প্রেমনগর পর্বঃ১৫+১৬

0
2238

প্রেমনগর
পর্বঃ১৫+১৬
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
নার্সটা আকাশ এবং অহনাকে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত অবস্থায় দেখেই দৌড়ে এসে হাফাচ্ছে। নার্স কোনো ভাবেই নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না। শুধু বড় বড় দম ছাড়ছে। নার্সের বয়স অল্প এবং অবিবাহিত। চোখটা বন্ধ করে সে কল্পনায় তার স্বামীকে ভাবছে। কিন্তু আর কত কল্পনা এবার তো বাস্তবে কাউকে চাই। নার্স করিডোরের এক কোনায় ওয়ালটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর হাফাচ্ছে।
.
রাফি তুলিকে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলো। করিডোরের মোড়ে এসে দাঁড়াতেই নার্সকে ওয়ালের দিকে হেলে ঝুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফি বলে ওঠে, আপনি এখানে এভাবে রয়েছেন কেন, আপনার কি শরীর খারাপ!
রাফির কথা শুনে নার্সটা এদিকে ঘার ঘোরায়। তার চোখ মুখ একেবারে লাল হয়ে রয়েছে। সে কিছু না বলেই আস্তে আস্তে হেটে চলে গেল।
.
রাফি আর তুলি রৌদ্রের কেবিনে এসে দেখলো রৌদ্র ঘুমাচ্ছে। তুলি রৌদ্রের বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসলো।
রাফিঃ তুমি কি এখানেই থাকবে?
তুলিঃ আপনে এহন যান। মেলা কষ্ট করছেন৷
রাফি হেসে বললো, না না কষ্ট কিসের।
তারপর রাফি এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে থেকে খুব আবেগ নিয়ে বললো, তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না যে!
.
তখনই রৌদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। রৌদ্র চোখ মেলে তাকায় । তুলি রাফিকে কিছু বলতে যাবে তখনই রৌদ্র আস্তে করে বলে ওঠে, তুলি!
তুলি এদিকে ফিরলো আর অস্থির হয়ে বলছে, আপনের এহন কেমন লাগতেছে?
রৌদ্রঃ তুমি বাসায় যাও নি?
তুলিঃ আমি আপনারে রাইখা কেমনে যাই কন!
রৌদ্রঃ আমি ভালো হয়ে যাবো এতো চিন্তা করো না।
রাফিঃ আমি তো ওকে বাসাতেই নিয়ে যাচ্ছিলাম। মাঝপথে গিয়ে হঠাৎ বললো, ও এখানেই থাকবে। তাই আবার নিয়ে আসলাম।
রৌদ্রঃ তুইও বাড়ি যাস নি!
রাফিঃ এভাবে রেখে কিভাবে যাই বল।
রৌদ্রঃ যা বাড়ি গিয়ে এবার বিশ্রাম কর। আমাকে নিয়ে এতো অস্থির হস না।
.
বাহিরে প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। অন্ধকার কেবিনে আকাশ আর অহনা দুইজন এক সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর নার্সটা তখনকার দেখা দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সে। ওখান থেকে আস্তে আস্তে হেটে সামনের দিকে এগিয়ে আসতেই বেখেয়ালবসত হাসপাতালের ম্যানেজারের সাথে ধাক্কা খেল।
.
ম্যানেজারের বয়স ত্রিশের কোঠায়। বিয়ে করেছে তিন বছর হলো। কিন্তু এখনো ছেলেপুলে হয়নি। ম্যানেজারের সাথে ঢাক্কা খেয়ে নার্সের শরীর আরও খারাপ হতে থাকে। ম্যানেজার ইবরাহীম তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নার্সের বুক ধুকপুক করছে আর চোখ ঘোলা হয়ে আসছে। হঠাৎ করে সে ম্যানেজারের বুকের কাছে মাথা এগিয়ে দিলো আর তারপর বুকে ঝাপিয়ে পরে জড়িয়ে ধরলো। ম্যানেজার বড় রকমের শকড খেয়েও সুন্দরী নার্সটা তার শরীরের সাথে আলতো ভাবে লেপ্টে রয়েছে দেখে সেও আর তাকে সরানোর ইচ্ছা মনের ভিতর আনলো না।
সেও দুই হাত দিয়ে নার্সটাকে জড়িয়ে ধরলো। সাথে সাথে নার্সের শরীরে বিদুৎ খেলে গিয়ে নার্সটা ম্যানেজারের মুখের দিকে তাকালো। নাহ আর পারছে না। নার্সের চোখের ভাষা বুঝতে বেশি দেড়ি হলো না ম্যানেজার সাহেবের।
.
