এই_মন_তোমাকে_দিলাম♥️
পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat
অরুণী রুহিদের বাসার সামনে এসে মাত্রই পৌঁছালো।সি এন জি ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে ওপরে আসতেই দেখলো একটা ছেলে রুহিদের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।মুখ দেখা যাচ্ছে না বলে অরুণী ছেলেটাকে চিনতে পারছে না।অরুণী আস্তে আস্তে ওপরে এসে ছেলেটার পাশে দাড়িয়ে দরজা নক করে ওর দিকে খেয়াল করলে।নাহ!ছেলেটাকে অরুণী চিনে না।অরুণী পরিচয় জানার জন্য বলল”হাই,আমি অরুণী।আপনি?”
“আমি প্রিয়ম চৌধুরী।” ছেলেটা মৃদু হেসে বলল।
“ওহ!আচ্ছা।”
এরমাঝেই রুনা বেগম দরজা খুলে দেওয়ায় অরুণী আর কিছু বলতে পারলো না।অরুণীকে দেখে রুনা বেগম বললেন”মা ভেতরে আসো।”
অরুণী ঘরে ঢুকে বলল”আন্টি রুহি কোথায়?”
“ঘুমাচ্ছে।সারারাত ধরে কান্না করেছে।সেইজন্য এখন ঘুমাচ্ছে।”
অরুণী রুহির ঘরের দিকে চলে গেলো।অরুণী চলে যাওয়ার পর রুনা প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল”কে তুমি?”
“স্যার আছে?”
রুনা বেগম বুঝলেন ছেলেটাকে আনোয়ার সাহেবের কথা বলছে।কারণ আনোয়ার সাহেব প্রাইমারী স্কুলের হেড টিচার ছিলেন।এখন অবশ্য রিটায়ার্ড।এমন অনেকেই আসে তার সাথে দেখা করতে।রুনা বেগম দরজা থেকে সরে দাড়িয়ে বলল”আসো বসো।তোমার স্যার বাজারে গেছে।”
ছেলেটা এসে সোফায় বসলো।রুনা বেগম কিচেনে গেলেন চা বানাতে।রুনা বেগম যাওয়ার পর প্রিয়ম সামনের খবরের কাগজটা নিয়ে চোখ বুলাতে আছে আরম্ভ করলো।
——————
অরুণী রুহির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।রুহি এখনো ঘুমাচ্ছে! ঘুমালে রুহিকে নিষ্পাপ শিশুদের মতো মনে হয়।যেনো তার কোনো দুঃখ কষ্ট নেই।কিন্তু জেগে উঠলেই এই নিষ্পাপ মুখে হাজারো বিষন্নতা,আর কষ্টের চিহ্ন ফুটে ওঠে।
আরো কিছুক্ষণ রুহির মাথায় হাত বুলাতেই রুহি আস্তে চোখ খুললো।রুহিকে চোখ খুলতে দেখে বলল”যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।”
রুহি হালকা একটা হাসি দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে আসতেই অরুণী বলল”রুহু আজকে আমরা ঘুরতে যাবো।ওকে।”
“না রে আমার কোথায় যেতে ভাল্লাগে না।” রুহি মলিন মুখে বলল।
“তোমার তো কোথাও যেতে ভাল্লাগে না।কিছু করতে ভাল্লাগে না।খালি কাঁদতে ভাল্লাগে।আমি তোর থেকে পারমিশন চাইছি নাকি?আমি বলছি আমরা যাবো তুই বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস।”
রুহি অরুণীর হাত ধরে বলল”এতো ভালোবাসিস কেনো আমাকে?”
