খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ৮
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
,,
,,
কলেজ শেষে হেটে হেটে বাসায় ফিরছিল তামিম।। কিন্তু চার রাস্তার মোড়ে আসতেই হঠাৎ কোথা থেকে জানি একটা মেয়ে এসে তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।। হঠাৎ কেউ তাকে এইভাবে হুট করে এসে জড়িয়ে ধরাতে তামিম কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়।। কিন্তু পরক্ষণেই তার নাকে মেয়েটার চুলের স্মেল গিয়ে পৌছালো।। এমন স্মেল তো নীলার চুলের মধ্যেও রয়েছ, তাহলে কি এই মেয়েটা নীলা.!
তামিম এবার মেয়েটার দিকে খেয়াল করে দেখলো মেয়েটা স্কুল ড্রেস পরে আছে যেটা নীলার স্কুলের ড্রেস।। এবার তামিম পুরোপুরি শিওর হওয়ার জন্য মেয়েটাকে বললো…
তামিমঃ এই মেয়ে কে তুমি আর আমাকে জড়িয়ে ধরে আছ কেন.?
নীলাঃ ভাইয়া ওই ছেলেগুলো আমায় টিজ করছে দেখ ওরা আমার ওড়নাটাও নিয়ে গেছে (কিছুটা কাদো কাদো গলায় + ভয় মিশ্রিত কন্ঠে)।।
মেয়েটার কন্ঠ শুনে তামিম এবার পুরোপুরি শিওর হয়েগেল যে এটা নীলা।। তামিম এবার আশেপাশে তাকিয়ে ওই ছেলেগুলোকে খুজতে লাগলো।। ছেলেগুলোও এতক্ষণে নীলার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে নীলার অনেকটাই কাছে চলে এসেছে।। কিন্তু তাদের সামনে তামিমকে দেখে তারা আর এক পাও এগোনোর সাহস পেল না, সবাই ওইখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।।
তামিমেরও এতক্ষণে ছেলেগুলোর দিকে চোখ পরে গেল।। ছেলেগুলোকে দেখেই তামিম নীলাকে নিজের থেকে ছাড়াতে লাগলো।। কিন্তু নীলা তাকে ছাড়ছেই না, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তামিমকে জড়িয়ে ধরে আছে।। ছেলেগুলোও এতক্ষণে নীলার ওড়নাটা ফেলে দিয়ে উলটোদিকে দৌড়ে পালিয়েছে।। তামিমও নীলার স্কুলে ১০ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে তাই তামিমকে স্কুলের সবাই কমবেশি চিনে।। স্কুলে থাকাকালীন তামিম আর ওর বন্ধুরা ওই স্কুলের সবাইকেই খারাপ কাজ থেকে শাসিয়ে রাখতো আর কেউ খারাপ কাজ করলে তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিত।। স্কুলের প্রত্যেকটা স্যারও তাদের পক্ষে ছিল বিধায় তখন তাদের উপরে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।।
তামিমঃ নীলু এবার আমায় ছাড় ছেলেগুলো চলে গেছে।।
নীলাঃ চুপ করে তামিমকে জড়িয়ে ধরেই আছে।।
তামিমঃ কি হলো ছাড়ছিস না কেন আমায়.? ছাড় বলছি (ধমক দিয়ে)
তামিমের ধমক শুনে নীলা এবার তাকে ছেড়ে দিয়ে তার পাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।। তামিম এবার মাটিতে পরে থাকা নীলার ওড়নাটা উঠিয়ে তার বুকের মধ্যে পেঁচিয়ে দিল।।
তামিমঃ ওই ছেলেগুলো তোকে টিজ করছিল কেন.?
নীলাঃ জানি না, আমি স্কুল থেকে একা একা বাসায় ফিরছিলাম তখন ছেলেগুলোও আমার পিছু নেয়।। তারপর ওই রাস্তার কাছাকাছি আসতেই ছেলেগুলো আমার ওড়না টেনে নেয়।। এরপর তোমাকে রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে দেখে ওইখান থেকে দৌড়ে এইখানে আসি (নিচু গলায়)।।
তামিমঃ কেন আজ তোর বান্ধবী মিতু আসেনি.?