দুইজনই আস্তে আস্তে দুইজনের মুখ কাছে আনতে থাকে। নার্সটা আগে থেকেই ম্যানেজারকে পছন্দ করতো কিন্তু ম্যানেজার বিবাহিত হওয়ার কারণে কোনো দিন বলতে সাহস পেতো না। আজ কোথা থেকে যে এতো সাহস সঞ্চয় হলো কে জানে। সবই হয়েছে ওই অহনার কেবিনে ঢুকতে গিয়ে। কিন্তু ম্যানেজার যে এতো সহজে তাকে আগলে নেবে আগে জানলে কবেই কতো কি হয়ে যেতে! দুইজনই মুখ কাছে আনতে আনতে পাগলের মতো চুমা চুমি করতে শুরু করে। একদম কামড়া কামড়ি অবস্থায় সেটা চলে যায়। নার্স এবং ম্যানেজার ওভাবেই চুমাচুমি করতে করতে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
মেঘ কবিরাজের আস্তানা খুঁজে পেয়েছে। ররিনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই কোথা থেকে যেন ধোঁয়া চোখে মুখে এসে লাগতে শুরু করে তারপর দুইজনেরই কাশি শুরু হয়। আস্তানাটা জঙ্গলের ভিতরে একটি পুরনো পোড়ানো বাড়িতে। চারপাশে মশাল জ্বলছে৷ ধোঁয়ার মধ্যেই দেখতে পেল কালো পোশাকে কেউ সামনে বসে আছে আর তার চারপাশে আগুন জ্বলছে। সে হঠাৎ করে আওয়াজ করে উঠলো, ফুঁ ফুঁ ফুস…..ফুস…!
তার হাতে একটি লাটি। লাটি দিয়ে সামনে কয়েকটা বারি দিলো এবং মুখ দিয়ে বিভিন্ন রকমের আওয়াজ করতে থাকলো। সেগুলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ধোঁয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং সামনের সব ধোঁয়াশা আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। মেঘের কেন যেন মনে হচ্ছে নীলা আজ এখানেই এসেছিলো কারণ ভিতরে ঢোকার আগে নীলার এক জোড়া ঝুমকো দুলের মতো ওটার একটা পরে থাকতে দেখেছে। নীলার ওই দুল জোড়া ছিল খুব প্রিয়। প্রায় সময়ই পরতো। তাই মেঘ সেটা খেয়াল করেছিলো। ওটার একটা পরে থাকতে দেখে মেঘ দুলটা কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে।
.
মেঘ আর রবিন দুইজন এবার দুইজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কালো পোশাক পরা দাড়িওয়ালা বুড়োর মতো লোকটা হুংকার দিয়ে ওঠে, কি চাই!!
মেঘ ভনিতা না করে সরাসরি বলে ফেললো, নীলা নামের মেয়েটি এখন কোথায়?
.
রাফি চলে যাওয়ার পর রৌদ্র তুলির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পরে। তুলি খুব সহজ সরল আর আবেগ প্রবন একটা মেয়ে। রৌদ্র তাকে বিপদ থেকে বাঁচতে এসে নিজেই বিপদে পরে তার এরকম অবস্থা হয়েছে। দৃশ্যটা আরেকবার ভেবে তুলির চোখ ছল ছল করে উঠলো। তুলি রৌদ্রের দিকে তাকয়ে তারপর নিজের শাড়ির আচঁল দিয়ে রৌদ্রের মুখ মুছে দিলো। হঠাৎ করে রৌদ্র জেগে গিয়ে তুলির হাতটা সাথে সাথে ধরে ফেললো৷ রৌদ্র চোখ খুলে তাকায়। রৌদ্রকে তাকাতে দেখে তুলি লজ্জায় তার চোখটা নিচের দিকে নামিয়ে নিলো কিন্তু তার ডানটা হাতটা রয়ে গেছে রৌদ্রের হাতে।
.
