এই_মন_তোমাকে_দিলাম
পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat
একটু আগে উকিল নিয়ে এসে আকাশকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলো নাতাশা।ওরা যাওয়ার পর প্রিয়ম রুহিকে কল দিলো।রুহি বিছানায় শুয়ে ছিলো।প্রিয়মের কল পেয়ে রিসিভ করতেই প্রিয়ম বলল”হ্যালো,রুহি?”
“জ্বি বলুন।”
“কেমন আছেন?”
“ভালো আপনি?”
“ভালো,আপনাকে একটা কথা জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি।”
“জ্বি বলুন।”
“একটু আগে নাতাশা নামের একটা মেয়ে আকাশকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে।তাই আপনাকে বলছি সাবধানে থাকবেন আর চিন্তার কারণ নেই আপনার বেবির কোনো ক্ষতি হবে না আকাশের নামে জিডি করা আছে তাই ও আর কোনো ক্ষতি আপাতত করবে না।তবুও সাবধানে থাকবেন।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।”
“আচ্ছা।ধন্যবাদ।” রুহি মলিন কন্ঠে জবাব দিলো।
তারপর প্রিয়ম সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিলো।আর রুহি ফোনটা বেডসাইডের ওপর রেখে আবার চোখ বুজলো।
——————–
এখন রাত আট’টা।মাত্রই অরুণী রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে আসলো।অরুণী ছোট বেলা থেকেই রাতের খাবার আট টায় খায়।সেইজন্য সবার সাথে খেতে পারে না।অরুণী রুমে এসে রুহিকে কল দিলো।রুহি ফোন রিসিভ করতেই অরুণী বলল”কি করিস এখন?”
“কিছু না শুয়ে আছি।ভালো লাগছে না।”
“কেনো?শরীর খারাপ লাগছে?”
“না তেমন কিছু না।” এটা বলে রুহী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
রুহি কিছু না বললেও অরুণী বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে যাতে রুহি আপসেট হয়ে আছে তা নাহলে তো সন্ধ্যার সময়ও তো মন ভালো ছিলো ঘরে গিয়ে এমন কি হলো যে মন খারাপ হয়ে গেলো।অরুণী কড়া গলায় বলল”কিচ্ছু লুকাবি না আমার থেকে বল কি হয়েছে।”
রুহি এবার সন্ধ্যায় বাসায় আসার পর কি হয়েছে তা অরুণীকে বলল।সব শুনে অরুণী বলল”এতে মন খারাপ করার কি আছে।তুই যা বলেছিস বেশ করেছিস।শক্ত হতে শিখ।কেউ কিছু বললে ছেড়ে দিয়ে আসবি না উচিত মতো জবাব দিবি।আর এখন থেকে বাসায় কোনো পাশের বাসার আন্টি,বুড়ি মহিলা,কোনো ন্যারো মাইন্ডের মহিলা এলাউ করবি না।তাতে যদি তুই বেয়াদব হস তাহলে বেয়াদব হওয়াই ভালো।সবসময় লাইফটাকে ইনজয় করতে শিখ।কে কি বলল না বলল তাতে কারো কিছু আসে যায় না।তাই এগুলো ভাবা অফ কর।আর রাতে খেয়েছিস?”
“মাত্রতো আট টা বাজে।এখনি খাবো?”