নীলাঃ নাহ
তামিমঃ ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে এবার বাসায় চল।।
তারপর তামিম নীলাকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।। বাসায় এসে তামিম আর নীলা যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।। তারপর নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে দুজনেই আবার যার যার রুমে চলে আসলো।।
এইভাবেই তাদের দিনটা কেটে যায়।। সন্ধ্যা হলে তারা দুজনেই আবার পড়তে বসে।। পড়াশোনার এক পর্যায়ে তাদের রাতের খাবারের জন্য ডাক পরে।। দুজনেই যার যার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসে।। তারপর দুজনেই ২টা চেয়ার টেনে দুদিকে বসে পরে।।
–তামিম তোমার জন্য আমি আমেরিকা যাওয়ার টিকেট কেটে ফেলেছি।। সামনের সপ্তাহেই তুমি তোমার ফুপির কাছে আমেরিকাতে চলে যাবে আর ওইখানে গিয়েই পড়াশোনা করবে।।
বাড়ির সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে বসে খাবার খাচ্ছিল ঠিক এমন সময় তামিমের আব্বু উপরের কথাটা বললেন যা শুনে বাড়ির সবাই চমকে উঠলো, বিশেষ করে তামিম।। তামিম ভেবে পাচ্ছে না তার আব্বু হঠাৎ তাকে না জানিয়েই তার জন্য আমেরিকার টিকেট কেটে ফেললেন কি করে।। শুধু আমেরিকা গিয়ে ঘুরে আসার জন্য টিকেট কেটেছেন এটা বললে একসময় মানা যেত।। কিন্তু ওইখানে গিয়ে পড়াশোনা করবো এটার মানে কি.?
তামিমঃ এইসব তুমি কি বলছ আব্বু, আমাকে না জানিয়েই তুমি আমার জন্য আমেরিকার টিকেট কেটে ফেললে.! আর আমেরিকা গিয়ে পড়াশোনা করবো মানে.! এইখানে থেকে পড়াশোনা করলে কি.?
তামিমের আব্বুঃ তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না।। আমি অনেক আগেই ভেবে রেখেছিলাম তোমাকে পড়াশোনার জন্য তোমার ফুপির কাছে আমেরিকাতে পাঠিয়ে দিব।। তাই তোমাকে না জানিয়ে অনেক আগেই তোমার আমেরিকা যাওয়ার টিকেট কেটে রেখেছিলাম।। আর এ বিষয়ে তোমার ফুপির সাথেও আমার কথা হয়েছে।। উনিও বলেছেন তোমাকে যেন উনার কাছে পাঠিয়ে দেই।। আশা করি তুমি আমার কথার অমত পোষণ করবে না।।
তামিমঃ কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে
আব্বুঃ বলছি না আমি আর তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা।। আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে, তুমি সামনের সপ্তাহে আমেরিকাতে যাচ্ছ ব্যস (অনেকটা রাগী গলায়)।।
তামিম আর কিছু বললো না কারণ সে জানে এখন সে যাই বলুক না কেন তার আব্বু শুনবেন না।। তামিম এবার অসহায়ের দৃষ্টিতে তার আম্মুর দিকে তাকালো।। তামিমের আম্মু তাকে ইশারায় বললেন উনি তার আব্বুর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন।। তারপর কেউ আর কোনো কথা না বলে যার যার খাবার খেয়ে উঠে পরলো।।
তামিমকে আমেরিকাতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এটা শোনার পর থেকে নীলার মনে অশান্তি শুরু হয়ে গেছে।। তামিমের আব্বুর কথাটা শোনার পর থেকে নীলার আজ এতোই খারাপ লাগছে যে সে কি করবে নিজেই বুঝতে পারছে না।। কিন্তু এতে নীলার নীলার খারাপ লাগছে কেন.? হয়তো তামিম চলে গেলে সে বাড়িতে একা হয়ে পরবে সেইজন্য বা অন্য কোনো কারণ আছে যা নীলা নিজেও জানে না।।
