মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১২

0
3118

মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১২
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার

?
?

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মিফতা আর তিয়াশা ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে ব্রেকফাস্ট শেষ করে তিয়াশা চলে যায় হসপিটালে আর মিফতা ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছে।

লিয়া আর মায়া রান্না করছে। রিহান খান অফিসে।সিফাত খানও অফিসে। অর্পণ বাড়ি সাজানোর জন্য যে লোক এসেছে তাদের সাথে দেখাশোনা করছে।

তিয়াশা হসপিটালে গিয়ে আয়াশের মায়ের চেক-আপ করে তারপর রাউন্ডে বের হয়। রাউন্ড শেষে নিজের কেবিনে আসে।

দুপুরে,,

সিফাত খান আর রিহান খান বাসায় চলে এসেছে। তাদের বাড়িতে পুরোদমে কাজ চলছে। আত্মীয় স্বজনরাও অনেকে চলে এসেছে। সবাই খুব ব্যাস্ত এ বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

_________________________

দেখতে দেখতে পার হয়ে যায় বেশ কয়েকটা দিন। তিয়াশা কয়েকদিনের জন্য হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়েছে। আয়াশের মা ও অনেকটা সুস্থ এখন। উনাকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়েছে।

আগামীকাল মিফতার গায়ে হলুদ। বাড়ি ভর্তি লোকজন। মিফতার ফ্রেন্ডরা, তিয়াশার ফ্রেন্ডরা, অর্পণের ফ্রেন্ডরা সবাই একসাথে। তিয়াশার ফ্রেন্ডরা তিয়াশাদের বাড়িতে কয়েকজন আর নাহিনদের বাড়িতে কয়েকজন কারণ তারা দুই তরফ থেকেই দাওয়াত পেয়েছে।

তিয়াশার রুমে,,

তিয়াশার সব মেয়ে ফ্রেন্ডরা বসে আছে। মিফতার কয়েকজন ফ্রেন্ডও এসেছে। ছেলেরা ছাদে আর মেয়েরা বাড়িতে। তাদের কয়েকজন ফ্রেন্ড তিয়াশার রুমে। লিমা, ইয়াশা, নিরা (মিফতার ফ্রেন্ড) বসে আড্ডা দিচ্ছে। আতিকা ছাড়া তিয়াশার বাকি সব ফ্রেন্ডরা নাহিনদের বাসায়।

লিয়া এসে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডেকে যায়। তারা সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। নাহিন মিফতাকে কয়েকবার কল দিয়েছিল কিন্তু তিয়াশার কাছে মোবাইল থাকায় মিফতা ধরতে পারেনি।

তিয়াশার এক কথা বিয়ে হয়ে গেলে বাসর রাতে সব কথা বলবে। কয়েকদিন ই তো আছে পরে আর একসাথে এভাবে আড্ডা দেওয়া হবে না তাই এখন জামাইর সাথে কোনো কথা নেই।

পরদিন সকালে ৬ টা,,

তিয়াশাঃ মিফতা উঠ। সকাল ১০ টা বাজে। তাড়াতাড়ি উঠ। চাচি বকতেছে।

মিফতা হন্তদন্ত করে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৬.০৪ বাজে। রাগে কটমট করে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে দেখে তিয়াশা মিটমিট করে হাসছে। মিফতা একটা বালিশ নিয়ে তিয়াশার দিকে ছুঁড়ে মারে। তিয়াশা সেটা ধরে ফেলে।

মিফতাঃ এখন কয়টা বাজে??

তিয়াশাঃ ৬.০৬ বাজে।

মিফতাঃ তুই বললি কেন ১০ টা বাজে!

তিয়াশাঃ কখন?? আমিতো বললাম ৫.৩০ বাজে যেন তুই তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হতে পারিস।

মিফতাঃ মিথ্যে বলিস না!

তিয়াশাঃ ওখে!