অরুণী ওকে জড়িয়ে ধরে বলল”জানি না।তবে সবসময় ভালোবাসবো।তাহলে এখন আসি।ভার্সিটির সময় হয়ে গেছে।”
“এখনি চলে যাবি?” রুহি মন খারাপ করে বলল।
“আরে জানু, আবার আসবো তো।তুই কিন্তু রেডি হয়ে থাকবি।”
“আচ্ছা।”
অরুণী রুহির থেকে বিদায় নিয়ে কিচেনে গিয়ে রুনা বেগমকে বলল”আন্টি আমি আসি।”
“সে,কি বসো আরেকটু নাস্তা বানিয়েছি নাস্তা করে যাও।” রানু বেগম শরবত ঢালতে ঢালতে বললেন।
“আরে না আন্টি।সত্যি বলছি আম্মু আসার সময় খাইয়ে দিয়েছে পেটে জায়গা নেই।এখন আসি।”
“আচ্ছা যাও।”
রুনা বেগম হাসি মুখে বলল।অরুণী ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো ছেলেটা এখনো বসে আছে।অরুণী একনজর তাকিয়ে চলে গেলো।কিন্তু প্রিয়ম একবারো তাকালো না কারণ সে একটা খবর পড়ছে খুব মনোযোগ দিয়ে।
কিছুক্ষণ পর আনোয়ার সাহেব বাজার করে ফিরে রুনা বেগমকে ডাক দিলেন।রুনা বেগম মাত্রই প্রিয়মের সামনে নাস্তা রাখতে না রাখতেই দরজার দিকে ছুট দিলেন।দরজা খুলতেই দেখলেন আনোয়ার সাহেবের দুইহাত ভর্তি বাজার।রুনা বেগম বাজারগুলো হাত নিয়ে কিচেনের দিকে চললেন।আর আনোয়ার সাহেব ভেতরে এসে সোফায় বসতেই দেখলেন বরাবরই সোফায় একটা সুদর্শন যুবক বসে আছে।আনোয়ার সাহেবের ছেলেটাকে চেনাচেনা লাগলেও ঠিকভাবে চিনতে পারলেন না।প্রিয়ম আনোয়ার সাহেবকে সালাম দিয়ে বলল”স্যার কেমন আছেন?”
“কে তুমি?ঠিক চিনতে পারলাম না।চেহারাটা হালকা চেনাচেনা লাগছে।”
প্রিয়ম মুচকি হেসে বলল”স্যার আমি প্রিয়ম।”
প্রিয়ম ওর নাম বলতেই আনোয়ার সাহেব চিনে ফেললেন।অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলো প্রিয়ম।কখনো প্রথম থেকে দ্বিতীয় হয় নি।যেবার এস এস সি দিয়েছিলো সে বছর এই জেলা থেকে যাদের বোর্ডে নাম ছিলো তার মধ্যে প্রিয়মও একজন।আনোয়ার সাহেব হেসে বললেন”কেমন আছো প্রিয়ম?”
“আলহামদুলিল্লাহ স্যার।তবে আমার জবাবটা কিন্তু পেলাম না।”
“কি?” আনোয়ার সাহেব ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলেন।
“আপনি কেমন আছেন?এটা জিগ্যেস করেছিলাম।”
আনোয়ার সাহেব একটু জোরে হেসে উঠলেন তার সাথে প্রিয়মও হাসলো।আনোয়ার সাহেব হাসি থামিয়ে বলল”আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রেখেছেন।তুমি এখন কি করো?”
“স্যার…….”
প্রিয়ম কিছু বলার আগেই দরজায় নক করলো কে যেনো।আনোয়ার সাহেব দরজা খুলতেই দেখলেন দরজার বাইরে আকাশ দাড়িয়ে আছে!আকাশকে দেখে আনোয়ার সাহেবের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।চোখে কাঠিন্যতা ফুটে উঠলো।রাগী গলায় বলল”কি চাই এখানে?”
আকাশ জানে প্রথমেই রাগারাগি করা যাবে না।একটু ছলচাতুরী করতে হবে।তাই চোখমুখে কৃত্রিম অপরাধ বোধ ফুটিয়ে তুলে বলল”বাবা রুহি আছে ঘরে?”
আনোয়ার সাহেব ধমকে বললেন”আমাকে বাবা বললে কোন সাহসে?তোমার মতো কুলাঙ্গারের বাবা না হওয়াই ভালো।”
“বাবা আমাকে ক্ষমা করুন।আমি শুধু একটু রুহির সাথে কথা বলবো।”
আনোয়ার সাহেব আকাশের কোনোকথাই শুনছে না চিল্লাতে চিল্লাতে চলে যেতে বলছে।
.
