আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব_৩৪

0
2721

আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব_৩৪
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি

ঘরটি ঘুট ঘুটে অন্ধকার। বাহিরে স্টেডিয়াম লাইটের আলো বৃথা চেষ্টা করছে অন্ধকার গুঁজে দেয়ার।কিন্তু ব্যর্থ। সামনের লোকটি হাসচ্ছে। এই অন্ধকারের মৃদু আলোতে তার বিদঘুটে হাসি দেখে গা জ্বলছে কুহুর। তাও ভয় ভয় তাকিয়ে আছে। লোকটি দু কদম এগিয়ে এলো। ডান পা দিয়ে একটি চেয়ার টেনে বসে চুটকি বাঁজাতেই ঘর আলোকিত হয়ে গেল। কুহুর দিক মুচকি হেসে বলল,,

–” কেমন আছো কুহু?সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?”

কুহু কাঠ কাঠ গলায় বলল,,

–” অতি জঘন্য! ঠিক আপনার মতো ডায়মন্ড ভাই! আমাকে তুলে এনেছেন কেন?”

ডায়মন্ড এবার হো হো করে হেসে দিলো! কুহু বিরক্তি চোখে চেয়ে রইলো। ডর ভয়ের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে রাগের চ্যাপ্টার খুলে গেছে তার। ডায়মন্ড বলল,,

–“কুহু তুমি আগের মতোই আছো। সেই আগের তেজ। আই লাইক ইট!”

কুহু জবাব দিলো না। তার এ মুহূর্তে এই লোকটির মুখে এক দলা থুতু মারতে ইচ্ছে করছে । না না ঠিক থুতু না। ওটা ওল্ড ফ্যাশন হয়ে গেছে। এক দলা কাশি মারতে পাড়লে ভাল হতো! সত্যি কি দিবে সে? কিন্তু এখন তো কাশ আসচ্ছে না! গলা খাঁকারি দিলে আসলে আসতেও পারে? তার ভাবনার মাঝে ডায়মন্ড ভ্রু কুচকে বলল,,

–” কি ভাবচ্ছো?”

কুহু দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,

–” আপনার অধঃপাতনের কথা! কতটা নিচে নেমেছেন আপনি!”

ডায়মন্ড হো হো করে ভিলেন মার্কা হাসি দিলো। যেন কুহু কোনো মজার গল্প বলেছে। কুহু আবার বলল,,

–” আপনি হাসবেন না তো? হাসা বন্ধ করুন! আপনার হাসিতে গা জ্বলছে আমার! যেমন আপনি দেখতে বিশ্রী তেমনি আপনার হাসিও বিশ্রী। ”

কুহুর কথায় ধপ করে জ্বলে উঠলো চোখ দুটি। মুখে গভীরতার ভাব নিয়ে বলল,,

–” তুমি খুব বেশী কথা বলছো কুহু! বেশী কথা আমি পছন্দ করি না। আই ডোন্ট লাইক ইট! তুমি কি জানো তুমি কতটা বিপদের মাঝে আছো? সেটা নিয়ে ভয় পাওয়া উচিত তোমার?”

কুহু হাসলো বিদ্রূপের হাসি! তা দেখে ছোট ছোট চোখ করে ডায়মন্ড বলল,

–” হাসছো কেন? তোমার কি মনে হয়? আমি মজা করছি?”

কুহু বলল,,

–” মোটেও না। আমি জানি আপনি অতি মাত্রায় জঘন্য লোক! প্রতিটি মানুষের একটি ক্লাস থাকে আপনার নাই! আপনি ক্লাসলেস!”

ডায়মন্ডের রাগ উঠে গেল। তার কালো ফেইস আরো কালো হয়ে গেল। চোখ লাল টকটকে হয়ে উঠেছে! কুহু এতে ভয় পাচ্ছে ব্যাপক ভয়! কিন্তু তা তার ফেইস দেখে বুঝা যাচ্ছে না। সে মনে মনে আয়তুল কুরসী পড়চ্ছে! ডায়মন্ড শক্ত মুখে আগ্ঙুল তুলে বললো,,

–” কুহু কিপ কোয়াইট!”

