মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৮

0
2396

মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ৮
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার

?
?

তিয়াশা হসপিটালে এসে নিজের কেবিনে ঢুকে দেখে আয়াশ বসে আছে। আর নেহা দাঁড়িয়ে আছে। ও কেবিনে ঢুকতেই নেহাকে চোখের ইশারায় বললে নেহা বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

তিয়াশা গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে। তারপর আয়াশকে জিজ্ঞেস করে,“কি হয়েছে?”

আয়াশঃ তোমার সাথে কথা আছে আমার! প্লিজ একটু শোনো!

তিয়াশাঃ এখন টাইম নেই। আর আমি জানি আপনি কি বলবেন তাও যেহেতু বলতে চাচ্ছেন ঠিক আছে শুনব। আমি এখন রাউন্ডে বের হবো। আর আপনার মায়ের অবস্থা বেশি ভালো না কাল পরশুর মধ্যেই হয়তো অপারেশন করাতে হবে। আপনি টাকা রেডি রাখবেন আর মানসিক ভাবে আপনি এবং আপনার বোন তৈরি থাকবেন।

আয়াশঃ আপুকে কল দিয়েছি। ও আগামীকাল সকালে দেশে পৌঁছাবে। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো।

তিয়াশাঃ এখন যেতে হবে। আর আপনার মায়ের দুপুরে খাওয়ার সময় হয়েছে গিয়ে দেখুন। আমি বাকি গুলো শেষ করে আসছি।

তিয়াশা আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। ওর চোখদুটো পানিতে টইটম্বুর। কখন যেন মুক্তা ঝড়ে। তিয়াশা নিজের হাত মুঠো করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে রাউন্ডে বের হয়।

আয়াশ তিয়াশার রুমে কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর উঠে তার মায়ের কাছে যায়। গিয়ে দেখে একজন নার্স তার মাকে খাওয়াচ্ছে আর প্রিয়া পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াশ গিয়ে টুলে বসে তার মায়ের হাত ধরে একটা চুমু দেয় সেখানে। তার মা তার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।

দুপুর ২ টা,,

প্রায় দুইঘণ্টা পর রাউন্ড শেষে তিয়াশা আয়াশের মায়ের কেবিনে এসে দেখে উনি শুয়ে আছে। প্রিয়া অপর বেডে শুয়ে মোবাইল টিপছে আর আয়াশ সোফায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে।

তিয়াশা গিয়ে আয়াশের মায়ের মাথায় হাত দেয়। নেহা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। উনি চোখ খুলে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।

তিয়াশাঃ আন্টি আপনার অপারেশন আগামী পরশু দিন করাতে হবে। চিন্তা করবেন না একদম আমি আছিতো। কিচ্ছু হবেনা আপনার। শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন। ভেবেছিলাম এক সপ্তাহ অবজারভেশনে রাখব কিন্তু আপনার রিপোর্ট নরমাল না তাই আগেই করাতে হবে। কোনো টেনশন করবেন না সব ঠিকঠাক হবে। আল্লাহ যা করবেন সবার ভালোর জন্য ই। আপনি ভরসা রাখুন শুধু।

তিয়াশা প্রেসকিপশন চেক করে যা যা প্রয়োজনীয় সব লিখে নেহাকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। যাওয়ার সময় চোখ যায় আয়াশের দিকে। আয়াশ যেভাবে শুয়ে আছে এভাবে শুয়ে থাকলে ঘাড়ে ব্যাথা করবে। তিয়াশা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্রিয়াকে ডাক দেয়।

প্রিয়াঃ হ্যাঁ আপু বলো!

তিয়াশাঃ তোমার ভাইয়ার মাথার নিচে একটা বালিশ দাও। নয়ত ঘাড়ে ব্যাথা করবে!

