খুব_ভালোবাসি_তোকে পর্বঃ- ২৮
#লেখকঃ- Tamim
,,
,,
,,
,,
তামিম চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কি না, ঠিক তখনই সে দেখলো ২ জন পুলিশ তার দিকেই এগিয়ে আসছে।। পুলিশকে দেখেই তামিম উলটো দিকে ফিরে হাটা শুরু করে ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা পুলিশ তাকে ডাক দিয়ে দাড়াতে বলে।। তারপর হঠাৎ ওই ২ জন পুলিশের সামনে একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায় আর ওই গাড়ি থেকে একজন পুলিশ নেমে ওই ২ জন পুলিশের সাথে কি যেন বলতে থাকে।। তামিম দৃশ্যটা দেখে দেয়ালে থাকা পোস্টারটা ছিড়ে তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে পালিয়ে আবার হোটেলে চলে আসে।। হোটেলে এসে রুমে ঢুকেই তামিম হাঁপাতে লাগলো।। তার হাঁপানি দেখে নীলা দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায় আর বলে…
নীলাঃ এই কি হয়েছে তোমার.? তুমি এইভাবে হাঁপাচ্ছ কেন.? আর তুমি এতক্ষণ ধরে কোথায় ছিলে.?
তামিমঃ কিছু না বলে পকেট থেকে পোস্টারটা বের করে নীলার হাতে দিয়ে পোস্টারটা দেখতে বললো।।
নীলাঃ তামিমের থেকে পোস্টারটা নিয়ে দেখতে লাগলো।। পোস্টারে তার এবং তামিমের ছবি দেখে নীলা সাথে সাথে ধপাস করে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো আর পোস্টারটা মেঝেতে ফেলে দিল।। এই এটা কি, এতে তো আমাদের দুজনের ছবি দেওয়া।। তুমি এই পোস্টারটা পেলে কোথায়.?
তামিমঃ সকালবেলা তোমায় ঘুমে রেখে একটু বাহিরে হাটতে গেছিলাম তখনই একটা দেয়ালে থাকা এই পোস্টারটা নজরে পরে।। এরপর দেয়াল থেকে এই পোস্টারটা ছিড়ে সোজা হোটেলে চলে আসি।।
নীলাঃ এখন আমাদের কি হবে.? এই পোস্টারটা যদি এই হোটেলের কারও চোখে পরে যায় আর তারা যদি আমাদেরকে দেখে ফেলে তখন কি হবে.? আর এই পোস্টারটা কে চাপিয়েছে.? আব্বু না তো.?
তামিমঃ কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।। তবে আমাদেরকে এখন একটা কাজ করতে হবে সেটা হলো এইখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাওয়া, যেখানে এই পোস্টারের কোনো চিহ্ন ও নেই।। আর এই পোস্টারটা নিশ্চয়ই আমাদের বাসার ই কেউ চাপিয়েছে।।
নীলাঃ এইখান থেকে আমরা কোথায় যাব.? আর এই রুম তো আমরা ১ সপ্তাহের জন্য বুকিং করেছি যার মধ্যে আরও ৩ দিন রয়েই গেছে।। এতো টাকা দিয়ে রুম বুকিং করে আমরা এখন এইখান থেকে চলে গেলে কোথায় গিয়ে থাকবো.? আর আমাদের কাছে তো আর বেশি টাকাও নেই যে অন্য কোথাও গিয়ে থাকবো।।
তামিমঃ সমস্যা নেই এইখানে আরও ৩ দিন থেকে আমরা অন্য কোথাও চলে যাব।। তবে এই ৩ দিনে আমরা কেউ রুম থেকে বের হব না।।
নীলাঃ ৩ দিন থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে মানে.? কোথায় যাব আমরা.? তোমার জানামতে আশেপাশে থাকার জন্য কোনো বাসা রয়েছে নাকি.?
তামিমঃ না নেই, তবে রাতেরবেলা বাহিরে গিয়ে থাকার জন্য বাসা খুজবো।। ৩ দিনের মধ্যে যদি বাসা পেয়ে যাই তাহলে তো ভালো আর যদি না পাই তাহলে তখনকার ব্যাপার তখন দেখা যাবে।।
নীলাঃ তো আমাদের থাকা-খাওয়ার জন্য যে আরও টাকা লাগবে, ওই টাকা পাবে কোথায়.?
