মেঘ_রোদ্দুর পর্বঃ১৫ (শেষ পর্ব)
#লেখিকা_তাজরিয়ান_সরকার
?
?
সকাল ৫ টা,,
খান বাড়িতে আজ বিয়ে। মিফতাকে আর তিয়াশাকে আতিকা আর নেহা অনেক কষ্ট করে ঘুম থেকে টেনে তুলে। তাদের এত আগে ঘুম থেকে ডেকে তোলার কারণে তাদের দুইজনের মুখেই বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।
আতিকা আর নেহা ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে তিয়াশাকে আর মিফতাকে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে আসতে বলে তারা নিচে চলে যায়। তখন অর্পণ রুমে ঢুকে…
তিয়াশা আর মিফতা তখনও বেডেই বসে আছে চোখ বন্ধ করে।
অর্পণঃ তোরা কি বসে ঘুমচ্ছিস?
তিয়াশাঃ না।
অর্পণঃ পেত্নী আর শাঁকচুন্নি বিদায় হবে আজ। আহা কত শান্তি আমার।
মিফতাঃ সত্যি ই তোমার ভাল্লাগবে আমরা না থাকলে?
অর্পণঃ হ্যাঁ। (গলাটা ভারি হয়ে আসে)
তিয়াশাঃ বোনদের সামনে ভাইদের কাঁদতে নেই তাহলে বোনরাও দূর্বল হয়ে পড়বে।
অর্পণ কিছু না বলে এক প্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তিয়াশা কিছু না বলে বেড থেকে উঠে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের কার্নিশ মুছে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
তাদের দুজনের কাজই মিফতার চোখে পড়ে। সে না দেখার ভান করলেও তার চোখ এড়ায় না। মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে সে।
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন একটা পাহাড় বুকের উপর চাপা দিয়ে রেখেছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর এটা ভেবে কি করে থাকবে তার পরিবারকে ছেড়ে। আর একমাস পর তো চলে যাবে দুবাই তখন তো আরো কষ্ট হবে। চিৎকার করে বেরিয়ে আসা কান্না গুলো আজ বের হচ্ছে না গলা অব্দি ই তাদের সীমানা।
তিয়াশা ফ্রেশ হয়ে লাল পাড়ের একটা হলুদ শাড়ি পড়ে সাথে লাল ব্লাউজ। চুলগুলো হাত খোঁপা করা। দুই হাতে চারটে চুড়ি। চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা করে লাল লিপস্টিক।
মিফতা তাড়াতাড়ি চোখ মুখ মুছে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে মিফতাও সেইম কালারের শাড়ি পড়ে। হাতে বালা। চুলগলো ছেড়ে দেওয়া। চোখে কাজল আর ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক।
দুইজন একসাথে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে নামে। দুইজনকে জোড় করে দই-চিড়ে খাওয়ানো হয়। অর্পণকে নাহিন ও রাফিদ ভিডিও কল দিয়েছে। তিয়াশা আর মিফতার কর্মকান্ড দেখছে আর সবাই হাসছে।
রিচুয়াল শেষ করে উপরে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়। সবাই একসাথে দুপুরে লাঞ্চ করে। বিকেলে ওদেরকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসে। ওদের সাজানো হয়। সবার সাজগোছ কমপ্লিট।
সবাই একসাথে কমিউনিটি সেন্টারে যায়। অর্পণ মাঝখানে আর তিয়াশা ও মিফতা দুইপাশে। অর্পণ দুই হাত দিয়ে শক্ত করে দুইবোনকে ধরে স্টেজের দিকে এগোতে থাকে। সবাই হাত তালি দেয়। অর্পণ তিয়াশা আর মিফতাকে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দেয়। ফটোগ্রাফার তাদের দুইজনের সিঙ্গেল ফটোসেশান করে আবার একসাথে পরিবারের সাথে ফটোসেশান করে।
আতিকা এসে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে। নেহাও তুলে। তিয়াশা অন্যমনস্ক হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে আর মিফতা ওয়াশরুমে গিয়েছে। হঠাৎ কাউকে দেখে তিয়াশার চোখ আটকে যায়। সে আর কেউ নয় আয়াশ।
আয়াশ তিয়াশার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তিয়াশা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আয়াশ তিয়াশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তার হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা তিয়াশার হাতে দিয়ে তাকে কংগ্রাচুলেশন বলে। তিয়াশা ফ্রিজড হয়ে আছে। আয়াশ তিয়াশার উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে…
আয়াশঃ তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হোক। অনেক চিন্তা ভাবনা করে বুঝতে পারলাম তুমি আমার মোহ ছিলে। আমি কখনো তোমায় ভালোই বাসিনি। তুমি সবসময় ভালো থেকো দোয়া করি। আর হ্যাঁ তোমার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে আমি এখানে কিভাবে?? আমাকে মি…
পিছনে থেকে মিফতা বলে উঠে..
মিফতাঃ আমি! হ্যাঁ উনাকে আমি ইনভাইট করেছি।
তিয়াশাঃ Thank you so much mr.Ayash..
আমি হয়তো আপনার মোহ ছিলাম কিন্তু আপনি নন। আমি আপনাকে ভালোবেসেছিলাম। আফসোস আপনি সেটা বুঝেনইনি। আমি হাজারবার চেষ্টা করি বুঝানোর তাও বুঝাতে পারিনি। আমার শহরটা এতবছর মেঘে ঢাকা ছিল। আজ আমার শহরে রোদ উঠেছে। রোদের আলোতে আমার শহর আজ আলোকিত। সেই রোদ দেখে ঝলমল করছে আমার পরিবার আমার বন্ধু আমার আত্নীয় স্বজনের মুখ। আর সেই রোদটা হলো আমার স্বামী রাফিদ শিকদার। আমি নিজেকে খুশি রাখতে পারিনি এতদিন তবে আজ থেকে রাখব।
আপনি ছিলেন আমার জীবনে মেঘ। যার কালো ছায়াতে ঢেকে ছিলাম আমি। আর নয়। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ভালো থাকবো। যেই মানুষটা আমাকে ভালোবাসে তার জন্য ভালোথাকব। যে আমার মতো ভাঙা মানুষটাকে আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছে তার জন্য ভালো থাকবো।
আমিও দোয়া করি আপনি আপনার পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন। অতীতকে টেনে আনতে নেই। তাকে তার জায়গায় ফেলে আসতে হয়। আমিও আপনাকে অতীতে ভেলে এসেছি তাই দয়া করে আপনি আমার সামনে এসে আমার বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতটাকে নষ্ট করবেননা। আমি ভালো আছি রাফিদের সাথে এবং আমি ইনশাআল্লাহ তার সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালো থাকবো। আশা করব আজই যেন আপনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। আর হ্যাঁ আমার বিয়েতে এসেছেন পেট ভরে খেয়ে যাবেন কিন্তু মনে। খেয়ে দোয়া করে যাবেন। আল্লাহ হাফেজ।
আয়াশও তিয়াশাকে আল্লাহ হাফেজ বলে চলে যায়। তিয়াশার মাথাটা ঘুরে যায় তাই তিয়াশা ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। আতিকা দৌড়ে আসে তিয়াশার এমন অবস্থা দেখে। অর্পণও আসে।
আতিকাঃ তিয়ু! ঠিক আছিস তুই?
অর্পণঃ কি হয়েছে বল?
মিফতাঃ একটু পানি আনো তাড়াতাড়ি!
অর্পণ গিয়ে পানি আনে তিয়াশা সেটা খায়। তখন বাচ্চারা বর এসেছে বলে চিল্লাতে শুরু করে।
আতিকাঃ মিফতা তুমি একটু দেখো তিয়ুকে! আমি ওদিকটা দেখি। কোনো সমস্যা হলে আমায় ডাক দিও। তিয়ু রিলেক্স। আমি দেখেছি আয়াশ এসেছিল। যা কথা হয়েছে তা ও শুনতে পেয়েছি। আজ থেকে নতুনভাবে বাঁচবি। বাঁচতেই হবে। আমি জানি তুই পারবি আর আমরা সবাই তো আছি তোর পাশে। তুই রেস্ট কর আমি আসছি!
আতিকা চলে যায়। রিহান আর লিয়া আসে।
লিয়াঃ তিয়াশা কি হয়েছে?
তিয়াশাঃ কিছুনা মা। ভারী জিনিস পড়ে খারাপ লাগছিলো তাই একটু।
রিহানঃ কোনো সমস্যা হলে ডাক দিও আমাদের। চিন্তা করোনা মামনী।
রুশা দৌড়ে এসে লিয়াকে জড়িয়ে ধরে। রিহান রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তারপর তিয়াশা আর মিফতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়।
রুশাঃ আন্টি তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।
লিয়াঃ তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে মামনী। ভাবির সাথে বসো আমি ওদিকটা দেখি গিয়ে।
রুশাঃ আচ্ছা। মিফতাপি তোমাকে তো সেই লাগছে। ভাবিকে পুরাই ভাইয়ার স্বপ্নের রাজকন্যার মতো দেখতে লাগছে।
মিফতা আর তিয়াশা দুইজনেই রুশার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। রুশাকে টেনে মিফতা তার আর তিয়াশার মাঝখানে বসিয়ে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে। ছবিও তুলে কয়েকটা।
সবার দৃষ্টি এখন সামনে। দুইটা রাজপুত্র আসছে দুইটা রাজকন্যাকে তুলে নিয়ে যেতে। রাফিদ আর নাহিন আসছে। সাথে তাদের মা-বাবা।আর পিছনে সব রিলেটিভসরা।
রাফিদ আর নাহিন স্টেজে এসে তাদের সহধর্মিণীর পাশে বসে। মিফতা আর নাহিন একটা সোফায়। তিয়াশা আর রাফিদ একটা সোফায়।
নাহিন পড়েছে সাদা শেরওয়ানী সাদে পাগড়ি। গোল্ডেন কালারের শু। ডান হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। বাম হাতে ব্রেসলেট। মিফতা অফ হোয়াইট কালারের শাড়ি সাথে গা ভর্তি গহনা। মাথায় খোঁপা করে দোপাট্টা দেওয়া। সাথে তো মেক আপ রয়েছে ই।
তিয়াশা লাল রঙের লেহেঙ্গা সাথে গা ভর্তি গহনা। হালকা মেকআপ। রাফিদ হালকা ব্লু শেরওয়ানী। ডান হাতে ঘড়ি আর বাম হাতে ব্রেসলেট। পায়ে হোয়াইট শু।
দুই জুটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে। তাদের বিয়ে পড়ানো ও সম্পন্ন হয়। আতিকা আর নেহা মিলে রাফিদ আর নাহিনের জুতো চুড়ি করে তারা ২০০০০ হাজার টাকা চায়। নাহিন আর রাফিদরা সবাই মিলে টাকাটা দেয় সাথে খুব দুষ্টমিও করে।
এবার বিদায়ের পালা,,
সবার মন ভারাক্রান্ত। তিয়াশা তার মাকে আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ যাবত কাঁদে। মিফতা তো যেতেই চাইছে না। রাফিদ আর তিয়াশার হাত তাদের মা-বাবা এক করে দেয়। মিফতা আর নাহিনের হাত এক করে দেয়। মিফতা কোনোভাবেই যাবেনা। তিয়াশার শরীর দূর্বল তাই সবাইকে বিদায় জানিয়ে রাফিদরা তিয়াশাকে নিয়ে এগোয়।
মিফতা কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। নাহিন মিফতাকে কোলে তুলে সবাই বিদায় জানিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
রাত ১২ টা,,
_________________________
নাহিন বাসায় এসে মিফতাকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে যায়। মিফতা উঠে বসে আছে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে!
নাহিন ফ্রেশ হয়ে বের হয়। টাওয়াল পড়ে খালি গায়ে মিফতার সামনে এসে দাঁড়ায়। গলায় আরেকটা টাওয়াল পেঁচানো। নাহিনের চুল দিয়ে পানি পড়ছে তার বুকে।
মিফতাঃ আআআআআআআআ!
নাহিন তাড়াতাড়ি গিয়ে মিফতার মুখ চেপে ধরে। মিফতা চোখ বন্ধ করে ফেলে।
নাহিনঃ ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছো কেন??
মিফতা চোখ খুলে রাগে কটমট করে নাহিনের দিকে তাকায়। নাহিন মিফতার মুখ থেকে হাত সড়িয়ে মিফতার কোমড় পেচিয়ে ধরে তার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিফতা মুখ খিচে সজোরে নাহিনকে ধাক্কা দেয়। নাহিন তাল সামলাতে না পেরে নিচে বসে পড়ে। মিফতা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসে দুইজন মিলে ডিনার করতে যায়। ডিনার শেষে মিফতা রুমে আগে এসে পড়ে। নাহিনকে তার কাজিনরা সবাই বাহিরে ধরেছে টাকা না দিলে রুমে ঢুকতে দিবে না। মিফতা গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ায়। ঠান্ডা বাতাসে চুলগুলো উড়ছে। সে আকাশের মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে।
নাহিন সবাইকে সামলে রুমে আসে। রুমে এসে দেখে মিফতা নেই। নাহিন বেলকনিতে গিয়ে দেখে মিফতা দাঁড়িয়ে। নাহিন একটা মুচকি হাসি দিয়ে মিফতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ কারো স্পর্শে মিফতা কেঁপে উঠে। নাহিন মিফতার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বল,”ভালোবাসি বউ।” মিফতা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে নাহিনরে গলা পেঁচিয়ে কপালে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয়।
নাহিন মিফতাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিয়ে। মিফতা লজ্জায় লাল নীল হলুদ হয়ে যাচ্ছে। নাহিন আস্তে আস্তে মিফতার দিকে অগ্রসর হয়….
{আর কিছু দেখতে হবে না। ওদের যা ইচ্ছা করুক}
_________________________
তিয়াশা রাফিদদের বাসায় আসে। রুশা তিয়াশাকে রাফিদের রুমে দিয়ে আসে। তিয়াশা রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
রাফিদ রুমে এসে দেখে তিয়াশা ঘুমিয়ে পড়েছে। রাফিদ তিয়াশাকে ডাক না দিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিচে গিয়ে ডিনার করে আর তিয়াশার জন্য খাবার নিয়ে উপরে রুমে ঢোকার সময় দেখে রুশাসহ তার কাজিনরা দাঁড়িয়ে আছে!
রুশাঃ বউয়ের কাছে পরে যাবি। টাকা দে আগে!
রাফিদঃ টাকা রুমে। আগে রুমে যাই তারপর দেই।
রুশাঃ না। আগে টাকা তারপর। নয়ত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে!
রাফিদঃ রুশ এদিকে আয়!
রুশাঃ কেন?
রাফিদঃ আয় না!
রুশাঃ এসেছি বল।
রাফিদঃ এই ট্রে টা ধর।
রুশা খাবারের ট্রে টা ধরে। রাফিদ পকেট থেকে হাজার টাকার দুইটি নোট বের করে দেয়।
রুশাঃ আমারে দুই হাজার টাকা দিয়ে হবেনা। আরো লাগবে!