রৌদ্র কিছু না বলে তুলির দিকে চেয়ে আছে। তুলি আস্তে আস্তে চোখ উপরে তুলে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই রৌদ্রের চোখে তার চোখ পরলো। লজ্জায় তুলি আবার চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নেয়। তুলির মুখ দিয়ে এবার আস্তে করে বেড়িয়ে এলো, ওমন বেশরমের মতো তাকায় রইছেন ক্যান? ছাড়েন আমার হাতটা ছাড়েন!
রৌদ্রঃ কাঁদছিলে কেন?
.
রাফি বাড়ি ফেরার জন্য বৃষ্টিতে ভিজে মাঝ রাস্তা পর্যন্ত গিয়েও তুলির কথা ভুলতে না পেরে আবারও হাসপাতালে চলে এসেছে। তুলির প্রতি প্রেম যেন তাকে পাগল করে তুলেছে। তুলিকে এক সেকেন্ডের জন্যও যেন চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না৷ ভেজা অবস্থার জন্য রাফি ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই ওখানে ভিতর থেকে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলো।
.
চলবে….
.
#প্রেমনগর
পর্বঃ১৬
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
ওয়াশরুমের দরজা খুলে ম্যানেজার দৌড়ে বেরিয়ে এলেন। তারপর তাড়াতাড়ি সেই জায়গা ত্যাগ করে চলে গেলেন। রাফি ভ্রু কুচকে সেদিকে চেয়ে থেকে ভেজা অবস্থাতেই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। ভিতরে উঁকি দিতেই দেখতে পেল একজন নার্স সেখানে পরে আছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা উলঙ্গ। মনে হয় সে চেতনা হারিয়েছে। চিৎকার শুনে দুইজন সিকুরিটি পুলিশ চলে এসেছে। রাফিকে দেখে সন্দেহ করলো। রাফির শার্ট ভেজা এবং শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা। ভিতরে নার্সকে ওভাবে পরে থাকতে দেখে তারা ভেবেই নিলো এই যুবকই নার্সকে একা পেয়ে ওয়াশরুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে রেপ করছিলো। তারা রাফিকে ধরে নিচে নিয়ে গেল। বার বার বলা শর্তেও ওরা রাফির কোনো কথাই শুনলো না। হাতে নাতে ধরা পরেছে এর থেকে আর কি বা সত্যি থাকতে পারে। এটাই বড় সত্যি।
.
কয়েকজন নার্স এসে ওই নার্সটাকে ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে শোয়ালো তারপর জামা কাপড় পাল্টে দিয়ে স্যালাইন দিলো। হাসপাতালের ভিতরেই রেপ করার মত বিশ্রি একটা ঘটনা আগে কখনও ঘটে নি৷ রাফিকে রিসিপশানের ওখানে বেধে রাখা হয়েছে। ম্যানেজার সাহেব চোরের মতো বসে আছেন আর আড় চোখে দেখছেন। উনি একদম চুপ করে আছেন।
.
এদিকে নীলার খোঁজ করতে আসায় শ্যামপুরের কবিরাজ খুবই রেগে গেছেন। মেঘও চেচিয়ে বলছে, আপনার ভান্ডামি আপনার কাছেই রাখুন। এখন তাড়াতাড়ি বের করে দিন নীলাকে!
কবিরাজঃ বড্ড বাড়াবাড়ি করছো তোমরা৷ এখানে কোনো মেয়ে আসেনি।
মেঘঃ এই বার কিন্তু আমি এই পুরো বাড়ি সার্চ করে দেখবো।
কবিরাজঃ এই ছোকরা তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস। আমার এই আস্তানাটা হচ্ছে ঘুঘুর ফাঁদ। তোকে একেবারে ঘুঘু দেখাই দিব।
মেঘঃ দেখাবিই যখন তখন আর ঘুঘু দেখাবি কেন। ভালো পাখি দেখা। ময়ূর দেখা!
.
কবিরাজ কিছু ইশারা করতেই মেঘ তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রিবারবারটা বের করলো।
মেঘঃ এইবার কি করবি!
কবিরাজ এবার ভয় পেয়ে বলতে শুরু করলো,ওই মেয়ে আমার সব কিছু ফাঁস করে দিতে চেয়েছে তাই ওকে আটকে রেখেছি৷
মেঘ চেচিয়ে বললো,কোথায়?