কুহু চুপ রইলো না সে বলল,,

–” যারা খারাপ, ক্লাসলেস তাদের খারাপ কথা শুনতেই হবে! এটাই নিয়ম। আপনি খারাপ তাই শুনচ্ছে! এখানে রাগ করার অধিকার আপনার নেই! একদম না! সো এই লাল লাল চোখ দেখিয়ে আমাকে দমাতে পারবেন না। সরি!”

ডায়মন্ড আরো রেগে গেল! বলল,,

–” তুমি সত্যি আমায় ভয় পাচ্ছো না?”

–“মোটাও না! আপনি বাঘ না ভালুক ও না যে ভয় পাবো! অাপনি অতি মাত্রায় খারাপ মানুষ। যাকে ভয় পেলেও আল্লাহ পাপ দিবেন!”

কুহুর কথায় নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ডায়মন্ড। কুহুও তাকিয়ে। কুহু কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচন্ড চড় কষলো তার গালে। কুহু এর জন্য মোটাও প্রস্তুত ছিলনা। সে হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই চেয়ার নিয়ে ছিটকে মেঝেতো পড়লো। ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো কুহু। ঠোঁটের কোন ফেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো তার।ডায়মন্ড মেঝেতে কুহুর কাছে এক হাটু ঘেরে বসে, কুহু গালে তিন আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে সহজ গলায় বলল,,

–“এক ফোঁটা শরীরে এতো সাহস? আমার সাথে তর্ক করিস? তুই জানিস আমি তোকে কি করতে পাড়ি এখন? আমাকে খারাপ বলিস? খারাপ তো কিছু দেখিসি নি! তুই জানিস? তুই এখন কই আছিস? তুই এখন পতিতাপল্লিতে আছি! ভেবে দেখ তোর সাথে এখন কি কি হতে পারে?”

কুহু বিস্মিত চোখ তাকিয়ে আছে ডায়মন্ডের দিক! সে জানতো ডায়মন্ড খারাপ এতটা তার জানা ছিল না। কুহুর এবার ভয় করতে লাগলো। ভয়ের চোটে চোখে পানি চলে এলো। ক্ষীণ স্বরে বলল,,

–” আমাকে এখানে কেন এনেছেন? কি করেছি আপনাকে আমি?”

ডায়মন্ড উঠে দাঁড়ালো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

–“তোর কোনো দোষ নেই কুহু সব দোষ তোর দিওয়ানার!”

কুহু অবাক হয়ে গেল। ডায়মন্ড তা দেখে হেসে ফেললো। বলল,,

–“তোর ইউসুফ ভাইয়ের জন্য সব হারিয়েছি আমি! তাই তোকে তার কাছ থেকে দূরে নিয়ে এলাম। আর আজকের পর তুই তার থেকে এতো দূরেই যাবি যে ঠিকানা আমিও জানবো না।”

বলে ঘর ফাটানো হাসি দিল। কুহুর এবার ভয় করতে লাগলো। ভয়ংকর রকমের ভয়।সে বলল,,

–“এমন কেন করছেন? প্লীজ আমাকে ছেড়ে দেন!”

–” কেন করছি গুড কোশ্চেন! কারণ আমি দুটো জিনিস চেয়েছিলাম। এক- ময়মনসিংহের মেয়র হতে। তোর ইউসুফ ভাই তা হতে দিলো কই? সে রাহুলকে মেয়র বানিয়ে দিল! জানিস মেয়র হবার জন্য কত কি করেছি আছি? খুন পর্যন্ত করেছি! তোর বড় মামার!”

বলে তাকালো কুহুর দিক! কুহু কান্না করছে! বুক ফেঁটে যাচ্ছে তার। চোখে সামনে ভেসে উঠছে বাবা সমতুল্য মামার মুখখানি। সে বলল,

–” মামা আপনাকে কত ভালবাসতো নিজের ছেলের মত দেখতো আর আপনি!”

ডায়মন্ড হাসলো। বলল,,

–” রাজনীতিতে সব জায়েজ! ”

কুহু এবার ঘৃণা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,,

–” আপনি কতটা নিকৃষ্ট! ইউসুফ ভাই জানলে জানে মেরে ফেলবে আপনাকে!”

