তাহারেই_পড়ে_মনে
শেষ পর্ব
ছন্নছাড়া মানুষগুলোকে কেমন করে যেন কাছে দূরের সবগুলো মানুষ ভালোবাসে – ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেই এরা অভ্যস্ত কীনা! তার উপরে প্রিন্সের বাপের টাকা ছিল – কাছের দূরের এই ভাইবোনদের বিপদেআপদে সবার আগেই প্রিন্সকেই পাওয়া যেতো, সে কাজ উঠিয়ে দিতে হোক বা পণ্ড করে দিতেই হোক না কেন! কোথাও ঝামেলা করতে হবে, মারামারি করা লাগবে, কাউকে পরীক্ষার সেন্টারে পৌঁছে দিতে হবে, মুমূর্ষু রোগিকে হাসপাতালে নিতে হবে, কারও বিয়ের কনে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে, কাউকে প্রেমিকার জন্য গিফট কিনে দিতে হবে, বিয়ের গেইটে তুলকালাম লাগাতে হবে, কারও বিরহের সময় বুক পেতে দিতে হবে চোখের পানি মুছতে, সবখানে প্রিন্স- সব অকাজের পান্ডা প্রিন্স! অকাজের এই বান্দাকে সবাই যেমন ভয় পেতো তেমনি বুক দিয়ে ভালোবাসত! সবার বুকেই তাই এই মৃত্যুসংবাদ বড় কঠিন করে বেজেছিলো! এই বাইক নিয়ে বহু কথা শুনেছে প্রিন্স – বহু সতর্কবার্তা। এতো রাশ ড্রাইভ করতো যে আঁতকে উঠতো সবাই দেখেই, যেই দেখতো সাবধান করতো – ‘ওই বাইকেই তুই মরবি।’ খুব বাচ্চাবেলা থেকে বাইক চালাতে চালাতে আশ্চর্য এক কন্ট্রোল ছিলো ওর বাইকের উপর। ওই দ্বিচক্রযানটি যেন ওর মনের কথাই শুনতো – প্রিন্স যা বলতো তাই! আজ যে ওর মনও বিক্ষিপ্ত ছিলো, অশান্ত হৃদয়ের টানাপোড়েন অসহ্য ছিলো তা বুঝি ওই মেশিনও জানতে পেরেছিলো। যন্ত্রনার আতিশয্যে তাই সেও বেসামাল হয়েছিলো, নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলো।
প্রিন্স চলে গেছে – কারো কিছুই আর করার নেই, কাউকে একটু কিছু করার সুযোগও দিলো না। আর এই সংবাদ যে কারও বুকে আরও কঠিন করে বাজবে লোপা, পাপ্পু, জহিররা ভাবেইনি! প্রিন্সের জন্য শোকাতুর মনগুলো মিষ্টির অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। কারও কিছু বলার দরকার হয়না- সবাই সব বুঝে যায় সেইমূহুর্তে! নিজেদের শোক ভুলে বিপর্যস্ত মিষ্টির জন্য ব্যস্ত হয় সবাই।
তীব্র আঘাতে লীন হওয়া মিষ্টিকে সাজিদ বুকে জড়িয়ে নিলো।
তিনদিন ছাড়াছাড়াভাবে জ্ঞান ফেরে মিষ্টির। সেন্স ফিরলেই বাস্তবে ফিরতে মিনিট দুয়েক সময় লাগে। বাস্তবতা বুঝে নিতেও ওই মিনিটখানেকই লাগে। তারপরই শোকের তীব্রতায়, যন্ত্রণাকাতর হয়ে আবার জ্ঞান হারায়।
পানির অভাবে নেতিয়ে পড়া কচি লাউডগার মতো প্রায় মৃত মিষ্টি পুরোপুরি সজ্ঞানে আসে তিনদিনের মাথায়। ওর বিয়ের তিনদিন, নতুন জীবনে গাঁটছড়া বাঁধার তিনদিন, অতীত ভুলে যাওয়ার শপথের তিনদিন আর প্রিন্সের চলে যাওয়ার তিনদিন!
সবাই আরও বেশি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলো মিষ্টি অস্বাভাবিক রকম স্বাভাবিক! না খাওয়াতে শরীর দুর্বল ছিলো – কন্ঠটাই শুধু নরম শোনা গেলো। কান্তা সাগুসেদ্ধ করে এনেছিলো – পুরো বাটি বিনা প্রতিবাদে শেষ করে নিলো। একটু সতেজতা ফিরলে লম্বা শাওয়ার নিলো। পলা কান পেতে রেখেছিলো ওয়াশরুমের দরজায় – মিষ্টি গোপনেই হয়তো কাঁদবে ভেবে। কিন্তু গোসল করতে করতে বরং মিষ্টির গুণগুণ করা গানের সুরই ভেসে আসতে লাগলো!
গোসল করে মিষ্টি সুন্দর করে শাড়ি পরলো, চোখে কাজল ছোঁয়ালো – ঠোঁট রাঙালো। পলার অবাক চোখে তাকিয়ে ভেজা চুলে চিরুনি দিতে দিতে বললো ‘পলা আপা, দেখোতো আমার চুলে শুধু শ্যাম্পুর ঘ্রাণ নাকি অন্য কোনো ঘ্রাণ পাওয়া যায়? নাকি মানুষ মিথ্যে করেই বলে খোলা চুলে নাকি নেশা হয়?’
ওইটুকুই শুধু, আর কোনো অস্বাভাবিকতা ওর ভিতর দেখা গেলো না। জাফরিন শান্ত হলো – সাজিদেরও অস্থিরতা কমে গেলো। নিজেকে আর বেঁধে রাখলো না মিষ্টি – সাজিদের সাথে একেবারে খোলা পাখির মতো উড়ে বেড়ালো, মেলে দিলো নিজেকে পুরোপুরি! সাজিদের সাথে সম্পর্কটাকে পুরো সুযোগ দিলো ও – সুন্দর একটা সময় কাটাতে লাগলো নবদম্পতি। সাজিদেরও জীবনটাকে মধুর লাগতে লাগলো, যেনো অন্য কেউ কোনোদিন মিষ্টির জীবনে ছিলো না, কোনো তৃতীয় ব্যক্তির ছায়া, স্মৃতি কিছুই নেই মিষ্টির মনে।
কিন্তু এই তৃতীয় ব্যক্তি যে সাজিদ স্বয়ং তা ও টের পেলো বিয়ের দুমাসের মাথায়। দুটোবছর হেসেখেলে তারপরেই পরিবার পরিকল্পনার ইচ্ছে ছিলো ওর। কিন্তু মিষ্টি নিজেই সন্তান নেওয়ার জন্য আগ্রহী খুব বেশি রকমের। প্রেগন্যান্সির স্ট্রিপ হাতে ও যখন সাজিদকে সুখবর দিলো তখন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সাজিদের সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। এ কোনো সুস্থ মানুষের দৃষ্টি না – অপ্রকৃতস্থ এক মানবীর চোখ যার মনের ভেতর সুতীব্র যন্ত্রণা গত হওয়া প্রেমিকের জন্য। ঘোর লাগা অদ্ভুত দৃষ্টিতে, ফিসফিস করে ও বলেছিলো ‘শাহেনশাহ আসছে।’
মিষ্টির মানসিক বৈকল্যের লক্ষণ একটু একটু করে প্রকাশ হতে লাগলো। প্রিন্স যে পৃথিবীতে নেই এইকথাটা ওর মন থেকে পুরোপুরি মুছে গেলো। কখনো ও সাজিদকেই প্রিন্স ভেবে নিলো আবার কখনো সাজিদের ঘরনী হয়ে প্রিন্সের সাথে বিবাহ-বহির্ভুত অন্যায় সম্পর্কের দায়ে পুড়তে লাগলো। এক সময় পুরোপুরিই ভারসাম্য হারালো! কাউকেই চিনতে পারে না – প্রিন্সের কথাও ভুলে যায় কখনো কখনো। মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে নিয়ে সাজিদ পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। কত কত ডাক্তার দেখানো হয়, একবার বাচ্চা এবর্ট করার চিন্তাও মাথায় আসে, কিন্তু তাতে যদি চিরদিনের জন্য মাথার রোগটা চেপে বসে সেই শংকায় সেই ভাবনাও দূর করে দেয়। সারাদিন অফিস করে এসে পাগল স্ত্রীকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় ওকে। সাজিদ আর মিঠিকে ছাড়া অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না মিষ্টি। জাফরিনকে দেখিলেই হাইপার হয়ে যায় – একদিম দেওয়ান মঞ্জিলের পাগল মেয়ে লিপির মতো কামড় দিয়ে ধরে বা বটি হাতে উন্মত্ত হয়। আবার কখনো নদীর মতো শান্ত হয়ে যায়। শুধু রাতের আঁধার ভেদ করে সাজিদের বুক ভেঙেচুরে উন্মাদ মিষ্টির সুললিত কন্ঠের আবৃত্তি শোনা যায়
কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”
কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”
“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”
পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধের অনুভূতি না নিয়েই, যাবতীয় আনন্দ উপভোগ না করেই – বঞ্চনা, একবুক কষ্ট নিয়ে প্রিন্স চলে গেছে এইটেই মনে হয় বড় ব্যথা দিয়েছে মিষ্টিকে। যদি এক আকাশের নীচে বেঁচে থাকতো প্রিন্স, তুলির সাথে সুখি হতো তবে একটা চিনচিনে ব্যথার মতো মিষ্টির হৃদয়ের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকতো ও। কিন্তু ওই কঠিন মৃত্যু ওকেও আজকে কঠিন সব প্রশ্নের মুখোমুখি করে রেখেছে – মিষ্টির বিয়ের খবর কেমন করে বেজেছিলো ওর মনে? কতটা অসহায় কষ্ট নিয়ে ও মরে গেছে? কী ভাবছিলো মরে যাওয়ার আগেও? একবার কি দেখতে চেয়েছিলো মিষ্টির মুখ নাকি ওর চুলের গোছায় মুখ ডুবিয়ে প্রলম্বিত শ্বাস নিতে চেয়েছিলো? সব প্রশ্নগুলো উৎকট বিভৎস হয়ে ওর চোখের সামনে ঘুরতে থাকে। সেই সব প্রশ্নের না জানা উত্তরগুলো ওকে টালমাটাল করে দেয়, অশান্ত হাহাকারে পরিপূর্ণ করে রাখে। ও খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না, শান্ত হয়ে চোখ বুজতে পারে না। ভুতের মত এলোমেলো হেঁটে বেড়ায় ঘরময়!
শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই ওর উন্মাদনাও বাড়তে থেকে ক্রমশ! দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে শরীর আর মন দুটোই। সাজিদের ফ্ল্যাটবাসার বারান্দাটাকে ডেইজি হাউসের ছাদ মনে হয় মিষ্টির মাঝে মাঝেই। আনমনে খোলা ছাদের পাশ দিয়ে এলোচুলে হেঁটে বেড়ায় ও। মাগরিবের আযান শেষ হলে, ঝুপ করে যখন আঁধার নেমে আসে, কাকে যেন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে ও – চিনতে পারে না। আজকাল কাউকেই চিনতে পারে না। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছেলেটা ডেইজি হাউসের সামনে এসে চলার গতি কমিয়ে দেয়, থেমে যায় গেইটের সামনে এসে। অন্ধকারের কালো চোখে দুজন তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। কানের কাছে কে যেন ফিসফিস করে বলে ‘খোলা চুলে নেশা হয় জানিস মেয়ে?’
‘কে বললো?’ চমকে পেছনে তাকায় মিষ্টি। কমজোর শরীরে টাল সামলাতে পারেনা, পা হড়কে পড়ে যায়। সেন্সলেস হওয়ার আগে ও স্পষ্ট শুনতে পায়, কে যেন বলছে ‘তুই মরে যা, মিষ্টি।’
পরিশিষ্ট – সাজিদ চুপচাপ বসে আছে ডেইজি হাউসে, মিষ্টির ঘরে। এই ঘরটার কোনোকিছু জাফরিন কাউকে ছুঁতে দেয় না বা পরিবর্তন আনতে দেয় না। বইগুলোর ধুলোও নিজ হাতে মুছে চকচকে করে রাখে। সাজিদের মনে হয় সবকিছু তেমনি আছে, কিছুই পরিবর্তন হয়নি – মাঝখানে দশটা বছর চলে যায়নি। এখনই হয়তো বারান্দায় পায়চারি করে পড়তে দেখা যাবে মিষ্টিকে নইলে ওর পড়ায় বিঘ্ন ঘটানোতে একরাশ বিরক্তিমাখা চোখে তিরস্কার করবে সাজিদকে! গত দশ বছরে, দেশে বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, নিয়ম করে মিষ্টির মৃত্যুর তারিখে ডেইজি হাউসে এসে এভাবে চুপচাপ বসে থাকে সাজিদ, ছেলে শাহেনশাহকে সাথে করে। ছেলেটা একদম সাজিদের কপি হয়েছে, কিন্তু মাঝেমাঝেই ওর ভিতর তীব্র কনফিউশন জাগে – মনে হয় এ মিষ্টি আর প্রিন্সেরই সন্তান। বায়োলজিকালি শাহেনশাহ’র পিতা সাজিদই কিন্তু মিষ্টির মনে কখনো তো ও ছিলো না। যতবার মিষ্টি ঘনিষ্ঠ হয়েছে ওর সাথে, ওকে প্রিন্সই ভেবেই কাছে এসেছে, তীব্র ভালোবেসেছে। মিষ্টির মন, মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু প্রিন্সেরই অস্তিত্ব ছিলো।
মিঠি অনেক বড় হয়েছে। একদম মিষ্টির মতোই দেখায়। পার্থক্য শুধু মিষ্টি শ্যামলা ছিলো আর মিঠি দুধে আলতা! সাজিদ ভুল করে ওকে মিষ্টি বলে ডেকে ফেলে সবসময়ই। মিঠি ক্ষেপে যায় ‘সাজিদ ভাই, মিঠি, মিঠি, মিঠি – মুখস্থ করেন তো। আপনার ব্রেইন তো আপার মতো শার্প, আমার মতো পঁচা মাথা না। প্র্যাকটিস করলে আমাকে মিঠি বলেই ডাকতে পারবেন। এখন দশবার বলেন ‘মিঠি, মিঠি, মিঠি।’
সাজিদ হেসে ফেলে। ‘তুমি শুধু দেখতেই মিষ্টির মতো, কিন্তু আলাদা। মিষ্টি খুব শান্ত।’
‘শান্ত ছিলো, এখন নেই। মিষ্টি এখন পাস্ট টেন্স। এটাও মুখস্থ করেন। সাথে আরও মুখস্থ করবেন মিঠি হচ্ছে প্রেজেন্ট ফর্ম। ক্লিয়ার?’
‘ক্লিয়ার মিষ্টি। একদম ক্লিয়ার।’ সাজিদের কথা শুনে মিঠি চোখ বড়বড় করে তাকায়। কটমট করে ওঠে। তারপর হতাশ হয়ে বলে ‘আমার চোখের দিকে তাকানতো, সাজিদ ভাই। কি দেখেন, বলবেন?’
সাজিদ ভালোভাবে নিরীক্ষণ করে বলে ‘তোমার চোখে কি সমস্যা হয়েছে? চোখ দেখিয়ে নাও। নইলে মিষ্টির মতো চশমার পাওয়ার বাড়তেই থাকবে।’
‘প্রতি লাইনে একবার মিষ্টির রেফারেন্স না টানলে কি আপনি সেনটেন্স শেষ করতে পারেন না? আজব।’ মিঠি রেগে যায়। নিজের ঘরে ঢুকে বই টেনে নিয়ে বসে। ওর সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা। কিন্তু পড়াশুনায় ও মিষ্টির ধারেকাছেও না। একেবারেই পড়তে ইচ্ছে করে না। সাজিদ যখন আসে তখন তো আরও ইচ্ছে করে না। ওর দ্বিগুণেরও বেশি বয়সের একটা মানুষের জন্য ওর বুকের ভেতর তোলপাড় করতে থাকে, তা ও কাউকে বলতে পারে না। চল্লিশ দিনের মিঠিকে কোলে নিয়ে দুইবেণী ঝোলানো মিষ্টির একটা ছবি থাকে ওর ফাঁকা ডায়েরির ভাঁজে। সেটাকে টেনে এনে চোখের সামনে ধরে অভিমানে চোখ গলে ওর ‘তোকে মা ভালোবাসে, বাবা বেশি ভালোবাসে, আমি ভালোবাসি, যাকে ভালোবাসতি তার মৃত্যু পর্যন্ত সে তোকেই ভালোবেসে গেছে আর সাজিদ ভাই এখনো তোকেই ভালোবাসে। তুই কেন এমন স্বার্থপর হলি – কেন শুধু একজনকেই ভালোবাসলি। সাজিদ ভাইকে কেন ভালোবাসলি না। একটু ভালোবেসেই না হয় অনেকদিন বেঁচে থাকতি, মিষ্টি।’
মিষ্টির ঘরে সাজিদের উপস্থিতি ও এখানে বসেও টের পায়। সাজিদের মৃদু শ্বাসপ্রশ্বাস ওর মনের ভিতর ঘূর্নিঝড় সৃষ্টি করে। সেই ঝড় কখনো কখনো বিপদসীমা পার করে দেয়। সমস্ত পৃথিবীতে প্রলয়ঙ্কারী ঝড় তুলে, সব ধ্বংস করে ওর সাজিদের মুখোমুখি বসতে ইচ্ছে করে। সাজিদের হাতদুটো ধরে ফিসফিস করে বলতে ইচ্ছে করে ‘আমি মরে গেছি সাজিদ ভাই, এক্কেবারে মরে গেছি…’
সমাপ্ত।
Afsana Asha
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2902100590018674/
বোন, আপনার লেখাটা পড়ে শিহরিত হলাম। প্রচণ্ড ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে রাত ৩ টা অবধি নেশাগ্রস্তের মতো পড়েই গেলাম। আপনি চমৎকার লেখেন, বোন।