এই_মন_তোমাকে_দিলাম পর্বঃ১৮

0
2391

এই_মন_তোমাকে_দিলাম
পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

ভার্সিটি শুরু হবে দশটায় কিন্তু রুহিকে আজ বের হতে হবে আট’টায় কারণ আজকে একটা অর্ডারের ডেলিভারি আছে।ডেলিভারি করে তারপর ভার্সিটিতে যেতে হবে।তাই খাওয়া দাওয়া করে কাপড়ের পার্সেলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
————–
আজ আকাশ অফিসে যাবে।আর কতোদিন ঘরে বন্ধী হয়ে থাকবে।তার চেয়ে ভালো আফিসে যাওয়া।অসুস্থতার একথা বলে এক সপ্তাহ ছুটি নিয়েছিলো এখন এই একসপ্তাহও ফুরিয়ে গেছে।না যেতে চাইলেও যেতে হবে।আকাশ রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো।আকাশের মা খাবার দিতে দিতে ছেলের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বলল”আকাশ,তুই শুধু শুধু ওই মেয়েটার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস কেনো?তোকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো।”

আকাশ মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরস মুখে বলল”না মা আমি ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছি না।আমিতো আমার পাপের প্রাশ্চিত্য করছি।হয়তো সারাজীবন ধরে করে যাবো।”

“তুই কি আর বিয়ে করবি না?” আকাশের মা ছেলেকে খাবার দিতে দিতে বলল।

“না,এমনিতেই অনেক পাপের বোঝা কাঁধে জমে আছে।আর বাড়াতে চাই না।”

এটা বলেই আকাশ উঠে চলে গেলো অফিসের কাজে।
———–
আট’টা পয়তাল্লিশ বাজে।পনেরো মিনিট ধরে জ্যাম পড়ে আছে রাস্তায়।সারি সারি গাড়ি লাইন ধরে অচল অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।হাটার জায়গাও নেই এমন জ্যাম।রুহি রিকশায় বসে হাঁপিয়ে ওঠছে।এর চেয়ে হেটে চলে যাওয়াই অনেক ভালো ছিলো কিন্তু সেই উপায়ও নেই।ধ্যাত!রুহি বিরক্ততিতে কপাল কুচকে এদিকে সেদিক চাইতে লাগলো।হঠাৎ বাসের সারির পরের সারির ওর রিকশা বরাবর একটা অতি পরিচিত মুখ দেখে চোখে নিমিষেই পানি চলে এলো।রুহি দ্রুত চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে মনে মনে বলল’আল্লাহ,আমাকে কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দান করো।আমি যেনো সব দুঃখ কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পারি।’

