এই_মন_তোমাকে_দিলাম
পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat
কেসের কোনো সমাধান হচ্ছে না তাই কেসটা বন্ধ করে দিতে হলো প্রিয়মের।অনেক তদন্তে করেও যখন কোনো লাভ হলো না তখন কেসটা বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় নেই।
প্রিয়ম ফাইলটা বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।ডিউটি শেষ এখন বাসায় যেতে হবে।প্রিয়ম ফোনটা টেবিলের ওপর থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
——————
রুহি রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে আছে।এখন রাত ৮.০০টা।প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দাড়িয়েও কোনো কিছু না পেয়ে রুহির মেজাজ গরম হয়ে আছে।অনেকগুলো খালি রিকশা দাড়িয়ে আছে কিন্তু একজনও যাবে না।না গেলে রিকশা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে কেনো?রুহি মনে মনে রিকশাওয়ালাদের ইচ্ছামতো গালাগালি করছে।হঠাৎ ওর সামনে পুলিশের গাড়ি থামলো।প্রিয়ম গাড়ি থেকে নেমে এসে রুহিকে বলল”আরে আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”
“কোনো রিকশা,অটো কিচ্ছু পাচ্ছি না।”
“ও আচ্ছা আসুন।আমিও বাসায় যাচ্ছিলাম।আপনাকে নামিয়ে দিয়ে যাই।”
“আচ্ছা।”
রিকশা আর অটো না থাকায় প্রিয়মের প্রস্তাবটা আর মানা করেনি রুহি।একমাস হলো ভার্সিটি ভর্তি হয়েছে রুহি আর এর পাশাপাশি টিউশনি করায় আর কিছুদিন হলো অনলাইনে শাড়ির ব্যাবসা করে।সবকিছু সামলে পড়াশোনা করে নিজেকে দেওয়ার মতো আর সময় পায় না রুহি।তাতেও ভালো এখন আর পুরোনো কষ্টগুলো ঘিরে ধরতে পারে না।
কিছুদূর যাওয়ার পর রুহি বলল”আচ্ছা কিছুদিন আগে শুনলাম আপনার বিয়ে ভেঙে গেছে আই থিংক মেয়ে পালিয়েছে।রাইট?”
“হ্যাঁ,আমরা কেউই জানতাম না মেয়ের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি মেয়ে পালাইছে।”
“ওও,,,,এখন কি আর বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা আছে?”
“না আমি আর বিয়েই করবো না।প্রথমবার যে অপমানটা সহ্য করতে হয়েছে তাতে বিয়ে করার ইচ্ছা মরে গেছে।এমনিই ভালো আছি।”
রুহি প্রিয়মের কথায় হেসে বলল”সামান্য এই কারণে আর বিয়ে করবেন না?আরে মশাই একবার এমন হয়েছে বলে সবসময় এমন হবে না কি?”
“নাহ!তবুও বিয়ে করার ইচ্ছা নেই।দেখি যদি কখনো মনে হয় তখন দেখা যাবে।”
প্রিয়ম কথা শেষ করতে করতে রুহিদের বাড়ি চলে এলো।প্রিয়ম গাড়ি থামাতেই রুহি গাড়ি থেকে নেমে বলল”ভেতরে আসুন।”
“না,,আরেকদিন।আজ বাসায় যেতে হবে।”
“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
প্রিয়ম গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো আর রুহি ঘরে চলে এলো।
———————–
অরুণী আর প্রণয়ের বিয়ে হয়েছে একমাস হলো।এরমধ্যে ওদের ভেতরে সম্পর্কটা বেশ উন্নত হয়েছে।দুজনই দুজনকে ভালোবাসে।তবে ভালোবাসার দিক দিয়ে প্রণয় এগিয়ে।অরুণীরও আজকাল প্রেম প্রেম ভাব লাগে।এটা কি ছোঁয়াছে কি না কে জানে?হয়তো প্রণয়ের সাথে থাকতে থাকতে হয়ে গেছে রোগটা।
প্রণয়ের বাবা মা একমাসের জন্য সিলেট গেছে তাই বাসায় প্রণয় আর অরুণী থাকে।বাবা মা চলে যাওয়ার পর প্রণয় কাজের লোকদেরও একমাসের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছে।এখন সব কাজ দুজনে একসাথে করে।এইতো প্রণয় এখন কিচেনে আছে।কি করছে কে জানে!অরুণী বই বন্ধ করে নিচে নামছে দেখার জন্য তার বর মহাশয় কি করছে দেখার জন্য।অরুণী কিচেনে গিয়ে দেখলো প্রণয় খিচুড়ি রান্না করছে।অরুণী প্রণয়ের পাশাপাশি দাড়িয়ে বলল আজ”খিচুড়ি রান্না করছেন যে?কোনো উপলক্ষ আছে নাকি?”
“হ্যাঁ আছে তো।খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে তাই রান্না করেছি।”
“ওমা এটা কোনো উপলক্ষ হলো নাকি?”
“নিজের ইচ্ছের চেয়ে বড়ো উপলক্ষ আর কি হতে পারে?আর একটু আগে তুমিও তো বলছিলে খিচুড়ি খাবে।”
“হ্যাঁ সেইজন্য কি আজই রান্না করতে হবে?কালও তো করা যেতো।”
“যেতো কিন্তু ধরো যদি আজ রাতে আমি ঘুমানোর পর আর যদি না জাগি চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে যাই তাহলে আমার একটা আক্ষেপ থেকে যাবে যে তুমি খিচুড়ি খেতে চেয়েছিলে আর আমি খাওয়াতে পারলাম না।এটা আমি হতে দেই কি করে বলো।”
প্রণয় কথাটা বলে আবার কাজে মনোযোগ দিলো কিন্তু ও এটা ভাবে নি যে ওর হেয়ালি করে মারা যাওয়ার কথাটা অরুণীর মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।অরুণী আর কোনো কথা না বলে ঘরে গিয়ে জানালার পাশে বসে রইলো।
রান্না শেষে প্রণয় ফ্রেশ হয়ে এসে অরুণীর পাশে বসে বলল”মন খারাপ কেনো?”