–” তোর ইউসুফ জানে! আর ওর জন্যই আজ আমি জেল পলাতোক আসামি! ”

চোখ-মুখ শক্ত করে বলল ডায়মন্ড। কুহু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। ডায়মন্ড আবার বলল,,

–“হে! যেদিন তুই ভেগে ছিলি! সেদিন সে আমাকে পুলিশে দেয়! আর আদালতে রায় আসে সারা জীবনের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড!”

–” একদম ঠিক করেছেন উনি! আমি হলে আপনাকে পাথর নিক্ষেপ করে মারার হুকুম দিতাম!”

ডায়মন্ড রেগে তেড়ে এসে কুহুর চুলের মুঠি টেনে ধরে উঠায়। কুহু ব্যথায় “আহ” করে চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে নেয়। ডায়মন্ড বলে,,

–” খুব তেজ না তোর শরীরে কুহু! এটা বরাবরই আমার পছন্দ.। জানিস ২ নাম্বার টা কি চেয়েছিলাম? তুই, তোকে চেয়েছিলাম! তোকে বিয়ে করে তোর তেজ একে বারে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে! কিন্তু হলো না। ”

কুহু বড় বড় চোখ করে তাকালো। তা দেখে হেসে দিল ডায়মন্ড। কুহুর চুল ছেড়ে ঝুঁকে কুহুর মুখের দিকে ফিসফিস করে বলে,,

–” তো কি হয়েছে! তখন পাইনি! আজ তো পেয়েছি? তাই না! আজ হবি তুই আমার বেড পার্টনার। তোর সব তেজ শেষ করবে এই বেডেই। তারপর…তারপর তোকে বেঁচে দিবো বিদেশের আগ্রহকদের কাছে। জানিস বাংলাদেশী মেয়েদের অনেক চাহিদা তাদের কাছে। খুব বেশী!”

এসব কথা শুনে কুহুর ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। নিচে আবার ছুটাতে বৃথা চেষ্টা করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ক্রোধের সাথে বলল,,

–” আপনি কিছু করতে পারবেন না। বুঝলেন? ইউসুফ ভাই তার বাবুইপাখিকে ঠিকি বাঁচিয়ে নিবে? আপনি কেন কেউ আমার কিছু করতে পারবে না! কেউ না! আল্লাহকে এখনো ভয় করুন! নয়তো ধ্বংস হয়ে যাবেন!”

ডায়মন্ড কোনো কথায় পাত্তা দিলো না কুহুর। সে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রুম ত্যাগ করলো। আর পাঠিয়ে দিল কত গুলো মেয়েকে। যাদের তাতে কাপড়, জুয়েলারি আরো কতকি! কিন্তু কুহু সেদিকে পাত্তা নেই! সে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তার ইউসুফ ভাইকে সরণ করছে! সে কি আসবে তার বাবুইপাখিকে বাঁচাতে?

______________________________________________

সকাল থেকে কায়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর ছড়িয়ে গেছে পুরো হসপিটাল সহ ইউসুফের কান পর্যন্ত। সাথে সাথে মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠে তার। তখনি থানা থেকে কল আসতে ফোন তুলে ইউসুফ। কানের মাঝে যখনি ভেসে আসে ডায়মন্ড পালিয়েছে। তখন আর বুঝতে বাকি নেই কায়া উরফে কুহু কোথায় আছে? সে শুধু বিড়বিড় করে বলে,,

–” আমার বাবুপাখির গায়ে একটি আচ আসলে তোরে আমি ছাড়বো না। আই কিল ইউ ডায়মন্ড! আই কিল ইউ..!”