তামিমঃ চাচি তো বললেন টাকা লাগলে যেন উনাকে বলি।। রাতে একবার চাচিকে ফোন করে বলব নে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিতে।।
নীলাঃ আচ্ছা তাহলে সেটাই করিও।।
এইভাবেই তাদের দিনটা কেটে গেল।। ওইদিন আর তামিম হোটেল থেকে কোথাও বের হলো না।। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর ঠিক একটু আগে তামিম নীলার আম্মুর নাম্বারে কল দেয়।। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর নীলার আম্মু কল রিছিভ করেন।।
নীলার আম্মুঃ হে আব্বু বল কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি.?
তামিমঃ না চাচি তেমন কিছু না আসলে (বলেই থেমে গেল)
নীলার আম্মুঃ হুম বল থামলে কেন.?
তামিমঃ আচ্ছা চাচি বাসার কেউ কি আমার আর নীলার ছবি চাপিয়ে রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার করেছে.?
নীলার আম্মুঃ না বাসার কেউ তো এমন করেনি, কেন কি হয়েছে.?
তামিমঃ আসলে (তারপর সে নীলার আম্মুকে সকালের ঘটনাটা বললো)।।
তামিমের কথাগুলো শুনে নীলার আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন…
নীলার আম্মুঃ এমন কিছু করলে তো তোমার চাচ্চু বাসায় বলতেন ই।। আমার মনে হয় পুলিশ এমনটা করেছে আর নাহয় তোমার চাচ্চু ই পুলিশকে এমনটা করতে বলেছেন।। আচ্ছা যাইহোক তোমরা কিন্তু এখন আর ভুলেও হোটেল থেকে বাহিরে যেও না।।
তামিমঃ আচ্ছা
নীলার আম্মুঃ তা আর কিছু কি বলবে.?
তামিমঃ হ্যাঁ আসলে আমাদের কাছে যা টাকা ছিল তা দিয়ে ১ সপ্তাহের জন্য রুম বুকিং করে ফেলেছি।। এখন আর আমাদের কাছে তেমন বেশি টাকা নেই।। হোটেলে আরও ৩ দিন থাকতে পারবো আমরা, এরপর আবার রুম বুকিং করতে হবে যদি হোটেলে আরও থাকতে চাই।। কিন্তু আমি চাচ্ছি এই ৩ দিন হোটেলে থাকা অবস্থায় থাকার জন্য একটা বাসা খুজে দেখবো।। যদি কেউ ভাড়া দেয় তাহলে সেখানে চলে যাব আর হোটেলে থাকবো না।। কারণ এইখানের আশেপাশে আমাদের ছবি দিয়ে পোস্টারটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।। যেকোনো সময় যে-কেউ আমাদেরকে এইখানে দেখে ফেলতে পারে, তখন তো আমরা পুলিশের কাছে ধরা পরে যাব।।
নীলার আম্মুঃ তো এখন কতো টাকা লাগবে তোমাদের বল.?
তামিমঃ এখন আপাতত ৫-৬ হাজার টাকা দিলেই হবে পরে নাহয় লাগলে আরও নিব।।
নীলার আম্মুঃ আচ্ছা দাড়াও আমি তোমার বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।।
তামিমঃ কিন্তু চাচি আপনি এতো টাকা কোথায় পাবেন.?
