ধর্ষনের দাগ?,চর্তুথ_পর্ব শেষ পর্ব?

0
5455

ধর্ষনের দাগ?,চর্তুথ_পর্ব শেষ পর্ব?
লেখক_নিহান হোসেন নীল?

আনহার কান্নার শব্দ পেয়ে.. নিহান চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আনহার চোখে পানি। নিহান আনহার চোখে পানি দেখে, তারাতাড়ি উঠে বসে,,,

নিহানঃ আনহা.. এই বাবু!! কি হয়ছে তোমার!! তুমি কান্না করছো কেনো??

নিহানের কথা শুনে আনহা দ্রুত চোখে মুছে,,

আনহাঃ আরে তেমন কিছু হয় নি!! চোখে কি জানি গেছে.. আর এইজন্যই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।

নিহানঃ আমি স্পষ্ট তোমার কান্নার শব্দ শুনেছি!! বাবু.. আমাকে বলো নাহ.. কি হয়ছে তোমার??

আনহাঃ আরে বললাম তোহ কিছু হয় নাই!!

নিহানঃ আমি কয়েকদিন যাবত তোমার ব্যাবহারে অনেক চেঞ্জ দেখতে পাচ্ছি!! কয়েকদিন ধরে নাহ, আমি আমেরিকা থেকে আসার পরে থেকেই দেখছি.. তুমি কেমন মনমরা হয়ে থাকো, আমার সাথে আর আগের মত মিশো নাহ, এক কথায় তুমি আর আগের মত নাই!! আনহা আমি আমেরিকা যাওয়ার পরে কি হয়ছে.. যার জন্য তুমি এমন চেঞ্জ হয়ছো??

আনহাঃ নিহান.. এইসব কি বলছো তুমি!! আমার এখন ভালো লাগছে নাহ!!

কথাটা বলেই আনহা কম্বল টেনে নাকে মুখে দিয়ে শুয়ে পড়ল। নিহান আর কিছু নাহ বলে, আনহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। নিহান শুয়ে শুয়ে ভাবছে,,,

নিহাঃ আনহা কেনো এসব করছে?? দুমাস আগে তোহ আমার আনহা এমন ছিলো নাহ!! তাহলে এখন কি এমন হলো.. যার কারনে আনহা এমন হয়ে গেছে?? দুমাসের মধ্যে কি মানুষ এতটাই নিরব হয়ে যেতে পারে?? আনহা তোহ আগে অনেক চঞ্চল ছিলো, সবসময় আমার সাথে খুনশুটিতে মেতে থাকত। আনহাও তোহ বলছে নাহ.. ওর কি হয়ছে?? তাহলে কি করে জানবো.. আনহার এই নিরব হয়ে যাওয়ার কাহিনি??

দুপুরবেলা,,,

আনহা আনমনে হয়ে রান্নাঘরে রান্না করছে আর ভাবছে,,,

আনহাঃ নাহ.. নিহানকে আর ঠকানো যাবে নাহ!! একদিন নাহ একদিন তোহ নিহান সব কিছুই জানতে পারবে!! তখন তোহ আমাকে আরও নিহান ঘৃণা করবে। নাহ.. নাহ!! নিহান আমাকে ঘৃণা করবে.. এইটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো নাহ?? নিহানকে আমি অনেক ভালোবাসি। আর নিহানকে এই কথা বলার আজকেই একটা উপযুক্ত দিন। যাইহোক.. আজকে যে করেই হোক আমি নিহানকে সব সত্যি কথা বলে দিবো,,,

আনহাও দৌড়ে বেডরুমে গিয়ে নিহানের কাধে হাত রেখে নিহানের চোখের দিকে একমনে তাকিয়ে,,,,

আনহাঃ আমিও তোহ একসময় খুব স্বাভাবিক ছিলাম, চঞ্চল ছিলাম, সদা হাসিখুশি, মিশুক মেয়ে ছিলাম। কিন্তু যেদিন তুমি আমাকে বাবার বাসায় রেখে আমেরিকা যাও.. সেদিন থেকেই আমার জীবনটা একদম পাল্টে গেছে। জানো নিহান.. আমার নাহ একটা খুন করার ইচ্ছে ছিলো.. ওই খুনটা করে আমি ফাঁসিতে ঝুলতেও কষ্ট পেতাম নাহ।

নিহানঃ আনহা.. এইসব কি বলছো তুমি??