এদিকে তামিমের মনেও আজ অশান্তি লাগছে।। তার আব্বু হুট করে তাকে আমেরিকাতে পাঠাতে চাচ্ছেন কেন এটা সে নিজেও বুঝতে পারছে না।। পাঠাতে চাচ্ছেন ভালো কথা, কিন্তু এই বিষয়ে তাকে একবার জানালে কি হতো.? তাকে না জানিয়েই তার আব্বু এতোকিছু করে ফেললেন এটা যেন তামিম কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।।
অপরদিকে তামিমের আম্মু তামিমের আব্বুকে অনেক রিকুয়েস্ট করছেন উনি যেন তামিমকে আমেরিকাতে না পাঠান।। কিন্তু তামিমের আব্বু তামিমের আম্মুর কোনো কথাই শুনছেন না।। তামিমের আব্বুর একটাই কথা, তামিমকে উনি আমেরিকাতে পাঠাবেন তো পাঠাবেনই।। তামিমের আম্মু তামিমের আব্বুর সাথে না পেরে এবার হাল ছেড়ে দিলেন।।
এখন আপনাদেরকে বলি তামিমের আব্বু কেন তামিমকে আমেরিকাতে পাঠাতে চাচ্ছেন।। আজ যখন নীলা তার স্কুলের কিছু বখাটে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচার জন্য দৌড়ে গিয়ে তামিমকে জড়িয়ে ধরেছিল তখন তামিমের আব্বুও অন্য একটা রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে উনার অফিসের কিছু কাজে এক জায়গায় যাচ্ছিলেন।। আর তখনই তামিমের আব্বু তাদের দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দেখে ফেলেন।। তামিমের আব্বু চান না তাদের নিজেদের মধ্যে এইসব প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক হোক।। কারণ প্রেম ভালোবাসা উনি এতোটা লাইক করেন না।। তাই তিনি তামিমকে আমেরিকায় পাঠাতে চাচ্ছেন এতে তামিম আর নীলার সাথে কোনোপ্রকার সম্পর্কে জড়াতে পারবে না।। তামিমের আব্বুর একটু তাড়া ছিল বিধায় উনি আর সেখানে বেশিক্ষণ থাকেন নি, নাহলে হয়তো উনি আসল কাহিনি বুঝতে পারতেন।।
দেখতে দেখতে কেটে গেল ১ সপ্তাহ।। বাড়ির সবাই তামিমের আব্বুকে অনেক বলেছে উনি যেন তামিমকে আমেরিকায় না পাঠান।। কিন্তু উনি কারও কথাই শুনেন নি।। তামিমও অনেকবার তার আব্বুকে রিকুয়েস্ট করেও কিছু করতে পারেনি।। অবশেষে তামিমও রাগে-অভিমানে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল।। আজ রাতে তামিমের আমেরিকায় যাওয়ার ফ্লাইট।। তামিমের আব্বু ইতিমধ্যে তামিমের কলেজ থেকে তামিমের ট্রান্সফারের কাজও শেষ করে ফেলেছেন আর তার জরুরি কাগজপত্রও নিয়ে এসেছেন।।
রাত ৯ টা বাজতেই তামিমের আব্বু তামিমকে তৈরি হয়ে নিতে বললেন।। তামিমও তার আব্বুর কথামতো তৈরি হয়ে নিল আর তার লাগেজ নিয়ে নিচে নেমে আসলো।। তামিম তার সকল বন্ধুদেরকেও বলে দিয়েছে তার আমেরিকা যাওয়ার কথা।। কিন্তু তামিম তাদেরকে বলেছে ওরা কেউ যেন তাকে বিদায় করতে না আসে।। হয়তো ওদেরকে দেখলে তামিমের কষ্ট হবে সেইজন্য।। নিচে এসে তামিম সবার থেকে বিদায় নিতে লাগলো।। তামিম চলে যাবে এর জন্য সবাই নিরবে কান্না করছে।। একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে তামিম যখন নীলার সামনে এসে দাঁড়ায় ঠিক তখনই নীলা তামিমকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।।
নীলাঃ ভাইয়া প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।। তুমি চলে গেলে আমি বাড়িতে কার সাথে কথা বলবো, কার সাথে দুষ্টুমি করবো।। প্লিজ তুমি যেও না (কেঁদে কেঁদে বললো)।।