“মানে কি রুহি?না খেলে বাচ্চা ভালো থাকবে কি করে।এখন খাবি রাতে শোয়ার সময় আবার খাবি।”
“আমি তো এতো খেতে পারি না।” রুহি অসহায় কন্ঠে বলল।
“আরে এখন খাবি তোর বাবুর জন্য আর ঘুমানোর সময় খাবি তোর জন্য।বুঝলি।কোনো বাহানা চলবে না।”
রুহি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল”আমি মনে রাখব।যখন তুই প্রেগন্যান্ট হবি তখন আমিও এমন করবো।”
অরুণী জোরেশোরেই হেসে দিলো।হাসতে হাসতেই বলল”আচ্ছা করিস।এখন আমার টাইম।”
অরুণীর কথা শুনে রুহিও হেসে দিলো।তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
ফোন রেখে অরুণী পড়তে বসতেই চিঠির কথা মনে পড়ে গেলো আজকে ভার্সিটিতে বই নেওয়ার সময় চিঠিগুলো বইয়ের ভেতর পেয়েছিলো।অরুণী চিঠি দুটো খুলতেই দেখলো প্রণয়ের হাতের লেখা।অরুণী রাগে চিঠি দুটো কুচিকুচি করে জানালা দিয়ে ফেলে পড়তে বসলো।প্রণয় যে ছেলে হিসেবে খারাপ তেমনও না।কিন্তু অরুণীর কেনো যেনো এগুলো তে ইন্টারেস্ট নেই।একা একাই থাকতে পছন্দ করে সে।কি দরকার কাউকে ভালোবাসার?সেই ভালো নিজেকে বাসলেও আরো ভালো থাকা যায়।মানুষ একজনকে ভালোবাসে ভালো থাকার জন্য কিন্তু দিনশেষে সেই মানুষটাই ছেড়ে যায় নিজের ভালো থাকার খোঁজে।এর চেয়ে কাউকে না ভালোবাসলে দিনশেষে অনেক বেশি ভালো না থাকলেও খারাপও থাকে না।অন্তত এটা ভেবে সান্ত্বনা পাওয়া যায় যে যে আমি তো কাউকে ভালোই বাসি নি তাহলে কষ্ট পাবারও কোনো কথা উঠছে না।
—————–
পায়েল চৌধুরী টেবিলে নাস্তা দিয়ে প্রিয়মকে ডাকতে গেলেন।প্রিয়মের ঘরে গিয়ে দেখলো ছেলে ইউনির্ফম পড়ছে।মাকে দেখে প্রিয়ম বলল”আম্মু একটু শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে দাও তো।”
পায়েল চৌধুরী হেসে প্রিয়মের সামনে দাড়িয়ে বলল”এবার একটা বিয়ে করে নিলেই তো পারিস বাবু।”
“ধূর,মা তুমি যে কি বলো!আমার এখনো বিয়ের বয়স হয় নি।”
পায়েল চৌধুরী কপট রাগ দেখিয়ে বলল”আটাশ বছরের দামড়া ছেলের নাকি বিয়ের বয়স হয় নি।তো কবে করবি বিয়ে আটত্রিশে?”
প্রিয়ম মায়ের কথা শুনে হেসে বলল”বিয়েই করবো না।”
“আমিও দেখবো তুমি কিভাবে বিয়ে না করো।আচ্ছা তোর কি কোনো পছন্দ আছে?”
“মা ক্রিমিনাল ধরেই তো কুল পাই না আবার মেয়ে পছন্দ করবো।কিন্তু একবার একটা লেডি কিলারের ওপর ক্রাশ খাইছিলাম।কিন্তু কি আর করার মেয়েটার ফাসি হয়ে গেছিলো।”
পায়ের চৌধুরী প্রিয়মে পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে বলল”তোর চাপা বন্ধ করে খেতে আয়।পাঁজি ছেলে।”এটা বলে চলে গেলেন নিচে।মা যাওয়ার পর প্রিয়ম পারফিউম দিতে দিতে বলল”মা কাকে ভালোবাসবো বলো এই জগতে তুমি ছাড়া কেউই নির্স্বাথ ভাবে ভালোবাসে না।”
তারপর মাথার টুপিটা নিয়ে নিচে নেমে এলো।টেবিলে আগে থেকেই প্রিয়মের বাবা রাহাত চৌধুরী আর মা পায়েল চৌধুরী বসে আছে।প্রিয়ম বাবা মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে কিউট একটা স্মাইল দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।
প্রতিদিন ওরা তিনজন সকালে নাস্তা একসাথেই করে কিন্তু দুপুরেরটা আর রাতেরটা প্রিয়ম বাইরে করে।কাজের চাপ থাকায় বাসায় ফিরতে লেট হয়।সেইজন্য বাইরে থেকেই খেয়ে আসে।আর ওর বাবা মা বাসায় খেয়ে নেয়।
