আমার_একটাই_যে_তুই❤️
সিজন-২ ০৪
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
উঁচু একটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে। নেমে দাঁড়ালো ইউসুফ। সূর্য তার তেজ কমিয়ে পারি দিচ্ছে ঘুমন্ত রাজ্য। মুহূর্তেই আকাশের মাঝে তার রেখে যাওয়া ছিঁটেফোঁটার ঝলকানিতে লাল লাল হয়ে ঢেউ তুলে গেছে সুদূর রাঙ্গা মেঘ গুলো। ইউসুফের মনে আক্ষেপ হলো।” ইশ! ছুতে পারতাম তারে?”
মুহুর্তেই সেই আক্ষেপ উবে গেল, পিছনের একটি গাড়ি শব্দহীন গাড়ি এসে থামতেই। কিন্তু ইউসুফ তাকালো না সেদিক। তার দৃষ্টি সামনের সুন্দর দৃশ্যে।
—” নেতার পদধূলি হঠাৎ আজ আমার এলাকায়।” ঠোঁটে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল কথাটি আশিক।
ইউসুফ তার দিক ফিরলো। বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে তুললো ঠোঁটে,,
—” পরগাছা বড় হয়ে গেলে উপরে ফেলতে তো আসতেই হবে!”
মুহূর্তেই হলদে মুখটি ফ্যাকাসে হয়ে গেল আশিকের। খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল,,
—” আমার এলাকায় দাঁড়িয়ে আমাকে অপমান করছিস?”
—” ভুলে যাচ্ছিস! তোর এলাকা আমার আন্ডারেই পড়ে!”
শক্ত হয়ে গেল আশিকের চোয়াল। বলল,,
—” আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুই কখনো আমার বন্ধু ছিলি!”
ইউসুফ হো হো করে হেসে উঠলো। যেন কোন জোকস মেরেছে আশিক। এক হাতে পেটে ধরে হাসতে লাগলো। আশিক থমথম মুখে চেয়ে আছে।
—” তুই এখনো ভাবিস? আমি তো কবেই সেই ভাবনাটাই ছুড়ে ফেলেছি। তোর মতো খচ্চর আর আমার বন্ধু থাকবে!”
রাগে ফেঁটে পড়লো আশিক। চেচিয়ে উঠলো সে।
—” ইউসুফ…। তুই আমাকে অপমান করছিস কিন্তু!”
—“এতক্ষণে বুঝলি?”
রাগ সামলাতে পারলোনা আশিক। চেঁপে ধরলো ইউসুফের গলা। আকস্মিক ঘটনায় ইউসুফ বিস্মিত। পরক্ষণেই সে নিজেও চেঁপে ধরে আশিকের কন্ঠনালি। ইউসুফ আত্মা রক্ষার জন্য ছোট বেলায় মহসিন তাকে কারাত প্রশিক্ষন করিয়ে ছিলেন। সেই সুবাদে শত্রু পক্ষের অাক্রমণ উলটাতে ইউসুফ বিচক্ষণ। আশিক কাতরে উঠলো। ইউসুফের গলা থেকে হাত আলগা হয়ে যায়। ইউসুফ ঘুড়িয়ে তাকে খাদের কিনারায় নিয়ে আসে। আশিকের ভয়ে চোখ মুখে আতঙ্ক বাহিরে দেখা যাচ্ছে। চোখ তার নিভু নিভু। ইউসুফ তার সেই বিখ্যাত টাল পড়া গালে বাঁকা হাসলো। বলল,,
—” কি বলিস? ছেড়ে দি? উড়ে যাক তোর প্রাণ পাখি!”
আশিক কাতরাচ্ছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এবার। চোখ উল্টো আসচ্ছে। ইউসুফ তখনি তাকে কিনারা থেকে সরে আসে। আশিকে ছেড়ে দেয়। আশিক বড় বড় দম নিতে থাকে। ইউসুফ তখন তার গাড়ির সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে বলল,,
—” আমার সাথে লাগতে আসিস না। প্রাণ হারাবি।আর হে! আমি জিতেছি এবার নেতাও হয়ে গেছি। বাজি তুই হেরে গেছিস। এবার ট্রফি হিসেবে কুহু আমার!”
