আমার_একটাই_যে_তুই❤️পর্ব_৩৬
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
কুহু বসে আছে ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে চোখ মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। রাত বাড়চ্ছে। ঠিক কঁটা বাজে জানা নেই তার। না জানার ইচ্ছে আছে। আকাশের চাঁদ-তারা গুলোও যেন আজ লুকিয়ে গেছে।হয়তো কুহুর মতো তাদেরো মন খারাপ। তা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো সে। তখনি তিথি আর জয়ীতা এসে তার পাশ ঘেষে বসলো। কুহুকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে বলল তিথি,,
–“কুহু মন খারাপ করিস না। ভাইয়া রেগে তাই এমন করছে!”
কুহু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,
–“মন খারাপ করি নি! উনি যা করেছেন তা জায়েজ আছে! কিন্তু আমারও যে তাকে ছাড়া কষ্ট হয়েছে তা কিভাবে বুঝাই? সে তো আমার সাথে কথাই বলছে না।”
জয়ীতা বলল,,
–“কুহু মন খারাপ করো না রাগ কমলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে! বাই দ্যা ওয়ে(টুপনী কেঁটে) এমন গম্ভীর টাইপ মানুষের প্রেমে কেমনে পড়লা তুমি? নাকি হুমকি-ধামকি খেয়ে প্রেমে পড়ছো? হুম, হুম!”
কুহু লজ্জা পেল। লজ্জায় গাল দুটি লাল লাল হয়ে গেল। মাথা নিচু করে লাজুক হাসি দিল। তিথি বলল,,
–” সে অনেক মজার কথা জয়ীতা। আপনি শুনলে চমকে যাবেন?”
জয়ীতা নড়চড়ে আসন করে বসলো। কৌতূহল নিয়ে বলল,,
–” কি কথা? তাড়াতাড়ি বল!”
তিথি আড় চোখে কুহুর তাকিয়ে বলল,,
–“প্রেমে তোমার কায়া আগেই পড়ছিল! ইউসুফ ভাইয়াকে দেখে। মজার বিষয় কি জানো সে দিন ইউসুফ ভাই ওর দিকে তাকাতেই সে বেহুঁশ। বিশ্বাস করো বিশ্ব রেকর্ড হবে হয়তো! যে ক্রাশ তার দিক তাকাতেই সে শক্ড হয় বেহুঁশ! ”
বলে হাসতে থাকলো তিথি। তাল মিলালো জয়ীতা বলল,,
–” ও এম জি! সত্যি কায়া তুমি ওয়ান পিস!”
বলে হেসে কুটকুট দুজন! কুহুও সেদিনের কথা মনে করে হেসে দিল। পরক্ষনেই সন্ধ্যার কথা মনে পড়তেই মুখটা ছোট করে নেয়। তা বুঝতে পেরে জয়ীতা বলে,,
–“কায়া প্লীজ আবার মন খারাপ কোরো না? দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে?”
কুহুর চোখে ততখনে জল জমা হয়ে গেছে। তা মুছে বললো,,
–” আই হোপ সো!”
তিথি বলল,,
–“আই হোপ সো বলে বসে থাকলে চলবে?
–“তো কি করবো?”
–” এমন কিছু কর? যাতে ভাইয়ার রাগ পড়ে যায়!”
জয়ীতাও তাল মিলিয়ে বলল,,
–“হে কায়া তিথি ঠিক বলছে! তোমার উচিত কিছু করার! আর যা করার সাত দিনের ভিতরে করতে হবে।অদ্রি বার্থ ডে পর্যন্ত টাইম!এরপর আমাদের বেক করতেই হবে এনি হাও!”
কুহু অসহায় ফেইস করে বলল,,
–” কিন্তু কি করবো?”