“না মন খারাপ না এমনিতেই বসে আছি।”
“আমি জানি তোমার মন খারাপ অরু।টানা তিনবছর ধরে আপনাকে মহব্বত করি একমাস ধরে একই ছাদের তলায় থাকছি তাই আপনাকে পুরোপুরি বুঝতে না পারলে এতটুকু বুঝতে পারি যে কখন আপনার মন খারাপ হয় আর কখন হয় না।এবার মিথ্যা না বলে সত্যিটা বলুন কেনো মন খারাপ করে আছেন?”
অরুণী প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে এক পলক দেখে বলল”আজকে বলবো না।অন্য একদিন বলবো।”
“আচ্ছা।এখন খাবে নাকি পরে খাবে?”
“এখনি খেয়ে নেই চলুন।”
“চলো।”
অরুণী আর প্রণয় ডাইনিং টেবিলে বসলো।প্রণয় খিচুড়ি বেড়ে অরুণীকে দিলো তারপর নিজেও নিলো।অরুণী খেতে খেতে দেখলো প্রণয় খাচ্ছে না।অরুণী খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে জিগ্যেস করলো”খাচ্ছেন না কেনো?”
“আসলে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে হাত কেটে গেছে।জ্বলছে তাই খেতে পারছি না।”
“হাত কেটে গেছে আর আপনি আমাকে বলেন নাই!দেখি কই কাটছে?”
“আরে এতো ব্যস্ত হওয়ার দরকার নাই।অল্পই কাটছে।”
“দেখান বলছি।” অরুণী ধমকে বলল।
অরুণীর ধমকের চোটে প্রণয় হাত ওর সামনে ধরলো।ক্ষতটা বেশি গভীরও না আবার ফেলে দেওয়ার মতোও না।ক্ষতটায় রক্ত জমাট বেধে রয়েছে।আশেপাশে রক্তের দাগ হয়ে আছে।একটু এনটিসেপটিকও লাগায় নি দেখে অরুণী রেগে চোখ গরম করে প্রণয়রের দিকে তাকিয়ে বলল”এগুলা কি হ্যাঁ?কাটা হাত এভাবে রাখছেন কেনো?নিজের কি বাহুবালী মনে হয় যে কাটা ছেড়ায় কিছু হবে না?কি কেয়ারলেস ছেলে!একটু এনটিসেপটিকও লাগায় নি।”
অরুণী প্রণয়কে লাগাতার বকতে বকতে চলে গেলো ফাস্ট এইড বক্স আনতে।প্রণয় বেচারা বকা খেয়ে চুপচাপ বসে আছে।ওর তো মনেই ছিলো না হাত কাটার কথা।খেতে বসেই মনে পড়েছিলো।ইশ!একটু আগে মনে পড়লো না কেনো?প্রণয়ের মনে মনে খুব আফসোস হচ্ছে।
অরুণী ফাস্ট এইড বক্সটা এনে প্রণয়ের হাতটা ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।তারপর প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে শাসনের সুরে বলল”আর যেনো এমন অবহেলা না দেখি।”
প্রণয় ছোটো বাচ্চাদের মতো ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো।অরুণী ফাস্ট এইড বক্সটা রেখে এসে প্রণয়ের প্লেটে থেকে খিচুড়ি তুলে এক লোকমা ওর মুখের সামনে ধরলো।প্রণয় আশ্চর্য চাহনীতে অরুণীর দিকে তাকিয়ে বলল”তুমি খাইয়ে দিবে?”
“হ্যাঁ,,আমি আপনার বউ। আমি দিবো না তো পাশের বাসার ভাবি দিবে নাকি?”
প্রণয় আর কিছু বলল না। মনেমনে খুব খুশী হয়ে অরুণী হাতে খেয়ে নিলো।আর মনেমনে বলল”পাশের বাসার ভাবি দিলেও আমি খাবো না।”
এভাবেই অরুণী নিজেও খেলো আর প্রণয়কেও খাইয়ে দিলো।
——————
হুট করে নাতাশার বিয়ের খবর শুনে আকাশের জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা।আকাশ বসে বসে অফিসের কাজ করছিলো।হঠাৎ ওর এক বন্ধু ফোন দিয়ে খবর দিলো নাতাশা নাকি একটু আগে বিয়ে করেছে।আকাশ দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রিকশা নিলো নাতাশার বাসায় যাওয়ার জন্য।রিকশায় নাতাশাকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পাওয়া গেলো না।নাতাশার বাড়ির সামনে রিকশা থামতেই আকাশ ছুটে ওর বাড়ির ভেতর যেতে নিলেই দারওয়ান আটকে দিয়ে বলল”ভেতরে যাওয়া যাবে না।”
“ভেতরে আমার কাজ আছে।সামনে থেকে সরেন আপনি।” আকাশ উত্তেজিত হয়ে বলল।
“আচ্ছা দাড়ান ভেতরে জিগ্যেস করি।”
এটা বলেই দারওয়ান নাতাশার বাবাকে কল দিলো।নাতাশার বাবা সরাসরি না করে দেওয়ায় দারওয়ান আকাশের কোনো কথা না শুনেই গেট আটকে দিলো।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।পরবর্তী পর্ব কাল দুপুরে পাবেন।)