নীলার আম্মুঃ আরে আমার বিকাশে ৫-৬ হাজার টাকা আছে ওইখান থেকেই দিয়ে দিচ্ছি।। টাকা নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা করিও না।। তোমাদের যত টাকা লাগে আমায় বলিও আমি পাঠিয়ে দিব, শুধু আমার মেয়েটাকে কোনো কষ্ট দিও না প্লিজ।।
তামিমঃ না চাচি আমি ওকে কোনো কষ্ট দিব না।।
নীলার আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে এখন রাখি পরে কথা হবে।।
তামিমঃ আচ্ছা
তারপর নীলার আম্মু কল কেটে দিয়ে উনার বিকাশ থেকে ৫ হাজার টাকা তামিমের বিকাশে পাঠিয়ে দিলেন।। এইভাবেই কেটে গেল আরও ২ দিন।।
এই ২ দিনে পুলিশ এখনো তামিম আর নীলাকে খুজে পায়নি।। নীলার আব্বুও এখন মাঝেমধ্যে নীলার জন্য কান্না করেন এই ভেবে যে, মেয়েটা কার সাথে আছে, কোথায় আছে আর কেমন আছে।। তিনি এবার ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন উনার বোনের কথা রাখতে গিয়ে নীলার মতামতকে উনি সাপোর্ট করেন নাই বিধায় উনাকে আজ এমন দিন দেখতে হচ্ছে।। কিন্তু এখন এটা নিয়ে আপসোস করে কি লাভ যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।। রাহিমা বেগমদের হাতেও আর বেশি দিন নেই, আর মাত্র ৩ দিন তারা দেশে আছেন।। এর মধ্যে নীলাকে পাবেন বলে উনি আশা করছেন না।। তারপর উনি মনে মনে নীলাকে ফিরে পাওয়ার দোয়া করছেন।।
এদিকে তামিম আর নীলাও এই ২ দিনে হোটেল থেকে কোথাও বের হয়নি।। তারা দুজন সারাক্ষণ রুমে বসেই কাটিয়েছে এই ২ দিন।। তামিম অবশ্য রাতেরবেলা হোটেল থেকে বেরিয়েছে তাদের জন্য বাসা খোজার জন্য।। কিন্তু আশেপাশে একটা বাসাও খালি পায়নি।। যদি কালকের ভিতরে তারা কোনো বাসা না পায় তাহলে আরও কয়েকদিন তাদেরকে হোটেলেই থাকতে হবে।।
রাতেরবেলা…
রাতের খাবার খেয়ে তামিম আর নীলা বিছানার মধ্যে শুয়ে আছে এমন সময় হঠাৎ তামিমের ফোনটা বেজে উঠলো।। তামিম ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো নীলার আম্মু ফোন করেছেন।। তামিম কিছু না ভেবেই কলটা রিছিভ করলো।।
তামিমঃ হ্যাঁ চাচি বলেন.?
নীলার আম্মুঃ কোথাও বাসা খুজে পেয়েছ কি.?
তামিমঃ না চাচি এখনো তো পাইনি।।
নীলার আম্মুঃ আচ্ছা না পেলে সমস্যা নেই, বাসা না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা বরং হোটেলেই থাক আর টাকার চিন্তা করিও না, টাকার দরকার হলে আমায় বলিও আমি আরও টাকা পাঠিয়ে দিব।।
তামিমঃ আচ্ছা চাচি।।
নীলার আম্মুঃ তা রাতের খাবার খেয়েছ.?
তামিমঃ হ্যাঁ, আপনারা.?
নীলার আম্মুঃ তোমার আব্বু আর তোমার চাচ্চু এখনো বাসায় ফিরেন নি তাই আমরা কেউ এখনো খাইনি।।
তামিমঃ ওহহ
নীলার আম্মুঃ তা বাবা নীলা কি করছে.?
তামিমঃ এইতো আমার পাশে বসে আছে।।
নীলার আম্মুঃ আচ্ছা ওর কাছে একটু ফোনটা দাও তো কিছু কথা বলবো।।
তামিমঃ আচ্ছা দিচ্ছি, নীলু এই নাও চাচি তোমার সাথে কথা বলবেন (নীলার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে)।।
তারপর নীলা তামিমের থেকে ফোনটা নিয়ে তার আম্মুর সাথে কথা বলতে লাগলো।। বেশ কিছুদিন কথা বলে নীলার আম্মু কল কেটে দিলেন।। কল কেটে দিয়ে নীলার আম্মু পিছনে ফিরে তাকাতেই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন।। কারণ উনার সামনে এখন নীলার আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন।। নীলার আব্বুর চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের চাপ দেখা যাচ্ছে, তাহলে কি উনি নীলার আম্মুর ফোনে কথা বলাটা শুনে ফেলেছেন.!
.
.
.
.
.
Loading…….
নেক্সট পর্বতে একটা বড় ধরণের ধামাকা হতে চলেছে সবাই প্রস্তুত থাকেন ধাকামা পর্বের জন্য।। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আর গল্পটা কেমন হয়েছে অবশ্যই একটা গঠনমূলক কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন হেপি রিডিং ?
~~ সবাই নিয়মিত নামায কায়েম করবেন আর অন্যদের নামাযের লাভ জানিয়ে দাওয়াত দিবেন প্লিজ ~~