প্রিয়াঃ আচ্ছা।

তিয়াশা তার কেবিনে চলে যায়। নেহাও কিছুক্ষণ পর তিয়াশার কেবিনে আসে তিয়াশার লাঞ্চ নিয়ে। তিয়াশা লাঞ্চ শেষ করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। নেহা ডিউটিতে আছে।

_________________________

মিফতা লাঞ্চ করে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে একটা মুভি দেখতে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে। তার ফোনে বেশ কয়েকবার একটা নাম্বার থেকে কল আসে ওর কানে হেডফোন লাগানো তাই শুনতে পায় না।

হঠাৎ তার চোখ যায় পাশে থাকা মোবাইল বাজছে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। ও কলটি রিসিভ করে।

নাহিনঃ এতক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে? (ধমক দিয়ে)

মিফতাঃ কে আপনি?

নাহিনঃ তোমার জামাই।

মিফতাঃ আমার কোনো জামাই নেই! আমি পিউর সিঙ্গেল।

নাহিনঃ নাহিন কি হয় তোমার?

মিফতাঃ ভাইয়া (শয়তানি হাসি দিয়ে)

নাহিনঃ নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। জামাইকে কেউ ভাই ডাকে??

মিফতাঃ কেউ না! আমি ডাকি।

নাহিনঃ বিয়ের আগেই আমার একটা মিনি হার্ট অ্যাটাক করালা ভাইয়া ডেকে! বিয়ের পরে না জানি কি করো৷ (অসহায় ভাবে)

মিফতাঃ আমি এমনই। এভাবে ভালোবাসতে হবে। যদি পারেন তাহলে বলুন নয়ত বিয়ে তো হয়নি মানা করে দিতে পারেন।

নাহিনঃ বেশি কথা বলো কেন এতো? থাপ্পড় খেলেই ঠিক হয়ে যাবা! কম কথা বলবা।

মিফতাঃ এ্যাঁ? আপনি দিবেন আমাকে থাপ্পড়? হিহি

নাহিনঃ হুম। সামনে পাই আগে তারপর দেখবা কি করি! কেমন আছো বলো??

মিফতাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

নাহিনঃ আমিতো বিন্দাস আছি। কয়েকদিন পর আমার বিয়ে।

মিফতাঃ লজ্জা করছে না এমনভাবে বলছেন যে!

নাহিনঃ কিসের লজ্জা? আমার বিয়ে আমি নাচব এতে লজ্জার কি আছে!

মিফতাঃ ইশশ! আচ্ছা যা ইচ্ছে করিয়েন। এখন রাখি টাটা। পরে কথা হবে।

নাহিনঃ ওকে টাটা জান।

_________________________

তিয়াশা ল্যাপটপে কাজ শেষ করে উঠে একটু ফ্রেশ হয়ে বের হয়। নেহা রুমে এসে তিয়াশার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তারপরে বেরিয়ে যায়।

বিকাল ৪ টা,,

তিয়াশা রেডি হচ্ছে বাসায় চলে যাবে। এমন সময় আয়াশ তার কেবিনে ঢুকে।

আয়াশঃ ফ্রি আছো?

তিয়াশাঃ বাসায় যাচ্ছি। কিছু বলবেন??

আয়াশঃ সকালে যে বলেছিলাম!

তিয়াশাঃ ওহ আচ্ছা। বসুন

তিয়াশা নিজের চেয়ারে বসলো। আয়াশ তিয়াশার সামনে বসলো। দুজনেই কিছু বলছে না। দুজনেই কিছুক্ষণ নিরব থাকে। আয়াশ বলতে শুরু করে।

আয়াশঃ কেমন আছো?

তিয়াশাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন আমার বাসায় যেতে হবে কাজ আছে।

আয়াশঃ তুমি মনে হয় নতুন রিলেশনে আছো!

তিয়াশাঃ আমি রিলেশনে থাকি আর না থাকি তাতে আপনার তো সমস্যা হওয়ার কথা না মিস্টার আয়াশ আহমেদ।

আয়াশঃ আমি তোমাকে আজও ভালোবাসি।

তিয়াশাঃ তো?

আয়াশঃ চলো নতুন করে শুরু করি আবার সব।

তিয়াশাঃ আপনার মতো একজন ব্যাক্তি তিয়াশা খানের যোগ্য না। আপনি আমার জীবনসঙ্গী হওয়ার সেই যোগ্যতা রাখেন না।

আয়াশঃ তুমি আমাকে যোগ্যতা দেখাচ্ছো?? তুমি জানো আমি কে?