মায়ের ডাকে অরুণী ঘুম ভাঙলো।কাল রাতে বইয়ের ওপরেই ঘুমিয়ে গেছিলো সে।অরুণী বইটাকে ঘুছিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে রুহি টেক্সট করলো ওর ভার্সিটির সামনে আসতে জরুরী কথা আছে তাই।
রুহি টেক্সট করে ফোনটা রেখে রেডি হতে লাগলো।কাল রাতে অরুনী পড়তে পড়তে ভাবলো যদি রুহি আবার পড়াশোনা করে তাহলে কেমন হবে?নিজের একটা পরিচয় থাকবে।মোটকথা নিজের স্টাডি কমপ্লিট করলে একটা জবও করতে পারবে।এই ভাবনা থেকেই অরুণী আজ রুহিকে ডেকেছে।
————————
আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে অনেক।কাল থেকে নাতাশা ফোন ধরছে না।কল দিলে বারবার কেটে দিচ্ছে।তাই আকাশ ভাবছে আজ যাবে নাতাশার চেম্বারে।যে ভাবনা সে কাজ।আকাশ অফিসের ফাইলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।নাতাশার সাথে দেখা করে অফিসে যাবে।
————
বাসে একফোঁটাও জায়গা নেই।তবুও বাসেই উঠতে হবে অরুণীর।প্রতিদিন সকলের এই সময়টা প্রচুর ভীড় হয় যাত্রীদের।দাড়িয়ে যাওয়াতো দূরের কথা।দাড়ানোর জায়গাই পাওয়া যায় না।তবুও কিচ্ছু করার নেই কষ্ট করতেই হবে।অরুণী বাসে উঠে পড়লো।প্রচুর ধাক্কা ধাক্কি হচ্ছে।যেনো একজনের গায়ের ওপর আরেকজন উঠে যাবে।হঠাৎ সামনে থেকে একটা ধাক্কা আসায় অরুণী টাল সামলাতে না পেরে কারো বুকের ওপর পড়লো।চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো প্রণয়ের চেহারা।অরুণী তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে নিজেকে সামলে বলল”সরি।”
“ইট’স ওকে।” প্রণয় মৃদু হেসে জবাব দিলো।
দুইমিনিট পর আবার এক ধাক্কায় অরুণী আবারোও প্রণয়ের বুকের ওপর পড়লো।তড়িৎ গতিতে সরে গিয়ে আবারো সরি বলল অরুণী।তার উত্তরে প্রণয়ও ইটস ওকে বলল।একটু পর আবার ও একই কাজ হলো।এবার অরুণী প্রণয়ের বুকের ওপর থেকে উঠতে নিলেই প্রণয় বলল”এভাবে কতোবার সরি বলবে?আর আমি কতোবার ইট’স ওকে বলবো বলো?তার চেয়ে বরং সারাজীবন এখানেই থেকে যাও আমি বাধা দেবো না।”
অরুণী লজ্জা পেয়ে উঠে দাড়িয়ে অন্যদিকে তাকালো।তারপর আবারো ধাক্কা লেগে প্রণয়ের বুকের ওপর পড়লো অরুণী।বহুত হয়েছে আর না!এবার প্রণয় একহাত দিয়ে শক্ত করে অরুণীকে নিজের সাথে চেপে ধরলো।অরুণী উঠতে গিয়ে পারলো না।রেগে বলল”কি ধরনের অসভ্যতামি এগুলো?ছাড়ুন।উঠতে দিন।”
“না ছাড়বো না।বারবার তুমি আমার বুকের ওপর পড়বে আর বারবার আমার হার্টবিট বেড়ে যাবে ফলে আমার হার্ট অ্যাটাক চলে আসবে।তখন আমি কি করবো?তার চেয়ে ভালো আমার বুকের ওপর কান দিয়ে শোনো আমার হৃদয়ের ধ্বনি।বোঝার চেষ্টা করো সে কি বলছে?আর এদিকে আমার হার্ট টাও ভালো থাকলো।
অনেক মোড়ামুড়ি করেও অরুণী উঠতে পারলো না।শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়ে প্রণয়ের সাথেই লেপ্টে রইলো।শান্ত হয়ে ওর বুকের ওপর মাথা রাখতেই শুনতে পেলো প্রণয়ের বুকের ধুকপুকানি।কিছুক্ষণ শুনতেই অরুণী খেয়াল করলো ওর বুকের ধুকপুকানিটাও বেড়ে গেছে।এমন হচ্ছে কেনো?অরুণী আরো গভীর ভাবে শুনতে লাগলো।হঠাৎ প্রণয় অরুণীকে নাড়া দিয়ে বলল” এখানেই থাকবে নাকি ভার্সিটিতে যাবে?”
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)