মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৫
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার
?
?
তিয়াশা হাতের পালস চেক করে দেখে পালস রেট অনেক কম। উনার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তিয়াশা দ্রুত নার্সকে বলে অক্সিজেন মাস্ক পড়ায়।
তিয়াশা গিয়ে আয়াশের সামনে দাঁড়ায়। আয়াশ মাথা নিচু করে বসে আছে। ওর চোখ পানিতে ছলছল করছে মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি নামবে।
তিয়াশা নরম স্বরে আয়াশকে ডাক দেয়। আয়াশ মাথা তুলে তিয়াশার দিকে তাকায়। আয়াশের পাশেই ওর ছোট বোন প্রিয়া বসে আছে।
তিয়াশা আয়াশকে তার কেবিনে আসতে বলে চলে যায়। আয়াশ আর দেরি না করে তিয়াশার পিছন পিছন তার কেবিনে ঢুকে।
মিফতা আয়াশকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। আয়াশ একটু অস্বস্তিতে পড়েছে।
মিফতাঃ আয়াশ ভাইয়া!
অর্পণঃ তুই ওকে চিনিস??
মিফতাঃ আব…না…মানে আসলে হ্যাঁ।
অর্পণঃ কিভাবে?
মিফতাঃ এটা তো তিয়াশার ক্লাসমেট।
অর্পণঃ ওহ আচ্ছা।
তিয়াশাঃ তোরা দুইজন একটু বাহিরে যা। ওনার সাথে আমার একটু কথা আছে।
মিফতা আর অর্পণ কেবিনের বাহিরে গিয়ে বসে।
তিয়াশাঃ বসুন। প্রিয়া বসো!
প্রিয়াঃ আ…আপু আ..আ…আমার আম্মু (অঝোরে কাঁদছে)
তিয়াশা ওঠে গিয়ে প্রিয়ার সামনে দাঁড়াতেই ও তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে। তিয়াশা ওর মাথায় হাত দিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। তিয়াশা টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে প্রিয়ার হাতে দেয়। প্রিয়া পানিটা খায়। তিয়াশা গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে বলতে শুরু করে,“ আপনার মায়ের আগের রিপোর্টগুলো এনেছেন?”
আয়াশাঃ হ্যাঁ।
তিয়াশাঃ দিন।
আয়াশ তিয়াশাকে আগের রিপোর্টগুলো দেয়। তিয়াশা রিপোর্টগুলো বেশ কিছুক্ষণ যাবত চেক করে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে। তার মধ্যেই নেহা কেবিনে প্রবেশ করে।
নেহাঃ ম্যাম!
তিয়াশাঃ আমি যেই ইনজেকশনটা দিতে বলেছি সেটা দাও। আমি আসছি।
নেহাঃ ওকে।
নেহা চলে যায়। তিয়াশা প্রিয়াকে একটু বাহিরে গিয়ে মিফতাদের সাথে বসতে বলে। ওর সামনে বললে হয়তো ও কান্নাকাটি করবে। প্রিয়া আয়াশের দিকে তাকায় আয়াশ চোখের ইশারায় শান্ত হয়ে গিয়ে বসতে বলে।
প্রিয়া চলে গেলে তিয়াশা বলতে শুরু করে,“ উনার হার্টে তিনটি ব্লক। আপনি এতদিন ডাক্তার দেখিয়েছেন। কোনো ডাক্তার বলেনি সার্জারি করানোর কথা?”
আয়াশঃ উনারা বলেছে ঔষধ খেতে।
তিয়াশাঃ What the hell man! আপনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজার যথেষ্ট শিক্ষিত একজন ব্যাক্তি। উনারা বললো আর আপনার চোখে পড়েনি আপনার মায়ের অবস্থার অবনতি??
আয়াশঃ আমি এত সময় দিতে পারিনা। খুব ব্যাস্ত থাকি সারাদিন!
তিয়াশাঃ নিজের পরিবারের জন্যও বপনার সময় নেই। বাহ্। যাই হোক সেটা আপনার ইচ্ছে আমি কেউ নই এসব বলার। আমি উনাকে এক সপ্তাহ অবজারভেশনে রাখব পরে উনার ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে হবে। ততোদিন উনি হসপিটালেই এডমিট থাকবে। এখন কিছু মেডিসিন লাগবে আমি লিখে দিচ্ছি আপনি যেভাবেই হোক সেগুলো আধা ঘন্টার মধ্যে আমাকে এনে দিবেন। আর আগামীকাল নেহা কিছু কাগজপত্র দিবে সেগুলো ভালো করে পড়ে সাইন করে দিবেন। আর উনার বেশ কিছু টেস্ট করাতে হবে। আমি নেহাকে সবকিছু বলে দিব ও সব বুঝিয়ে দিবে। আর আপনার বোনকে একটু সাহস জোগাবেন ছোট মানুষ ভয় পেয়ে গেছে মায়ের এমন অবস্থা দেখে। আপাদত কিছুদিনের জন্য একটু পরিবারের দিকে নজর দিন। আপনার বড় বোন কোথায়?
আয়াশঃ আপু দুবাইতে থাকে। আমি আগামীকাল কল দিব যদি আসতে পারে তাহলে আসবে!
তিয়াশাঃ ওহ আচ্ছা। এখন আপনি আসতে পারেন। আর আমার জানা মতে আপনাদের বাসায় কেউ থাকেনা আপনারা আর কাজের লোক ছাড়া তাই আপনার ছোট বোনকে নিয়ে আসবেন সাথে করে। একা রেখে আসা ঠিক হবে না।
আয়াশঃ একটা কথা বলব?
তিয়াশাঃ জ্বী বলুন!
আয়াশঃ যত টাকা লাগে আমি দিতে রাজি তাও আমার মাকে সুস্থ করে তুলো প্লিজ।
তিয়াশাঃ মানুষ মরনশীল। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকেই গ্রহণ করতে হবে। আমরা কেউ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নই। উনার হায়াত যতদিন আছে উনি ততোদিনে বাঁচবেন। হ্যাঁ তবে আমি চেষ্টা করতে পারি উনি যেন ভালোভাবে থাকেন।
আর রইলো বাকি টাকা। টাকা দিয়ে সবকিছু হয় না। আপনি অন্তত আমাকে টাকার গরম দেখাবেন না। যোগ্যতার প্রশ্ন এখানে। টাকা দিয়ে সম্পর্ক তৈরি হয় না শেষ ও হয় না। টাকার জন্য তৈরি এবং শেষ হয়। তিয়াশা খানের টাকা দিয়ে আপনার মতো ১০ টা আয়াশকে তিয়াশা খান কিনতে পারবে। তিয়াশা খান এখন সেই অবস্থানে পৌঁছিয়েছে।
আয়াশঃ আমার একটা স্পেশাল কেবিন লাগবে!
তিয়াশাঃ আপনি রিসেশনে টাকা জমা দিয়ে দিবেন আমি বলছি স্পেশাল কেবিনে শিফট করতে। এখন বোনকে নিয়ে বাসায় যান আমি আছি আপনার মায়ের সাথে।
আয়াশ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। আল্লাহ হাফেজ বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখে প্রিয়া মিফতার সাথে বসে আছে। তিয়াশাও কেবিন থেকে বের হয়।
তিয়াশাঃ প্রিয়া তোমার মাকে দেখে এখন তোমার ভাইয়ার সাথে বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও। চিন্তা করোনা আমি আছি। আর আসার সময় প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে এসো।
প্রিয়াঃ আচ্ছা আপু।
প্রিয়া আর আয়াশ তাদের মাকে দেখতে যায়। তিয়াশা পেছন ফিরে কেবিনে ঢুকতে নিলে মিফতা পিছন থেকে ডাক দেয়।
মিফতাঃ বাসায় যাবি না?
তিয়াশাঃ তোরা দুইজন যা। বাসায় গিয়ে রেস্ট নে। আমি সকালে আসব। উনার রিপোর্টগুলো নিয়ে একটু স্টাডি করতে হবে।
মিফতাঃ আচ্ছা। সাবধানে থাকিস বনু।
অর্পণঃ Bye.. take care..
মিফতা আর অর্পণ চলে যায়। আয়াশ আর প্রিয়া ও চলে যায়।
তিয়াশা গিয়ে আয়াশের মাকে স্পেশাল কেবিনে দিতে বলে। সেখানে দুটো বেড আছে। একটা বড় বারান্দা আর একটা এটাচ ওয়াশরুম। এসি রুম। বেডের সামনে টিভি রাখা। দুইটা সোফা। অনেকটা বাসার নিজেদের ব্যাক্তিগত রুমের মতো। একটা বেডে আয়াশের মা আরেকটা বেড খালি।
তিয়াশা গিয়ে উনার মাথার কাছে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে নেহাকে নিয়ে নিজের কেবিনে যায়। আর দুইজন নার্সকে উনার কাছে থাকতে বলে।
নেহাঃ ম্যাম। এই কেসটা বেশ ক্রিটিকাল!
তিয়াশাঃ হ্যাঁ। উনার তো ডায়বেটিস আছে সাথে প্রেশারও আছে। তুমি খাবারদাবারের দিকে খেয়াল রেখো যেন এগুলো কন্ট্রোলে থাকে। আর উনি যেন একটু আনন্দে থাকে অপারেশন নিয়ে যেন ভয় না পায় সে সম্পর্কে একটু উনাকে বুঝাবা।
নেহাঃ অবশ্যই।
সকালে,,
তিয়াশা বাসায় এসে দেখে মিফতা ঘুমচ্ছে। অর্পণকে দেখে এসেছে নিচে বসে টিভি দেখছে। তিয়াশার মা আর চাচি কয়েকজন সার্ভেন্টকে নিয়ে রান্না করছে।
তিয়াশা গিয়ে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়। একজন সার্ভেন্ট এসে ব্রেকফাস্ট দিয়ে যায়। ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয় হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
মিফতা ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় দেখে তিয়াশা রেডি হচ্ছে।
মিফতাঃ তুই কখন এলি? আবার চলে যাচ্ছিস!
তিয়াশাঃ অনেকক্ষণ হয়েছে। দুপুরে আবার আসব তোদের সাথে লাঞ্চ করব আজ।
মিফতাঃ তোর ফ্রেন্ডরা এসে তোকে যদি না পায়?
তিয়াশাঃ তোরা আছিস তো। আর আমিতো আসবই!
মিফতাঃ ব্রেকফাস্ট করেছিস??
তিয়াশাঃ হ্যাঁ। আচ্ছা যাই। পরে দেখা হবে।
মিফতাঃ Okay bye…
তিয়াশা নিচে যায়। আর মিফতা যায় ফ্রেশ হতে। তিয়াশা অর্পণকে সব বুঝিয়ে বলে তার মায়ের কাছে গিয়ে মাকে একটা কিস করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
হসপিটালে এসে আগে আয়াশের মায়ের কাছে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে তিনি শুয়ে মেয়ের সাথে কথা বলছেন আর আয়াশ সোফায় বসে মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে।
মিসেস আহমেদঃ এসো মা! তুমি ই নাকি আমার চিকিৎসা করছো?
তিয়াশাঃ হ্যাঁ আন্টি। আপনার এখন কেমন লাগছে?
মিসেস আহমেদঃ একটু ভালো লাগছে আগের থেকে।
প্রিয়াঃ আপু বসো।
তিয়াশাঃ না না! সমস্যা নেই আপু। তুমি বসো। আমি রাউন্ডে যাব। একটু কাজ আছে!
নেহাঃ ম্যাম চলুন। ৪০৩ নাম্বার বেডের পেশেন্টের অবস্থা ভালো লাগছে না। (দৌঁড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বলে)
তিয়াশাঃ কি?? চলো তাড়াতাড়ি।
তিয়াশা কিছু বলার সু্যোগ পায় না। দ্রুত চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর রাউন্ড শেষ করে এসে নিজের কেবিনে বসে এক কাপ ব্ল্যাক কফি দিতে বলে।
কফি খাওয়া শেষ করে তিয়াশা আয়াশের মায়ের রিপোর্ট গুলো নিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর তিয়াশার ফোনে একটা কল আসে। সে না দেখেই কলটি রিসিভ করে দেখে নাহিন কল করেছে।
নাহিনঃ কিরে! কই তুই?
তিয়াশাঃ যেখানে থাকার কথা আমার সেখানেই আছি।
নাহিনঃ আমাদেরকে ইনভাইট করে নিজেই উধাও। তুই সেখানেই থাক আমরা চলে যাচ্ছি। টাটা।
তিয়াশাঃ আরে আরে রাগ করিস কেনো ইমার্জেন্সি পড়ে গেছে তাই।
তিয়াশা কথা বলতে বলতে উল্টোদিকে ঘুরে যায়। তখন ওর কেবিনে আয়াশ আসে। তিয়াশা মনে করে নেহা এসেছে।
নাহিনঃ ওকে লাপিউ।
তিয়াশাঃ লাপিউ টু
তিয়াশা পেছন ফিরে দেখে…..
চলবে….!!
[কি মনে হয়? নাহিন-তিয়াশা জুটি নাকি আয়াশ-তিয়াশা জুটি। নাকি অন্য কারো আগমন ঘটবে? মতামত জানাবেন অবশ্যই। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ]
চতুর্থ পর্বের লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2891201004441966/