মিফতা উঠে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা বাসন্তী কালারের জামদানী শাড়ি পড়ে। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা মিষ্টি কালারের লিপস্টিক। এতেই মিফতাকে বেশ দারুণ লাগছে।

মিফতার জোরাজুরিতে তিয়াশাকেও বাধ্য হয়ে শাড়ি পড়তে হয়। তিয়াশা পাতা কালারের একটা জামদানী শাড়ি পড়ে। চুলগুলো মাঝখান দিয়ে শিতি করে হাত খোঁপা করা। সামনের ছোট চুলগুলো বাতাসে খেলছে। চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপবাম।

লিয়া নিচ থেকে ডাক দিয়ে তিয়াশাকে বলে মিফতার খাবারটা রুমে নিয়ে খায়িয়ে দিতে। তিয়াশা আর আতিকা হাসতে হাসতে কথা বলছে আর নিচে নামছে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তিয়াশাকে দেখে কারো চোখ আটকে যায়।

তিয়াশা নিচে নেমে সোজা কিচেন থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আবার উপরে চলে যায়।

অর্পণঃ কি দেখছিস??

:- মেয়েটা কে?

অর্পণঃ আমার কাজিন তিয়াশা খান। ও একজন ডক্টর।

:- আমিও তো ডক্টর। এই মেয়েটার ছবি ই মামনী আমায় দেখিয়েছিল!

অর্পণঃ হ্যাঁ। তুই তো এখনও হসপিটালে জয়েন করিসনি। তোরা একই হসপিটালে। কিন্তু আমি অন্যকিছু বুঝতে পেরছি!

:- তাই! তাহলে তো ভালোই হয়। কি বুঝতে পেরেছিস?

অর্পণঃ পছন্দ হয়??

:- হ্যাঁ। আমি পারলে আজই বিয়ে করব!

অর্পণঃ আসছি আমি!

অর্পণ কিছু না বলে বাড়ির বাহিরে যায়। গিয়ে দেখে সিফাত খান আর রিহান খান দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

অর্পণ তাদের সব খুলে বলে। রিহান চিন্তায় পড়ে যায়। কিন্তু মনে মনে সবাই তিয়াশার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত। তিয়াশাকে রাজি করানো খুব কষ্টের কিন্তু তার পরিবার চায় তার বিয়েটা দিতে।

রিহান, অর্পণ আর সিফাত রুমে যায়। অর্পণ গিয়ে লিয়া আর মায়াকে ডেকে আনে। সিফাত ততক্ষণে সব খবর নিয়ে ফেলেছে। ছেলেটা খুব ভালো। তার পরিবারের সবাই খুব ভালো। রিহান মায়াকে বললে তিনি হঠাৎ এমন কথায় ভরকে যায় আবার খুব আনন্দিত হয় নিজের মেয়ের বিয়ে কিন্তু মনে মনে কোথাও একটা খুব কষ্ট হচ্ছে একমাত্র মেয়েকে ছাড়া কিভাবে থাকবে এটা ভেবে!

রিহান খান আর সিফাত খান ছেলের সাথে আর তার পরিবারের সাথে কথা বলে তারাও অনেকদিন যাবত প্রস্তাব দিতে চাইছিলো। তারা ভেবেছিলো খানি বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে প্রস্তাব দিবে কিন্তু তার আগেই প্রস্তাব আসে।

সবাই কয়েকঘন্টায় তিয়াশাকে না জানিয়ে তার বিয়েটা ঠিক করে ফেলে। তিয়াশা রাজি হবে কিনা তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায় আছে!

লিয়া, মায়া,অর্পণ, রিহান আর সিফাত মিফতাদের রুমে যায়। তারা রুমে প্রবেশ করলে বাকিরা বেড়িয়ে যায়। মিফতা উঠে গিয়া সবাইকে জড়িয়ে ধরে। মায়াকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলে তিনিও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে নেয়। মিফতা নিজেকে সামলে নিয়ে গিয়া বসে।

মায়া আর লিয়া বেডে বসে। রিহান, সিফাত আর অর্পণ গিয়ে সোফায় বসে। রিহান লিয়াকে চোখের ইশারায় কথাটা তিয়াশাকে বলতে বলে।