কবিকাজ হাতের ইশারায় ওদেরকে পাশের ঘরের দিকে চলে যেতে বললো। মেঘ আর রবিন সেখানে গিয়ে দেখলো নীলা মেঝেতে হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে। আর ওর মুখে কসটেপ।
.
মেঘ তাড়াতাড়ি গিয়ে নীলার হাত পায়ের বাধন আর মুখের কসটেপ খুলে দেয়। মুখের কসটেপ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে নীলা হাফাচ্ছে। মেঘ নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।
মেঘঃ তুই ঠিক আছিস তো নীলা!
নীলা শুধু কাঁদছে কিছু বলছে না। মেঘ নীলার চোখের পানি মুছে দিলো। রবিন দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখছে আর মনে মনে ভাবছে মেঘ মুখে যাই বলুক আর বাহিরে থেকে যতই যা কিছু দেখাক আসলে ওর মনের ভিতরে রয়েছে তো শুধু নীলা৷
মেঘ নীলার মাথায় হাত দিয়ে নীলার চুল ঠিক করে দিচ্ছে। নীলার এক কানে ঝুমকোর দুল রয়েছে অন্য কানে নেই৷ মেঘ পকেট থেকে দুল জোড়ার আরেকটা বের করে নীলার কানে পরিয়ে দিলো। নীলা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷
নীলাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ বলে উঠলো, কি হলো! চল ওঠ।
.
মেঘ নীলাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। রবিনও পিছু পিছু আসছে। আস্তানা থেকে বেরিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো। ওদিকে পুলিশ মেঘকে ধরার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে।
.
সকালবেলা আফতাব চৌধুরী রাফির নার্সকে রেপ করার ঘটনা শুনে কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে গেলেন৷
আফতাব চৌধুরীঃ আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ও বড্ড ভালো ছেলে! ও ওমন কাজ করতেই পারে না৷
রাফি লজ্জায় মুখ ঢেকে বসে আছে। সে এভাবে বিশ্রিভাবে ফেঁসে যাবে কল্পনাও করেনি৷
আফতাব চৌধুরী আবারও বলছেন, ও বড্ড ভালো ছেলে। ও আমার ছেলেকেই দেখতে এসেছিলো। ওকে ছেড়ে দিন৷
.
খবর পেয়ে রাফির বাবা মাও ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। রাফির মা এসেই আহাজারি করতে শুরু করলেন, বাবারে! বাবা! একি করলি!
বলতে বলতেই উনি অচেতন হয়ে গেলেন৷ উনাকে ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হলো। রাফির বাবারও বুকটা ধরফর করছে। একদিকে রাফির মা অসুস্থ হয়ে গেছে আর আরেকদিকে রাফি। রাফি বার বার বলছে সে এই কাজ করেনি কিন্তু পুলিশ তার কোনো কথাই শুনছে না।
.
ওই নার্সের চেতনা ফিরেছে। সে এখন সুস্থ। নিচে এসে এসব ঘটনা দেখে নিজেও লজ্জায় পরে গেলো। মনে পরে গেল কাল রাতের ঘটনা। সে তো নিজেই ম্যানেজারের সাথে….
ম্যানেজারটা নার্সের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নার্সের খুব লজ্জা লাগছে। নার্স চোখ দুটো নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে লজ্জা পেতে পেতে মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে চেয়ার টেনে বসে পরলো।
পুলিশঃ কি হলো। আপনি হাসছেন কেন?
পুলিশের কথায় নার্সটা লজ্জারাঙা মুখে এদিকে ফিরে তাকালো।
পুলিশঃ বলুন কাল রাতে আপনার সাথে কি কি হয়েছিলো। সব খুলে বলুন৷
নার্সটা এরপর ম্যানেজারের সাথে সব ঘটনা খুলে বললো। বড় একটা দম ছাড়লো রাফি৷ পুলিশ রাফির কাছে ক্ষমা চেয়ে রাফিকে ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেয়ে রাফি নিচে কথাবার্তা চলা অবস্থাতেই সিড়ি বেড়ে তাড়াতাড়ি দৌড় দিলো। কতক্ষণ থেকে সে তুলিকে দেখে না৷
.
