মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ২
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার
?
?
তিয়াশা বেশ কিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বেডের কাছে যায়। বেডে নীল কালারের বেশ বড়সড় একটা ব্যাগ রাখা।
সে বেশ সংশয়ে পড়ে যায়। ব্যাগটা এখানে কে রেখেছে। আর ও যখন রুমে এসে শাওয়ার করতে ঢুকেছে তখন কোনো কিছু দেখেনি। শাওয়ার থেকে বেড়িয়ে এই জিনিসটি দেখে বেশ অবাক হওয়ার ই কথা।
তিয়াশা ব্যাগটিকে খুলে না। বেডের পাশে রেখে দেয়। সে রেডি হয়ে নিচে নামে ডিনার করতে।
মি.খানঃ Hello, My princess..
তিয়াশাঃ Hello..
মি.খানঃ কেমন চলছে নতুন চাকরী? নতুন অভিজ্ঞতা??
তিয়াশাঃ বেশ ভালো। সবাই খুব কোঅপারেটিভ। খুব ভালো তারা। আমাকে খুব সহায়তা করে। এই কয়েকদিনেই বেশ জমে উঠেছে আড্ডা কাজ। সব মিলিয়ে জাবারদাস্ত আছি।
মি.খানঃ Good..
মিসেস খানঃ কালকে কি তোমার কোনো অপারেশন আছে?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ মা। কালকে দুটো সার্জারি করাতে হবে। আর বেশ ক্রিটিকাল। কেন?
মিসেস খানঃ আগামী পরশু তোমার চাচ্চুরা আসবে তাই একটু শপিংয়ে যাওয়ার দরকার ছিল।
তিয়াশাঃ বাবাকে নিয়ে যাও। আমারতো কালকে সকালে আর রাতে অপারেশন। হয়তো কালকে হসপিটালে থাকতেও হতে পারে।
মি.খানঃ আমারও কালকে একটি ডিল সাইন করার আছে। তবে বিকেলে ফ্রী আছি। তোমার বিকেলে গেলে হবে??
মিসেস খানঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ হবে।
মি.খানঃ Oky..
মিসেস খানঃ তিয়াশা! তোর রুমে একটা ব্যাগ দেখেছিস?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ! কিসের ব্যাগ এটা? কে পাঠিয়েছে?
আমিও ভাবছিলাম তোমায় জিজ্ঞেস করব। এটা কি আমার জন্য?
মিসেস খানঃ নাহিন পাঠিয়েছে!
তিয়াশাঃ What?? How is this possible??
মিসেস খানঃ ও গতকাল দুবাই থেকে দেশে এসেছে। আর আজ এসেছিলো আমাদের বাসায় কিন্তু ওয়েট করতে পারেনি। ওর খুব জরুরি একটা কাজ পড়ে গিয়েছিল তাই চলে গিয়েছে। তোর নাম্বার নিয়েছে। হয়তো কল দিতে পারে।
তিয়াশাঃ আচ্ছা। তাহলে এক্ষুনি ব্যাগটা গিয়ে খুলব। আর খাওয়া শেষ। Good night.. Bye everyone..
মি.খানঃ Bye princess…
বাবা-মাকে শুভ রাত্রি বলে তিয়াশা নিজের রুমে চলে আসে। ওর খুব আনন্দ হচ্ছে। ও ব্যাগটা নিয়প ঝটপট করে বেডে বসে এটা খোলার জন্য। তখনই তার ফোনে কল আসে। আননোন নাম্বার। ওর মন চাচ্ছে না কলটি রিসিভ করতে তাও রিসিভ করে যদি কোনো এমার্জেন্সি কল আসে।
তিয়াশাঃ হ্যালো! কে বলছেন?
নাহিনঃ তোর যম। গিফট পেয়েছিস?
তিয়াশাঃ শালা বেয়াদব। ভদ্রভাবে কথা বল। সামনে পেলে দিব এক থাপ্পড়!
নাহিনঃ সেই সাহস আছে তোর?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ। আবার জিগায়। বাদ দে এখন। গিফট পেয়েছি। কেমন আছিস তুই?? কি আছেরে ওই ব্যাগে??
নাহিনঃ আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোর গিফট তুই ই খুলে দেখ কি আছে ব্যাগে!
তিয়াশাঃ মনে হচ্ছে বোম আছে!