আশিকের ঠোঁটে এবার হাসি। ভ্রু কুচকে গেল ইউসুফের। আশিক তার হাসি বহাল রেখে বলল,,
—” কুহু তোকে না আমাকে ভালবাসে।”কন্ঠে তার গর্বের আভাস।
ইউসুফ রাগে গা রি রি করলো। তবুও ঠান্ডা গলায় বলল,,
—” কিন্তু তুই ওকে ভালবাসিস না!”
—” ভাল তো তুইও বাসিস না!”
ইউসুফ তীর্যক নয়নে তাকলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,
—” তোর না ভাবলেও চলবে। আমার ট্রফি আমি যেভাবেই হোক আপন করেই নিবো। তুই এর মাঝে এলে আমার পুকুরে সেই রাক্ষুসে মাছে খাবার বানাতে দু মিনিট ও সময় লাগবে না!”
আশিক ভয় পেল এবার। ইউসুফ কতটুকু ভয়ংকর আর হিংস্র এক মাত্র তার কাছের মানুষই জানে। আশিক শুকনো ঢুক গিললো। মনে পড়লো তার কলেজের একটি দিনের কথা। স্কুল থেকেই ইউসুফের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব । কলেজ শেষের একদিন ফেয়ারওয়েল তাদেরই এক বন্ধু ইউসুফের গায়ে হাত তুলে ফেলে। সকলেই হো হো করে হাসতে লাগে। সেদিন ছেলেটিকে কিছু না বললেও একদিন ছেলেটির লাশ তারা ঠিকি পায়। আর তা আশিক স্বচোখে দেখে কিভাবে তাকে ইউসুফ মেরেছিলো। তা ভেবেই গা শিউরে উঠলো।
আশিক মুখে বলল,,
—” কুহুর সাথে কেন খেলছিস? ও তো তোর বোনই হয়? তার ভালোবাসার কেড়ে তুই কখনো তার মনে তোর জায়গায় করতে পাড়বি?”
ইউসুফ এবার গাড়ির বোনাটের উপর শুয়ে পা দুলাতে দুলাতে বলল,,
—” যা আমার চাই। তা যে কোনো মুল্যেই চাই। আর রইলো কুহুর ভালবাসার কথা? আজ নয় কাল আমি অর্জন করেই ফেলবো।”
—” কি আছে ওই মেয়েতে যে এতো মরিয়া হয়ে উঠেছিস? সেই মেয়েই না তোর কাল হয়ে দাঁড়ায়।”
আশিকের কথায় হাসে ইউসুফ। ঠোঁট দুটি নাড়িয়ে বলল,,
—” ওর হাতে মরতে পাড়লেও আমি ধন্য। তুই বুঝবি না। ও যে আমার একাই যে তুই!”
পরের কথাটি বিড় বিড় করে বললো ইউসুফ। আশিক বুঝতে পাড়লো। তাকিয়ে রইলো। ইউসুফ বলল,,
—” বাড়ি যা। আজকের পর কুহুর সাথে তোর যেন কোন যোগাযোগ না থাকে!”
ত্যাগ করে সেই স্থান ইউসুফ। আশিক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁটে তার শয়তানি হাসি। বিড় বিড় করে বলে,,
—” তোর সময় ঘনিয়ে আসচ্ছে বলে।”
গত একমাস আগের সেই দিনটি এখনো দৃশ্যমান আশিকের চোখে। সে রাগে ফেঁটে পড়ে৷ তার সামনেই বসে আছে আলতাফ শেখ আশিকে মামা। তিনি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,,
—” ভাগ্নে রাগে নয়। বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই না হারাতে পাড়বে তাকে!”
আশিক নিভলো। তবুও তার কানে যখন আসে ইউসুফ লাষ্ট পর্যন্ত কুহুকে বিয়ে করে নিয়েছে। রাগ মাথা চড়ে বসে। সেদিন সে যেতে বাস স্টেশনে তার আগেই ইউসুফের লোকেরা আঁটকে দেয় তাকে। নয় তো আজ তার হাতের মুঠে থাকতো ইউসুফের দুর্বলতা। সে ছোট শ্বাস ছাড়লো বলল,,
—” শালা বহুত ভাগ্যবান। যা চায় তাই পায়। ”
______________
রোকেয়া বানুর সামনে সেই পাতিলটি। যা পুরে লাল হয়ে আছে। ইউসুফ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,,
—” দাদু পাতিলটি উঠাও!”
রোকেয়া বানু ভয়ে চুপসে গেছে। আদরের নাতির সামনে আহ্লাদী কান্না সুরে বলল,,
—” তুমি এসব কিতা বলল? আমার হাত পুইড়া যাইবো!”