রাফি রৌদ্রের কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পেলো সবাই এখানে রয়েছে। আকাশ আর অহনা এক পাশে বসা। এবং অন্য পাশে তুলি আর রৌদ্রের মা মনিরা বেগম বসে রয়েছেন। মনিরা বেগমও এখন কিছুটা সুস্থ। আরও দুইদিন রৌদ্রকে কেবিনে থাকতে হবে। তারপর বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। তুলি শুধু বার বার রৌদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। রৌদ্র ব্যথায় কাতর অবস্থা। কি কষ্টটাই না পাচ্ছে মানুষটা। সব হয়েছে তার জন্য। হাতে কোথাও একটু খানি কেটে গেলে কি জ্বালাটাই না করে আর উনার! কত্ত রক্ত বেড়িয়ে গেছে। ভেবেই তুলির চোখে পানি চলে আসছে৷
.
এদিকে রাফি মন ভরে তুলিকে দেখায় ব্যস্ত। তুলি তার আনমনে ভাবতে ভাবতে পাশে থাকা ফল কাটার ছুড়িটা দিয়ে হাত কেটে ফেললো। কেবিনে উপস্থিত সবাই সেটা খেয়াল করার আগেই রাফিই আগে খেয়াল করলো। কারণ রাফি এদিকেই তাকিয়ে ছিলো। রাফি এগিয়ে এসে তুলির হাতটা ধরে ফেললো। তুলি হাত কেটেছে৷ এটা দেখার সাথেই কেবিনে উপস্থিত সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠে। ব্যথায় কাতর অবস্থায় রৌদ্রও এদিকে ফিরে তুলিকে দেখে বলে উঠলো, একি ও এসব করছে কেন। কি হয়েছে ওর!
আকাশঃ এই মেয়ে পাগল হয়েছো নাকি! ফেলে দাও ওটা!
অহনা এগিয়ে এসে তুলিকে ধরলো, কি করছিস!
রাফি এখনও তুলিকে ধরে রয়েছে, আমারে ছাইড়া দেন। আমারে ছাইড়া দেন! আমার লাইগাই এমডা হইছে। আমি হাত কাইটা কুটি কুটি কইরা লামু!
.
তুলি ছোটাছুটি করছে। হাতের কাটা স্থান থেকে রক্ত পরছে। তুলিকে ধরে পাশের কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হলো। অহনাও ওর সাথে গেল। এগুলো দেখে মনিরা বেগমের মাথা ঘোরা শুরু হয়। যেটুকু সুস্থ হয়েছিলেন, পেশার বেড়ে আবারও অসুস্থ হয়ে গেলেন। উনাকে উনার কেবিনে নিয়ে গিয়ে পেশার মাপতে থাকে নার্স।
.
রৌদ্র এবার রাফি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া তোরা সবাই এমন পাগলামো শুরু করে দিয়েছিস কেন? আরে আমি তো বেঁচে আছি নাকি। সারতে তো একটু সময় লাগবে আমার! আহ! এই অবস্থায় এগুলো দেখে তো আমার খারাপ লাগছে রে।
আকাশ রৌদ্রের মাথায় হাত রাখলো, কিচ্ছু হয়নি ভাই! তুই এদের এগুলো কিছু দেখিস না। মেডিসিন দিয়েছে। এখন বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা কর।
.
শ্যামপুর থেকে বেরিয়ে মেঘ নীলা আর রবিনকে নিয়ে আরিয়াপুলি বাজারের এদিকে চলে এসেছে। ওখানে নাকি মেলা হচ্ছে। নীলা যেতে চেয়েছে তাই মেঘ নিয়ে যাচ্ছে৷ সামনে ট্রেন যাওয়ার কারণে রাস্তায় জ্যাম পরলো। তখনই পুলিশ নীলাকে মেঘের বাইকে দেখে ফেললো। রাতে ভালো ভাবে ঘুম না হওয়ার কারণে নীলা মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো৷ ট্রেন চলে যাওয়ার সাথেই জ্যাম ছেড়ে গেলে মেঘ বাইক আবারও স্টার্ট দিয়ে দিলো। নীলা বাইকের সামনে বসে ঘুমিয়ে আছে আর পিছনে রয়েছে রবিন।
.
এটা দেখার সাথে সাথে পুলিশ নীলার বাবাকে ফোন করলো,স্যার আপনার মেয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। মেঘ নামের ছেলেটিই ওকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে পালাচ্ছে৷
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here