লিয়া উঠে গিয়ে মেয়ের কাঁধে হাত রাখে। তিয়াশা মোবাইল থেকে মুখ উঠিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি মুচকি হাসি দেয়। লিয়া মেয়ের পাশে বসে বলতে শুরু করে…

লিয়াঃ মেয়ে হয়ে যেহেতু জন্মেছো পরের ঘরে যেতেই হবে সেটা আজ হোক কিংবা কাল। আমরাও বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি এসেছি। এখানে এসে নতুন পরিবার পেয়েছি। নতুন মানুষদের সাথে পরিচয় হয়েছে। তাদের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।

দেখতে দেখতে তোমরা তিনজন কত বড় হয়ে গেলে। আজ বাদে কাল মিফতাও নতুন সংসারে চলে যাবে। তোমাকেও যেতে হবে। অর্পণের বন্ধুর তোমাকে দেখে পছন্দ হয়েছে। তোমার চাচ্চু খোঁজ নিয়ে সব জেনেছে। ছেলে খুব ভালো তার পরিবারও খুব ভালো।

এতটুকু বলে লিয়া থামে। অর্পণ বলতে শুরু করে।

অর্পণঃ ছেলে আমার স্কুল লাইফের বন্ধু। ছেলে রাফিদ শিকদার। বাবা শাহিল শিকদার এবং মা জারা শিকদার। মা- বাবার দুইমাত্র সন্তানের মধ্যে রাফিদ বড় তার ছোট বোন রুশা শিকদার ছোট। রুশা এবার ইন্টার ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী আর রাফিদ একজন হার্ট সার্জন।

তুই যেই হসপিটালে কর্মরত সেই একই হাসপাতালে রাফিদও জয়েন করবে রবিবার থেকে। রাফিদ খুব ভালো একটা ছেলে। সৎ একজন মানুষ। বন্ধুমহলে তার খুব ভালো সুনাম।

তোকে কেউ জোড় করছে না যে বিয়েটা করতেই হবে। তবে তুই তাদের পরিবারে গেলে তাদের পরিবারের সবাই খুব খুশি হবে এটা তাদের কথার ধরণ দেখেই বুঝা গিয়েছে। বাকিটা তোর উপর!

রিহানঃ মা-বাবা হিসেবে তোমার বিয়ে দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ছোট থেকেই তোমার কোনো কাজে আমি তোমাকে বাঁধা দেইনি এমনকি তোমার মাও দেয়নি। আমরা জানি তুমি ইচ্ছে করে কখনো ভুল পথে হাঁটবে না এবং হাঁটো নি। আমরা পেছন থেকে শুধু সাহস জুগিয়েছি বাকিটা পথ তুমি নিজের ইচ্ছেশক্তির মাধ্যমে অতিক্রম করেছো এবং আজ তুমি এই অবস্থানে। আমি খুব গর্ববোধ করি তোমার বাবা হতে পেরে। আমি গর্বিত তুমি আমার মেয়ে।

লিয়াঃ তুমি না চাইলে আমরা জোড় করব না। আর যদি তুমি মন থেকে নিজ ইচ্ছায় সম্মতি দাও তাহলে খান বাড়িতে কাল একটা না দুইটা বিয়ে হবে। রিহান খানের একমাত্র মেয়ে তিয়াশা খান আর সিফাত খানের একমাত্র মেয়ে মিফতা খানের। সময় চাইলে নিতে পারো তবে দ্রুত তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে। মিফতা চলো আমার রুমে। ওকে একটু একা ভাবতে দাও।

মিফতাঃ তিয়ু! মন থেকে ভেবে দেখ। তোর উপর নির্ভর করছে অনেককিছু। আর আমি জানি তোর উত্তরটা কি হবে তবে এখন বলব না। দেখি আমি আমার বোনকে কতটুকু চিনি!

তিয়াশা বেলকনিতে চলে যায়। মিফতারা সবাই বাহিরে চলে আসে রুমের। মিফতা গিয়ে অর্পণের রুমে বসে। বাকিরা নিচে যায় দেখতে সব ঠিকঠাক হচ্ছে নাকি!

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে ]

চলবে….!!

একাদশ পর্বের লিংকঃ

https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2904892796406120/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here