এদিকে আকাশের মেজাজ তুঙ্গে।এতোদিন পর বের হলো তাও আজকে দেরি হবে।আকাশ নিজের সীটের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে রুহির রিকশায় চোখ পড়তেই হৃদয়টা ব্যাকুল হয়ে উঠলো।ইচ্ছে করছ গিয়ে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সে অধিকার তো অনেক আগেই হারিয়েছে সে।এখন দূর থেকে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।আকাশ একদৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে মনে মনে চাইছে রুহি যেনো একটা বার ওর দিকে তাকায়।কিন্তু না রুহি একবারো এদিক তাকাচ্ছে না।এরমধ্যেই জ্যাম ছুটে গেলো আর আকাশের গাড়িটা আগে চলে গেলো।আকাশ যতটুকু পারে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই রুহি দৃষ্টির অগোচরে হারিয়ে গেলো।আকাশ নিজের সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।এই কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না!প্রতিটা মুহুর্ত মৃত্যুসম মনে হচ্ছে।মনে মনে নিজের এই পরিণতির জন্য কয়েকদিন আগেও নাতাশাকে দোষ দিলেও এখন মনে হচ্ছে না এই পরিণতির জন্য সে নিজেই দায়ী কারণ ‘যেমন কর্ম,তেমন ফল’।তুমি যদি ভালো কাজ করো আজ হোক কাল হোক এর প্রতিদান তুমি পাবেই আর যদি মন্দ কাজ করো তবে যতোই পালাও তোমার পাপের শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে না।প্রত্যেক মানুষেরই উচিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।হয়তো এই সিদ্ধান্তের ওপর ভবিষ্যৎ পাল্টে যেতে পারে।
——————–
অরুণী ক্যাম্পাসে বসে আছে রুহির জন্য।বিয়ের পর তেমন একটা যোগাযোগ করা হয়ে উঠে নি।রুহি আজকাল অনেক ব্যস্ত থাকে।সারাদিন প্রাইভেট পড়ায় নিজের ভার্সিটি আছে তারপর আবার শাড়ির ব্যাবসা করে।এটার ডেলিভারি করতে হয়।সব মিলিয়ে আগের মতো কথা হয় না তবুও বন্ধুত্বটা যেনো একচুলও খারাপ হয় নি।সামনাসামনি কথা না বলতে পারলেও প্রতিদিন রাতে ফোন দিয়ে দুজনেই কথা বলে।কিন্তু আজ অরুণীর রুহিকে একবার হলেও দেখতে ইচ্ছে করছে।তাই তো ক্লাস টাইমের আগেই চলে এসেছে।প্রণয়কেও সাথে আনে নি।প্রণয় পরে আসবে।এমনিতে প্রতিদিন দুজনে একসাথে আসে।অরুণী বসে কফি খাচ্ছিলো হঠাৎ একটা ছেলে এসে কোনো কথা না বলেই অরুণীর সামনের চেয়ারে বসলো।অরুণী ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকাতেই ছেলেটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল”হাই,তুমি মনে হয় ফাস্ট ইয়ার?”

অরুণী কিছু বলল না।চুপচাপ শুনতে লাগলো।দেখা যাক ছেলেটা ওকে শেষ পর্যন্ত ইরিটেড করতে পারে কি না!অরুণী ব্যাগ থেকে ফোন আর ইয়ারফোনটা বের করে কানে দিয়ে গান শুনতে লাগলো।অরুণীর এমন ব্যাবহারে ছেলেটা রেগে হাত দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিলো এবার অরুণী রেগে কান থেকে হেডফোন খুলে বলল”সমস্যা কি?অনেক্ক্ষণ ধরে দেখছি আপনি আমাকে ইরিটেড করার চেষ্টা করছেন।”

“এতো দেমাগ কেনো তোমার?কে তুমি?”

রুহি কিছু বলার আগে পেছন থেকে প্রণয় বলে উঠলো”মিসেস অরুণী রহমান।”

ছেলেটা ভ্রু কুচকে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলল”আপনি কে?”

“যাকে আপনি বিরক্ত করছেন আমি তার স্বামী।আর আপনি ভাবছেন যে সে আপনার সমবয়সী কিন্তু আপনার ধারণা ভুল সে আপনার থেকে দুইবছরের সিনিয়র।আমি জানি আমার বউটা অনেক কিউট একদম পুতুলের মতো তাই বলে জেনে নিবেন না কে সে?সবসময় তাকে ভাবী বলবেন।আর ভাবী মায়ের সমান হয়।আর মায়ের সাথে কি কেউ এমন বাজে ভাবে কথা বলে?এখনি সরি বলুন।”

ছেলেটা মাথা নিচু করে বলল”সরি ভাবী।আর এমন হবে না।”

অরুণী প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে ছেলেটাকে বলল”আচ্ছা।ঠিক আছে।এখন ক্লাস যাও।”

ছেলেটা মাথা দুলিয়ে চলে গেলো।ছেলেটা যেতেই প্রণয় আর অরুণী দুজনে ফিক করে হেসে দিয়ে পাশাপাশি চেয়ারে বসে পড়লো।এরমধ্যেই রুহি চলে আসলো।অরুণী রুহিকে দেখে বলল”এতো দেরি হলো কেনো রে?”

“রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো।যাওয়ার সময় কোনোমতে গিয়েছিলাম কিন্তু ভার্সিটি আসার সময় মাঝ রাস্তা থেকে হেটে এসেছি।”

“ওহ!তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন?বসে জিরিয়ে নে।দাড়া তোর জন্য ঠান্ডা জুস অর্ডার দেই।”

“আরে সমস্যা নেই।ঠান্ডা পানি খেলেই হবে।”

“তুই চুপ থাক।”

এতক্ষণ ধরে প্রণয় দুই বান্ধবীর শাসন আর ভালোবাসাগুলো মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিলো হঠাৎ অরুণী প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলল”ও হলো রুহি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমার বোন।”

অরুণী কথায় রুহি হাসলো।প্রণয়ও মৃদু হাসলো।অরুণী এবার রুহিকে বলল”আর এই হলো তোর দুলাভাই।বিয়ের দেড় মাস পর তোর সাথে পরিচয় করাতে হলো।তোর তো কোনো দেখাই পাওয়া যায় না।”

“কি করবো রে বল!পড়াশোনা আর কাজেই তো সময় চলে যায়।”

“হ্যাঁ কিন্তু আর যাই করিস নিজের যত্ন নিবি এই ছোট্টো বুলবুলিটার জন্য।”

রুহি হাসলো।তারপর প্রণয়কে বলল”দুলাভাই কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“আজকে আমাদের বাসায় আসতে হবে কিন্তু।”

রুহি কিছু বলার আগেই অরুণী বলল”তা আর বলতে ও না যেতপ চাইলেও ওকে আমি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো।”

অরুণীর কথা শুনে রুহি আর প্রণয় দুজনই হেসে দিলো।তারপর অরুণী আর প্রণয়ের জোরাজোরিতে রুহিকে যেতেই হলো।
—————-
প্রিয়ম আজও একই সময় অফিস থেকে বের হলো।আর মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আজ যাই হোক বলবেই।সেইজন্য আজ সকাল থেকে এক্সাইটেড হয়ে আছে।কিন্তু প্রতিদিন রুহি যে জায়গায় দাড়ায় সে জায়গায় আজও রহিকে দেখতে পেলো না।কালই ছিলো না।প্রিয়মের মন খারাপ হয়ে গেলো।নিজের ফোন বের করে রুহিকে কল দিলো।

রুহি মাত্রই বাসায় ফিরেছে।ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসতেই কল এলো।স্ক্রিনে প্রিয়মের নাম্বার দেখে কিছুটা অবাক হয়েই ফোন রিসিভ করলো।রুহি ফোন রিসিভ করতেই প্রিয়ম বলল”আপনি কোথায়?”

“আমার বাসায়।কোনো সমস্যা?”

প্রিয়ম আমতা আমতা করতে করতে বলল”আচ্ছা স্যার কি বাসায় আছে?ওনার সাথে একটু দেখা করতাম আর কি!”

“হ্যাঁ বাবা বাসায়ই আছেন।আপনি আসুন।”

“ঠিকাছে।”

প্রিয়ম ফোন রেখে গাড়ি স্টার্ট দিলো রুহির বাসায় যাওয়ার জন্য।থাক না আজ হয়তো না বলাই হলো কিন্তু চোখের তৃষ্ণাতো মিটবে।প্রিয়ম মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে গাইতে শুরু করলো

“তুমি হয়তো বহুদূর, তবু তোমার কথার সুর
দেখো বাজছে আমার বেসুরো জীবনে
তুমি কোথায় নিরুদ্দেশ, তবু তোমায় ছোঁয়ার রেশ
আমার একলা জীবন মুহূর্তরা জানে
আজ রাত্রি যখন আসে, এই জীবন খানিক হাসে
বলে, “পারলি নাতো ছুঁতে তুই আর একটা দিন”
আজও স্বপ্নে তোমায় খুঁজি, বড়ো আশায় চোখ বুজি
ভাবি, নামবে দু’চোখ জুড়ে সেই আদুরে দিন
আহা, আহা, আহা”

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here