তিয়াশাঃ আপনি দেশের স্বনামধন্য একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজার। মৃত বিজনেসম্যান আদিত আহমেদের একমাত্র ছেলে। আর তিয়াশা খানের দুঃস্বপ্ন। আপনি কে সেটা আমি জানি। আমি কে সেটা আপনি জানেন না!

আয়াশঃ আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।

তিয়াশাঃ আমি চাই না।

আয়াশঃ আমি ভালোবাসি তোমাকে।

তিয়াশাঃ আমি বাসিনা। একটা সময় বাসতাম। এখন শুধু ঘৃণা করি।

আয়াশঃ আমাকে ভালো না বাসলে আমার মায়ের এত সেবা করছো কেন?

তিয়াশাঃ নিয়তি আহমেদ আপনার মা। আমার পেশেন্ট। উনার চিকিৎসা করার দায়িত্ব আমার। এটা আমার পেশা। মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া ই আমার কাজ। উনার জায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি ঠিক এই কাজটাই করতাম। আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার কিছু নই। বারবার এসব কথা বলে বিভ্রান্তিতে ফেলবেন না।

আয়াশঃ তাহলে ক্ষমা করছো না তুমি আমায়?

তিয়াশাঃ ক্ষমা আমি অনেক আগেই করেছি আপনাকে তবে পুনরায় বিশ্বাস করে বোকামি করতে পারব না। আমার আত্মসম্মান একটু বেশি তাই আপনাকে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি জানতাম আপনি আমাকে এই কথাগুলোই বলবেন। আপনি যেদিন সম্পর্কটা ভেঙে দিয়েছিলেন যোগ্যতার দোহাই দিয়ে সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি জীবনে এমন জায়গায় পৌঁছাব আপনি বাধ্য হবেন মাথা নত করতে। আপনি আমাকে সেইদিন যেই কথা গুলো বলেছিলেন ভেবে নিন আমিও ঠিক সেগুলোই বলছি। আমার স্ট্যাটাস আর আপনার স্ট্যাটাস ম্যাচ করেনা। আমার বাবার পরিচয় বাদ ই দিলাম। আমি তিয়াশা খান আপনার মতো ১০ টা আয়াশ আহমেদকে কিনতে পারব।

আপনি সেদিন শুধু আপনার বাবার কথাগুলোর মূল্য ই দিলেন। আপনি পারতেন তাকে বুঝিয়ে বলতে। আমার ভালোবাসা আপনার চোখে পড়েনি। আমার কেয়ার আপনার চোখের পড়েনি। লজ্জা হওয়া উচিত আপনার।

শুনুন মুর্খ মেয়েটাও নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে জানে। আর টাকাওয়ালা মা-বাবার একমাত্র মেয়েটাও টাকার জন্যই ধনী ছেলেদের ভালোবাসে। সবাই একরকম নয়। সবার ব্যাক্তিত্ব আলাদা।

আমার শেষ কথা আপনি এই বিষয়ে আমার সাথে আর কোনো কথা বলবেন না। আমার দ্বারা সম্ভব নয় আপনাকে জীবনসঙ্গী করা। আমি আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছি আমিও পারি। এটাই আমার স্বার্থকতা আর আপনার ব্যর্থতা। আপনার মায়ের খেয়াল রাখবেন। আশা করি যা বলেছি তা মনে থাকবে। আল্লাহ হাফেজ।

নেহা কেবিনে ঢুকে দেখে আয়াশ মাথা নিচু করে বসে আছে। তিয়াশা বের হয়ে যাচ্ছে কেবিন থেকে।

নেহাঃ ম্যাম।

তিয়াশাঃ বলো।

নেহাঃ আজ কি আসবেন?