—” আমিও তাই চাই! যে হাত আমার বউয়ের হাত পুড়িয়েছে, সে হাত আমি কিভাবে ঠিক থাকবে?”
ইউসুফ এগিয়ে এলো। রোকেয়া বানু “ও আল্লাহ্ গো ” বলেই পিছিয়ে গেল রাহির কাছে। রাহি কাঁপছিলো। রোকা বানু তার পিছনে আসতেই সে দৌঁড়ে পালালো। রোকেয়া বানু অসহায় মুখ করে বলল,,
—” আমি তুমরা দাদু লাগি আর তুমরা এমন করতাসো?”
ইউসুফ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,
—” আপন দাদু হলে কি আর তাই করতে? সৎ দেখেই এ কাজ করলে!”
রোকেয়া বানু নতজানু। মাফ চাওয়ার মতো হাত দুটো এক করে বলল,,
—” আমি তুমার বউয়ের ধারে কাছে যামু না মাফ কইড়া দাও!”
_______________
কুহু রুমে বসে আছে। ঘন ঘন শ্বাস ফালছে সে। ইউসুফের এ রূপ কখনোই দেখেনি সে! নিজ দাদুর গায়ে হাত তুলতে পিছপা হয় না। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। এ কার সাথে বিয়ে হলো তার? আশিক কেন সেদিন এলো না? আজ হয়তো দিনটি অন্য রকম হতো?
কুহুর ভাবার মাঝে ইউসুফ রুমে প্রবেশ করে। ইউসুফ দেখে ভয়ে কুকরে যায়। ইউসুফ তা লক্ষ করে। কাছে এসে বসে কুহুর। কুহু তখন পিছিয়ে যেতে যায়। ইউসুফ হাত ধরে তার কাছে নিয়ে আসে। কুহু ইউসুফের চোখের দিকে তাকায়। নিরব, শান্ত বিলাই চোখ কত কিছু বলে যাচ্ছে যা বুঝতে অক্ষম কুহু। ইউসুফ বলল,,
—” বাবুইপাখি ভয় পাচ্ছিস আমায়? ”
কুহু জবাব দিলো না। ইউসুফ ছোট শ্বাস ছাড়লো। কুহুর দু গালে হাত রেখে বলল,,
—” আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালবাসা দেখতে চাই। নাকি ডর-ভয়! আমি দাদুর সাথে সে কাজটি না করলে সে তোর আরো ক্ষতি করতো। আমার আমি তোর ক্ষতি দেখি কিভাবে বল।”
তবুও কিছু বলল না কুহু মাথা নত করে ভাবতে লাগলো তখনের কথা কিভাবে তার জন্যই শাসিয়ে ছিল তার দাদু কে হোক সে সৎ। কিন্তু তবুও কেন যেন ইউসুফকে তার ভয় হয়। খুব ভয় হয়। এমন না যে সে তার উপর হাত তুলেছে। বা বাসর রাত থেকে এখন পর্যন্ত অশ্লীল ভাবে ছুয়েছে? তাহলে… তাহলে কেন, এমন মন হয়? লোকটির ভিতর-বাহির দুটো দুই রকম?
এসব ভাসতেই তার আশিকের কথা মনে পড়লো আবার। ছেলেটিকে সে বিশ্বাস করে মনে প্রানে ভাল বেসেছিলো। আর এখন পর্যন্ত একটি খবর সে নিলো না? কুহু কেমন আছে? সেদিন কি হয়েছিল? তাও জানা নেই তার? তবুও খুঁজ নিলো না। তাহলে সত্যি ধোঁকা দিয়ে ছিলো? এসব ভাবতেই চোখ পড়লো ইউসুফের ফোনের দিক। ইউসুফ ওয়াশরুমে পানির শব্দ আসচ্ছে। সেই সুযোগে ফোন হাতিয়ে নিয়ে বারান্দায় এলো। কি আশ্চর্য? ফোন খুলতেই ভেসে উঠলো কুহুর বউ রূপের ঘুমন্ত ছবি। নিশ্চয় ঘুমের মাঝে ইউসুফ তুলেছে? সে দিকে তোয়াক্কা না করে সে কল করলো আশিকে নাম্বারে।কল হচ্ছে। কুহুর দেখ খানা কাঁপন ধরলো। অধীর আগ্রহে ওপাশ থেকে ফোন তোলার অপেক্ষা করতে লাগলো। আর তখনি…!
চলবে,,