এই_মন_তোমাকে_দিলাম♥️ পর্বঃ০২

0
2470

এই_মন_তোমাকে_দিলাম♥️
পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

রুহি নার্স রিতার পায়ের সামনে বসে কাঁদছে।ওর চোখের পানিতে নার্সের পা ভিজে যাচ্ছে।নার্স ওর সামনে বসে বলল”আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না তুমি বুঝতে চাইছো না কেনো?আমি তোমাকে সাহায্য করলে তোমার চাকরী চলে যাবে।”

রুহি কাঁদতে কাঁদতেই বলল”আপু প্লিজ একটু সাহায্য করুন।আমি আমার বাচ্চাটাকে চাই।আপু আপনিও তো কারো মা।আপনি তো জানেন একটা বাচ্চা জন্ম দিতে কষ্ট হয় মায়ের তবুও সে মা একটিবার বাচ্চার মুখ দেখলে সব ব্যাথা ভুলে যায়।আপু আমারও মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করতে ইচ্ছে করে।আমার মন চায় মা ডাক শুনতে।আমারোও আমার বাচ্চাটাকে কোলে নিতে ইচ্ছে করে।আপু আমি পারবো না আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে।একটু দয়া করুন আপু।”

রুহির এমন করুণ আর্তনাদে রিতার মন নরম হলো।আসলেই তো একটা নারী মা হওয়ার মাধ্যমেই পূর্ণ হয়।আজ যদি রুহির জায়গায় সে থাকতো তখন কি পারতো নিজের বাচ্চাকে এভাবে বলি দিতে?রিতার শরীর শিউরে উঠলো!তারও একটা মেয়ে আছে।সারাদিন ডিউটি করে যখন বাসায় ফেরে তখন মেয়েটা দৌড়ে এসে আম্মু আম্মু বলে জড়িয়ে ধরে।তখন যেনো রিতার ক্লান্তিগুলো উধাও হয়ে যায়।একটা মায়ের কাছে তার বাচ্চার মুখ থেকে আম্মু ডাক শোনাটা যে কতোটা মধুর তা শুধু মায়েরাই জানে।
আর সে কি না একজন মা কে মাতৃত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছে।সেসময় রিতার বিবেক প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে উঠলো।এটা অপরাধ!এই অপরাধের ক্ষমা নেই।

রিতা রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল”আমি তোমাকে সাহায্য করবো বোন।যদি আজ আমার চাকরী চলেও যায় তবুও আমি এই পাপ করতে পারবো না।আমারও একটা মেয়ে আছে।”

রুহি কৃতজ্ঞতায় রিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।রিতা ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল”পালিয়ে যাও।আকাশ তোমার বাচ্চাকে বাঁচতে দিবে না।নাতাশা ম্যামের সাথে তার সম্পর্ক আছে।এখন সে তোমাকে চায় না।এইজন্যই বাচ্চা এবরশোন করতে এনেছে।এই বাচ্চা এবরশোন করলে আকাশ তোমাকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে।”

নার্স রিতার কথা শুনে রুহির ভেতরটা তছনছ হয়ে গেছে।কি নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে এটা একমাত্র রুহিই জানে।
যে ভালোবাসার জন্য একদিন বাবা মা কে ছেড়ে এসেছিলো আজ সেই ভালোবাসার প্রতিদান যে এমন হবে রুহি ভাবতে পারে নি।তবে কি এটা বাবা মাকে কষ্ট দেওয়ার ফল!রুহির দুচোখ বেয়ে ঝর্ণা ধারা নামছে।অন্তত ভালোবাসার মানুষের কাছে এমন প্রতারণা মানতে পারছে না রুহি।এমুহূর্তে রুহির মনে হচ্ছে পৃথিবীতে ভালোবাসা নেই।সবাই স্বার্থপর!