নাহিনঃ হ্যাঁ। পারমাণবিক বোমা আছে।
তিয়াশাঃ হ তোর মাথায় ফাটাব। সামনে পাইয়া নেই তোরে। আচ্ছা রাখি। গিফট খুলব লেট হচ্ছে। চাল ফুট।
নাহিনঃ এহহহ আমি গিফট দিলাম আমারই দাম নাই এখন।
তিয়াশাঃ যা ভাগ। ঘাটিয়া আদমি। আল্লাহ হাফেজ। হসপিটালে আসিস।
নাহিনঃ আচ্ছা। আল্লাহ হাফেজ বান্দরনি।
তিয়াশা ব্যাগটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে সেটা খুলতে শুরু করে।
_________________________
নাহিন হচ্ছে তিয়াশার স্কুল ফ্রেন্ড+কলেজ ফ্রেন্ড। তাদের একটা টিম আছে। তারা কয়েকজন সবসময় একসাথে থাকতো। লেখাপড়া আর চাকরির সূত্রে এখন একেকজন একেক জায়গায়। তবে যোগাযোগ হয় সেটাও খুব কম। সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যাস্ত।
নাহিন দুবাইতে থাকে। চাকরির সূত্রেই তার সেখানে থাকা। তার পরিবারও বিদেশেই থাকে তার সাথে। তার পরিবার এবং সে প্রতিবছর একবার আসে নিজ দেশে। কয়েকমাস থেকেই আবার চলে যায়। এবার তারা একটি বিশেষ কারণে এসেছে। তিয়াশা আর নাহিন খুব ভালো বন্ধু। তাদের মধ্যকার বন্ডিং খুব স্ট্রং।
নাহিন তিয়াশার সাথে কথা শেষ করে আনমনেই হাসতে থাকে কিছুক্ষণ কোনো একটা কথা ভেবে। পুরনো কিছু স্মৃতি আজও হাসায় তাকে।
তারপর গিটার নিয়ে বেলকনিতে যায়। সেখানে গিয়ে ডিভানে বসে। নিহানের গানের গলা অসম্ভব সুন্দর। কিছুক্ষণ নীরব থেকে নাহিন গাইতে শুরু করে তার একটি প্রিয় গান।
? আমার ভিনদেশী তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্প বলো কাকে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ি
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আদতে আনাড়ী
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি
কিছু মিথ্যে বাহাদুরী (।।)
আমার চোখ বেঁধে দেও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতোই ভালো
আমি একলাটি পথ হাঁটি
আমার বিচ্ছিরি এক তারা
তুমি নাওনা কথা কানে
তোমার কিসের এত তাড়া
রাস্তা পার হবে সাবধানে
তোমার গায়ে লাগেনা ধুলো
আমার দুমুঠো চাল-চুলো(।।)
রাখো শরীরে হাত যদি
আর জল মাখো দু-হাতে
প্লিজ ঘুম হয়ে যাও চোখে
আমার মন খারাপের রাতে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী
আমার ভিনদেশী তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
আমার রাত জাগা তারা
তোমার আকাশ ছোঁয়া বাড়ি
আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী
আমার ভিনদেশী তারা
রারে রা রারা রা…
আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারী। ?
– ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু
গানটা শেষ করে নাহিন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরেই সে ঘুমিয়ে পড়ে।
_________________________
তিয়াশা ব্যাগটা আস্তে আস্তে খোলে। খুলে দেখে সেটার ভিতর ৫ বক্স চকলেট। বেশ কয়েকটা গল্পের বই। প্রায় ২০টার মতো কিটক্যাট আর ৩০টা ডেইরি মিল্ক চকলেট। কয়েকটা বেশ বড় ডার্ক চকলেট। সবগুলো বের করে রাখে বেডে।
তারপর ব্যাগের একদম নিচে দেখে দুটো প্যাকেট। ও সেই প্যাকেট দুটো ও বের করে। প্রথমেই একটা প্যাকেট খোলে। খুলে দেখে সেটাতে দুটো লং ড্রেস। একটা ব্ল্যাক এন্ড রেড কম্বিনেশন আর একটা অফওয়েট এন্ড ব্লু। সাথে দুটো জিন্স এবং দুটো স্কার্ফ। আর রয়েছে বেশ কয়েক জোড়া স্টোনের ইয়ার রিং। একটা ব্রেসলেট যেটাতে লাভ আঁকা। তিয়াশা এগুলো দেখে খুব খুশি হয়।
আরেকটা প্যাকেটও খোলে। সেটাতে ওর
মায়ের জন্য দুটো ড্রেস। ওর বাবার জন্য একটা ঘড়ি এবং পারফিউম।
ও ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে প্রায় ১ টা বাজে। ওর কালকে সকালে হসপিটালে যেতে হবে। তাই সবকিছু গুছিয়ে ও শুয়ে পড়ে।
শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে নাহিনকেও কিছু গিফট করা দরকার। সে তার জন্য কতকিছু এনেছে। তার মা-বাবার জন্য ও কত কিছু এনেছে।
তিয়াশার চকলেট খুব ফেবারিট। সে খুব চকলেট খায়। চকলেট পাগলী যাকে বলে আর কি। সে এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন সকালে,,
তিয়াশা ঘুম থেকে উঠে পড়ে খুুব তাড়াতাড়ি। আজ একটু আগেই যেতে হবে তার। সে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়। নাহিনের দেওয়া অফওয়েট এন্ড ব্লু লং ড্রেস পরে আর জিন্স এবং ম্যাচিং স্কার্ফ। সাথে ব্ল্যাক লেডিস স্নেকার্স।
তিয়াশা নিচে এসে তার মায়ের কাছে তাদের গিফট গুলো দেয়। তিনি খুব খুশি হোন। তার খুব পছন্দ হয়। তিয়াশা আর কথা বাড়ায় না। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট শেষ করে তার মাকে একটা চুমু দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
তিয়াশা হসপিটালে এসে হসপিটালের রিসেশনে একটা কাজ শেষ করে। ততক্ষণে নেহা আসে তিয়াশার সবকিছু নিতে। নেহা তিয়াশার কেবিনে তার জিনিসগুলো রেখে বেড়িয়ে যায়। তিয়াশা তার কেবিনে ঢুকে দেখে তার চেয়ারে কেউ উল্টো দিকে ফিরে বসে আছে।
সে বেশ কয়েকবার ডাক দেয়। কিন্তু কোনো সাড়া পায় না। সাড়া না পেয়ে সামনে যেয়ে দেখে…
চলবে….!!
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। জানাবেন আপনাদের কেমন লাগলো। ধন্যবাদ সবাইকে ]
প্রথম পর্বের লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2887675074794559/