটাই ভেঙে দেব!
.
সন্ধ্যার পর ছাদের এক কোনায় দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অহনা। আকাশে হাজারো তারার মেলা৷ রৌদ্র হাতে গিটার নিয়ে ছাদে উঠে এসেছে। অহনাকে এখানে চুপচাপ একা বসে থাকতে দেখে বলে উঠলো, ভাবীর কি মন খারাপ? না মানে তোমাকে তো সব সময় হাসতে দেখি। অথচ এখন দেখছি শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে আছো।
অহনা রৌদ্রের দিকে তাকালো আর তারপর বললো, আমার বোন তুলি নিখোঁজ। সারাদিন ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি৷ জোর করে বিয়ে দেওয়ায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে ও। তারপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।
অহনার কথা শুনে রৌদ্র ভ্রু কুচকে জবাব দেয়, কিহ! ওই মেয়ে? ওই অতটুকু মেয়ের আবার বিয়ে! ওকে দেখলে তো মনে হয় কিছুই বোঝেনা।
.
অহনা দোলনায় হেলান দিলো। তারপর বললো, আমার বোনটা খুব সহজ সরল। আমার নিজের কোনো বোন নেই তাই ওকেই আমি নিজের বোন মনে করতাম।
রৌদ্রঃ ঘটনা কখন ঘটেছে?
অহনাঃ জানিনা। আমি একটু আগেই ফোনে খবরটা পেলাম। তারপর থেকেই মনটা ভীষণ খারাপ। মেয়েটা কোনো রাস্তা ঘাটই চেনে না। কোথায় আছে। কি করছে। দেশে তো খারাপ লোকের অভাব নেই। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। ওর কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছে না ।
.
তুলির জন্য রৌদ্রের এখন কিছুটা খারাপ লাগছে। আর সেদিন মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহারও করে ফেলেছিলো।
রৌদ্রঃ আমি দেখছি কি করা যায়!
অহনাঃ তু..তুমি আবার কি করবে?
রৌদ্রঃ দেখি ওর কোনো খোঁজ বের করতে পারি কিনা। আমার নেটওয়ার্ক তো সব জায়গা জুড়ে।
.
তুলিকে খুঁজে না পেয়ে রেয়াকত আলীর মাথা গরম হয়ে গেছে। এমন হয়রানি করানোর জন্য তুলির কপালে দুঃখ আছে। রেয়াকর আলীর দলবল বন জঙ্গল বাস ট্রেন সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কাছেও খবর দেওয়া হয়েছে। কোনো ভাবেই তুলির কোথাও কোনো চিহ্ন মিলছে যাচ্ছে না।
.
রৌদ্র সোসিয়াল মিডিয়াতে তুলির একটা ছবি দিয়ে নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে দিয়েছে। আকাশের বিয়ের ছবিতে তুলির ছবিও ছিলো। সেখান থেকেই এই ছবি নিয়েছে রৌদ্র। অনেকে নিউজটা শেয়ারও করছে৷ ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে গেছে।
.
রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রৌদ্রের ফোনে একটা কল আসে । রাফি ফোন দিয়েছে৷
রৌদ্রঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।
রাফি হাফাতে হাফাতে বলছে, দোস্ত তুই একটা মেয়ের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে ওই মেয়ের ছবিসহ একটা পোস্ট দিয়েছিস তাইনা।
রৌদ্রঃ হ্যাঁ….হ্যাঁ বল…
রাফিঃ এক ভাইয়ের কাছে এসেছিলাম ওখান থেকে মামার বাসায় যাচ্ছি। খাবার কিনতে বাস থেকে নামতেই এখানে মেয়েটিকে বোধহয় আমি দেখলাম। বাসে থাকার সময় তোর ওই পোস্টটা দেখেছিলাম। মেয়েটিকে দেখে সন্দেহ হলে তোর পোস্টের ছবিটা দেখে আবার মেলালাম।
রৌদ্রঃ কিহ!! তুই এখন কোথায় আছিস বল আমি এক্ষুনি আসছি৷
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা বাস স্টপে কিছু লোকজনের কাছে তুলির মতো কাউকে থাকার কথা শুনেছে। কিছুক্ষণ আগেই নাকি তুলি এই পথ দিয়েই গেছে। এই খবর শুনে রেয়াকত আলীর মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। আর এদিকে বাস স্টপের আশেপাশে জঙ্গল থেকে শুরু করে সব দোকানপাট লন্ডভন্ড করে রেয়াকত আলীর লোকজন খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে৷ আর রেয়াকত আলী তার বাকি দলবল নিয়ে এদিকে আসার জন্যই গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেগে ছুটে আসছে৷ তুলিকে তার আজই পেতে হবে৷
.
রাফির কথা শুনে রৌদ্রও বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। এখান থেকে খানিকটা দূরেই জায়গাটা। যেখানকার কথা রাফি বলেছিলো। রৌদ্র ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে। জ্যামের রোড না দিয়ে রৌদ্র এবার অন্য রোডে মোড় নিলো। শীতকাল পরতে শুরু করেছে ৷ আশেপাশে কুয়াশা এবং অন্ধকার।
.
চলবে….
.