নার্স রিতা রুহিকে একটা সাদা এপ্রোন পরিয়ে মুখের ওপর মাক্স পরিয়ে দিলেন।তারপর লিফটে চড়ে একবারে নিচতলায় এসে রুহিকে একবার জড়িয়ে ধরে বলল”যাও!কখনো ভেঙে পড়ো না।সবসময় মনে সাহস রেখে এগিয়ে চলো।”

রুহিও কৃতজ্ঞতা ভরা কন্ঠে বলল”আপু আপনার এই উপকার আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখবো কথা দিলাম।”

তারপর রুহি হাসপাতাল থেকে জলদি বের হয়ে একটা অটোতে উঠে পড়ে।গন্তব্য অরুণীর বাড়ি!অরুণী ছোটবেলার বান্ধবী।আগে ওর বাড়ি গিয়ে ওর সাথে আলোচনা করবে বলে ঠিক করলো রুহি।
——————–
লিফট দিয়ে আবার চতুর্থ ফ্লোরে আসলো নার্স রিতা।তার এখন মনে মনে ভয় লাগছে।নাতাশা অনেক বদ মেজাজী।একবার জানতে পারলে রক্ষা নেই।চাকরীটাই চলে যাবে।এই চাকরী হারালে চলবে না।পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সে ই।পরিবার বলতে পাঁচ বছরের একটা মেয়ে আর সে।তিনবছর আগে একটা দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যায়।এরপর আর বিয়ে করে নি রিতা।একমাত্র মেয়েটাকে নিয়েই বেচে আছে।

রিতা নাতাশার কেবিনের সামনে এসে দরজা ধাক্কা দিয়ে দিতেই দেখতে পেলো নাতাশা আকাশের কোলের ওপর বসে আছে।আর হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।এভাবে প্রায় প্রায়ই দেখা যায় তাদেরকে।আর নাতাশার কেবিনে নক করে ঢুকতে হয়।তা নাহলে নাতাশা প্রচুর রেগে যায়।তাই রিতা সন্তপর্ণে দরজাটা চাপিয়ে দিলো।তারপর দুমিনিট অপেক্ষা করে দরজায় নক করলো।নাতাশা ভেতর থেকে বলল”ইয়েস কাম ইন।”

রিতা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখলো নাতাশা তার চেয়ারে বসে আছে আর আকাশ তার মুখোমুখি!বলা বাহুল্য রিতার জন্যই তারা দুজনে আলাদ হয়েছে।রিতা ভেতরে ঢুকে একবার আকাশ আর নাতাশার দিকে চেয়ে বলল”ম্যাম,মেয়েটা পালিয়েছে।”

নাতাশা চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে হাত দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে বলল”হোয়াট!পালালো কিভাবে?”
নাতাশার সাথে আকাশও আতঙ্কিত হয়ে গেলো।

“ম্যাম,আমি ওকে বসিয়ে বাইরে গিয়েছিলাম এনেস্থিসিয়া(অজ্ঞান করা হয় এটা দিয়ে।মেডিকেলের ভাষায় একে এনেস্থিসিয়া বলে।)আনার জন্য।কিন্তু এসে দেখি ও রুমে নেই।পুরো হসপিটাল খুঁজেছি কিন্তু নেই কোথায়।তারপর না পেয়ে আপনার কাছে এলাম।”

নাতাশা সবটা শুনে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো।আকাশ রাগের চোটে বলল”কাদের রাখো কাজে?একটা কাজও ঠিক করে করতে পারে না।এখন যদি কেস করে তাহলে তুমি আমি দুজনই জেলে যাবো।”

নাতাশা দাঁতে দাঁত চেপে রিতাকে বলল”আউট।”

রিতা কাচুমাচু করে বেরিয়ে পড়লো।রিতা যাওয়ার পর নাতাশা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলল”এখন কি হবে আকাশ?”