নীলার কথাগুলো শুনে তামিম কি বলবে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না।। তামিমও এবার নীলাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিল।। সবার কান্না দেখে এবার তামিমের আব্বুর চোখেও হালকা পানি চলে আসলো।। কিন্তু উনি তৎক্ষনাৎ নিজেকে শক্ত করে তামিমের থেকে নীলাকে জোর করে ছাড়িয়ে তামিমকে নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসলেন।। নীলা এবার ছোট বাচ্চাদের মতো মাটিতে পরে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।। নীলার অবস্থা দেখে তামিমের আম্মু গিয়ে তাকে উঠিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।।
তামিম আর তার আব্বু দুজনে বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে বসলেন।। তামিমের আব্বু গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলেন।। যাওয়ার আগে তামিম শেষবারের মতো বাড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে গেল।।
৩০ মিনিট পর গাড়ি এসে এয়ারপোর্টের সামনে থামলো।। তামিম আর তার আব্বু দুজনে গাড়ি থেকে নেমে এয়ারপোর্টের ভিতরে গিয়ে ঢুকলেন।। তামিমের আব্বু কাউন্টারের একটা লোকের সাথে কথা বলে সবকিছু ঠিকঠাক করে তামিমকে বললেন প্লেনে গিয়ে উঠে বসতে।। তামিম যাওয়ার আগে একবার তার আব্বুকে জড়িয়ে ধরে প্লেনে গিয়ে উঠে বসলো।। ৫ মিনিট পর প্লেন ছেড়ে দিল।। তামিমও বাংলাদেশ ছেড়ে পাড়ি জমালো আমেরিকার উদ্দেশ্যে।।
কয়েক ঘন্টা জার্নি করে তামিম গিয়ে পৌছালো আমেরিকাতে।। তামিমকে নেওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে তার ফুফা আর ফুফাতো ভাইও এসেছে।। তারপর তামিম ওদের সাথে তার ফুফুর বাড়িতে চলে গেল।। ফুফুর বাড়িতে গিয়ে ফুফুর সাথে ভালো মন্দ কথা বলে সবার সাথে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে নিল।। তারপর তামিমের ফুফু তামিমকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললেন, আজ থেকে এটা তার রুম।। ওইদিনের মতো তামিমের দিনটা কোনোরকমে কেটে গেল।।
পরেরদিন সকালবেলা তামিমকে তার ফুফা একটা কলেজে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন।।
ওইখানে কিছুদিনের মধ্যেই তামিমের কয়েকটা বন্ধু হয়ে গেল।। তারপর তামিম আস্তে আস্তে সেখানকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে লাগলো।। এইভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল ৫টা বছর।।
৫ বছর পর…
.
.
.
.
.
Loading…….
এখন থেকে শুরু হবে গল্পের আসল মজা & গল্পের আসল কাহিনি।। সবাই একটু ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করেন আর দেখতে থাকেন এবার কি কি হয়।।
ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।। আর হে গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক সো গল্পকে গল্প হিসেবে দেখবেন বাস্তবতায় নিবেন না।। গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন তবুও কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না প্লিজ।। হেপি রিডিং ?
~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~