রাফিদঃ আর নেই এটা নিলে নে নয়ত থাক।
রুশাঃ না না দে! বেয়াদব পোলা। মাত্র এই কয়েকটা টাকা।
রাফিদঃ না লাগলে দিয়ে দে।
রুশাঃ ধর তোর ট্রে। আমি গেলাম।
রাফিদের হাত থেকে টাকাটা ছো মেরে নিয়ে চলে যায়।
রাফিদ রুমে ঢুকে দেখে তিয়াশা তখনও ঘুমচ্ছে। ঘুমন্ত তিয়াশাকে দেখে রাফিদের ডাকতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয় এভাবেই এই পরীটা ঘুমিয়ে থাকুক আর রাফিদ তার এই বাচ্চা মার্কা মুখটার দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিক হাজার যুগ।
রাফিদ বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে থাকে। তারপর তিয়াশা ডাক দেয়। তিয়াশা মিটমিট করে চোখ খুলে রাফিদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়। তারপর উঠে বসে দেখে রাফিদ খাবার নিয়ে বসে আছে।
রাফিদঃ খাবারটা খেয়ে তারপর মেডিসিন খেতে হবে। তোমার শরীর অনেক উইক।
তিয়াশাঃ আমার কিছু হয়নি!
রাফিদঃ তোমার মুখ বলছে তোমার কিছু হয়নি। তোমার চোখ বলছে অনেক কিছু হয়েছে। হা করো আমি খায়িয়ে দি!
তিয়াশাঃ আপনি খেয়েছেন?
রাফিদঃ হ্যাঁ।
তিয়াশাকে খায়িয়ে রাফিদ মেডিসিন খায়িয়ে দেয়। তারপর এসে তিয়াশা পাশে বসে!
রাফিদঃ শুয়ে পড়ো!
তিয়াশাঃ না! গুম থেকে একটু আগে উঠলাম। বাহিরে আজ পূর্ণিমা চলুন বেলকনিতে যাই।
রাফিদ তিয়াশাকে হঠাৎ করে কোলে তুলে নেয়। তিয়াশা ভয় পেয়ে রাফিদের গলা জড়িয়ে ধরে। রাফিদ বলে…
রাফিদঃ চলো! আর শুনো সবসময় এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখবা।
তিয়াশা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাফিদের কপালে তার ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয়।
রাফিদ বেলকনিতে নিয়ে তিয়াশাকে নামিয়ে দেয়। তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তিয়াশার কাঁধে রেখে দুইজন মিলে জোৎস্নাবিলাস করে।
_________________________
রচিত হবে এক নতুন উপন্যাস। উপন্যাসের প্রত্যেকটি পাতায় লেখা থাকবে উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলোর হাজারো ব্যক্ত অব্যক্ত কথা।
সবার জীবনেই উত্থান পতন ঘটে। জীবনে কিছু মানুষ এসে আমাদের দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়ে চলে যায়। তখন আমরা বুঝতে পারি আমরা ভুল মানুষটাকে ভালোবেসেছিলাম। সেই ভেঙে যাওয়া মানুষটাকে উঠে দাঁড়াতে যে তার দু’হাত বাড়িয়ে দেয় তাকে ভালোবাসতে ভয় হয় কিন্তু সে ই আমাদের শিখিয়ে দেয় ভয়কে জয় করে নতুন করে বাঁচতে।
যে আমাদের নতুন করে বাঁচতে শিখায় তার সাথেই আমাদের সবসময় থাকা উচিত। তাকেই ভালোবাসা উচিত আর যারা মাঝপথে একা করে দোহাই দিয়ে চলে গিয়েছিল তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তারা ব্যার্থ হয়েছে কারণ তারা পারেনি আমাদের ভাঙতে। আমরা উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বাঁচতে শিখেছি নতুন প্রত্যয়ে।
সৃষ্টিকর্তা যা করে তা সৃষ্টির ভালোর জন্য ই। ভালোটা কখনো পরে ঘটে কখনোবা আগে কিন্তু ভালো সবার সাথেই একদিন না একদিন ঠিক হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে।
সমাপ্ত!
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ফিরে আসব নতুন কোনো গল্প নিয়ে। সামনে আমার এক্সাম দোয়া করবেন সকলে। ততোদিন ধারাবাহিক গল্প দিব না। মাঝে মাঝে ছোট গল্প দিব। এই গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন। আশা করি একটু হলেও আপনাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে ]
আগের পর্বের লিংকঃ
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2914887402073326/