আনহাঃ আমার কথা এখনো শেষ হয় নি!! আর আজকে অনেক কষ্টে আর একটা কারণে তোমাকে এই কথা গুলি বলছি!!

নিহানঃ আচ্ছা.. বলো??

আনহাঃ তোমাকে সরাসরি এই কথাগুলো বলতেই আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কথাগুলি তোমার জানা অনেক দরকার। তাহলে শুনো,, যেদিন তুমি বাসায় রেখে এলে, ওইদিনই বড় আপু আর দুলাভাই আমাদের বাসার আসে। পরেরদিন বাসা একদম ফাকা ছিলো। আপুর নাকি বেবি হবে.. তাই আম্মু ডাক্টারের কাছে গেছে আপুর সাথে.. আর আব্বু অফিসে। আমার দুলাভাই আমাকে বাসায় একা পেয়ে কোনো কথা-বার্তা নেই.. আচমকা জোর করে জাপটে ধরলো। আমি কিছুই বুঝলাম নাহ। তুমি তোহ জানো আমি ইফান ভাইকে ভাইয়া বলেই ডাকতাম.. কোনদিন দুলাভাই পর্যন্ত ডাকি নাই।। আমার বড় ভাই নাই.. তাই আমি ইফান ভাইকে আমার আপন ভাইয়ের মতই দেখতাম। আর এই শয়তানটা আমার সাথে সেদিন যা করলো। নিহান.. আমি সর্বশক্তি দিয়ে লোকটার সাথে লড়াই করেছিলাম কিন্তু লোকটার নোংরা কুৎসিত হাত আমার সারা শরীর এলেমেলোভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছিলো। নিহান.. আমি আর বলতে পারছি নাহ!! আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।

নিহানঃ তুমি এই কথা বাসার কাওকে বললে নাহ কেনো?? আর তখন আমাকেই বা ফোনে বললে নাহ কেনো??

আনহাঃ তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলার সাহসটা পায় নি। জানো.. আমি আরও বেশি কষ্ট কখন পেয়েছি??

নিহানঃ কখন??

আনহাঃ আমি আপুকে যখন এই কথাগুলো বললাম.. আপু সব শুনে আমার হাতে পায়ে ধরে বলল, ‘বোন তুই কাউকে এসব বলিস নাহ.. আমি নিজে ইফানের বিচার করবো। ওকে আমি রেহাই দিবো নাহ। তবে দুলাভাইরা কিন্তু শালীদের সাথে একটু আকটু-দুষ্টমি করেই থাকে?? তোর সাথে মনে হয় তেমন কিছুই করেছে।’ জানো.. সেদিন আপুর কথায়.. আমার অনেক রাগ আর কষ্ট হয়েছিলো। নিজের মায়ের পেটের বোনের কথা শুনেই আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম.. আর তাই তোমাকে তখন কথাটা বলতে পারি নি। জানো.. সেদিন আমি কষ্ট কমাতে জীবনের প্রথম ব্লেড দিয়ে হাত কাটি?? আমি ভীষণ ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। নিহান তুমি তোহ জানো.. আমি রক্ত দেখে অনেক ভয় পাই। তোমার আমানত আমি পবিত্র রাখতে পারি নি বলে.. ইচ্ছে মত রাগের মাথায় ব্লেড দিয়ে হাত কাটি। জানো.. নিহান আমার হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা সকল দাগ ওউ হারামীর লালসা আর আমার শরীরকে ভোগ করার সাহ্মী।

নিহানঃ আনহা তুমি নাহ বললে.. আজকে এই কথাটা বলার একটা কারণ আছে??