.
বাইরে চেচামেচি শুনে রুহি বেরিয়ে এসে ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখলো আকাশ দরজার বাইরে দাড়িয়ে অনুরোধ করছে ভেতরে ঢোকার জন্য।রুহি গিয়ে বলল”কি সমস্যা?এখানে কেনো তুমি?”
“ক্ষমা করো রুহি।ফিরে চলো।আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি আর কখনো এমন করবো না।আমাদের বাচ্চার যত্ন নেবো।”
রুহি আকাশের এমন মিথ্যাগুলো সহ্য করতে না পেরে ঠাস করে বাম গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল”তুই চুপ কর।তোর নোংরা মুখ দিয়ে একটা কথাও বলবি না।চলে যা এখান থেকে।”
এতক্ষণে আকাশের রাগ মাথায় উঠে গেলো।ও ওর আসল রুপে এসে রুহির হাত খপ করে ধরে বলল”তুই আমার সাথে যাবি।চল।”
রুহি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।আনোয়ার সাহেব আর রুনা বেগমও রুহির হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আকাশ কিছুতেই ছাড়ছে না।
.
.
প্রিয়ম এতক্ষণ বসে বসে সব দেখলেও।এখন উঠে গিয়ে আকাশের সামনে দাড়িয়ে বলল”কে আপনি?এমন সিনক্রিয়েট করছেন কেনো?”
“আমি কে তোকে বলা লাগবে না।সামনে থেকে সর।”
প্রিয়ম আর কিছু বলল না আচমকা ঠাশ করে একটা চড়ে মেরে দিলো।চড় খেয়ে আকাশ বলদ হয়ে গেলো।রুহির হাতটা ছেড়ে দিলো।প্রিয়ম বলল”ব্যাবহার ঠিক করুন।তা নাহলে এর চেয়েও বেশি পড়তে পারে।”
আকাশ প্রিয়মের কলার টেনে ধরে বলল”কে রে তুই?”
প্রিয়ম বাঁকা হেসে পকেট থেকে আইডি কার্ডটা বের করে বলল”এসিপি প্রিয়ম চৌধুরী।”
আকাশ সাথে সাথে প্রিয়মের কলারটা ছেড়ে দিলো।
——————-
অরুণী ভার্সিটিতে এসেই লাইব্রেরিতে চলে গেলো।ওর দুটো বই প্রয়োজন।এখন বই দুটো খুঁজে নিবে।লাইব্রেরিতে এসে বইগুলো খুঁজতে লাগলো।একটা বই পেয়েও গেলো।অরুণী বইটা হাতে নিয়ে একটু দেখাট জন্য প্রথম পাতা উল্টাতেই দেখলো একটা খাম!অরুণী ভাবলো হয়তো এটা কেউ এমনিতেই রেখেছে কিন্তু অরুণী খামটা উল্টাতেই দেখতে পেলো কালো কালি দিয়ে গোটাগোটা অক্ষরে লিখা”অরুণী এটা তোমার জন্য।”
কি আছে চিঠিতে!অরুণী চিঠিটা হ্যান্ডব্যাগে রেখে।আরেকটা বই খুঁজতে লাগলো।সেই বইটাও পেলো কিন্তু এটাতেই একটা চিঠি।অরুণী এটাও রেখে দিলো।অরুণী ভেবেছে হয়তো কেউ ফাইজলামি করে রেখেছে।বই দুটো নিয়ে ক্লাস রুমে এসে বসলো।তারপর একটা বইখুলে পড়তে লাগলো।হঠাৎ একটা ছেলে এসে অরুণীকে ডাক দিলো।অরুণী বই থেকে মুখ তুলে বলল”জ্বী!”
“আপনাকে প্রণয় ভাই ডেকেছে ক্যাম্পাসে।”
অরুণী মনে মনে এটাই ভেবেছিলো।কারণ এই প্রণয় প্রতিদিন ওকে বিরক্ত করে।এতোবার মানা করার পরেও!এখন আবার কি জন্য ডেকেছে কে জানে।না গেলে ক্লাসে চলে আসবে।তাই অগত্যা অরুণীর যেতে হলো।
চলবে……
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)