সকাল থেকেই ময়মনসিংহ তন্ন করে খুঁজে ফেলেছে পুলিশ। এখন সন্ধ্যা হতে চললো। কোথাও কুহু আর ডায়মন্ডকে পাওয়া গেল না। এদিকে ইউসুফ রাগ বেরে চলেছে। সে সব ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলছে! নিজের উপর রাগটা তার প্রকট। যেদিন সে বুঝে গেছিল কায়া তার বাবুইপাখি কেন সেদিন তাকে তার কাছে আনলো না। সে ভেবেই রাগ দিগুন বাড়চ্ছে! একবার শুধু সে ডায়মন্ড কে পায়! মাটিতে পুতে ফেলবে সে! নয়তো টুকরো করে কুকুরের খাবার বানাবে। তখনি একটি ফোন আসলো ইউসুফ রিসিভ করে বাঁকা হাসলো। তারপর ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,,

–” তোমার সময় শেষ!”

______________________________________________

কুহুকে জোড় করে একটি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ানো হয়েছে।সাথে শরীরে পুস করা হয়েছে অতি তীব্র মাত্রায় ড্রাগস। কারণ কিছুক্ষন আগেই পতিতালয়ের পুষ্প নামের একটি মেয়ে সাহায্য পালিয়ে ছিল কুহু। মেইন গেট ক্রশ করতেই কেউ একজন তার পা বরাবর ছুড়ি মেলতেই ধুম করে নিচে পড়ে যায় কুহু। পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে তার। নিজেকে সামলে উঠতে চেষ্টা করেও উঠতে পারে না। তখনি পিছন থেকে একটি মহিলা কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,,

–” এই যে সুন্দরী! এইড্যা কইল মায়ার এলাকা। এইহান থেইকা বাহির হোন এতো সোজা না বুছো মাইয়া চলো!”

বলেই মায়া নামের মোটাসোটা মহিলা কোমরে দুলকি দিয়ে তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।কুহু তখন কাকুতি মিনতি ব্যথাতুর কন্ঠে বলে,,

–” আম্মা আমাকে যেতে দিন? প্লীজ যেতে দিন!”

কুহুর কথায় মহিলাটি থেমে গেল। কুহুর দিক বড় বড় চোখ করে তাকালো। কুহু মহিলাম বড় বড় মোটা মোটা কাজল কালো চোখ দেখেই ঘাবড়ে গেল। গলা যেন শুকুয়ে কাঠ তার। শুকনো ঢুক গিলে অতি বিনয়ের সুরে বলল,,

–” আম্মা আমায় যেতে দিন প্লীজ! আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না! আপনার মেয়ে হলে কি এমনটা করতেন? দয়া করুন আমার উপর!”

মহিলাটি তখন তপ্ত কন্ঠে বলল,,

–” আমার মাইয়া হইলে আমি নিজেই ধান্ধায় বসাই দিতাম। আমাগো জন্য টাকাই সব বুঝছোস মাইয়া। চল এবার!”

মহিলা আর কথা শুনলো না। টেনে নিয়ে ইনজেকশন পুশ করে দিল। তারপর থেকেই কুহু ড্রাগসের ঘোরে।

কুহু এখন একটি রুমে শুয়ে আছে দু পাশে দু হাত তার বাঁধা। চোখের সামনে সব ঝাঁপসা। কুহু সব বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। না তার শরীর নাড়াতে পারছে।চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ে যাচ্ছে। তখনি খট করে দরজা খুলে গেল রুমের। কেউ একজন প্রবেশ করলো। কিন্তু কে? চোখে ঝাঁপসা দেখায় বুঝতে পারছে না সে। লোকটি ধীরে পায় তার কাছে আসচ্ছে। কুহুর টিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,,

–“প্লীজ আমাকে ছোঁবে না! আমাকে ছেঁড়ে দিন। আমাকে যেতে দিন? ইউসুফ ভাই আপনি কই? ”

কিন্তু মুখ দিয়ে একটি বাক্য বের হলো না কুহুর। লোকটি কুহুর খুব নিকটে চেলে এসেছে! কুহুর এবার কি হবে? সে কি পারবে? তার সতীত্ব রক্ষা করতে? নাকি এখানে তার সব বিসর্জন দিয়ে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে??

কুহু চোখ বুজে নিলো। চোখের সামনে ভেসে উঠল ইউসুফের মুখখানা। সে হাসছে। আর বলছে। বাবুইপাখি তোকে যে খুব ভালবাসি! আই লাভ ইউ! আই লাভ ইউ লট!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here