তিয়াশাঃ কোনো এমার্জেন্সি থাকলে কল দিবে। আর সমস্যা হলে আসব। নয়ত সবকিছু ক্লিয়ার করে দিয়ে গেলাম। আর জানোইতো বাসায় অনুষ্ঠান আবার সামনে অপারেশন উনার মায়ের তাই একটু বিজি।

নেহাঃ ওকে ম্যাম।

তিয়াশাঃ উনি গেলে আমার কেবিনটা লক করে দিও।

নেহাঃ ওকে।

তিয়াশা বের হয়ে যায় তার সাথে সাথে আয়াশও বেরিয়ে যায়। নেহা দরজা লক করে রেখে যায়।
তিয়াশা বাসায় গিয়ে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে চায়। রুমে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার অন করে নিচে ধপ করে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে।

প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা সে ই একমাত্র বুঝে যে হারিয়েছে। প্রিয় মানুষগুলো জীবনের অনেকটা জুড়ে থাকে। তারা একটা সময় অভ্যাসে পরিণত হয়। তাদের সাথে কথা না বললে ভালো লাগে না। তাদের সাথে ঝগড়া না হলে ভালো লাগে না। সারাদিন যত কিছুই হোক না কেন দিনশেষে প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসতে ভুল হয় না। তাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না।

আর সে যখন ছেড়ে চলে যায় তখন মনে হয় কি যেন নিয়ে চলে গেছে। খালি খালি লাগে তখন। তাকে ছাড়া থাকতে বড্ড কষ্ট হয়। মনে হয় ছুটে গিয়ে বলতে তোমায় ছাড়া থাকতে পারছিনা আর। কষ্ট হচ্ছে আমার। কিন্তু সেই সুযোগটা আর থাকেনা।

তিয়াশা ঘন্টাখানিক পর শাওয়ার শেষে বের হয়। এতক্ষণ শাওয়ার নেওয়ার ফলে আর কান্নার ফলে চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। তিয়াশা বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে। ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। নাকের ঢগা অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে মনে হচ্ছে লাল মরিচ লাগিয়ে দিয়েছে কেউ।

মিফতা রুমে ঢুকে। তাকে দেখে তিয়াশা তাড়াতাড়ি চোখমুখ মুছে নেয় তা মিফতার চোখ এড়ায় না। তিয়াশা গিয়ে বেডে বসে হাতে ফোন নেয়। তিয়াশার চোখ যে লাল তা ও মিফতার চোখ এড়ায় না।

মিফতা তিয়াশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওর সামনে বসে বলতে শুরু করে..

মিফতাঃ কি হয়েছে তোর?

তিয়াশাঃ কিছু না।

মিফতাঃ চোখমুখের এই অবস্থা কেন তোর? বল আমাকে কি হয়েছে? বড়মাকে ডাক দেই? ভাইয়াকে ডাক দেই? আম্মুকে ডাক দেই? প্লিজ বল কি হয়েছে? (উত্তেজিত হয়ে)

তিয়াশাঃ কাউকে ডাক দিতে হবে না। আমি ঠিক আছি বললাম তো।

মিফতাঃ ওকে। আল্লাহ হাফেজ।

তিয়াশাঃ কোথায় যাচ্ছিস?

মিফতাঃ বাসায় চলে যাব।

তিয়াশাঃ কেন?

মিফতাঃ এমনি।

তিয়াশা গিয়ে মিফতার সামনে দাঁড়ায়। মিফতার হাতে ধরে বেডে নিয়ে বসিয়ে আজকের সব ঘটনা বলে। বলা শেষ হলে মিফতা তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে। তিয়াশাও মিফতাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে।

মিফতা তিয়াশাকে কিছু বলে না। কাঁদলে হয়তো হালকা লাগবে সেটা ভেবে। মিফতা কিছুক্ষণ পর তিয়াশাকে উঠিয়ে সোজা করে বসিয়ে বলে…

মিফতাঃ যা হবার তা হয়ে গেছে। এসব নিয়ে আর ভাবিস না। তুই যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস। আমি তোর পাশে আছি।

তিয়াশাঃ লাঞ্চ করেছিস?