তিথি কিছু ভেবে বলল,,
–“পাগলামি টাইপ কিছু! দেখ ইউসুফ ভাই তোকে পাওয়ার জন্য কত পাগলামি করেছে!ঠিক তেমন টাইপ! সে তোর জন্য করেছে এবার তোর পালা! এমন কিছু করবি যেন ভাইয়া টাসকি খেয়ে বসে থাকে!”
তিথির কথায় জয়ীতাও সায় দিল। এদিকে কুহু ভাবতে লাগলো সে কি করবে? যে করেই হোক ইউসুফের রাগ সে কমাতেই হবে! বাই হুক ওর বাই কুক। এসব ভেবেই হাসলো কুহু।
কুহুকে আনমনে হাসতে দেখে তিথি আর জয়ীতা কুহুর অগোচরে হাত মিলালো। যা তারা করতে এসেছিল তাতে তারা সফল হয়েছে এবার ট্রেলার বাকি! যা কুহু করবে…! এখন কুহু কি করবে তাই দেখার পালা। তা ভেবেই খুশি খুশি লাগচ্ছে তাদের…!
এদিকে কুহু কিছু ভেবে হেসেই যাচ্ছে। শয়তানি হাসি। বিড়বিড় করে বলল,,
–“এবার শুরু কুহুর কেরামতি! তেরা কেয়া হো গা কালিয়া?? থুক্কু ইউসুফ ভাই সুন্দর! অতি মাত্রায় সুন্দর। কালিয়া বাদ। হবে সুন্দরী। উফ! এত খুশি লাগে কেরে।”
______________________________________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেল কুহু। এমদম ফুড়ফুড়ে মেজাজ আজকে তার। নিজেকে আবার আয়নায় ভাল করে দেখে দৌড় লাগায় ইউসুফের ঘরের দিক! ইউসুফ ঘুমুচ্ছে ৮.৩০ এ উঠবে! সে সুযোগেই পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলো সে! আলমারি খুলে কিছু একটা করলো সে।তারপর সুন্দর করে আস্তে ধীরে কাজ সম্পন্ন করে বের হতেই ইউসুফ ঘুমের মাঝে কুহুর দিক ঘুরলো। কুহু জড়সড় হয়ে ঠেসে দাঁড়িয়ে রইল আলমারির সাথে।ভয় প্রাণ পাখি তার যায় যায়।ইউসুফকে চোখ না খুলতে দেখে শান্তির নিশ্বাস নে! সেখান থেকে চলে আসতেই চোখ আটকে যায় ইউসুফের মুখে। বাহির থেকে সূর্যের এক ফালি আলো জানালা দিয়ে এসে পড়চ্ছে ইউসুফের মুখে।কতটা স্নিগ্ধ না লাগছে তাকে। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার মুখখানা। কুহু নিজের ইচ্ছাটা দমন করে রুম ত্যাগ করলো।
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই চেঁচিয়ে ডাকলো রূপালীকে ইউসুফ,,
–” রূপালী আমার কফি কই?”
কুহু নিচেই ছিল সবার সাথে তখন। রূপালীকে কফি হাতে যেতে দেখে হুড়মুড় করে হেসে দাঁড়ালো তার সামনে। রূপালী তাতে ভয় পেল। বুকে থুতু লাগিয়ে ভয় ভয় বলল,,
–” আফামনি কি হইছে? এভাবে দৌঁড়াইন কেন! একটু জন্নি হার্ট ফেইল করতাম। আল্লাহ বাঁচাইসে!”
কুহু দাঁত কেলিয়ে বলল,,
–” সরি রূপালী তোরে ভয় দেখানোর কোন ইনটেনশন আমার ছিলনা। দে কফি আমাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি!”
রূপালী দিয়ে দিল। কুহু চলে গেল ইউসুফের ঘরে। ইউসুফ তখন খাটে বসেই ফোন চেক করছিল। কুহু রুমে এসেছে সে দিকে খেয়ালি নেই তার। সে আপন মনে ভ্রু কুচকে ফোনের মাঝে ডুবে আছে। কুহুর রাগ লাগলো। সে হালকা চুড়ি নাড়ালো। ইউসুফ কুচকানো ভ্রু আরো কুচকালো বলল,
–” রূপালী ডিস্টার্ব করিস না! যা এখান থেকে!”