“ওয়েট,আমি ওকে খুঁজে দেখছি।পেলে নিয়ে আসবো।”

“আচ্ছা যাও।”
আকাশ নাতাশার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।যে করেই হোক রুহিকে খুঁজে পেতে হবে।আকাশ রুহির ফোনে কয়েকবার ফোন করলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।আকাশ ওর এক বন্ধুকে কল করে রুহির নাম্বারটা দিয়ে বলল লোকেশন ট্রেস করতে।
——————-
রুহি অরুণীর বাড়ির সামনে এসে ভাড়া দিয়ে দরজার সামনে এসে কড়া নাড়লো।দুই তিনবার নাড়ার পর অরুণী এসে দরজা খুলতেই দেখলো রুহি দাড়িয়ে আছে।অনেকদিন পর রুহিকে দেখেও একটু চিনতে ভুল করে নি অরুণী।প্রথমেই দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয় নি দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে।তারপর অরুণী রুহিকে ভেতরে এনে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।রুহির পাশে বসে বলল”কেমন আছিস?আমাকে ভুলেই তো গেছিস।”

“না রে তোকে কখনো ভুলি নি।তুই ভোলার মতো না।”

“সেইজন্যই তো এতো বছরেও একবার খোঁজ নিলি না।”

রুহি ভেজা কন্ঠে বলল”মাফ করে দে।”

অরুণী ওকে জড়িয়ে ধরে বলল”থাপ্পড় খেতে না চাইলে এসব ফর্মালিটি অফ কর।আকাশ ভাইয়া আসে নি?”

আকাশের কথা শুনে রুহি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।ঝরঝর করে কেঁদে দিলো।প্রিয় বান্ধবীর কান্না দেখে অরুণী বিচলিত কন্ঠে বলল”কি হয়েছে? কাদছিস কেনো?”

রুহি চোখের পানি মুছে বলল”আমি শেষ হয়ে গেছি অরু।ও আমাকে ভালোবাসে নি।”

“কি হয়েছে সেটাতো বলবি।”

রুহি প্রথম থেকে সব বলল।সব শুনে অরুণী দাঁতে দাঁত চেপে বলল”ওই জানোয়ারটার জন্য চোখের পানি ফেলাও উচিত না।তুই একদম কাদবি না।ওকে উচিত শিক্ষা দিবি।”

“আমি পারবো না রে।আমি ওকে ভালোবাসি।”

অরুণী রেগে বলল”ওই জানোয়ারের জন্য এখনো ভালোবাসা আছে।আমি অবাক হচ্ছি।”

রুহি কাঁদছে খুব।এতো বড়ো প্রতারণাটা আকাশ না করলেও পারতো।আর অরুণী বান্ধবীর অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।ছোটবেলা থেকেই রুহি ভিষণ আবেগ প্রবণ।অনেক ছোটছোট জিনিসেও তার মন খারাপ হয়ে যেতো।ছোটবেলার সারাক্ষণ অরুণীর সাথে থাকতো।দুজনে বোনের মতো।ইন্টার পর্যন্ত ছিলো কিন্তু আকাশের সাথে বিয়ের পর থেকে রুহি সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়।এতে রুহির দোষ দেওয়া যায় না সে স্বামীর আদেশ পালন করেছে।আজ এতো বছর পর রুহিকে আবার এভাবে দেখবে এটা অরুণী ভাবে নি।

সকাল থেকেই অরুণী বাসায় একা।বাবা মা আন্টির বাসায় গেছে।হঠাৎই কলিং বেলের শব্দ পাওয়ায় দরজা খুলতেই রুহিকে দেখবে তা ভাবে নি।হঠাৎ অরুণী কিছু একটা ভেবে বলল”রুহি তোর ফোন কই?”

রুহি চোখ মুছে বলল”এইতো এই ব্যাগে।”

অরুণী ওর ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে আকাশের অনেকগুলো কল।সাথে সাথে অরুণী ফোন অফ করে দেয়।অরুণীর সন্দেহ হচ্ছে যদি আকাশ জানতে পারে রুহি এখানে আছে তবে বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে দিতে পারে।
——————
রুহির লোকেশন ট্রেস করে জানা যায় রুহি বাসাবো তে আছে।আকাশ সেদিকেই রওনা হয়।বাসাবো তে রুহির এক বান্ধবী আছে।আগে তার বাড়িতেই খোঁজ নিবে আকাশ!

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।পরের পর্ব কাল দুপুর১২.৩০ এ পোস্ট হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here