মিফতাঃ না। চল একসাথেই গিয়ে খাই।

তিয়াশাঃ এখনও খাস নি?? বিকেল হয়ে গেছে! খাস নি কেন তুই?? তুই গিয়ে খেয়ে আয়। আমি পরে খাব।

মিফতাঃ নাহ! আমিও এখন খাব আর তুইও আমার সাথেই নিচে নামবি।

তিয়াশা আর মিফতা নিচে নেমে খেতে বসে। খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে। লিয়া আর মায়া কাজ শেষ করে এসে তাদের পাশে বসে। অর্পণ আর সিফাত ও এসে পড়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ বসে তারা গল্প করে।

রাত ৯ টা,,

রিহান খান অফিস থেকে বাসায় ফিরে। উনার হাতে কয়েকটা প্যাকেট। দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্যাকেটগুলো খাবারের। রিহান খান হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকে দেখে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে।

তাকে ঢুকতে দেখে তিয়াশা দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। বাবা তার কপালে একটা গভীর চুমু দেয়। তার মা এসে তার বাবার হাত থেকে খাবারের প্যাকেটগুলো নিয়ে টেবিলে রাখে।

মিফতাঃ বড় বাবা কি এনেছো??

রিহানঃ ফুচকা , বার্গার , পিৎজা, ফ্রাইড রাইস, চাউমিন এনেছি। আমি তোমার বড় মাকে বলেছিলাম রান্না না করতে আমি সবার জন্য বাহির থেকে খাবার আনব।

মায়াঃ এর জন্যই আপা রান্না করে নি।

মিফতাঃ ওহ আচ্ছা। তাহলে বড় বাবা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। আমরা সবাই একসাথে খাব আজকে।

রিহানঃ আচ্ছা। তোমরা বসো আমি আসছি।

রিহান খান ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে। সবাই ডিনার করতে বসে।

রিহানঃ সামনের সপ্তাহের মিফতার বিয়ে। কালকে থেকেই কেনাকাটা শুরু করে দিতে হবে। মায়া, লিয়া তোমরা তিয়াশা আর মিফতাকে নিয়ে শপিং শুরু করে দাও। বাকি দিকগুলো আমি, সিফাত আর অর্পণ দেখে নেব।

তিয়াশাঃ আমি কাল আর পরশু পারব না যেতে। পরশু আমার একটা সার্জারি আছে। বিয়ের রয়েছে আরো ১১ দিন। দুইদিন পর থেকে শুরু করো কিন্তু বুকিং যা যা করতে হবে সেগুলো শুরু করে দাও।

রিহানঃ আমি কিন্তু তোমায় বলেছি মিফতার বিয়েতে তোমাকে থাকতে হবে।

তিয়াশাঃ বাবা আমি যেটা করি সেটা আমার কাজ। তোমরা জানো আমার কাজের ধরণই এমন। আমার হাতে কিছু থাকে না। এমার্জেন্সি কল আসলে আমাকে যেতে হবেই। পরশু সার্জারীটা আল্লাহর রহমতে ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে আর তেমন চিন্তা থাকবেনা। তারপরে পেশেন্টের সবকিছু আমি ডক্টর ফায়াজ আর ডক্টর রুশাকে বুঝিয়ে দিয়ে আসব। তারা কাল জয়েন করবে। কাল তাদের ছুটি শেষ হবে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমিতো আছি ই। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব বিয়েতে থাকার। যতই হোক একমাত্র কাকাতো বোন আমার। আমারও তো অনেক প্ল্যান আছে।

সিফাতঃ বুঝতে পেরেছি মামনী। খেয়ে গিয়ে ঘুমাও এখন।

মিফতাঃ আমার খাওয়া শেষ। তিয়ু শেষ করে উপরে আয়।

তিয়াশাঃ কেন গো? নিজের বিয়ের কথা শুনে লজ্জা লাগছে বুঝি??

মিফতাঃ আম্মু!

অর্পণঃ আম্মু তোকে কি করছে?

মিফতাঃ তুমি থামো!

তিয়াশাঃ চল যাই।

তিয়াশা আর মিফতা খাওয়া শেষ করে উপরে চলে যায়। গিয়ে কিছুক্ষণ বসে গল্প করে শুয়ে পড়ে। দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে….

চলবে…….!!

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ]

সপ্তম পর্বের লিংকঃ

https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2895127294049337/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here