কুহু গেল না। কেন যাবে? সে রূপালীকে যেতে বলেছে। তাকে তো বলে নি। ভেবে মুখ টিপে আসলো! কুহু আবার চুড়ির শব্দ করলো। ঠিক ইউসুফের কানের কাছে! ইউসুফের বিরক্তি লাগলো।মেয়েটা এমন করছেন কেন? সে এবার কঠিন বকা দিবে! সে ভেবে রাগী লুকে তাকাতেই দেখে কুহু দাঁত বের করে হাসচ্ছে। ইউসুফের মাথায় দু গুন রাগ চেপে গেল। সে কফির কাপ ফ্লোরে ফেলে দেয়ে। কুহু ভয় পেয়ে যায় এমন কান্ডে। কুহু কিছু বলবে তার আগেই ইউসুফ রাগী গলায় বলল,,
–” তুই! তোকে না করেছিনা আমার কাছে আসতে? যা এখান থেকে! গো?”
কুহু মন খারাপ করে মিন মিন করে বললো,,
–” এত কষ্ট করে কপি করে আনলাম আর আপনি ফেলে দিলেন! এটা কি ঠিক? দোষ না হয় আমি করেছি বেচারা কফি কি দোষ কররো? বা এই কফির মগটা? তাদের কেন ভাঙ্গলেন?”
ইউসুফ কুহুর দিক এগিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–” সত্যি ভাঙ্গাটা তোকে দরকার ছিল। মাথায় তুলে আছাড় মারতে পারলে ভাল হতো। দুর্ভাগ্যক্রমে বেচারা কফির মগ আঘাত পেল। যতসব! ”
বলে তয়লা নিয়ে হন হন করে ওয়াশরুমে চলে গেল। তার কান্ডে ফিক করে হেসে দিল কুহু।
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। বড় মামি, ছোট মামি মিলে খাবার সার্ভ করছে। কুহু মাত্রই খাবারটা মুখে দিয়েছে তখনি শোনা গেল ইউসুফ ভাইয়ার গগনবিদারী চিৎকার। সাথে সাথে নাকে মুখ খাবার উঠে গেল কুহুর।বড় মামি পানি দিল কুহুকে। রূপালী ভো দৌঁড় দিল তার ছোট সাহবের ঘরে।যেতেই ইউসুফ রাগী লুকে চেঁচিয়ে বলল,,
–” এ সব কি রূপালী? আমার প্রতিটা পাঞ্জাবির একটি করে বোতাম ছেড়া? কাপড় ধোয়ার সময় চোখ কই থাকে তোর? একটিও ঠিক নেই? এদিকে আমার মিটিং ১০ টায়। সময়ও নেই! কি পড়ে যাবো আমি? হে??”
ইউসুফের ধমকানিতে বেচারি রূপালী কেঁদে দিবে ভাব। সে এটাই বুঝতেছে না কে করলো এমন? কাল পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিল! রূপালীর ভাবনার মাজে বেঘাত ঘটাল আবার ইউসুফের ধমকে,,
–” কি হলো? কই হারালি? কথার উত্তর দে!”
রূপালী কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলল,,
–” আমি কিছু করি নাই ছোট সাহেব। ”
বলে ভ্যা করে কেঁদে দিলো। ইউসুফ বিরক্তি নিয়ে বলল,,
–” কান্না করছিস কেন? চুপ একদম কান্না বন্ধ কর! উফ!”
কিন্তু কান্না থামলো না রূপালীর। তখনি ঘরে ঢুকলো কুহু। বাহিরে দাঁড়িয়েই ছিল সে এতক্ষণ। একটি সুযোগের অপেক্ষা ছিল সে। সুযোগ পেতে রুমে ঢুকলো। অবাক হওয়ার ভান করে বলল,,
–” রূপালী কাঁদিস কেন?”