আনহাঃ হুম।

নিহানঃ কি কারণ আমাকে কি বলা যাবে??

আনহাঃ বলছি,, আজ ইফান হারামীটা গাড়ী এক্সিডেন্ট করে মরে গেছে। আমার একবিন্দুও কষ্ট হচ্ছে নাহ বরং রাগ হচ্ছে ইশা আপুর উপর। এই মেয়েটার কেনো ইফানের মত একটা পিশাচকে বিয়ে করতে হবে?? আর ওই ইফানের বেবিটাও এখন ইশা আপুর পেটে। তাদের কথা ভেবেই আমার এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে।

আনহা কথাটা অনেক রেগেই বলেছে। নিহান আনহার চোখের দিকেই তাকিয়ে বুঝতে পারছে আনহা অনেক রেগে গেছে। আনহার সব কথা শুনে নিহানের একটুও রাগ হচ্ছে নাহ?? বরং সত্যটা জানার পরে আগের থেকে ভালোই লাগছে। আর এই ভুল তোহ আনহা করে নি.. তাহলে শুধু শুধু আনহাকে শাস্তি দেওয়া ঠিক নাহ!! যে ভুল করেছে.. আজকে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিয়েই দিছে।

নিহানঃ আনহা.. তুমি আর এইসব নিয়ে ভেবে কষ্ট পেয়েও নাহ!! আমি তোমাকে একটুও ভুল বুঝি নাই!! তোমার সাথে যা হয়েছে.. আল্লাহ তার বিচার করেছে।

আনহাঃ হুম।

বলেই আনহা নিহানকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কান্না করে দিলো। নিহান দুইহাত দিয়ে আনহাকে জড়িয়ে ধরল।

মাঝরাতে…

আনহাঃ এই ছেলে.. চলো নাহ ছাদে যাই?? তোমার কাধে মাথা রেখে চাঁদ দেখবো আমি।

আনহার কথাটা শুনে নিহানের অনেক ভালো লাগছে। কারণ আগে আনহা প্রায় সময়ই নিহানকে এইরকম আবদার করত!! কিন্তু আজকে অনেকদিন পরে এইরকম আবদার করায় নিহানের অনেক বেশি ভালো লাগছে। তাই নিহান আর নাহ করতে পারল নাহ!!

আনহাঃ তুমি ছাদে যেয়ে বসো.. আমি চা নিয়ে আসছি।

নিহানঃ ওকে।

নিহান ছাঁদে চলে আসল। নিহান ছাঁদে এসে দেখে.. আজকে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে আর চাঁদের জোঁছনায় চারদিক আলোকিত হয়ে আছে। কিছুক্ষন পর আনহা আসলো.. নীল শাড়ি আর কপালে একটা নীল টিপ পড়ে। আনহাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো.. নিহান তোহ আনহার উপর থেকে চোখই সড়াতে পারছে নাহ!! আনহাকে একদম নীল পরির মতো লাগছে।

আনহাঃ এইভাবে তাকিয়ে কি দেখো??

নিহানঃ তোমাকে দেখি।

আনহা নিহানের পাশে বসলো। নিহান এখনো আনহার দিকেই অপলক তাকিয়ে আছে।

নিহানঃ আচ্ছা.. তুমি কি একসাথে দুইটা চাঁদ কখনো দেখেছো??

আনহাঃ আমার জানা মতে চাঁদ তোহ একটা!! তাহলে দুইটা দেখবো কি করে??

নিহানঃ এই যে আমার পাশেই আরেকটা চাঁদ দেখতে পাচ্ছি।

নিহানের কথা শুনে আনহা লজ্জায় লাল হয়ে.. নিহানের বুক মুখ লুকিয়ে ফেলল। নিহান চায়ের কাপটা পাশে রেখেই আনহাকে কোলে তুলে সোঁজা বেডরুমে চলে গেলো। ভাই.. পরেরটুক তোহ আপনেরা জানেনই.. আর লেইখা হাত ব্যাথা করে লাভ আছে বলেন??

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here