রূপালী হেচকী তুলে কাঁদচ্ছে। কি বলবে সে? এদিকে কুহুকে দেখে দু হাত বুকের উপর বেঁধে ভ্রু জোড়া কুচকে বলল,,
–“তোকে এখানে কে মাতব্বরি করতে আসতে বলছে? ”
কুহু আমতা আমতা করে বলল,,
–“এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ওর কান্না শুনে থামলাম! কি হয়েছে দেখার জন্য! কি হইছে রে তুই বল!”
রূপালী চোখ মুছলো বলল,,
–” কেডে জানি ছোট সাহবের পাঞ্জাবির বোতাম ছেড়া গেছে। তাও আবার প্রতিটা। কেম্নে হইসে জানি না মুই!”
–“ওহো এই ব্যাপার। তো কি হইছে শিলি করে দে তাহলেইতো হয়!”
–“আফা আমার হাতে দুক্কু কেমনে দেই কইন?”
কুহু চিন্তা করার ভান করে বলল,,
–“তাইতো! আচ্ছা যা তুই আমি করে দিচ্চি!”
রূপালী খুশি হয়ে চলে গেল! ইউসুফ বলল,,
–” আমার লাগবে না। তুই যা সারাদিন শুধু ঘুর গুর করিস কেন আমার পিছনে? যা ভাগ!”
কুহু গেল না। হাসলো। ইউসুফের শরীর ঝিম ঝিম করে উঠলো! এ কেমন হাসি তার? ঝিম ধরানো হাসি! ইউসুফ বলল,,
–” এভাবে হাসচ্ছিস কেন! যেতে বললাম না তোকে?”
কুহু সেই একি রকম হাসলো। ইউসুফের ঘোর লেগে গেল। কুহু বলল,,
–” কাজ শেষ হোক চলে যাবে!”
ইউসুফ চেয়ে রইলো। কুহু সুই সুতো নিয়ে খাটের উপর হাটু গেরে বসলো। তারপর হুট করে ইউসুফের পাঞ্জাবির কলার টেনে কাছে নিয়ে আসলো। এতোটা কাছে যে এক ওপরের নিশ্বাস শুন্তে পাচ্ছে। এমন করাতে ইউসুফ হতভম্ব হয়ে গেল। কুহু হাসলো সেই ঝিম ধোরানো হাসি!কুহু বোতাম লাগলো।ইউসুফের বুকে ঝুকে দাঁত দিয়ে সুতো কাটলো। সেই সুযোগে ইউসুফে বুকে টুপ করে চুমু খেয়ে বসলো সে।এদিকে ইউসুফ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কুহুকে এতো কাছে পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল লেস লাগছে। মন চাইছে বুকে ভেতর ঢুকিয়ে ফেলতে তার। তখনি কুহু চুমু খেয়ে বসতেই ইউসুফ হকচকিয়ে উঠে। সাথে সাথে ধাক্কা মেরে বেডে ফেলে দেয় কুহুকে। কুহু ধুপ করে বেডে পড়ে! ইউসুফের তখন রাগে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে! কুহুর দিক রাগি চোখে তাকিয়ে সে দ্রুত রুম ত্যাগ করে! মাথা যেন পুড়ো আওলা ঝাওলা হয়ে গেছে।
ইউসুফকে এভাবে যেতে দেখে হেসে দেয় সে। মাথার নিচ এক হাত দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে বলে,,
–” কতদিন এবাবে রেগে থাকুন আমিও দেখবো ই-উ-সু-ফ! পারবেন তো আপনার বাবুইপাখির লাভ টর্চার সহ্য করতে? হুম!”
বলে বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে হাসতে লাগল কুহু।
চলবে,
রি-চেক দেইনি। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ?